ট্রাম্পের ভয়ঙ্কর মধ্যপ্রাচ্য নীতি !!!

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১২ মার্চ, ২০১৭, ০৮:১৫:৩০ রাত

গত দুই সংখ্যার ব্লগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে যা লিখেছি তা না লিখলেও মিডিয়ার বদৌলতে ট্রাম্পকে ভয়ঙ্কর রূপে বিশ্ববাসী দেখে আসছে কয়েক বছর ধরে। এবার বিশ্বরাজনীতি অন্যতম উত্তপ্ত ময়দান মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর নিবদ্ধ করছি। “বেলফোর ঘোষণা”র মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে বৃটিশ ছত্রছায়ায় ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মূলতঃ অশান্তি শুরু। ট্রাম্পের শপথ নেয়ার পরপরই ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু তার দেশের নাগরিকদের জন্য আরো বসতি স্থাপনের ঘোষণা দেন। পূর্ব জেরুজালেম পৌর-কর্তৃপক্ষও নতুন করে বসতি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনটি বসতিতে ৫৬০টির বেশি হাউজিং ইউনিট নির্মাণ করবে কর্তৃপক্ষ। ইসরাইল তোষণকারী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীরবতাও একপ্রকার বসতি স্থাপনে সম্মতি বলে আমরা ধরে নিতে পারি। পশ্চিম তীরে ইহুদিবাদী ইসরাইল যে অবৈধ বসতি নির্মাণের নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে তার নিন্দা করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল। তিনি বলেছেন, “সেখানে ইসরাইল যে অসংখ্য বসতি নির্মাণ করছে তাতে জার্মানি উদ্বিগ্ন এবং তেলআবিবের পদক্ষেপ সংকটের দুইরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান অসম্ভব করে তুলবে।” জেরুজালেমের পরিকল্পনা ও ভবন নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান মেইর তুর্গম্যান বলেন, “ওবামা প্রশাসনের সময় ভবন নির্মাণের এ অনুমোদন স্থগিত ছিল; যা ইসরাইলের বসতি স্থাপনকে সংকটাপন্ন করে তুলেছিল।” আবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জেরুজালেমে ইসরাইলের বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে নিন্দাও জানায় । জাতিসংঘের নিন্দা বা প্রস্তাব উপেক্ষা করেই বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিল দেশটি। আসলে জাতিসংঘ নামক এ ঠুঠো জগন্নাথ সংস্থাটির নিয়ন্ত্রক মার্কিনীরা হওয়ায় এসব নিন্দা প্রস্তাবের তোয়াক্কাই করে না অবৈধ, বিশ্ব অশান্তির মূল উৎস এবং কৃত্রিম রাষ্ট্র ইসরাইল। এক ভয়াবহ বলা হয় গোপন অথচ প্রকাশ্য পরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছে জায়নবাদী ইয়াহুদীরা। যারা বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনেকদূর এগিয়েছেন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হওয়ায় তা আরো জোরালোভাবে এগুবে এত কোন সন্দেহ নেই।

মূলতঃ বৈশ্বিক আতঙ্কের অন্য নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প! সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থেকে ইতিমধ্যে নানা সমালোচনার কারণে ইরাককে বাদ দিয়েছেন। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্কজাকারবার্গও ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির চরম সমালোচনা করেছেন। নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী ইস্যুতে নেয়া পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করে সীমান্ত উন্মুক্ত রাখতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “লাখ লাখ অনিবন্ধিত মানুষ যারা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, তাদের ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানান। তবে সে জন্য যারা প্রকৃত হুমকি শুধু তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” এখন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে বাকি ৬টি দেশের জন্য। মূলত ৬/৭টি মুসলিম দেশ বললেও আসলে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো একপ্রকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে। সরাসরি না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণকারী মুসলিম নাগরিকদের নানাবিধ হয়রানি অতীতেও হয়েছে। ভবিষ্যতেও এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দুষ্কর বৈকি! বলা যায় ট্রাম্প এবং যায়নিস্ট প্রভাবিত আমেরিকা একপ্রকার ইসলাম ফোবিয়ায় ভুগছে!

স্বাধীন ফিলিস্তিনকে প্রায় পুরোপুরি দখল করে নেয়ার এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় মিলিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা অনুযায়ী পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দাসসহ ফিলিস্তিনের গোটা পশ্চিম তীর দখল করে নেবে ইসরাইল। আর উচ্ছেদ হওয়া ফিলিস্তিনিদের পাঠানো হবে মিশরের সিনাই উপত্যকায়। নেতানিয়াহু-ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী সিনাই আর ছোট্ট গাজা উপত্যকা নিয়ে সৃষ্টি হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। এ ভয়াবহ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মূল ফিলিস্তিনি ভূখ- পুরোপুরিই অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের দখলে চলে যাবে। প্রভাবশালী ইসরাইলি মন্ত্রী আইয়ুব কারা বলেন, ফিলিস্তিনিদের মিশরের সিনাই উপত্যাকায় স্থানান্তরের পরিকল্পনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্মত হয়েছেন। ইয়াহুদী মমদপুষ্ট মিশরের স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গাজা এবং সিনাইকে নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন বলে কথা ওঠে ২০১৪ সালে। এ প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সিনাইতে স্থানান্তর করে উপত্যকাটিকে গাজার সঙ্গে সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল। সংবাদ মাধ্যমে এ প্রস্তাবের কথা প্রকাশিত হওয়ার পরপরই প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকেও হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-মার্ক আইরো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেছেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিষয়টি স্থগিত করায় এ ইস্যুতে হোয়াইট হাউজের অবস্থান ‘‘দ্বিধা-দ্বন্দ্বপূর্ণ এবং উদ্বেগজনক’’। জার্মানির বনে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-২০ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ কথা বলেন। আইরো বলেন, “বুধবার ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে যে বৈঠক হয়েছে তারপর আমি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে ফ্রান্স দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করে না।” বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন তা বাস্তব ও ভারসাম্যপূর্ণ নয় বলেও ফরাসি মন্ত্রী মন্তব্য করেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ইতোমধ্যে এ প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেন। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যতই বাতিল বলুক না কেন এ ধরনের জঘন্য আগ্রাসনমূলক বা মানবতা বিরোধী কাজ ইসরাইল করলেও তাতে বাধা দিবে বলে মনে হয় না।

মোদ্দা কথা, ট্রাম্পের ইয়াহুদী তোষণ নীতি ছাড়া ক্ষমতার পথ চলা সহজ হবে না। প্রশাসনকে তিনি এভাবে ঢেলে সাজিয়েছেন। তার প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে ভিন মতাবলম্বী অনেকে পদত্যাগ করেছেন সেখানে টিকতে না পেরে। ওবামা প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুসলিম নারী কর্মকর্তা রুমানা আহমেদ (বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত) ট্রাম্প সরকারের সাথে মাত্র আট দিন ছিলেন। এ ক’দিনের অভিজ্ঞতায় তিনি তেমন সুখকর অবস্থায় ছিলেন না বলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। নাটকীয়ভাবে ট্রাম্পের নির্বাচনে বিজয়, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, অতীত কর্মকা-, ওবামার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাতিল, রাশিয়ার সাথে গাঢ় সম্পর্কে এবং ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক ইত্যাদি বিবেচনা করলে ট্রাম্পকে ইয়াহুদী নীতির সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিতে হবেই। এছাড়া তার গত্যন্তর নেই। সামনের দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য তেমন সুখবর নেই। সৌদি-ইয়েমেন সংকট, সিরিয়া, ইরাক-আইএস সংকট, ইরানের পরমানু চুক্তি, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতসহ আরো পুরো বিশ্বকে গভীর সংকটের দিকে দিচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের সিনাই উপত্যকায় ঠেলে দিলে গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করলে সংকট আরো ঘনীভুত হবে।


লেখক : কলামিস্ট ও সম্পাদক

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৫২২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382199
১৩ মার্চ ২০১৭ সকাল ১০:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ট্রামপ্ মোদি সমগ্র বিশ্বই ভয়ংকর এর কবলে।
১৩ এপ্রিল ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:২৪
316182
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : হুম!!Good Luck Good Luck Good Luck
382203
১৩ মার্চ ২০১৭ দুপুর ০২:০৬
হতভাগা লিখেছেন : জীবদ্দশায় একটা বিশ্বযুদ্ধ দেখে যেতে চাই । ট্রাম্পের কারণে যদি সেই সুযোগ এসে যায় তাহলে ট্রাম্পকে আগাম মোবারকবাদ।
১৩ এপ্রিল ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:২৪
316183
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বেশ বেশ!! তবে তাই হোক!
382204
১৩ মার্চ ২০১৭ দুপুর ০২:২২
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : লাভ হবেনা, এখন মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ। ইনশাআল্লাহ, আগামি দিনের বিশ্ব নেতৃত্ব মুসলিমদের হাতে থাকবে।
১৩ এপ্রিল ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:২৫
316184
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ, ধন্যবাদ প্রিয় মামুন ভা্ই।
382510
০২ এপ্রিল ২০১৭ দুপুর ০১:২২
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : যুদ্ধটা হলে খারাপ হতোনা !
১৩ এপ্রিল ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:২৫
316185
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : হুম!!Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File