'আমি এবং অন্যান্য'

লিখেছেন লিখেছেন উকিল চাচা ম্যাট্রিক পাশ ০৯ মে, ২০১৫, ০১:২৬:১৪ দুপুর

বাসা থেকে টিএসসি যাচ্ছিলাম।

বাসে আমার পাশের সিট খালি।একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক আমার পাশে এসে বসলেন।বয়স আনুমানিক ৪২/৪৫।স্বাভাবিকের চেয়ে একটু মোটা আর ফর্সা।ভদ্রলোকের সাথে একটি মোটা ব্রিফকেস।ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তুলেছেন হয়ত।

ভদ্রলোক বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন।তার তাকানোতে এক ধরনের আগ্রহবোধ স্পষ্ট।

আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে অল্প একটু হাসলাম।হেসে বললাম,- 'আঙ্কেল, একটি সিগারেট হবে? এরকম বোরফুল জার্নিতে আমার সিগারেট খেতে হয়।বাট, আমি সিগারেট নিতে ভুলে গেছি'।

ভদ্রলোক কিছুক্ষন একদম নিশ্চুপ।কোন কথাই বলেন নি।আমার প্রতি এতক্ষনের ভাল আইডিয়াটা মূহুর্তেই পাল্টে গেল।

বললেন,- 'কি বললে? সিগারেট?তুমি জানো আমার তোমার বয়েসী একটা ছেলেও আছে?'

-- আরে থাকলে সমস্যা কি? এমন তো না যে আপনার ছেলে একদম পুরোদস্তুর মহাপুরুষ।সিগারেটও খায় না,কোন মেয়ের ওড়না ধরেও টান দেয় না'।

- Stop this, nonsense!

বেচারা পুরোদমে রেগে গেছেন।এরকম মোটকা মানুষগুলো রাগলে তাদের আরো বেশি মোটা লাগে।অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় তার মুখবর্ন ধীরে ধীরে লাল হয়ে যাচ্ছে।দারুন লাগছে আমার।

- আরে, এত কথা বলছেন কেন? সিগারেট থাকলে দেন, নাহয় সাইড নেন মিয়া'।

-- এই ছেলে, তুমি জানো আমি কে?

- (রাগি গলায় চিৎকার করে বললাম) আপনি জানেন আমি কে? এটা আমাদের এলাকা।একদম মুন্ডু কেটে নিয়ে বস্তা ভরে জানালা দিয়ে ফেলে দেব'।

উনি থেমে গেলেন।হয়ত ভয় পেয়েছেন।কিন্ত ভিতরে যে রাগে গিজগিজ করছেন তা বোঝা যাচ্ছে।বাসশুদ্ধলোক থ হয়ে আছে আমার ব্যবহার দেখে।ওরা ধরে নিয়েছে আমি কোন মাস্তান টাইপের কেউ হব হয়ত।কারো মুখে কথা নেই।

সবাই জানে, টিএসসি এবং আশপাশের এলাকাটা মাস্তানদের অভয়ারন্য।

এখানে অপরাধীর অপরাধের প্রতিবাদ করলে উল্টো লাঞ্চিত হতে হয়।তাই, সবাই নিজ নিজ জায়গায় নিশ্চুপ।

আমি শার্টের কলার উঁচু করে বললাম,- 'আচ্ছা সিগারেট না থাকলে ম্যাচটা দেন।সিগারেটের ব্যবস্থা আমি করছি।ভয় পাবেন না।আপনার গায়ে আগুন দিবোনা'।

এটা বলে আমার সামনে বসা কিছু ইয়ো ইয়ো টাইপের ছেলেদের একজনকে বললাম,- 'বস, সিগারেট দেন।সুখটান দেই'।

এদের কয়েকজনকে আমি চিনি,সবাইকে না।এলাকায় মাস্তানি করে।

এমনভাবে বলেছি যাতে লোকটা মনে করে এরা আমার দলের লোক।আর ছেলেগুলাও যাতে আমাকে সমীহ করে।যেন মনে করে আমি টিএসসি এলাকার কোন মাস্তান গ্যাঙের নামকরা মাস্তান।

মজার বিষয়, বলার সাথে সাথে তাদের একজন আমাকে একটা বেনসন সিগারেট দিয়ে বলল,- 'নেন ভাইজান'।

কথার মধ্যে একরকম ভক্তি ভক্তি ভাব।

ছেলেটা বলল,- 'ম্যাচ দিমু?'

- উহু, ম্যাচ আঙ্কেল দিবে।কি আঙ্কেল? ম্যাচ দেন?সিগারেট খামু!

লোকটা রাগে,অপমানে ফুঁসছে,কিন্ত কিছু বলতেও পারছেনা,সইতেও পারছেনা।

ভেবে নিয়েছে, উনি কোন মাস্তানের আড্ডায় ঢুকে পড়েছেন।গাড়ির সবাই মাস্তান,আর আমি তাদের লিডার।

এও হয়ত ধরে নিয়েছেন যে, আজকে তার টাকা শেষ, সাথে প্রানটাও।

আমি ধমকের সুরে বললাম,- 'ম্যাচ দিবেন কিনা?'

বেচারা খানিকটা চমকে উঠলেন।কিন্ত কিছুই বলছেন না।

আমি আমার হাতের বেনসন সিগারেটটা উনার মুখের সামনে ধরে দু'টুকরো করে বললাম,- 'চুদুরবুদুর করলে ঠিক এরকম দু'টুকরো করে ফেলব।মানুষ চিনেন?'

ভদ্রলোক পুরোই ভড়কে গেলেন।চেহারায় অসহায়ত্ব স্পষ্ট।কান্না কান্না ভাব দেখা যাচ্ছে,লাজ-লজ্জার ভয়ে কাঁদতে পারছেন না।

টিএসসির একটু আগে বাসটা থামল।

বাস থেকে মোট ৬ ছয়জন যুবক ছেলে নেমে গেল।

তাদের মধ্যে আমাকে বেনসন সিগারেট দেওয়া ছেলেটাও আছে।

নামার সময় তারা কেউই বাসের ভাড়া দেয়নি।

আশ্চর্য হলেও সত্য যে, বাসের হেল্পার ওই ছেলেগুলোর কাছে টাকাও খোঁজেনি।এমনও না যে, তারা ভাড়া আগে দিয়ে দিয়েছে।

তার মানে, এরা এখানকার চিহ্নিত মাস্তান যারা নাস্তা খেয়ে বিল দেয়না, গাড়িতে চড়ে ভাড়া দেয়না।পুরো এলাকাটা ওদের জন্য মগের মুল্লুক।

টিএসসির কাছাকাছি বাস চলে এল।

আমি ভদ্রলোকের দিকে লজ্জায় তাকাতেই পারছিনা।কোনরকমে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে,উনার ডান হাতটা ধরে ফেললাম।

উনি একটু বেশিই ভয় পেয়ে গেলেন।

আমি বললাম,- 'প্লিজ আঙ্কেল, ঘাবড়াবেন না।

আমি মাস্তান বা এই টাইপের কেউই নই।কিছুক্ষন আগে যে ছেলেগুলো নামল ওরা এখানকার চিহ্নিত মাস্তান।আমি আপনার সাথে এইরকম অভিনয় না করলে ওরা সামহাউ আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করত।ওরা ভেবেছে, আমি অন্য কোন গ্রুপের লোক।আর, আপনি ওই গ্রুপের টার্গেট।তাই ওরা নেমে গেছে।আমার মিসবিহেইভের জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।প্লিজ, মাফ করবেন'।

উনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে কি হচ্ছে।

গাড়ি টিএসসি এসে থামল।আমি পেছন থেকে ব্যাগ বের করে কাঁধে ঝুলিয়ে নেমে যেতে লাগলাম।

একটু এগুতেই ভদ্রলোক পেছন থেকে বললেন,- 'এই ছেলে, সিগারেট নিয়ে যাও'।

আমি একটু মুচকি হাসলাম।

বললাম,- 'উহু,, আমি সিগারেট খাই না'।

উনার মুখেও একটা হাসির রেখা দেখলাম।

কে জানে, হয়ত কৃতজ্ঞতাবশত হাসার চেষ্টা করলেন।

বিষয়: সাহিত্য

৯৭৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

319074
০৯ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫০
শেখের পোলা লিখেছেন : বিরল অভিজ্ঞতা হল৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File