জীবনের পাতা থেকে : মিষ্টির প্যাকেটের রহস্য!
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:৩১:০৭ দুপুর
সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে বাসার পথে। ক্লান্তিতে মনটা ভীষণ্ণ! বাসায় গেলে ছেলেদের মোবাইল নিয়ে টানাটানি। উফ! মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে যায়। ছো মেরে নিয়ে যায় বড় ছেলে,পেছন পেছন ছোটটাও। মায়ের চিল্লা ফাল্লা, তুমি ছেলেদের লাই দিয়ে মাথায় তুলছ? চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দু’দিন পর পাওয়ারফুল চশমা কিনে দিতে হবে। তারপর চোখ নষ্ট হবে। আমাকে এর ঘানি টানতে হবে, প্রতিদিনকার ঝাঁঝালো কথামালা! চেয়ে থাকা ছাড়া আর কী করা? কয়েকদিন আগে তাদের নানু এসেছেন বাসায়। এ বছর হজ্জে যাওয়ার নিয়ত করেছে, সব দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন তারা। এদিকে টেবিলে নতুন মিষ্টির প্যাকেট দেখা যাচ্ছে। চিন্তার বিষয়! নিজে ছোটবেলা থেকে মিষ্টান্ন দ্রব্যের প্রতি অনীহা। গিন্নিকে জিজ্ঞেস করাতে বলল, মসজিদে ইমাম সাহেব পাঠিয়েছেন। মাওলানা কায়েস উদ্দিন। হজ্জের কাজ করেন, যাকে লোকে বলে মুয়াল্লেম। যদিও মোয়াল্লেমের সংজ্ঞা পড়ে না। কোন্ হজ্জ কাফেলার সাথে নাকি জড়িত। তার কাজ হাজী সংগ্রহ করা, মাঝখানে কমিশন বাণিজ্য। মনে খটকা লাগল, তিনি খবর পেলেন কেমনে আমার শ্বশুর-শাশুড়ী হজ্জে যাবেন? আজকাল এমন হয়েছে, “মিষ্টি যেখানে, পিঁপড়া যেখানে, এই প্রবাদের মত “হাজী যেখানে, মিষ্টি নিয়ে হুজুর বা দালাল সেখানে উপস্থিত”। হজ্জ কাফেলায় হাজী গিয়ে বুকিং দেয় না, হাজীর বাড়িতে হুজুর হাজির মিষ্টি নিয়ে!
-তুমি কাউকে বলছ নাকি শিপনের নানুরা হজ্জে যাচ্ছে, গিন্নিকে বললাম।
-সে তো আল্লাহ-বিল্লাহ করে বলে আমি কেন বলতে যাব?
-না, তাহলে আত্মীয়ের বাড়িতে এসে স্থানীয় মসজিদের হুজুর কেমনে জানবে হজ্জের ব্যাপারে?
-আব্বা সন্ধ্যায় মসজিদে গিয়েছিল, হয়ত হুজুরের সাথে আলাপ করেছে!
-তাই হয়তো হবে। উনি কই?
-বাইরে গেছে।
গত বৎসর হজ্জ নিয়ে যা কেলেংকারি হয়েছে, অনেকেই নিবন্ধন করিয়েও নাকি হজ্জে যেতে পারেন নি। আমার এক অধ্যক্ষ বন্ধু কোন এজেন্সীতে বুকিং দিয়েও দু’বছর যাবৎ হজ্জে যেতে পারেনি। পত্রিকায় দেখলাম, এক কাফেলাতো অনেকগুলো হাজি না নিয়েও পালিয়ে সৌদি আরব চলে গিয়েছিলো, অবশ্য সরকারের হস্তক্ষেপে পরে তাদের নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সৌদিতে গিয়ে কত কাফেলা হাজীদের ঠিকমত দেখভাল করে না, অনেক অভিযোগ রয়েছে খ্যাত-অখ্যাত কাফেলাগুলোর বিরুদ্ধে। অবশ্য সকল কাফেলা এমন করে তা নয়, অনেক ভাল কাফেলাও রয়েছে দেশে। আল্লাহর মেহমানদেরকে সাধ্যমত সেবা দেওয়া, তাদের সাথে কমিটমেন্ট রক্ষা করা সবার উচিত।
আমি আগেই আলাপ করে রেখেছি শ্বশুর-শাশুড়ীর হজ্জের ব্যাপারে এক এজেন্সীর সাথে। গিন্নিকে বলেও ছিলাম, কিন্তু শ্বশুর মশায় যদি হুজুরের সাথে আলাপ করে লেনদেন করে ফেলেন, তাহলে ঝামেলার ব্যাপার। কারণ মধ্যস্থতাকারীদের সাথে লেনদেন করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য হজ্জ লাইসেন্স আছে কিনা, সেবার মান কেমন এবং খোঁজ-খবর নিয়ে সরাসরি অফিসে গিয়ে বুকিং দিলে মোটামুটিভাবে হজ্জে যাওয়া নিশ্চিত হওয়া যায়। মধ্যসত্ত্বভোগী, দালাল, ফড়িয়া এবং কমিশন এজেন্টদের দৌরাত্ম্যের কারণে হজ্জ ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা, লাই দেয়া, লালন-পালন করা, অনৈতিক সুবিধা দেয়া ইত্যাদি কারণে তাদের পোয়াবারো। গিন্নির সাথে আমার কথাগুলো শ্বাশুড়ী দরজার ওপাশ থেকে শুনে বলল, তুমি চিন্তা করো না বাবা। শিপনের নানু আসলেই আমি তাকে বলব। তোমার কথা ছাড়া অন্যথা হবে না। আমি গিন্নিকে বললাম, টেবিলে সবার জন্য খাবার দেয়ার জন্য।
আর ক’দিন পর এবছরের হজ্জের জন্য ঘোষণা আসতে পারে। শীঘ্রই হজ্জের প্রাক নিবন্ধন শুরু হবে। হুজুর, মোয়াল্লেম, কাফেলা এরা ছুটছে বাড়ি বাড়ি মিষ্টি, ফ্রুৃটস এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী নিয়ে। সম্ভাব্য হাজিদের নানা প্রলোভন, আশ্বাস দিচ্ছেন। কেউ সাড়া দেয়, কেউ দেয় না। হাজিরা দিন গুণছে কবে সেই কাঙ্খিত সময় আসবে, নিবন্ধন হবে। আমিও অপেক্ষায় থাকি শ্বশুড় মশায়ের বাইরে আসার জন্য। বাসায় ডুকার পর টেবিলে রাখা মিষ্টির প্যাকেটের রহস্য আমার কাছে এখন পরিষ্কার হল!
*************
বিষয়: সাহিত্য
১১০০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার মিষ্টির রহস্য আসলেই অনেক চিন্তার বিষয়!
পবিত্র হজ্জ্বকে নিয়ে এসব ব্যবসাবাজি বন্ধ হোক এটাই কাম্য।
ধন্যবাদ...
০১৭৪২২৫৫৮৯৯, ০১৬৭১৯৭১৪৫৪
ভারত নাকি হাজিদের জন্য ভর্তুকিও দেয় !
মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট হয়েও আমরা সেরকভাবে সহযোগিতা পাই না ।
আরেক সমস্যা হজে যে সব হুজুর কাফেলাকে লিড করে তারা মিলাদ চালু করে হজের দিন গুলোতে । একেক জন একেক কথা বলে , ফলে সাধারণ হাজিরা কনফিউজড হয় এবং মূল ইবাদত থেকে বিচ্যুত হয়।
ধন্যবাদ...
অংশগ্রহণ আসলে নামে মাত্র-সফলতা নেই বললেই চলে।
ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন