ইউরোপে ইসলামের আলোক নিশান
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লা আল মামুন ০৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:১২:৪১ রাত
ভূ-মধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত ‘জিব্রাল্টার’ যুক্তরাজ্যের অধীনস্থ একটি এলাকা। এর দক্ষিনে রয়েছে স্পেন এবং এটি আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরের প্রবেশপথে অবস্থিত। এটি ব্রিটিশদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও নৌঘাঁটি।
জিব্রাল্টার এই নামটির আরবি নাম "জাবালুত তারিক"।৭১১ সালে উমাইয়া খলিফাদের সেনাপতি তারিক ইবন যিয়াদ স্পেন বিজয়ের উদ্দেশ্যে উত্তর আফ্রিকা থেকে জিব্রাল্টার প্রণালী পার হয়ে তার সৈন্যদের নিয়ে স্পেনে পৌছে প্রথমে একটি পাহাড়ের ধারে অবতরন করেন। যা পরবর্তীতে "জাবালুত তারিক" বা "তারিকের পাহাড়" নামে পরিচিত হয়।
মুসলিম সেনাপতি তারিক ইবন যিয়াদের স্পেন জয়ের ঘটনাটি বেশ রোমাঞ্চকর।মাত্র ৭০০ সৈন্য নিয়ে সেনাপতি তারিক ইবন যিয়াদ ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের মাটি জিব্রালটারে পা রাখেন।রাজা রডারিকের বিশাল বাহিনীর তুলনায় এই ক্ষুদ্র বাহিনী দেখে স্পেনের রাজা রডারিক কৌতুকবোধ করলেন।তার ধারনাই ছিলনা এই ক্ষুদ্র বাহিনী স্পেনে বিজয় পতাকা উড্ডীন করবে।
কিন্তু অকুতোভয় তারিক ইবন যিয়াদ জিব্রালটারে নেমে জাহাজে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিলেন সব জাহাজ। তারপর সৈন্যদের দিকে চেয়ে বললেন,” চেয়ে দেখ বন্ধুগণ,গভীর সমুদ্র আমাদের পেছনে গর্জন করছে। আর সামনে অন্যায় অবিচারের প্রতীক বিশাল রডাডিক বাহিনী। আর যদি আমরা সামনে অগ্রসর হই, তাহলে ন্যায় ও বিশ্ব-কল্যাণ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা শহীদ হবো, কিংবা বিজয় মাল্য লাভ করে আমরা গাজী হবো।এই জীবন-মরণ সংগ্রামে কে আমার অনুগামী হবে?”মুসলিম বাহিনীর প্রতিটি সৈনিকই বজ্র নির্ঘোষে ‘আল্লাহু আকবার' তাকবীর দিয়ে সেনাপতি তারিকের সাথে ঐক্যমত ঘোষণা করলেন।এই অসম যুদ্ধই এক ইতিহাসের সৃষ্টি করল।
মুসলিম বাহিনীর প্রচন্ড পাল্টা আক্রমণে রডারিক বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো। মুসলিম সৈন্য ও তাদের সেনাপতির সৌর্যবীর্য ও সাহস দেখে সেনাপতি থিওডমির বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে রাজা রডারিককে লিখে পাঠালেন, ” সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও অদ্ভুত শৌর্য বীর্যের অধিকারী মুসলিম বাহিনীর অগ্রগতি আমি রুখতে পারলাম না।?” এই ভাবেই সত্যের জয় হল-ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডিন হল স্পেনে।
তারপর গৌরবময় মুসলিম শাসন চললো সেখানে দীর্ঘ ৭শ বছর ধরে। কর্ডোভা, গ্রানাডা,মালাগাকে কেন্দ্র করে যে মুসলিম সভ্যতার বিকাশ ঘটল,তা সারা ইউরোপকে আলোকিত করে তুললো।অন্ধকার ইউরোপের বুকে সূর্যশিখার মতোই জ্বলছিল কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান শিখা।সেখানে জ্ঞান আহরণের জন্য ইউরোপের সব দেশ থেকেই ছুটে এসেছিল জ্ঞান পিপাসুরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম মনীষীদের কাছ থেকে সেদিনের অন্ধকার ইউরোপ জ্ঞানের শিক্ষা লাভ করল। কর্ডোভার এই ছাত্রারাই ছিল ইউরোপীয় জাগরণের স্থপতি।
সুতরাং আজকের যে ইউরোপ, তার ঘুম ভাংগিয়েছে মুসলমানরাই। আর তাদের এ ঘুম ভাংগার প্রথম গান গেয়েছিলেন মুসলিম সেনাপতি তারিক ইবন যিয়াদ। তিনি গোথিক শাসনের নির্মম নিষ্পেষণ থেকে শুধু স্পেনকেই মুক্ত করেননি,বলা চলে স্মরণাতীত কালের অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকেও তিনি জাগিয়েছেন ইউরোপকে।“ আর তাই এখনও জিব্রাল্টারবাসীর মনে তারিক ইবন যিয়াদ চিরঅম্লান হয়ে আছে।
বিষয়: বিবিধ
১২০৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেই দিন,
সেই জোস,
সেই নেতা , সেই
ঈমানী শক্তি কি আর
আমাদের মাঝে আছে?
সুতরাং আজকের যে ইউরোপ, তার ঘুম ভাংগিয়েছে মুসলমানরাই।এখন মুসলমানরাই ঘুমিয়ে পড়েছে ।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন