মাকে নিয়ে মক্কাতুল মুকাররমা ও মদিনাতুল মুনাওয়ারা সফর-(০৬) রায়হান আজাদ
লিখেছেন লিখেছেন রায়হান আজাদ ১৭ মে, ২০১৫, ০৫:৪৩:২৭ বিকাল
মদিনার পথে আমাদের গাড়ি একবার যাত্রাবিরতি দেয়। চারিপাশে ধূ ধূ মরুভূমি। সড়ক ব্যবস্থা অনেক উন্নত হওয়ায় কোন জ্যাম ছাড়াই ২৮০ মাইলের পথ পাড়ি দিয়ে গাড়ি দুপুর নাগাদ মদিনায় পৌঁছে। হারাম শরীফের পাশে মসজিদে উমারের গা ঘেঁষে তমার মার্কেটের অপজিটে ফুনদুক আল মুখতারাহ নামক একটি থ্রি স্টার মানের হোটেলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। এখানেও আমি মায়েদের জন্য তিন বেড বিশিষ্ট একটি রুম নিয়ে নেই আর কাফেলার পরিচালক মাসুম ভাইয়ের রুমে আমার থাকার ব্যবস্থা করি। খাওয়া-দাওয়ার পর বিশ্রাম শেষে বিকেলে মায়েদের হারাম শরীফে নিয়ে যাই। তাদেরকে ৭নং হাম্মামের ঠিকানা দেখিয়ে দিয়ে আমি কিং ফাহাদ গেইট দিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করি। সোজা চলে যাই রওজা মোবারকে। কিছুক্ষণের মধ্যে আসর শুরু হবে তথাপি আমি দম মানছি না। শেষ লাইনের যিয়ারতকারী হিসেবে খাতেমুন্নবীয়্যিনকে সালাতু সালাম জানালাম। আসর, মাগরিব ও ইশা আদায় পর্যন্ত হারামের চারপাশে ঘুরে ফিরে কাটালাম। বিপত্তি ঘটে তখনই যখন আমি ইশা শেষে ৭নং হাম্মামে গিয়ে মায়েদের খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। কথা ছিল, ইশার ফরজ শেষে দশ মিনিটের মধ্যে চাচীমার নেতৃত্বে তারা তিনজন এখানে হাজির থাকবেন। কিন্তু কী? ঘন্টা দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতে থাকলেও কোথাও তাদের সন্ধান নেই। মন একটু একটু রেগে উঠে। কিন্তু আমি মকামে ইবরাহীমে দো‘য়া করেছি যে আয় আল্লাহ! এ যাত্রায় আমি যেন কোন অবস্থাতেই রেগে না যাই, ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারি- এটাও মনে পড়ছে বার বার। যা হোক রাত দশটার কাছাকাছি সময়ে ৬নং হাম্মামের গেইটের মুখ থেকে চাচীমা আমাকে ডাক দেয়। ‘রায়হান’ ‘রায়হান’। আমার পরানে পানি আসে। রাতে হোটেলে গিয়ে যথারীতি খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
২২ এপ্রিল সারা দিন হোটেল ও মসজিদে নববীতে কাটে। পরদিন বৃহস্পতিবার। আজ হবে মদিনায় যিয়ারাহ। আমার একছাত্রীর চাচা হাফেজ জাকির সকালে এসে আমার সাথে দেখা করে। তিনি মদিনা শহরে গাড়ি চালান। তিনি অফার করেন তার সাথে যিয়ারাহর জন্য। আমি বললাম, ‘রুমমেট মাসুম ও মশিউর রাগ করবে’। এমনিতে মায়েদের সেবায় নিয়োজিত বলে তাদের সাথে কোথাও যেতে পারছি না। তাই যিয়ারাহটা কাফেলার সবাইকে নিয়ে একসাথে করার মনস্থির করেছি। তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে আগে এটি সেরে ফেলুন’। সকাল আটটায় আমাদের যিয়ারাহ‘র গাড়ি আসলে আমরা প্রথমে চলে যাই উহুদের ময়দানে। এখানে ৭০জন শহীদের কবর যিয়ারত শেষে আমি সবাইকে নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মুনাজাত করলাম। সেখান থেকে সাবআ’ মসজিদ তথা খন্দকের যুদ্ধের এলাকা পরিদর্শনে চলে যাই। এখানে দু‘রাকাআত সালাত শেষে চারপাশে ঘুরে ফিরে দেখলাম। সাবআ’ মসজিদ তথা সাতটি মসজিদ থেকে এখনও টিলায় তিন/চারটি মসজিদের অস্তিত্ব মিলে। এরপর আমরা সোজা চলে যাই মসজিদে ক্বিবলাতাঈন- দুই ক্বিবলার মসজিদ তথা যেখানে হিযরতের ১৭ মাস পর মসজিদুল আকছা থেকে মসজিদুল হারামের দিকে সালাত আদায়ের আদেশ সম্বলিত আয়াত নাযিল হয়। সুরাতুল বাকারা‘র এ আয়াত সমুহের একটি হচ্ছে - وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِنَّهُ لَلْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
আমরা এখানেও দু‘রাকাআত সালাত আদায় করে আল্লাহ পাকের শাহী দরবারে দো‘য়া করলাম। এরপর সর্বশেষ আমাদের গাড়ি চলে আসে তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত প্রথম মসজিদ মসজিদে কুবায়। এখানে মহানবী সা. মদিনায় প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেছিলেন এবং প্রায় শনিবারে এসে দু‘রাকাআত নামায পড়তেন। কোন মু‘মিন এখানে নিয়্যত করে দু‘রাকাআত নামাজ আদায় করলে এক উমরাহর ছাওয়াব পাওয়া যায় মর্মে বর্ণিত রয়েছে। বায়তুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীর বাইরে কেবলমাত্র এখানেই মুসল্লিদের জন্য মাঈ যমযম‘র সুব্যবস্থা রয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাশাআল্লাহ্ সুন্দর বর্ননা করেছেন।
আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন