মাকে নিয়ে মক্কাতুল মুকাররমা ও মদিনাতুল মুনাওয়ারাহ সফর-(০৭) রায়হান আজাদ
লিখেছেন লিখেছেন রায়হান আজাদ ১৯ মে, ২০১৫, ০৫:৪৯:১৬ বিকাল
২৪ এপ্রিল জুমাবার। মসজিদে নববীতে আজ টার্গেটের জুমা। আমি মায়েদের নিয়ে এগারোটায় হাজির। বিশাল আয়তনের মসজিদে নববীতে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। মহিলাদের জন্য নির্ধারিত নামাযের জায়গায় মায়েদের জায়নামায বিছিয়ে দিয়ে আমি এর পার্শ্বস্থ পুরুষদের স্থানে সতর্ক প্রহরায় থাকি পাছে তারা যেন হারিয়ে না যান।
মায়েদের জীবনে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম জামায়াতে শামিল হওয়া। এর আগে ১৭ এপ্রিল বায়তুল্লাহ শরীফে তারা প্রথম ও বৃহত্তম জুমা আদায় করেছিলেন। সারগর্ভ আলোচনা শেষে ইমাম সাহেব সংক্ষিপ্ত সূরা পড়ে জুমার ইমামত করলেন। জুমা শেষে ভীড় একটু কমলে ৭নং হাম্মামের বাইরের গেইট দিয়ে হাত ধরাধরি করে তাদের হোটেলে নিয়ে আসি। পথিমধ্যে ঠুকঠাক শপিংও করেন তারা। লাঞ্চ শেষে বিশ্রাম। প্রবাসী নবী হোসেন ভাই মায়েদের সাথে সাক্ষাত করতে আসেন। তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় সেরে আমি হারামে গিয়ে আসর পড়ে আসি। আজ সফর ওয়াদিয়ে জ্বীনÑহাফেজ জাকির ভাইয়ের সৌজন্যে। তিনি আমার ছাত্রী কানিজের চাচা। বাড়ি বাঁশখালীর চাম্বলে। আমার আম্মার মামাতো বোন নাসেরার স্বামী মাওলানা শহীদুল্লাহ জাকির ভাইয়ের সাথে এসেছেন। তারা আবার জামাই-শ্বশুরও। আমার একটা ইচ্ছে ছিল মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার। জাকির ভাইকে তা বললে তিনি গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট দিয়ে চালিয়ে নেন। মূল শহর থেকে বেরুতেই আমাদের গাড়ি যে রাস্তা দিয়ে চলে তার দু‘পাশে লালচে পাথর দিয়ে ঢাকা সারি সারি পাহাড়। কোথাও কোথাও খেঁজুরের বাগানের মনোরম দৃশ্যও চোখে পড়ে। গাড়ি ঘন্টা খানেক চলার পর ওয়াদিয়ে জ্বীনের কাছাকাছি চলে আসে। ওয়াদিয়ে জ্বীন মানে জ্বীন উপত্যকা। উপত্যকার শেষ সীমানায় পাহাড় ঘেরা একটি গোল চত্বর রয়েছে। সেখান থেকে ফেরার সময় শুরু হয় এক ব্যতিক্রম কান্ড! জাকির ভাই তার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে পা দু‘খানি সিটের উপর তুলে নেয়। তবু গাড়ি চলে। গতি বাড়তে বাড়তে ১২০ কি.মি.পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে। কী আজব দৃশ্য! এভাবে প্রায় ১০ মাইল অবধি অটোমেটিক্যালি গাড়ি চলে। আমাদের মতো সেখানে আরো বহু পর্যটক এসেছে। রাস্তার দু‘পাশের বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে বিকেল বেলায় সৌখিন আরব্য পরিবার পিকনিকে মেতে উঠে। তবে এখানে নাকি রাত কাটানো যায় না। কেউ ঘুমালে তাকে জাগিয়ে দেয়া হয় নতুবা অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। সূর্য ডুবো ডুবো হলে হাফিজ জাকির ভাই আমাদের নিয়ে আসে মদিনাবাসীর প্রাচীন ঐতিহ্য উটের সারি সারি বাথানে। পছন্দ মত একটি বাথানের সামনে তার গাড়ি ব্রেক করা হয়। আমরা নেমে দেখি অন্যজগত। চারপাশে পাহাড়ের মধ্যখানে খোলাকাশে খা খা মরু প্রান্তরে সাজানো ড্রয়িং রুম। আমি দৌঁড়ে যাই উটের দিকে। সবই মাদী উট। বিশালাকায়। পিটে কুঁজো যেমন আছে তেমনি দুধের বাটও ফোলা ফোলা। জাকির ভাইয়ের অর্ডার মত সুদানী রাখাল ২মিনিটের মধ্যে আমাদের জন্য ২/৩লিটার দুধ দোহন করে। আরবের চিরাচরিত রীতি মত ফেনা ছাড়িয়ে বাটিতে করে কাঁচা দুধ আমাদের কাছে পরিবেশন করা হয়। জাকির ভাই উটের দুধ সম্পর্কে বলে উঠে-এ দুধ পেটের জন্য খুবই ফিট। মায়েরা খুশীতে গড়গড়িয়ে পান করেন । আমিও চোখ বন্ধ করে এক টানে পিয়ে নিই একবাটি। আহা কী যে ভালো লাগা! আবহা থেকে আগত দুলাভাইয়ের জন্যও এক বোতল ভরে নিলাম। সৌদি আরব ভ্রমণে আরবের ঐতিহ্য উটের বাথানে এসে দুধ পান করতে পারার জন্য গোধূলিলগ্নে আমি আল্লাহর শোকরিয়া জানালাম।
জাকির ভাই সেখান থেকে আমাদেরকে একটানে মদিনাগামী রাস্তার পাশে একটি মসজিদের সামনে নিয়ে এলেন। আমরা সালাত সেরে নিলাম। এরপর আঁকাবাঁকা রাস্তা বেয়ে চলতে চলতে কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি আমাদের হোটেলের সামনে এসে পড়ে। রাতে আর কোথাও বের হইনি। ক্লান্তির নিদ্রায় নিথর!
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাবীর সময় হয় না আপনার সময় হয় কি করে ? আপনার চেয়ে কি ভাবী হাইলি কোয়ালিফাইড ? স্ত্রী হাইলি কোয়ালিফাইড হলে স্বামীকে মান্য করে না ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন