Teen Age

লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লা আল মামুন ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৪:৫৫:২১ রাত

ভোর হল মসজিদ থেকে ভেসে আসছে

ফজরের আযান।আযান মানেই মধুর এক সুর।

আযানের সুর কানে বাজতেই ঝটপট

বিছানা থেকে উঠে অযু করে নামাজ

পড়ার জন্য মসজিদে চলে গেল ফাহিম।

নামাজ শেষে বাড়ীতে এসে এক কাপ চা

খেয়ে চলে গেল রাশেদকে খুজতে। রাশেদ

আর ফাহিম দুজনেই একে অপরের প্রান

প্রিয় বন্ধু। ছোটবেলা থেকে দুজন এক

সাথে বড় হয়েছে একসাথে

পড়ালেখা,খেলা-ধুলা সহ সব করেছে।

আজ রাশেদের জন্মদিন তাই সকাল সকাল

রাশেদকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা

জানানোর জন্য বাড়ী থেকে বেড়িয়ে

পড়ল ফাহিম। কিন্তু একি সারা গ্রাম

ঘুরেও রাশেদকে কোথাও খুজে পাচ্ছেনা

ফাহিম। আজ ফজরের নামাজ পড়তেও

যায়নি রাশেদ। তাহলে গেল কোথায়

রাশেদ? ফাহিম ভাবছে আর বাড়ীর

দিকে হাটছে। হঠাত্ ফাহিম দূর থেকে

দেখতে পেল গ্রামের বটতলায় বসে আছে

রাশেদ। তাই দেখে ফাহিম দৌড়ে গেল

বটতলায় রাশেদের কাছে। কিন্তু একি

এসব কি দেখছে ফাহিম। রাশেদ বসে বসে

সিগারেট!! যেই রাশেদ পাচঁ ওয়াক্ত

নামাজ পড়ে,আর সিগারেটের ধোঁয়াটাও

সহ্য করতে পারেনা। সে কিনা আজ

নিজেই সিগারেট খাচ্ছে। ফাহিম এসব

কি দেখছে,ও যেন নিজের চোখকেই

বিশ্বাস করতে পারছে না। রাশেদের

এমন কান্ড দেখে ফাহিম রাশেদকে

জিজ্ঞেস রাশেদ এসব কি? কি করছি

এসব?তুই সিগারেট খাচ্ছিস? রাশেদ:হ্যা

সিগারেট খাচ্ছি,তাতে কি হয়েছে?

ফাহিম:এসব কি বলছিস?আজ তোর

জন্মদিন তাই আমি সকাল থেকে তোকে

খুজতেছি। আর তুই এখানে বসে সিগারেট

খাচ্ছিস। আবার বলিস কি হয়েছে।

রাশেদ:ছাড়তো,আমার আবার জন্মদিন!

ফাহিম:কেন রে কি হয়েছে তোর?

রাশেদের চোখে পানি টলমল করছে।

ফাহিম আবার জিজ্ঞেস করল রাশেদ

তোর কি হয়েছে? এবার কান্নার সুরে

বলতে লাগল রাশেদ "কি হয়নি বল?

কিসের জন্মদিন পালন করব বল? এখনও

প্রতিদিন যখন দেখি আমার মা এক বেলা

খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে। খাবারটা

আমায় দিয়ে বলে খেয়েনে বাবা,আমি

খেয়েছি। এখনও যখন প্রতিদিন দেখি

আমার বাবা ছেঁড়া শার্টটা পড়ে অফিসে

যায়। আর জিজ্ঞেস করলে বলে ও কিছুনা

একটু ছিড়ে গেছে। তোর মা সুন্দর করে

সেলাই করে দিয়েছে। এটা কিছুনা।

এদিকে বাবা-মা এত কষ্ট করে আমাকে

বড় করেছে। কত স্বপ্ন নিয়ে আমাকে পড়া

লেখা করিয়ে এম.এ পাস করিয়েছে।

কিন্তু আমি ওদের জন্য কি করতে

পেরেছি। এম.এ পাস করে গত ২টা বছর কত

জায়গায় ঘুরেছি একটা চাকরির জন্য।

কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্বেও কোথাও

কোন চাকরি পায়নি। বলতে পারবি

ফাহিম,আমাদের এই নিম্ন মধ্যবিত্ত আর

মধ্যবিত্ত ঘরের লোকজনের সাথে কেন

এমনটা হয়। কেন মধ্যবিত্তদের ঘরে এত

কষ্ট,কেন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানরা মেধা

থাকা সত্বেও ভাল কিছু করতে পারেনা।

আচ্ছা বল তো মধ্যবিত্ত হয়ে জন্মানোটা

কি পাপ? যদি পাপই না হবে তাহলে এত

কষ্ট কেন আমাদের? ফাহিম চুপচাপ বসে

রাশেদের কথাগুলো শুনছিল। রাশেদের

কথাগুলো শুনে কখন যেন নিজের

অজান্তেই চোখে পানি এসে পড়ল

ফাহিমের। ফাহিম কি জবাব দেবে

আসলেই কথাগুলো তো চির সত্য।

 জীবন যুদ্ধে কিছু পরাজিত বলকের গল্প ঠিক এমন হয়। কিন্তু আমরা যদি প্রেক্ষাপট ঘুরে দেখি। তাহলে দেখব সেখানে ছিল হতাশার নীল ছায়া। জীবনকে তার গন্তব্য স্থানে না নিয়ে হতাশার মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে কি জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়? না, পাওয়া যায় না। বরং জীবন হয়ে যায় গন্তব্য বিহীন পথিকের মতো। রাশেদ তার জন্মকে আজন্ম পাপ ভাবছে। কিন্তু কেন? তার জন্মের স্বার্থকতা আছে। আছে তার বেঁচে থাকার অধিকার। মানুষ সামান্য কষ্ট পেলে তার অনাগত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ভুলে যায়। যা সাধারণত তেরো থেকে উনিশ বছরের বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। নিজেকে নেশার মধ্যে ডুবিয়ে কি জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়। তা কখনো সম্ভব নয়। রাশেদের মতো হাজারো তরুণ দিশাহীন চোখ দিয়ে ভবিষ্যৎ না দেখে নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে এক অন্ধকারে। তাদের কে দেখাতে হবে অন্ধকারে রাস্তা খুঁজে বের করে নিজের আসল গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। তবেই আসবে জীবনের আসল স্বার্থকতা।

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File