হে মহান প্রভু! তুমি আমাদেরকে বিনয়ের মুকুট পরিয়ে দাও। অহংকারের ছিটে-ফোঁটাও যদি অন্তরে থাকে, তা বিনাশ করে দাও....
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১৮ জুন, ২০১৬, ০১:০৩:৫১ দুপুর
কালো মানুষদের প্রতি আমাদের ঘৃণা, অবজ্ঞা, বিষোদগারের অন্ত নেই। অর্থাৎ বর্ণবাদিতায় আমরা এমন আচ্ছন্ন যে, কালো চামড়ার লোকগুলোকে আমরা মনুষ্যপদবাচ্যরূপেও গণ্য করিনা। এ পৃথিবীর অনেক কালো মানুষের উদাহরণ দেয়া যাবে। অনুধাবন করে দেখলাম, অথচ তারাই সবচেয়ে অধিক বিনয়ী। মহাগ্রন্থ কুরআন মজীদে বিনয়ীরা “রহমানের বান্দা” বলে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন।
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
“রহমানের বান্দা তারাই যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে আর অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে সম্বোধন করলে তারা বলে- শান্তি (আমরা তোমাদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাই না)।”(আল-ফুরক্বান, আয়াত ৬৩)
কেন জানি না, আমার প্রাত্যহিক জীবনে এখন কুরআনের এই আয়াতটি বেশি স্মরণ হয়। ফলে বিনয়ী হতে আরো বেশি সচেষ্ট হই। ইমাম শাফেয়ী (র) বলেছেন, বিনয় এমন এক সম্পদ যা দেখে কেউ হিংসা করতে পারে না।” এই বিশ্বের বুকে কালো, বাদামী রঙের আদম সন্তানরা এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশ আলোকিত করেছেন, আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে গ্রহণ করে। আল্লাহর অপার রহমত এবং বিনয়গুণটি না থাকলে তা সম্ভব হতো না।
বিনয় এবং অহংকার পরস্পর বিরোধী। বংশগত অহংকারের কারণে সেদিন কুরাইশরা মুহাম্মদ (সা)কে নবী বলে স্বীকার করেননি। বর্তমানে ইউরোপ এবং আমেরিকার সাদা চামড়াওয়ালারও বর্ণ বিদ্বেষের কারণে সুমহান আদর্শ ইসলামের বিরোধিতা করছে আদা-পানি খেয়ে। কুরআন ও হাদীস শরীফে গর্ব ও অহংকারকে একমাত্র আল্লাহর জন্য বলা হয়েছে। অহংকার না করার জন্য বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে কঠোরতার সাথে। আল্ কুরআনে এরশাদ হয়েছে,
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
“অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান-১৮)
রাসূল (সা) বলেছেন, “যার অন্তরে অণূ পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সহীহ মুসলিম-কিতাবুল ঈমান অধ্যায়) হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই গৌরব আমার পোশাক এবং অহংকার আমার চাদর। অতএব, যে তা নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করবে তাকে আমি শাস্তি দেব।” (তিবরানী )
অন্য হাদীসে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেন, “শ্রেষ্ঠত্ব, গর্ব ও অহংকার আমারই। অতএব যে লোক তা নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করে, আমি তাকে জাহান্নামে ছুঁড়ে মারব।” (হাকেম ও তিরমিযী)
হযরত সোলায়মান (আ) বলেছেন, “অহংকার মানুষের পতন ঘটায়, কিন্তু বিনয় মানুষকে সৌভাগ্যেও মুকুট পরায়।” যদিও চাকচিক্য দেখে অনেক মানুষ, বিশেষ করে মুসলমানরা ইউরোপীয় কালচার গ্রহণ করতে চাচ্ছে। কিন্তু চুড়ান্ত হিসেবে তাদের অহংকারের কারণে লানতপ্রাপ্ত হবেই। সেটা দুনিয়াতেও হতে পারে, আখেরাতে অবশ্যম্ভাবী। সেসব মানুষদের জন্য আমীরুল মোমেনীন হযরত আলীর এই উক্তিটি যথেষ্ট। তিনি বলেছেন, “ মানুষের কিসের এক অহংকার, যার শুরু এক ফোঁটা পানি দিয়ে আর শেষ পরিণতি মৃত্তিকায়?”
যারা বিনয়ী তারা দুনিয়ায় সম্মান পাচ্ছে আখেরাতেও সম্মাণিত হবে ইনশাল্লাহ। অহংকারীদের পতন হবেই-এটা আমার-আপনার কথা নয়, এই বিশ্বজগতসমূহের অধিপতি রাব্বুল আলামীনের। হয়ত মানুষ সাময়িক স্বার্থের মোহে, ক্ষমতার দম্ভে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এসব গর্হিত কুকর্ম করে ফেলে। ধরাকে সরা জ্ঞান করছে, প্রতিপক্ষকে বিনাশের সকল প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। নিরীহ বনি আদমকে নিষ্পেষণ, নির্যাতন, গৃহহীন করছে। এ দম্ভ এবং অহংকারের কারণে আজ সর্বত্রই অশান্তি, হানাহানি এবং ভ্রাতৃঘাতি কার্যকলাপ চলছে। আল্লাহ আমাদের অহংকার মুক্ত থাকার তৌফিক দিন- বিনয়ী মানুষ চেনার একটি হাদীস আছে। “যে আগে সালাম দেয়, সে অহংকার মুক্ত।” সুতরাং অহংকার মুক্ত ব্যক্তিই বিনয়ী। আসুন বেশি বেশি সালামের চর্চা করে বিনয়ী হই এবং অহংকারমুক্ত জীবন যাপন করি।
শেখ সাদী (র)এর অমুল্য বাণী দিয়ে সংক্ষিপ্ত লিখার ইতি টানছি :
“বিনয় উন্নতি-পথে প্রধান সোপান,
বিনয়ে মানব হয় মহামহীয়ান।
মধুর ভাষায় কাজ, হইবে পষল,
তিক্তভাষী পাবে মনে বেদনা কেবল।”
হে মহান প্রভু! তুমি আমাদেরকে বিনয়ের মুকুট পরিয়ে দাও। অহংকারের ছিটে-ফোঁটাও যদি অন্তরে থাকে, তা বিনাশ করে দাও। আমিন।
=====
বিষয়: বিবিধ
২১১৭ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যারা বিনয়ী তারা দুনিয়ায় সম্মান পাচ্ছে আখেরাতেও সম্মাণিত হবে ইনশাল্লাহ।
মানুষ সাময়িক স্বার্থের মোহে, ক্ষমতার দম্ভে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এসব গর্হিত কুকর্ম করে ফেলে। ধরাকে সরা জ্ঞান করছে, প্রতিপক্ষকে বিনাশের সকল প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ভুলে যায় তাদের পতন অবশ্যই হবে ।
অহংকারীদের পতন হবেই-এটা আমার-আপনার কথা নয়, এই বিশ্বজগতসমূহের অধিপতি রাব্বুল আলামীনের।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
তাহলে এই ইউরোপীয় খৃষ্টান কারা? তারা যদি খৃষ্টানই হয় তবে কেন ক্রশেড অভিযান করে মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালালো? কেন স্পেনে বর্বর আচরণ দেখালো? কেন ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য সর্বত্র মুসলিম শাসনের পতন ঘটালো? কেন তারা সেকুলার হবার পরেও একটি ইহুদি ধর্মীয় রাষ্ঠ্র গঠন করল ফিলিস্তিনে? উত্তরগুলো খুঁজুন ভাইয়া এই অহংকারীদের মুখোশটা আপনার কাছে হয়ত পরিস্কার হয়ে যাবে।
কুরআনে অন্যখানে বলা হয়েছে যে এরাও মুসলমানদের চিরশত্রু!
জাযাকিল্লাহ..
আল্লাহ এও বলেছেন, আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেছে এবং বহিষ্করণে সহায়তা করেছে। তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে তারা তো জালিম। (মুমতাহিনাহ: ৬০:৯)
রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদিস শুনে আমর (রাঃ) খৃষ্টানদের ৩ টি ভাল গুণের কথা উল্লেখ করেন:
১. তারা ফিতনার সময় সর্বাধিক ধৈর্যশীল হবে
২. মুসীবতের পর সবার পূর্বে তাদের হুশ ফিরে আসবে।
৩.সর্বোপরি তারা হলো মিসকীন এবং দূর্বল মানুষের জন্য অধিক শুভাকাংখী। (মুসলিম, অধ্যায়: ৫৫/ফিৎনা ও কিয়ামতের নিদর্শন, হাদিস সংখ্যা ৭০১৬, পাবলিশার: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
আপনি কি এটা জানেন ভাইয়া:- কিয়ামতের পূর্বে মুসলিমরা ৩য় শক্তিকে পরাস্ত করতে খৃষ্টানদের সাথে জোট করবে??
আপনি নিশ্চয়ই জানেন স্যাফিয়া বিনতে হুয়ায় রাসূল (সাঃ) এর স্ত্রী ছিলেন আর তিনি ছিলেন ইহুদি??
আমি কিভাবে সেই খৃষ্টান নারীকে চিরশত্রু বলব, যখন সে ফিলিস্তিনী ঘরবাড়ি বাঁচানোর জন্য ইজরাইলি বুলডোজারের সামনে গিয়ে দাড়ায়, তাদের বাঁধা দেয়? তার উপরে বুলডোজার চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয় তবুও সে ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য নিজের জায়গা ছাড়েনি!
আমি কিভাবে সেসব ইহুদিদের শত্রু বলব, যারা ইহুদি হবার পরেও ইজরাইল রাষ্ঠ্রের বিরোধীতা করে, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আমেরিকার রাস্তায় মিছিল করে??
হয়ত বোঝার জায়গাগুলি এগুলোই। কুরান হাদিস এমন খৃষ্টানদের কথা বলছে যারা মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেশ পোষন করেনা, বন্ধুত্বে মুসলিমদের কাছে, তারা অহংকারী নয়, তারা ফিতনার সময় সর্বাধিক ধৈর্যশীল হবে
,মুসীবতের পর সবার পূর্বে তাদের হুশ ফিরে আসবে,সর্বোপরি তারা হলো মিসকীন এবং দূর্বল মানুষের জন্য অধিক শুভাকাংখী। এসব গুণের একটিও ইউরোপিয়ানদের মাঝে নেই। আর বোঝার জায়গা এটাই যা আমি বলতে চেয়েছি। জাঝাক আল্লাহ
মহান প্রভু আমাদের সকলকেই অহংকারমুক্ত জীবন গড়ার ও বিনয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুণ আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন