দৃষ্টি সংযম-করতেই হবে (একটি গুরুত্বপূর্ণ বই আলোচনা)............
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৯:৫৪:১৩ রাত
হেদায়াতের সর্বশেষ বিধান আল্ কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, “হে নবী, মু’মিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য বেশ পবিত্র পদ্ধতি। যা কিছু তারা করে আল্লাহ তা জানেন। আর হে নবী, মু’মিন নারীদেরকেও বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহকে হেফাজত করে, আর তাদের সাজ-সজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তাছাড়া। আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে।” (সূরা আন্ নুর : ৩০-৩১) হযরত বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে বলেন- ‘হে আলী! দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য ক্ষমার্হ, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমার যোগ্য নয়।’ (আবু দাউদ-২১৪৪) দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী (র) দৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন, “যে পর্যন্ত নিজের চোখকে হারাম বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত হতে বিরত করতে পারবেন না, সে পর্যন্ত পাপ হতে আত্মরক্ষা করা অসম্ভব।” অর্থাৎ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত পাপ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। ‘দৃষ্টি’ সম্পর্কে কুরআন, হাদীস এবং মনীষীদের প্রসঙ্গ এনে অবতারণার উদ্দেশ্য হচ্ছে এর গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে একটি অনন্য পুস্তিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামিক স্কলার মাওলানা যুলফিকার আহমদ নক্শবন্দী রচিত “দৃষ্টি সংযম” পুস্তিকাটি কালোত্তীর্ণ একটি অসাধারণ গ্রন্থ। বিশেষত ভার্চুয়াল জগতের প্রভাবে গড্ডালিকা প্রবাহের তোড়ে ভেসে যাওয়া যুবসমাজের জন্য এটি বিরাট প্রতিষেধক তুল্য। দু‘ চোখের হেফাজত করতে চাইলে সতর্কতাস্বরূপ এটি একটি অনন্য পুস্তিকা।
আমরা আল্লাহ তা‘য়ালার যে সব নেয়ামত উপভোগ করছি তন্মধ্যে দৃষ্টিশক্তি অন্যতম। এই পুস্তিকাটিতে রয়েছে কুদৃষ্টির প্রভাব, পরিণতি এবং কিভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তার সরল এবং হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনা। কুদৃষ্টির কোপানালে কত জঘন্য কর্ম সম্পাদিত হচ্ছে আমাদের সমাজে তার ইয়ত্তা কে রাখে? ‘ইভটিজিং’ নামক ভয়াবহতার প্রধান কারণ কুদৃষ্টি। এর থেকে বাঁচতে আল্লাহ পাক আবশ্যক করেছেন পর্দার বিধি-বিধান। সমাজে কত ভুল ধারণা আজও প্রচলিত, এক শ্রেণির মানুষের অপপ্রয়োগে পর্দার বিধান কেবলমাত্র নারীর জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু না, সূরা নূরের ৩০ এবং ৩১নং আয়াতে কারীমাদ্বয়ের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়কে লক্ষ্য করে আল্লাহ পাক আদেশ করেছেন-দৃষ্টিকে অবনত করার জন্য। কিসে মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণ নিহিত তা আল্লাহই ভাল জানেন। যাবতীয় পাপাচার, ফিতনা-ফ্যাসাদের উৎপত্তি কুদৃষ্টি। বিজ্ঞানী জন আর্মষ্ট্রং বলেছেন, “কলুষময় দৃষ্টির অধিকারী হওয়ার চেয়ে অন্ধ হওয়া ভাল”। মাওলানা যুলফিকার আহমদ সাহেব কুরআন, হাদীস, মনীষীদের বাণীসহ সহজ-সরল ব্যাখ্যার মাধ্যমে তুলে ধরে পাঠক হৃদয়ে প্রবিষ্ট করার চমৎকার পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন এতে। এই পুস্তিকাটি কুদৃষ্টি শক্তির বিরুদ্ধে একটি বিরাট নিরাময়রূপে কাজ করবে, ইনশাল্লাহ।
বর্তমান বিশ্ব সমাজ আজ অশ্লীলতা, পাপাচার, বেহায়াপনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়াতে যেন অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে নারী-পুরুষ কে, কাকে, কতভাবে, কত সহজে পরস্পরকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। প্রলুব্ধ করার কত শত প্রচেষ্টা! লজ্জা-শরম উধাও! এভাবে চোখের দৃষ্টির মাধ্যমে কত ব্যভিচার করছি। হাফেজ আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (র) বলেন, “দৃষ্টি কামভাবের দূত, প্রকৃতপক্ষে দৃষ্টি হেফাজত মানে লজ্জাস্থান ও অবাধ জৈবিক অনুভূতির হেফাজত। যে দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিলো, সে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিলো। আর মানুষ যেসব বিপদাপদের সম্মুখীন হয়, দৃষ্টিই তার মূল কারণ”। তাই আসুন দৃষ্টিকে হেফাজত করি। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পুস্তিকাটি উর্দু ভাষায় রচিত। বাংলা ভাষা-ভাষীদের জন্য অনুবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ খেদমত আনজাম দিয়েছেন মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব আবদুল্লাহপুরী। কুদৃষ্টির প্রভাব থেকে সর্বস্তরের মুসলমানের ঈমানকে কলুষমুক্ত করার উদ্দেশ্যে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মননশীল গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড পলিসি স্ট্যাডিজ (সিআরপিএস)। বইটি সহজবোধ্যভাবে সম্পাদনা করেছেন সিআরপিএস-এর ইসি কমিটির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ প্রফেসর ড. বিএম মফিজুর রহমান আল-আয্হারী এবং প্রকাশক হলেন সিআরপিএস-এর সেক্রেটারী ও গবেষক রায়হান আজাদ। ৭০ গ্রাম অফসেট পেপারে ছাপা ৪০ পৃষ্ঠার পুস্তিকাটির মূল্য রাখা হয়েছে ৪০ টাকা। ৫০% কমিশনে বইটি মাত্র ২০ টাকার হাদিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে-এবিসি পাবলিকেশন্স, ২য় তলা, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মার্কেট, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম‘র এ ঠিকানায়।
জ্ঞানগর্ভ এ পুস্তিকাটি পাঠ করে পাঠক পাপের সমুদ্র থেকে নিজেকে হেফাজত সক্ষম হবেন- সে আশাকরি। পুস্তিকাটির ব্যাপক প্রসার এবং সাফল্য কামনা করছি। বাংলা ভাষায় প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করে মুসলিম মিল্লাতের খেদমত করার জন্য যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদেরকে মহান আল্লাহতায়ালা জাযা-এ খায়ের দান করুন, আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১২০২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন