"বাংলাদেশে নিলাম হতে বসা নারীর সতীত্ব অথবা কিছু বাস্তবতা"
লিখেছেন লিখেছেন নিষ্টুর সমাজ ০৫ জুন, ২০১৫, ১২:৩৮:২৯ রাত
"বাংলাদেশে নিলাম হতে বসা নারীর সতীত্ব অথবা কিছু বাস্তবতা"
--- আমাদের বর্তমান সমাজে একটি মেয়ে দ্রুত সমাজের কাছে খারাপ হয়ে যায়...।খারাপ তারা নিজেরা হয় না, খারাপ বানাই আমরা....।খারাপ বানায় আমাদের এই নোংরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্হা...
--- একটি সুন্দর মেয়ে যখন রাস্তা দিয়ে যায় তখন অনেক ছেলেই ডিস্টার্ব করে...মেয়ে টি পাত্তা দেয় না...।অন্য রাস্তা দিয়ে চলে যায়...
--- একটি সুন্দর মেয়ে ফেইসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে তখন সেই মেয়েকে হাজারো ছেলে রিকুয়েস্ট পাঠায়..শুধু রিকুয়েস্ট না..সেই সাথে শত ম্যাসেজ আর পোক টাও ফ্রী...
--- একটি সুন্দর মেয়ে বারান্দায় বসে গল্পের বই পড়ে..রাস্তার ছেলেরা বারান্দায় বসা মেয়েটির দিকে কাগজ দিয়ে ডিল মারে..মেয়েটি বারান্দা থেকে চলে যায়...।
--- একটি সুন্দর মেয়েকে শুধুমাত্র সৌন্দর্যের অপবাদ দিয়ে একজন নরপশু মেয়েটাকে জোরপূর্বক সেক্সচুয়্যাল হ্যারেজমেন্টের শিকার বানিয়ে নিজের দৈহিক চাহিদা পূরণ করে....
উপরোক্ত চারটি ক্ষেত্রেই স্পষ্ট কে দোষী...? কিন্তু আমাদের সমাজ দোষ দেয় সেই সুন্দর মেয়েকেই...
সেই মেয়ে কেনো স্কুলে যায়?সেই মেয়ে কেনো ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট
খুলে??সেই মেয়ে কেনোই বা বারান্দায় বসে গল্পের বই পড়ে??? সেই মেয়েটা কেনই বা এত সুন্দর রূপ নিয়ে বাইরে বের হয় ???
এইসব মানবসৃষ্ট কৃত্রিম বেহায়া প্রশ্ন গুলো ছুড়ে দেই সেই মেয়ের
দিকে...."মেয়েটাকে দেখতে চাঁদের মতো? চাঁদেরও তোহ কালিমা আছে??"
এই বাক্য টিকে বুকে আকড়ে ধরে আমরা লুলায়িত ছেলেরা শুরু করে দেই সেই চাঁদে কালির ফোঁটা খুঁজতে ....এক ফোঁটা কালি হলে ভালোই হতো কিন্তু আমরা যে পুরুষ...। চাঁদকে এমনভাবে কালি দিয়ে লেফটে দেই যাতে চাদ মিশে যায় রাতের অন্ধকারে....
একটা মেয়ে যখন অপিরিচিত ছেলের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে না তখন আমরা পুরুষসম্প্রদায় বলি, মেয়েটা বেশি ভাব নেয়... আজাইরা..মেকাপ মাইরা সুন্দর সাজে....এফবিতে কোনো ছেলের রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে না!!শালি একটা ম***....শালীর বেশি ভাব!! এক্কেরে ছুটাইয়া দিমু....এভাবেই চারিদিকে ছড়িয়ে যায় সেই মেয়ের
নামে এই কথা সেই কথা....চাঁদ ডেকে যায় কালো চাদরে...সেই মেয়েটি যতো ভদ্রই হোক না কেনো সেই মেয়েটি সমাজের কাছে খারাপ....।
আবার সেই সুন্দরী মেয়েটি যদি সবার সাথে বন্ধুত্ত করতো.. ফেইসবুকে তার সব কিছু থাকতো Public তাও কিন্তু মেয়েটি খারাপ!!কারন সেই মেয়েটি আমাদের ছেলেদের কাছে অনেকটা সস্তা মনে হয়....মাইয়া তোহ সেই লেভেলের চালু.. সব পোলার লগে প্রেম করে..ফেইসবুকে আছে হাজারটা বয়ফ্রেন্ড!!! পিকচারে দুই হাজার লাইক! পাঁচ হাজার লুতুপুতু কমেন্টস!!! হুম মাইয়া খারাপ!!!
আসলে মেয়েটি যে ফ্রেন্ডলি... কিংবা মেয়েটি তোহ ভালো ও হতে পারে তা আমরা কেও ধরি না...মেয়েটি খারাপ তোহ খারাপই...ইহাই যথেষ্ঠ তাকে খারাপ করার!!!
একটা মেয়ে যখন সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের শিকার হয় তখন ধর্ষককে দায়ী না করে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ দায়ী করে মেয়েটির পোশাককে... এই ব্যাপারটা যেন কতটা যুক্তিহীন তা বোঝাতে নিশ্চয়ই আমাকে পাঁচ বছর বয়সী কোনো মেয়ের ধর্ষনের উদাহরণ টানতে হবে না..
আমাদের পুরুষদের অনেক ভালো ভালো সাজেশন আছে...।তার মধ্যে অন্যতম আছে মেয়েটি কেনো হিজাব পড়ে না? মেয়েটি কেনো বোরকা পড়ে না!?
এখন তোহ মেয়েরা হিজাব না পরার চেয়ে পরলেই বেশি দোষ!!! হিজাব পড়লেই আমরা ছেলেরা বলে ওঠি মাইয়া হিজাব লইয়া ফ্যাশন করে..প্রোফাইল পিকে হিজব পইরা পিক দেয় বেশি লাইক পাওয়ার জন্য!!! অবশ্য লাইকগুলো কিন্তু আমরা ছেলেরাই বেশি দেই তাও আমরা ছেলেরাই এই নিয়া বেশি ফালা ফালি করি...
এরপর যদি কোনো বোরকা পড়ে পিক দেয় তাহলে ওটাও আমরা ফ্যাশন বলে চালিয়ে দিবো...কোনো জিনিসের ভালো টা আমরা সঠিক ভাবে গ্রহন করি না ইহাই আমাদের সমস্যা......
আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা যৌন নিপীড়নকে মনে করা হয় কিন্তু আমার মতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সমাজের নোংরা পুরুষতান্ত্রিত মানসিকতা... কেননা পুরুষ সমাজ মেয়েদের কোরআন হাদিস মেনে চলার উপদেশ দিতে পিছপা হয় না অথচ নিজেদের ক্ষেত্রে এটা মেনে চলার ইচ্ছা হয় না...
আর সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের বিচার ?? সেই প্রসঙ্গ তুলে নিজের দেশকে ছোট করতে চাই না... এই আমাদের সোনার বাংলাদেশ.. যার স্বপ্ন দেখে হাজার লক্ষ কোটি তরুণ তরুণীরা... যেখানে বাঙালির প্রাণের উত্সব পয়লা বৈশাখকে নোংরা কালিমায় লিপ্তকারী কিছু মানুষরূপী জানোয়ারদের কোনো শাস্তি পেতে হয় না... মাইক্রোবাসে, স্কুলে অথবা ভাসির্টির মতো জায়গায় যখন একটা মেয়ে সেক্সুয়্যাল হ্যারেজমেন্টের শিকার হয় তখন এই দেশের আইন রক্ষাকারীরা ধর্ষককে তার অপরাধীর প্রাপ্য শাস্তি না দিয়ে মেয়েটির দোষ খুঁজার প্রচেষ্টা চালায়...
কোনো মেয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হলে পত্রিকার পাতায় হেডলাইন দেখা যায়, "Girl was rapped......" । তবে
বতর্মান প্রেক্ষাপটে শিরোনাম হওয়া উচিত, " #Justice_was_rapped"
আসলে মেয়ে মানুষ হয়ে জন্মানো টা অনেকটা অভিশাপ আমাদের এই দেশে....। সৃষ্টিকর্তার সাথে যদি আমি কথা বলতে পারতাম তাহলে ওনার কাছে একটাই আবেদন করতাম মেয়ে মানুষ তৈরী করলে যেনো এই বাংলাদেশ আর ভারত উপমহাদেশে না পাঠায়....,
বিষয়: সাহিত্য
১৫৬৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব কম সময়ই দেখেছি বোরখা পড়া মেয়েকে ছেলেরা ডিষ্টার্ব করে।আর সমাজের অবস্থা যখন এতটায় নিচে নেমে গেছে তখন মেয়ের স্কুল যাওয়ার সময় তার অভিভাবক সাথে থাকলেই ঐ কুলাঙ্গারা আর ডিস্টার্ব করার সাহস পায় না।
[b]একটি সুন্দর মেয়ে ফেইসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে তখন সেই মেয়েকে হাজারো ছেলে রিকুয়েস্ট পাঠায়..শুধু রিকুয়েস্ট না..সেই সাথে শত ম্যাসেজ আর পোক টাও ফ্রী...
ফেসবুকে পাবলিকদের জন্য ম্যাসেজ অপশনটা অফ করার নিয়ম আছে।আবার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টও
পাবলিকদের জন্য অফ রাখা যায়।
--- একটি সুন্দর মেয়ে বারান্দায় বসে গল্পের বই পড়ে..রাস্তার ছেলেরা বারান্দায় বসা মেয়েটির দিকে কাগজ দিয়ে ডিল মারে..মেয়েটি বারান্দা থেকে চলে যায়...
পর্দাশীল মেয়ে হলে তার বারান্দাও পর্দাশীল হবে।
একটি সুন্দর মেয়েকে শুধুমাত্র সৌন্দর্যের অপবাদ দিয়ে একজন নরপশু মেয়েটাকে জোরপূর্বক সেক্সচুয়্যাল হ্যারেজমেন্টের শিকার বানিয়ে নিজের দৈহিক চাহিদা পূরণ করে....
এখানেও আমি পর্দার কথায় বলবো।কারণ মেয়েরা ছোট বেলা হতে পর্দা না শিখে আসলে দেখায় কলেজ বা ভার্সিটিতে এমন ভাবে চলাফেরা করে তাতে সহজেই কুলাঙ্গারদের হাতে পড়ে।
তবে আমাদের সমাজে মানুষরুপী নরপশুদের যদি ইসলামের শরীয়াত মত অনুসারে শাস্তি দেওয়া হয় তবে এ ধরনের অপরাধ কমবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন