ঘরে-বাইরে চ্যালেঞ্জের মুখে ডোনাল্ড ট্রাম্প!..
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৮:১৭:১৩ রাত
সাতটি মুসলিম দেশের (সিরিয়া, ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন) নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাকে কেন্দ্র করে দেশের আদালতেও চ্যালেঞ্জে পড়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তার নির্বহিী আদেশের বিরুদ্ধে রায় দেয়া বিচারককে তথাকথিত বিচারক বলেও আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, “তারা দেশটাকে নরকের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশে যদি কোনো কিছু ঘটে যায়, তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবেন ওই বিচারক ও বিচারিক ব্যবস্থা বা আদালত। তিনি টুইটারেও বলেন, বিচারক যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসীদের জন্য জায়গা করে দিয়েছেন। এতে বাজে মানুষরা খুবই খুশি হয়েছে। এ রায়কে ‘রিডিকিউলাস’ বা উদ্ভট রায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন।” শুধু তাই নয়, ওয়াশিংটনের এটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসনও ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে বব ফার্গুসন বলেছেন, “যদি তিনি মামলায় সফল হন তাহলে আমেরিকা জুড়ে প্রেসিডেন্টের অবৈধ সব কার্যক্রম বাতিল হবে।” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের কমপক্ষে ১৬ জন এটর্নি জেনারেল। তারা ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে আমেরিকার সঙ্গে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যেও সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় ও বেআইনি বলে আখ্যায়িত করেছেন। ট্রাম্পের বিরোধী ডেমোক্রেটিক দলের সিনেটর চার্লস শুমার নিউইয়র্কে বলেছেন, “ট্রাম্পের নির্দেশ আমেরিকার মূল্যবোধের বিরোধী। এখানে আমরা যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি তাতে অনেক মানুষের জীবন ও মৃত্যু জড়িয়ে আছে। এই ভয়াবহ আদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমি শান্ত হবো না।” যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এয়ারপোর্ট-যেমন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, বোস্টনসহ অনেক শহরে ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশে-বিদেশে তার এই আদেশের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বুঝা যাচ্ছে ট্রাম্পের ক্ষমতার আরোহনের মধুচন্দ্রিমা কালীন সময়গুলো বেশ সুখকর হবে না! চ্যালেঞ্জের পর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসতে থাকবে।
অবশ্য ট্রাম্পও দমবার পাত্র নয়। তিনিও মুখ খুলেছেন ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’ নিয়ে তীব্র বিরোধের শুরু হওয়ার পর। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এটা ‘মুসলিম ব্যান’ বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নয়। আমেরিকা অভিবাসীদের নিয়ে একটি গর্বিত দেশ। যারা নিষ্পেষণ থেকে পালাচ্ছেন তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আমাদের নাগরিক ও সীমান্ত রক্ষার জন্য আমাদেরকে এটা (৭ মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ) করতেই হচ্ছে। আমেরিকা হলো মুক্তমনা ও সাহসী মানুষের দেশ। আমরা এ দেশকে মুক্ত ও নিরাপদ রাখার চেষ্টা করবো। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যা করেছিলেন, আমার নীতিও সেই একই রকম। তখন প্রেসিডেন্ট ওবামা ইরাকি শরণার্থীদের ভিসা দেয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন ৬ মাস। প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসন এর আগে যে দেশগুলোকে সন্ত্রাসের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন সেই ৭টি দেশের বিরুদ্ধেই নির্বাহী আদেশ দেয়া হয়েছে। মিডিয়া এটা নিয়ে ভুল তথ্য প্রকাশ করছে।” যতই সাফাই গান না কেন, তিনি সাংবাদিকদের শয়তান বলেও অভিহিত করেছেন আর সাংবাদিকদের এখন মিথ্যুক বানাতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এই বিবৃতিতেও খুব একটা জ্বলে উঠা নিন্দার বাণ বাড়বে বৈ কমবে না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ এনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ করে বসেছেন বিশ্বের প্রায় একশত প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানি। এদের মধ্যে রয়েছে অ্যাপল, ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইন্টেল, ই-বে, উবার, টুইটার ইত্যাদি। তারা বলছেন, ওই মুসলিম নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যবসায়ী সমাজ এবং নতুন কিছু প্রবর্তন ও মুনাফা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধর্মীয় বিভেদও তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দু’পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাডেলিন অলব্রাইট ও জন কেরি। তারাও বলছেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে খর্ব করছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।” ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বকে বিভক্ত করে ফেলেছেন আরো অনেক আগে থেকেই। বিশ্বের আরেক পরাশক্তি ও আমেরিকার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়াও ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার জন্য সম্ভবপর অনেক কিছুই করেছিলেন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারী ক্লিন্টনের ই-মেইল হ্যাক, বার বার তদন্ত ইত্যাদি দিয়ে কম প্রভাবিত করেননি। এজন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছিলেন ডেমোক্র্যাটরা। ক্ষমতায় এসে এর প্রতিদান দিয়ে চলেছেন ট্রাম্প, সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত তিনি ইতিমধ্যে বাতিল করেছেন। জায়নিস্ট ইসরাইলেরও পোয়াবারো। ট্রাম্পের শপথের পরপরই প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখ-ে নতুন করে ইসরাইলি বসতিস্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সিনেটে অলরেডি বিল পাসও হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে এ তৎপরতা বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে অভিমত দিয়েছেন। ইসলরাইলের প্রতি নির্লজ্জ সমর্থন দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। জানা গেছে, ফোনালাপে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও আংশীদারদের প্রতি আমেরিকার অবিচল অঙ্গীকারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন টিলারসন। আরো খোলামেলা করে বলেছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি না যে, ওই বসতির অস্তিত্ব শান্তির পথে অন্তরায়। কিন্তু নতুন করে বসতি স্থাপন করা বা বিদ্যমান বসতির সম্প্রসারণ ওই উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক না-ও হতে পারে।’’ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের অব্যাহত সমর্থন নতুন করে শান্তি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং উত্তেজনা তৈরি হবে। এতে করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে খোদ বৃটিশরা দ্বিধা-বিভক্ত ! তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বিদেশী অতিথি হিসেবে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন বৃটিশ প্রাইম মিনিস্টার তেরেসা মে। এ সময় তিনি ট্রাম্পকে বৃটেন সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বৃটেন সফরে এলে পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে পার্লামেন্টও দ্বিধা-বিভক্ত। বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্সেও তার বিরোধিতা করা হয়েছে। ট্রাম্প যদি বৃটেন সফরে আসেনই তাহলে পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখার কথা। কিন্তু তার বিরোধিতা করেছেন হাউজ অব কমন্সের স্পিকার জন বারকাউ। বেশ কিছু সদস্য তাকে সমর্থন দিয়েছেন। স্পিকার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, পার্লামেন্ট বর্ণবাদ ও যৌনতার বিরোধী বৃটিশ পার্লামেন্ট। তাই পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানাবেন না। জন বারকাউ বলেছেন, অভিবাসীদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে আমি ওয়েস্টমিনস্টার হলে ট্রাম্পের বক্তব্য রাখার বিষয়টিতে কঠোরভাবে বিরোধিতা করবো।” আমরা সকলে জানি, মুসলিম বিরোধী বক্তব্যের কারণে তিনি ইতিপূর্বেও বৃটেনে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবী জানিয়েছিলেন অনেক বৃটিশ সংসদ সদস্যও। দেখা যাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য ঘরে-বাইরে সবখানেই চ্যালেঞ্জ। তার ক্ষমতার সিঁড়ি যে একবারে মসৃণ নয়, তা ভাল করেই বুঝা যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে ঘরে-বাইরে তার জন্য আরো কত চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তা নির্ভর করছে বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষমতার উপর।
******
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১০২০ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিনহাজ ভাই
বিশ্লেষক বটেরে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন