মাকে নিয়ে মক্কাতুল মুকাররমা ও মদিনাতুল মুনাওয়ারাহ সফর - (০৩), রায়হান আজাদ
লিখেছেন লিখেছেন রায়হান আজাদ ০৯ মে, ২০১৫, ১১:৫২:২০ সকাল
জহির চাচার গাড়ি আছে-সুবিধাটা সেখানেই। তিনি ১৮এপ্রিল সকাল আটটায় মিসফালাহ কুবুরি থেকে তার গাড়িতে আমাদের তুলে নেন। আল হিজরাহ সড়ক বেয়ে প্রথমে যাওয়া হয় জবলে ছওরে। এই সেই পাহাড় যেখানে খাতেমুন্নবীয়্যিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬২২ ঈসায়ী সনে হিজরতের প্রাক্কালে প্রিয়তম সহচর আবু বকর র. সহ কয়েক রাত অবস্থান করেন। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে এসেছে, “ইয্হুমা ফিল গারে ইয্ ইয়াকুলু লি ছাহিবিহি লা-তাহযান, ইন্নাল্লাহা মা‘আনা” Ñস্মরণ করো সে সময়ে কথা যখন তারা উভয়ে একটি পাহাড়ের গর্তে লুকিয়ে ছিলেন এবং তিনি (মহানবী) তার বন্ধু (আবু বকর) কে বলেছিলেন, ভয় পেয়ো না,আমাদের সাথে আল্লাহ পাকও আছেন”।
ওই পাহাড়ের চূড়ায় উঠার শক্তি আমার মায়েদের নেই। তাই আমিও নীচ থেকে তাদের নিয়ে পাহাড়ের চূড়া দেখলাম। সেখান থেকে আমরা উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে দেখতে চলে যাই সোজা আরাফাতের ময়দান। খোলাকাশে বিশাল মাঠ। শুনেছি এ মরু মাঠে আমাদের মরহুম প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনায় নিমগাছের বাগান করা হয়। পঁয়ত্রিশ বছর আগে মেজর জিয়া দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেও বিস্তীর্ণ আরাফাত মাঠে নিমগাছগুলো এখনও তাঁর স্বাক্ষর বহন করছে। এখানে মায়েদের নিয়ে দারুণ সময় কাটালাম। এমনিতে আমি বৃক্ষপ্রেমিক তদুপরি উষ্ণ তাপদাহে প্রশান্তির নীড় পেয়ে কতইনা ভালো লেগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এ আরাফাত ময়দানে মানবসভ্যতার আদি পুরুষ বাবা আদম তার প্রেয়সী মা হাওয়ার সাথে পরিচিত হন। তারা জান্নাতে কৃত অপরাধের মাফও পান এ ময়দানের জবলে রহমতে। আর এ জবলের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বিদায় হজ্বের ভাষণ প্রদান করেন সাইয়েদুল মুরসালীন পেয়ারা নবী। সেদিন লক্ষাধিক ছাহাবীর কন্ঠে ইসলামের পরিপূর্ণতা বিঘোষিত হয়েছিল। নাযিল হয়েছিল এ আয়াতখানি,“আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম ওয়া আতমামতু আলায়কুম নি‘মাতি ওয়া রাদি‘তু লাকুমুল ইসলামা দ্বীনা”Ñ আজ আমি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণতা দান করলাম। আর আমার নি‘মাতের সমাপ্তি টানলাম ও ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে সন্তুষ্ট হলাম।
জবলে রহমতে হাত ধরে ধরে মা‘দের উপরে উঠালাম। বললাম, মা! মন খোলে দো‘য়া করো- এটি দোয়া কবুলের জায়গা। দো‘য়া-দরুদ পড়ে আমিও হাত তোললাম। প্রখর রোদে মায়েদের নিয়ে দীর্ঘ মুনাজাত। ভাবলাম, এখানে আবার কবে আসতে পারি বলা যায় না। আবেগ তাড়িত কন্ঠে মনের সব কথা প্রকাশ করলাম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে। বললাম, প্রভু! বাংলাদেশে তাগুতের হাতে মজলুমের ফাঁসি আর চাই না। তুমি জালেমের জুলম থেকে মাতৃভূমিকে হেফাজত করো।
আরাফাতের অবারিত মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখালেন জহির চাচা । ২০১২ সালে আমার যা দেখা সম্ভব হয়নি এবারে তা দেখার সুযোগ মিলেছে। চাচা মসজিদে নমেরা,মুযদালিফার পাহাড় শ্রেণী, মসজিদে মাশ‘আরাল হারাম, মিনা প্রান্তর, ওয়াদিয়ে মুহাস্সার, আকাবা স্পট, মসজিদে ইজাবাহ প্রভৃতি দেখিয়ে হোটেলের সামনে নামিয়ে দেন।
বিকেলে জহির চাচা আমাদেরকে ইহরাম বাঁধতে মসজিদে আয়েশা নিয়ে যাবার জন্য আবার আসেন। এবারে ভাইপো হাফেজ নুরুল আমিনসহ আমাদের সর্বশেষ উমরাহ সম্পন্ন করলাম। এদিনই আমি মাঝরাতে মাথা মুন্ডিয়ে ইহরাম ভঙ্গ করি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপ্নিসহ আপনাদের দোয়া আল্লাহ্ কবুল করুন। আমিন।
প্রথম পোষ্টে স্বাগতম।
আলাহমদুলিল্লাহ! আল্লাহ কবুল করে নিন আপানর প্রচেস্টা! দোআ প্রার্থী!
আপনি প্রত্যেকটি মন্তব্যের নীচে ডান পাশে যে বাকা তীর চিন্ন আছে তাতে ক্লিক করে মন্তব্যের জবাব দিবেন প্লিজ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন