The Legend Prof. Gholam Azam

লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লা আল মামুন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:১৭:১৭ রাত

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির কথা স্মরণ হতে শ্রদ্ধেয় শহীদদের কথা মনে পড়ে যায়। তাদের আত্মত্যাগের কথা বার বার ভেসে আসে মায়ের ভাষাকে কতই না ভালবাসে যা বিশ্ববাসীকে আশ্চর্য ও হতভাগ করেছে। দেখিয়ে দিয়েছে যাতে কোন দিন বিদেশী তাঁবেদার এবং দেশীয় চক্রান্তকারীরা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যদি দৌড়ঝাঁপ করে তাহলেই এদেশের জাগ্রত জনতা রুখে দিতে সদা প্রস্তুত। ভাষা সেতো মায়ের মতই মা। জীবন দিয়ে হলেও এর মান যেন রক্ষা করতেই হবে। বৃটিশ সরকারের কাছে সর্বপ্রথম ১৯২১ সালে বাংলা ভাষার লিখিত দাবি পেশ করেন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৯০ লক্ষ। এর মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লক্ষ ছিল বাঙ্গালী মুসলমান। বাকী ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের ভাষা শুধু উর্দুই ছিল না, তবে সিন্ধু পাঞ্জাবী, পস্তু, বালুচ ভাষাগুলো তত উন্নত না হওয়ায় তাদের উর্দুভাষী হিসেবে পরিচিতি ছিল। অথচ তারা সংখ্যালঘু হয়েও বাংলাভাষীদের অর্থাৎ সংখ্যাগুরুদের মেনে নিতে পারেনি। কতই না হীন মনমানসিকতার ও অহংকারী প্রকৃতির পরিচায়ক ছিলেন। যা এখনও হৃদয়ের ছোট্ট কুটিরে বার বার স্মরণ হলেই বুক ফেটে যায়, তাদের প্রতি ঘৃণা জন্মায়। মূলতঃ ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৪৭ সালে এবং যে সংগঠনটি এর পক্ষে জোরালো দাবি জানিয়েছিল তার নাম হল- তমদ্দুন মজলিস। এর নেতৃত্বে ছিলেন প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম। ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি কমিটিও গঠিত হয়েছিল।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পূর্ব পাকিস্তানের গণপরিষদের একমাত্র সদস্য যিনি সেদিন বাংলা ভাষার পক্ষে গণপরিষদে প্রস্তাব করেন। বাংলা ভাষাকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেন এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। অথচ উনার নামে বা স্মরণে কয়টি সেতু, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, বিমান বন্দর ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে সেটাও ভেবে দেখা দরকার।

বাংলা ভাষার দাবি নিয়ে কলকাতার শান্তি নিকেতনে একটি সেমিনারও হয়। সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ প্রস্তাব করেন বাংলা ভাষাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। তখন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাষ্ট্র ভাষা বাংলার বিরোধিতা করেন। অথচ তিনি আমাদের দেশে আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে আছেন। কৌশল করে আমাদের জাতীয় সংগীত লিখেন। যাতে করে মানুষ তার অতীত ইতিহাস ভুলে যান। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভারতে শুধু উপেক্ষিতই নন বরং সেদেশের সিলেবাসে তার নাম সবার নিচে বা মাঝে পাঠ্যক্রমে থাকে।

দিন যতই যাচ্ছিল বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন ততই বেগবান হচ্ছিল। আমাদের দাবি মানতে হবে, আমাদের অধিকার মানতে হবে শ্লোগানে বাংলার আকাশ বাতাস দিন দিন ভারী হয়ে যাচ্ছিল। যে কোন বাধাই যেন গণমুখী আন্দোলনের কাছে টিকবে না। বরং মাথানত করতে বাধ্য হবে, আর হয়েছেও তাই।

১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধান্ত হল ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য ১০ জন, ১০ জন করে মিছিল সহ অন্যান্য নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। পরদিন এদেশের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, চাকরিজীবীসহ অগণিত মানুষ যারা বাংলা ভাষাকে মন দিয়ে, প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন, বাসবেইতো এটি যে তাদের রক্তের সাথে মিশে আছে মায়ের ভাষা। তাই তারা আন্দোলন সংগ্রামে সবার আগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের ঐতিহাসিক আমতলায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে মিছিল করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার অবস্থা ভয়াবহ দেখে ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং তাদের পেটোয়া বাহিনী, পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলী চালায়। যার ফলে দেশমাতৃকার জন্য যারা জীবন দিতে প্রস্তুত শহীদ রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতউল্লাহ্সহ অনেকেই মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাদের রক্তে ঢাকার পিচ ঢালা কালো রাজপথ সেদিন রঞ্জিত হয়েছিল। পরদিন আহত শফিক ও ওলিউল্লাহ্ শহীদ হন। আমরা এ সকল শহীদের গভীরভাবে স্মরণ করি প্রতিবছরই। অনেকে আজ গর্ব চিত্তে ভাষা সৈনিক দাবি করছেন। কেউ আবার খ্যাতি বা সুনাম কুড়াচ্ছেন।

দুঃখের ব্যাপার হলো আমরা আমাদের ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস ভুলতে বসেছি। একটু চিন্তা করা দরকার রাষ্ট্র ভাষা বাংলার পক্ষে কে ১৯৪৮ সালে ২৭ নবেম্বর ডাকসুর জি.এস হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের নিকট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করেন। বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ভাষা আন্দোলনের খসড়া তৈরির দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয় এবং তা অধ্যাপক গোলাম আযম ডাকসুর জি.এস হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে তা পাঠ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে এদেশের ছাত্র জনতার পক্ষ থেকে তা প্রদান করেন। আজকে যারা ভাষা সৈনিক হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন তাদের আমি শ্রদ্ধার সাথে বলতে চাই আপনারা ভাষার জন্য কতবার গ্রেফতার হয়েছিলেন বা নির্যাতন ভোগ করেছিলেন। এই ভাষা আন্দোলনের উত্তপ্ত পরিবেশের জন্য ১৯৪৯ সালে তিনি এম.এ পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেননি। আপনাদের ত্যাগ বা বিসর্জন নিশ্চয়ই উনার চেয়ে বেশি নয়। অথচ অধ্যাপক গোলাম আযমকে বাদ দিয়ে আপনারা কিভাবে ভাষা সৈনিক হিসেবে নিজেদের দাবি করেন বুঝে আসে না। ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্টের নির্বাচনী অভিযানে রংপুর সফরে বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে এক অনুষ্ঠানে পরিচয় করে দিতে গিয়ে এভাবেই বলেন, উনি হলেন আমাদের ভাষা আন্দোলনের নেতা গোলাম আযম। সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানও তাকে সম্মান দিলেন, শ্রদ্ধা করলেন। শুধু তাই নয় মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত উনার বিরুদ্ধে কোন কথা বা বাজে মন্তব্য পর্যন্ত করেননি। কিন্তু বর্তমান সময়ের ভাষা সৈনিকরা যারা অধ্যাপক গোলাম আযমের চেয়ে অধিক নির্যাতন, জেল, জুলুমের শিকার হননি তারা এবং কিছু রাজনীতিবিদ ও তার অনুসারীরা এক মুহূর্তের জন্যও উনার কথা স্মরণ করেন না। বরং ভাষা সৈনিক জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযমকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বাজে ও ন্যক্কারজনক মন্তব্য করেন যা এখনও অব্যাহত আছে। যারা এরকম অন্যায় আচরণ করেন তাদের উচিত বাংলা ভাষা ছেড়ে অন্য ভাষায় কথা বলা। বড়ই দুঃখের ব্যাপার বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। এমনকি ১৯৯১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীর জন্য দোয়া পর্যন্ত প্রার্থনা করেন। তখন তিনি রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, ধর্ষক, লুট ও অগ্নিসংযোগের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন না বা বাংলাদেশের কোন থানায় সাধারণ ডায়েরী, মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল উনাকে ৯০ বছর বা আমৃত্যু পর্যন্ত জেল দিয়েছেন। ভগ্ন ও অসুস্থ শরীর নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে জেলের ঘানি টানছেন। তাহলে বাংলা ভাষায় উনার অবদান কি ভুলে যাবে দেশপ্রেমিক নাগরিক ও তরুণ সমাজ। তার অপরাধ তিনি ধর্মীয় রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। আমি কাউকে খুশি বা কোন দলের পক্ষ হয়ে লিখছি না। শুধু আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও বিবেকের দায়ে দায়বদ্ধ হয়ে সঠিক ও সত্য কথাগুলো লিখছি মাত্র। আসলে মানুষ গুণের কদর করতে চায় না, যে দেশে গুণের কদর নেই সেই দেশে গুণী জন্মাতে পারে না। এটাই সত্য এবং বাস্তবতা, তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবতা অবলম্বন করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্যও বটে।

তাহলে বলতে হয় বাংলা ভাষার জন্য স্মারকলিপি কি তিনি দেন নি? এবং শেখ মুজিব সাহেব যে উনাকে ভাষা আন্দোলনের নেতা বলেছেন তা সঠিক হয়নি। তিনি ডাকসুর জি.এস ছিলেন না, বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী মিথ্যে বলেছেন। শেখ মুজিব সাহেব যদি বেঁচে থাকতেন অবশ্যই অধ্যাপক গোলাম আযমকে প্রধান ভাষা সৈনিক হিসেবে পুরস্কৃত করতেন। এই জন্যই মহান মনীষী ফাউলার যথার্থই বলেছেন, মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষাই হল মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী। বর্তমান যুগের ছাত্র সমাজ যারা এদেশের গর্ব তাদের সামনে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে না। যেটুকু হচ্ছে তা স¤পূর্ণ বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা, বিকৃত ও বানোয়াট ইত্যাদি। এটা অত্যন্ত লজ্জাকর ও দুঃখের বিষয়। যারা ভাষার জন্য আন্দোলন করেছিলেন মূলতঃ বাংলা ভাষা এবং এর সর্বত্র ব্যবহারই ছিল তাদের কঠিন শপথ ও সংগ্রাম। অথচ ভাষা দিবস বাংলা মাসের ৮ই ফাল্গুন না হয়ে অর্থাৎ বাংলায় তারিখ নির্ধারণ না করে ২১শে ফেব্রুয়ারি রাখা হল। এটা কি শহীদদের অমর্যাদা করা হয়নি? তাদের নামের পাশে কলঙ্কতম অধ্যায় সৃষ্টি করার জন্য দায়ী কারা? সেটাও ভাবতে হবে। ভাষার জন্য যারা জীবন দিলেন তাদের আত্মা তখনই শান্তি পাবে যখন বাংলা ভাষার ব্যবহার দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে এবং এর সঠিক ব্যবহার হবে। সভা, সেমিনার, বিচারপতিদের মামলার রায়, বক্তৃতা, বিভিন্ন প্রোগ্রামে বাংলা ভাষার ব্যবহার ঠিকমত করা হচ্ছে না। বিচারপতিরা যদি বাংলায় মামলার রায় লিখেন তাদের দোষের কিছু নয়। বরং শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো এবং নিজস্ব সংস্কৃতির মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার একটি প্রয়াস মাত্র। পাশ্চাত্যে সংস্কৃতি আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। যেখানে বাংলায় কথা বলা, ভাষণ, বক্তৃতা দেয়া দরকার সেখানে প্রয়োজন ছাড়া এর পাশাপাশি ইংরেজি ব্যবহার করছে। বিশেষ করে মোবাইলে রিংটোন হিন্দি, উর্দু ইংরেজি গানে বাজার ছেয়ে গেছে। কয়েক বছর আগে ভাষা আন্দোলনের মাসে বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান এবং ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে বাংলাদেশে যে অপসংস্কৃতি এদেশের মানুষ দেখেছে তা সত্যিই একটি সভ্য দেশের জন্য অপমানজনক। গত বছর বিপিএল এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যে নগ্ন অপসংস্কৃতি দেখানো হলো যা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার শামিল এবং ভাষা শহীদদের চরম অবমাননা। শহীদরা বেঁচে থাকলে এর প্রতিবাদ করতো। আবারও আন্দোলন সংগ্রাম করত। কিন্তু এখনকার ভাষা সৈনিকরা এক মুহূর্তের জন্যও সামান্যতম প্রতিবাদটুকু করেন না। কবি বলেছেন, দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়, নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়। আমাদের বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ১৯৯৯ সালের ১৭ নবেম্বর। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে খুশি হওয়ার কিছুই নেই। কারণ তাদের দাপ্তরিক ছয়টি ভাষার সাথে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও স্থান দেওয়া হয়নি। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ২৫ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। শুধু তাই নয় সিওরালিয়ন নামক আফ্রিকার ছোট্ট দেশটি পর্যন্ত বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তাদের ভাষার পাশাপাশি আমাদের বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে বাংলা ভাষার ব্যবহার ছড়িয়ে আছে। ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার ইতিহাস বিশ্বে কোথাও নেই। অথচ জাতিসংঘ বাংলা ভাষাকে সঠিক মর্যাদা ও রক্ষণাবেক্ষণের কথা ভাবছেই না। আসলে তাদের কাজই হলো পৃথিবীতে অশান্তি, হানাহানি, জুলুম ও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে দুর্বল দেশগুলোকে চাপে রাখা এবং উন্নত দেশগুলো বা শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা অক্ষুণœ রাখা। সত্য কথা বলতে মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিলেন তাদের পরিবারের খোঁজ খবরও কেউ নেন না। শহীদ জব্বারের স্ত্রী ও সন্তানরা আর্থিক অভাব ও অনটনে দিনযাপন করছেন যা দেখার কেউ নেই। এরকম অনেক শহীদ পরিবার অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। বছর ঘুরে এলেই শুধুমাত্র খালি পায়ে হাঁটা, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা, দোয়া, ক্রেস্ট ও মিষ্টি বিতরণ ইত্যাদি এমন স্মরণের কোন ভিত্তি নেই। কবি বলেছেন, কবিকে কেউ গ্রহণ করতে চায় না। বরং তার কবিতাকে বা অর্জনকে সবাই সাদরে গ্রহণ করে নেয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলা ভাষার প্রতি এদেশের মানুষের প্রবল যে ইচ্ছা পৃথিবীর অন্য কোথাও এরকম নেই। আর সেই ভাষাকে আজ অগ্রাহ্য ও অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রকৃত মর্যাদা দাবি করছি। অফিস আদালত, স্কুল, কলেজ, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার প্রয়োগ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বাস্তবে তা প্রয়োগ করার মনমানসিকতা থাকতে হবে। ভাষা শহীদদের নামে বিভিন্ন রাস্তাঘাট, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান, একাডেমি, লাইব্রেরি, ফাউন্ডেশন, ব্রিজ, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, বিমান বন্দর ইত্যাদি গড়ে তুলতে হবে। তবেই তারা চিরদিন এদেশের আপামর জনসাধারণের হৃদয়ে ঠাঁই করে দিবেন এবং স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন। মুক্তিযোদ্ধারা মাসে মাসে যেমন ভাতা পায় তেমনি ভাষা শহীদদের পরিবারের জন্যও এর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে তাদের মা, ভাই-বোন, স্ত্রী, সন্তান, তাদের প্রিয়জনকে হারানোর দুঃখ ও বেদনা সামান্য কিছুটা হলেও দূর হয়। এটা তাদের জন্য দয়া বা অনুগ্রহ নয় বরং তাদের প্রাপ্য অধিকার। সরকারের উচিত সত্যিকারের ভাষা সৈনিকদের তালিকা তৈরি করে তাদের যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া। কে কোন দল করে সেটা মুখ্য বিষয় নয়। বরং স্বজনপ্রীতি করার মনমানসিকতা বাদ দিতে হবে। তবেই ভাষা আন্দোলনের সার্থকতা ফুটে উঠবে এবং এর সোনালী অধ্যায়, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ত্যাগ ও কুরবানী বা বিসর্জন ইত্যাদি নিয়ে এদেশের মানুষ জানতে আগ্রহী হয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। যার ফলে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল বীর সেনানিদের সশ্রদ্ধচিত্তে এদেশের মানুষ আজীবন স্মরণ করবে। অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে দেশকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের রুখে দিতে প্রেরণা পাবে।

বিষয়: রাজনীতি

১৪০৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360079
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৭:৪৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৯
298464
আবদুল্লা আল মামুন লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File