মা....
লিখেছেন লিখেছেন উকিল চাচা ম্যাট্রিক পাশ ১৩ মে, ২০১৫, ১২:১৮:১৪ রাত
প্রসব বেদনা বড় কষ্টের, তবু মা'য় করে চুপ
নাড়িছেড়া ধন নয়ন মেলিবে ফুটফুটে চাঁদমুখ;
শত অপেক্ষার অবসানে আজ হাসবে আবার ধরা
বহুদিন পর ঘুচবে মায়ের বন্ধ্যাত্বের খরা;
জন্মের পর প্রথম মা'য়ে নিল তার কোলে তুলি
কতনা সোহাগে জড়িয়ে ধরেছিল প্রসব বেদনা ভুলি;
জাদু আমার, মানিক আমার মিষ্টি গোলাপ ফুল
কতনা উপমায় ডেকেছিল মা'য়ে নেই তার কোন কূল;
সর্বদা মা'য়ে রাখত খেয়াল যদি অঘটন কিছু হয়
কি করে নিজেকে সামলাবে মা'য়ে এই ছিল তার ভয়;
বর্ষার জলে পেছনের খাল হত টইটুম্বুর
চিন্তায় মা'র ঘুম হতনা, ভাবত রাতদুপুর;
খোদা না করুক,যদি কোনভাবে, খোকা যায় জলে পড়ে
সাঁতরায়ে সে কি পারবে বাঁচতে?সাধ্যি কি কূল ধরে;
গ্রীষ্মের সেই কাঠফাঁটা রোদে হতে দিতনা বাহির
শুনাতো মা'য়ে শিয়রে শুয়ায়ে কত জ্ঞান করত জাহির;
রৌদ্রের তাপে চুল পড়ে যায়,চামড়া যায় রোদে খসে
তার চেয়ে ভাল,ঘরে বসে খোকা,খেলে যাও অনায়েসে;
কৈশোরেও মায়ের দিব্যি খেয়াল,দিব্যি যত্ন ঢের
এই বুঝি খোকা না খেয়ে পালালো,মাঠ পানে হল বের;
পাড়ার মাঠে ফুটবল খেলে রোজ ভাঙ্গিতাম পা
সেই ভাঙ্গা পায়ে রাত্তিরে বসে মলম লাগাত মা;
শাসাত মা'য়ে,- আর যদি দেখি গেছ ওই পোড়া মাঠে
কাল থেকে তোমার দরোজা বন্ধ,থাকো তুমি পথে ঘাটে;
আমি কি ডরাতাম মায়ের বকুনি?তবু খেলতাম ফাল
রাত্তিরে মা'য়ে করত মালিশ আর দিত গালাগাল;
নাওয়া-খাওয়া নিয়ে কত অভিযোগ দিত মা'য় বাবার কানে
সব শুনে বাবা মুচকি হাসত, চেয়ে মোর মুখ পানে;
মা'র খোকা আর ছোট ছিলনা, যুবক হয়েছে সে
খুশিতে মায়ের বুক ভরে যায়, সে গর্বিত মা যে;
ছেলে তার এখন দিব্যি বড়,চুকিয়েছে সব পাঠ
ঘরের ছেলে ফিরবে ঘরে,দাপাবে মাঠ ঘাট;
কত স্বপ্ন মায়ের দু'চোখ জুড়ে,সময় ফারাক শুধু
ঘোমটা মুখে লাল টুকটুকে আসবে পুত্রবধূ;
এখানেই শেষ নয়-
রোজ চিঠি লিখে বলত মা'য়ে,- 'খোকা,বাড়ি এলে কি হয়?'
চিঠির উত্তরে দেখাতাম আমি এটা ওটা অজুহাত
অভিমানী মা'য় বলত আমায়,- 'মা হওয়াই অপরাধ'
বহুদিন মা'য়ে লিখেনা চিঠি,নেয় না খোঁজখবর
অজানা কোন এক ভয় এসে হায় ঘিরে বসে অন্তর;
আচমকা এক চিঠি হাতে আসে বাবার নামের পরে
লিখেছে বাবা,- 'খোকা রে তুই, জলদি ফির আয় ঘরে;
যেদিন আমি বাড়ি ফিরেছিলাম, সেদিন চৈত্রমাস
উঠোনের কোণে একদল লোকে কাটছিল কাঁচা বাঁশ;
আর একপাশে চাচী-জেঠি মিলে কাঁদছে বিলাপ সুরে
'বড় ভাল ছিল, খোদা যেন তারে বেহেস্ত নসীব করে' ;
মুচড়ে উঠল মন-
কি হল এখানে? বুঝিনা কিছুই, কেন এই আয়োজন?
দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বাবা দাঁড়িয়ে ঠাঁয়
প্রাণটা আছে,নি:শ্বাসও আছে, তবু যেন তিনি নাই;
ঘরের পানেতে তাকাতেই যেন বজ্র পড়ল গায়
ঘরের মেঝেতে উত্তর-দক্ষিনে শুয়ে আছে মোর মা'য়;
নরম কাপড়ে মায়ের মুখখানি রাখা হয়েছিল ঢাকা
সেটি দেখে আমি মূর্ছা গেলাম,যায়নি দাঁড়িয়ে থাকা;
প্রায়ই মা বলত,- 'থাকতে পারবি মাকে তুই না দেখে?
যদি চলে যাই না ফেরার দেশে,তোকে আমি একা রেখে?
সত্যি সত্যিই চলে গেল মা'য়, না ফেরার সেই দেশে
কেউ আর বলেনা,- 'আয় খোকা খাবি' একটুখানি হেসে;
মায়ের স্মৃতি রেখেছি বুকেতে আদর যত্নে বাঁধি
মা'র কথা রোজ মনে করে আমি আজো সিজদাতে কাঁদি;
নিশুতি রাতে ঝরঝর করে অশ্রু ফোয়ারা ঝরে
মাগো! কি করে বোঝাবো, প্রতি মূহুর্তে তোমাকেই মনে পড়ে;
বিষয়: সাহিত্য
১৭০৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"মা জননী"
দিল মোহাম্মাদ মামুন
মাগো, তুমি কেমন আছো?
জীবন বাজী রেখে আমায় ভুমিষ্ট করেছো!
অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়
নোংরা হয়ে যেতাম বার বার,
শত কাজ ও কষ্টের মাঝেও
পরিষ্কার করতে যে আবার!
লালনপালন করেছো তুমি,দিয়েছ সেবাযত্ন,
পৃথিবীতে আছে যে আমার, মা নামের এক রত্ন।
আমার অসুস্থতায় তোমার হাসিমাখা মুখ, হয়ে যেত ম্লান
তুমিই মা সবার সেরা, আমার প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
অনেক কষ্ট দিয়েছি মাগো, তবুও আমি তোমারি সন্তান
রোজহাশরে কিভাবে হবো, মহান প্রভুর সামনে দন্ডায়মান।
অভিশাপ দিওনা মাগো, তুমিই আমার গর্ব
রাসূল বলেছেন, তোমারি পদতলে আমার স্বর্গ।
শিখিয়েছিলে আদবকায়দা, দিয়েছিলে আমায় জ্ঞান
জীবন দিয়ে রক্ষা করবো, মাগো তোমার সন্মান।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
যাযাকাল্লাহু খাইরান......
আমি এক দু:খিনী মায়ের অযোগ্য-অবাধ্য সন্তান!
তাঁর মনে যে কত দু:খ, কত কষ্ট সন্তানদের জন্য,
কোন সন্তান যেন আমার মত না হয়, সেজন্য কিছু কথা খুলে বলছি।
মায়েরা তাদের সন্তানকে ভালো মানুষ করতে কী ধরনের ত্যাগ স্বীকার করেন
আমি তা কাছে থেকে দেখেছি।
শৈশব কৈশোর ছিল আমাদের জন্য স্বপ্নের মত,
মা-বাবা সংসারের ঘানি টেনে টেনে সংসার নামক জীবন বিশাল তরীকে নিয়ে
তরঙ্গ-বিক্ষুব্ধ সাগরের মুখোমুখি। শক্ত হাতে হাল ধরে
সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আজ বার্ধক্যে উপনীত।
কড়া শাসনে থেকে বড় হওয়া সন্তানরা আজ সবাই তাঁর অবাধ্য
মায়ের কথা কেউ শোনে না,
ভাবি, কেন সন্তানেরা মায়েদের অবাধ্য হয়?
আজীবন কি চোখের পানি আঁচলে মোছার তরে?
কী নিষ্ঠুর! কী পাষন্ড! কী অমানবিক?
প্রতিদিন সকাল বেলা যখন নাস্তা সেরে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হই
মা তাঁর রুমের মধ্যে থাকলেও কান থাকে আমার দরজায়,
আমি কখন বের হই সেজন্য।
দরজা খোলার শব্দ হয়, এগিয়ে আসে মা,
দরজা বন্ধ করে বেলকনির পাশে এসে দাঁড়ায়,
রাস্তার দিকে চেয়ে চেয়ে থাকে যতক্ষণ না চোখের আড়াল হই।
সারাদিনের কর্মব্যস্ততা সেরে বাসায় যখন ঢুকি
মা যেখানে থাক না কেন দৌড়ে আসে। তাঁর পাশে যাই,
মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়,
কী যেন বুঝতে চায়?
হাসিমুখ দেখলে কিছু শুধায় না, যেন মা বুঝতে পারে
দিনটা ছেলের ভালয় ভালয় কেটেছে, মন স্বস্তি পায়।
যদি চেহারার মাঝে মলিনতা দেখতে পায়
দরদমাখা কন্ঠে জানতে চায়।
আমি সচরাচর কিছু বলি না।
বাহির থেকে সন্তানেরা আসলে মায়েরা সন্তানেরা হাতের দিতে তাকায় না,
মুখের দিখে তাকায়, বুঝতে চায় তাঁর বত্রিশটি নাড়ি ছেঁড়া ধনের
কোন অশুভ কিছু হয়েছে কি না?
মায়ের মন তো সব বুঝতে পারে
কোন অশুভ কিছু হলে মায়ের যেন আগেই জানা হয়ে যায়।
আচ্ছা, প্রতিটি মা কি এমনই হয়?
মন্তব্য করতে লগইন করুন