প্রেরণায় ভাস্বর এক কিংবদন্তি শহীদ আবদুল মালেক
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লা আল মামুন ১৫ আগস্ট, ২০১৫, ০২:২২:১৩ দুপুর
শহীদ আবদুল মালেক ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও বীর সেনানী। শহীদ আবদুল মালেক একটি নাম, একটি প্রেরণা, একটি বিশ্বাস, একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস, একটি মাইলস্টোন। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে ১৯৬৯ সালে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে কথা বলতে গিয়েই ঢাকায় ইসলামবিদ্বেষী সেকুলারপন্থীদের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ১৫ আগস্ট শাহাদত বরণ করেন ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক শহীদ আবদুল মালেক। শহীদ আবদুল মালেক ভাইয়ের শাহাদতের তাৎপর্য ছাত্রসমাজের কাছে তুলে ধরা এবং তাঁর আত্মত্যাগ থেকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনুপ্রাণিত করার নিমিত্তে ইসলামী ছাত্রশিবির এ দিনটিকে ‘ইসলামী শিক্ষা দিবস’ হিসেবে প্রতি বছর পালন করা আসছে।
শহীদ আবদুল মালেকের শাহাদতের প্রেক্ষাপট ও ঘটনাঃ
১৯৬৯ সালে পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক গণ-অভ্যুত্থান দেখা দেয়। ফলে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে এবং জেনারেল ইয়াহিয়া ক্ষমতার মঞ্চে আরোহণ করেন। এরই এক পর্যায়ে এয়ার মার্শাল নূর খানের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দেয়। ছাত্রসমাজের একটি অংশ ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের দাবি তুলে। শহীদ আবদুল মালেকসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এয়ার মার্শাল নূর খানের সাথে সাক্ষাৎ করে দেশে সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর দাবি করেন। শহীদ আবদুল মালেকের প্রতিনিধিদলের পর দেশের অন্যান্য আরো সংগঠন একই দাবি তুলে। সবার দাবির মুখে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সরকার নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। এটি ছিল পাকিস্তান আমলের গঠিত সর্বশেষ শিক্ষা কমিশন। গঠিত শিক্ষা কমিশন একটি শিক্ষানীতিও ঘোষণা করে, ঘোষিত শিক্ষানীতিতে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও এতে ইসলামী আদর্শের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু আপত্তি তোলে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধ্বজাধারীরা। তারা এ শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি জানায়। এমনই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কী হবে তা নিয়ে জনমত জরিপের আয়োজন করা হয়। জনমত জরিপের অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালের ২ আগস্ট "National Institute of Public Administration" (NIPA) এর উদ্যোগে সরকারের পক্ষ থেকে ‘শিক্ষার আদর্শিক ভিত্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন আবদুুল মালেক সেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করে মাত্র পাঁচ মিনিটের বক্তব্যে বামপন্থী সকল ছাত্রসংগঠনের সকল যুক্তিকে হার মানিয়ে উপস্থিত সবার চিন্তার রাজ্যে এক বিপ্লবী ঝড় সৃষ্টি করে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে জনমত সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। ফলে সভার মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ ইসলামী শিক্ষার পক্ষে মতামত প্রকাশ করায় সেকুলার মহল মরিয়া হয়ে ওঠে। ছাত্রদের এ মতামতকে বানচাল করার জন্য পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে ডাকসু কর্তৃক ১২ আগস্ট আরো একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এর মূল আয়োজক ছিলেন বামপন্থী শিক্ষকরা। তারা সেখানে আবদুল মালেককে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আবদুল মালেক তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে টিএসসির আলোচনা সভাস্থলেই তার প্রতিবাদ করেন। এই প্রতিবাদ সংঘর্ষে রূপ লাভ করে। সংঘর্ষ এক পর্যায়ে থেমে যায়। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে আবদুল মালেক ও তার কতিপয় সঙ্গীকে টিএসসির মোড়ে সেকুলারপন্থীরা হামলা করে এবং রেসকোর্সে এনে তার মাথার নিচে ইট দিয়ে ওপরে ইট ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে এবং অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে চলে যায়। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথভাবে এ পরিকল্পিত হামলার নেতৃত্ব দান করে। আবদুল মালেক ভাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তার আঘাত এতটাই মারাত্মক ছিল যে, ১৫ আগস্ট তিনি শাহাদত বরণ করেন। ইসলামী শিক্ষার পক্ষে শহীদ আবদুল মালেকের অবস্থানের যৌক্তিকতাশিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে একটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত করার প্রধান সোপান, জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি, জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, জনগণের মধ্যে চিন্তা ও কর্মের বিভাজন দূরীকরণের সহায়ক শক্তি এবং জাতীয় মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নের রূপকার। জনগণের সকল প্রকার আর্থ-সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উদ্দীপক ও প্রেরণাদানকারী শক্তি হিসেবেও কাজ করে শিক্ষাব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, জনগণকে তার সর্বোচ্চ ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত করণে শিক্ষাব্যবস্থার অপরিসীম ভূমিকা থাকে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনে শিক্ষাব্যবস্থা অদম্য প্রত্যয় সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে শক্তি জোগায়। মূলত শিক্ষাব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে একটি দেশের গোটা জাতীয় সত্তার কাঠামো। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত না হওয়ায় আমাদের জাতীয়
বিষয়: বিবিধ
৯৫৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন