মাহে রমজানের গুরুত্ব ও রোজাদারের ভুমিকা..

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ০২ জুন, ২০১৬, ০৮:০২:০৬ রাত



মাহে রমজান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের জন্য এক মহান নিয়ামত। বিজ্ঞানময় জীবন ব্যবস্থা আল্ ইসলামের অন্যতম এক গুরূত্বপূর্ণ স্তম্ভ রোজা। মানুষের জন্য হেদায়েতের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোরআন নাজিলের এই মাস ঈমানদারদের জন্য পূন্য লাভের এক অপূর্ব মৌসুম। পূর্ণ এক বছরের বার মাসের মধ্যে রমজান এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মানুষ বাকী এগারো মাস পাপ পঙ্কিলতা নিমজ্জিত থেকে সয়লাব হয়ে যায়। রমজান এসে তাদের পবিত্র, পরিশুদ্ধ পাপমুক্ত করে তোলে। হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস ও পরকালীন কল্যাণ লাভের আশায় রমজানের রোজা রাখে, এর বিনিময়ে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী) অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে এবং রাত্রি জাগরণ করবে, সে গুনাহ হতে সেদিনের মতই পবিত্র হয়ে যাবে, যেদিন সে ভুমিষ্ঠ হয়েছিল। (নাসায়ী)

মাহে রমজানে অনেকগুলি ইবাদতের সমন্বয় ঘটে ইসলামের অপরূপ সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। শেষ রাতে সেহরী খাওয়া, দিনে সুযোগ সময়মত কোরআন তেলাওয়াত করা, সন্ধ্যায় ইফতার, রাতে তারাবী নামাজ ও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া, রমজানের শেষ দশকে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর তালাশ এবং আল্লাহর রেজামন্দি হাসিলের লক্ষ্যে মসজিদে এতেকাফ করা, অভাবীদের যাকাত এবং সদকায়ে ফিতর প্রভৃতির মাধ্যমে রমজানের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য অবলোকন করে ইবাদত করা যায় জান্নাতী পরিবেশে।



মাহে রমজানের গুরুত্ব ও রোজাদারের ভুমিকা :

মাহে রমজানের ফজীলত ও রোজাদারের মর্যাদা সংক্রান্ত কিছু হাদীস উল্লেখ করছি, যা আমাদেরকে রমজানের রোজা রাখতে বেশী বেশী উদ্বুদ্ধ করবে।

১) হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন আসমানের দরজাসমুহ খুলে দেয়া হয়। কোন কোন বর্ণনায় আছে, জান্নাতের দরজা সমুহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমুহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে (শিকল দ্বারা) বন্দী করা হয়। (বুখারী ও মুসলিম)

২) হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যখন মাহে রমজানের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও উদ্ধত জ্বীনদেরকে বন্দী করে ফেলা হয় এবং জাহান্নামের দরজা সমুহ বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর (রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত) তার একটিও খোলা হয় না। জান্নাতের দরজা সমুহ খুলে দেয়া হয় (রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত) তার একটিও বন্ধ করা হয় না এবং একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকে, হে কল্যাণ কামনাকারী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণ কামনাকারী! নিবৃত্ত হও। অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক নাফরমান বান্দাহকে দোজখ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। আর এ কাজ প্রত্যেক রাতেই করা হয়। (তিরমিযী ও ইবনে মাযা)

৩) হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের জন্য দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত সওয়াব নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ বলেন, রোজা এর ব্যতিক্রম। সে একমাত্র আমার জন্যই রোজা রেখেছে এবং আমি নিজেই এর পুরষ্কার দেব। সে আমার জন্যই যৌন-বাসনা ও খানা-পিনা ত্যাগ করেছে। রোজাদারের ২টা আনন্দ। একটা হচ্ছে ইফতারের সময় এবং অন্যটি হচ্ছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুুখের গন্ধ মেশক-আম্বরের সুঘ্রাণের চেয়েও উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)

৪) হযরত সাহল বিন সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা) বলেছেন, বেহেশতে “রাইয়ান” নামক একটি দরজা আছে। রোজাদার ছাড়া আর কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। রোজাদাররা প্রবেশ করার পর তা বন্ধ করে দেয়া হবে এবং ঐ দরজা দিয়ে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। (বুখারী, মুসলিম ও ইবনে খোযাইমা)

৫) হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা) বলেছেন, আমার উম্মতকে রমজানে এমন পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আগের কোন নবীর উম্মতকে দান করা হয় নি। সেগুলো হচ্ছে : ১. রমজানের ১ম রাতে আল্লাহ তাদের দিকে তাকান। আর আল্লাহ যাদের দিকে তাকান তাদেরকে কখনও আযাব দেবেন না। ২. রোজাদারের সান্ধ্যকালীন মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুঘ্রাণের চাইতে উত্তম। ৩. ফেরেশতারা প্রত্যেক রাতে তাদের জন্য গুনাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ৪. আল্লাহ বেহেশতকে নির্দেশ দেন প্রস্তুত হও এবং আমার বান্দাদের জন্য সুসজ্জিত হও। শীঘ্রই তারা দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে আমার ঘর ও সম্মানের কাছে বিশ্রাম নেবে। ৫. রমজানের শেষ রাতে তাদের সবাইকে মাফ করে দেয়া হয়। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, সেটি কি কদর রাত্রে? রাসূল (সা) বললেন, না। শ্রমিকদের ব্যাপারে তোমাদের মতামত কি? কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর তাদেরকে কি পারিশ্রমিক দেয়া হয় না? (বায়হাকী)

৬) হযরত আবু সাঈদ কুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটি রোজা পালন করে, তার এই একটি দিনের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে (দোজখের) আগুন হতে সত্তর হাজার বৎসরের দুরত্বে সরিয়ে রাখবেন। (বুখারী ও মুসলিম)

৭) হযরত আবু মাসউদ গিফারী (রা) বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, রমজানের সৌজন্যে জান্নাতকে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাজানো হয়। রমজানের প্রথম দিন আরশের নীচ দিয়ে মৃদু হাওয়া প্রবাহিত হয়। ফলে জান্নাতের বৃক্ষরাজির পাতাসমূহ পতপত করে ঝংকৃত হতে থাকে। জান্নাতের আয়তলোচনা হুরদের নজর সে দিকে আকৃষ্ট হয়। তারা এই বলে প্রার্থনা জানায়, হে রব! এ মাসে আমাদের জন্য তোমার বান্দাদের পক্ষ থেকে এমন নয়নাভিরাম স্বামী দান কর, যাদের দেখে আমাদের চক্ষু শীতল হবে এবং আমাদেরকে দেখে তাদেরও চক্ষু জুড়াবে। রাসূল (সা) বলেন, কোন বান্দা রমজানের রোজা রাখলে জান্নাতে মণি-মুক্তা দ্বারা তৈরী তাবুতে হুরদের সাথে তাদের বিয়ে হবে। রোজার বিনিময়ে হুরদের সাথে বিয়ে দেয়া হবে এবং রোজা হচ্ছে হুরদের দেনমোহর।

সালাতুত তারাবীর গুরূত্ব:

তারাবীহ অর্থ বিশ্রাম করা বা বিরতি দেয়া। বিশ রাকা’আত সালাতে চার রাকা’আত পর পর বিশ্রামের জন্য বসা হয়, তাই একে তারাবীহ সালাত বা বিশ্রামের সালাত বলে। তারাবীর সালাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। বিনা ওজরে তারাবীর সালাত ত্যাগ করলে সে গোনাহগার হবে। যে রাত থেকে রমজানের চাঁদ দেখা যাবে সেদিন থেকে তারাবীর সালাত পড়তে হবে এবং ঈদের চাঁদ দেখা গেলে আর পড়তে হবে না। তারাবী সালাতের গুরূত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলে পাক (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি রমজানের রাতগুলোতে ঈমানী প্রেরণা এবং আখেরাতের প্রতিদানের নিয়তে তারাবীহ সালাত পড়লো, তার কৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” নাসায়ীর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, সদ্যোজাত ভুমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যাবে। রাসূল (সা) নিজে তারাবী সালাত পড়েছেন এবং অপরকেও পড়তে উৎসাহিত করেছেন। তিনি কখনো ৮ রাকা’আত, ১৬ রাকা’আত বা ২০ রাকা’আত করে পড়েছেন। নির্দিষ্ট করে দেন নি। এর কারণ ছিল তিনি নিয়মিত তা করলে উম্মতের জন্য তা ওয়াজিব হয়ে যেত। অবশ্য আমিরুল মোমেনীন হযরত উমর ফারূক (রা) আমল থেকেই ২০ রাকা’আত তারাবী সালাত পড়া শুরু হয়। উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে ২০ রাকা’আত তারাবী সালাতের ব্যাপারে ঐক্যমত আছে।

তারাবীর সালাত দেশে প্রায় সকল মসজিদেই কোরআন পাক তেলাওয়াতের মাধ্যমে মুসল্লীগণ আদায় করে থাকেন। একেক মসজিদে তারাবীর সালাতের ধরন একেক নিয়মে পালন করা হচ্ছে। কোথাও ৮ দিনে, কোথাও ১০, ১৪, ২০, ২৬ দিনে খতম তারাবী সালাত পড়া হচ্ছে। অতি তাড়াতাড়ি কোরআন পাঠের ফলে মুসল্লীগণ পাঠ বুঝতে পারে না। অবশ্য এজন্য হাফেজদেরকে কর্তৃপক্ষ বাধ্য করে থাকে। কোরআন তেলাওয়াতের এই মৌসুমে না বুঝে তেলাওয়াত, খতম তারাবীর সালাত পড়ে আমরা কোরআনের আসল ফায়দা পাচ্ছি না। আল্লাহ কি জন্যে কোরআন নাজিল করেছেন তার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের সকল মসজিদে যদি একই পদ্ধতিতে অর্থাৎ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সম্মাণিত খতিব সাহেব প্রতি বছর ২৬শে রমজান কোরআন খতম করার জন্যে বলে থাকেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা? প্রথম ৬দিন দেড় পারা করে ৯ পারা, ৭ম দিন থেকে ১ পারা করে পড়লে ২৬শে রমজান খতম হয়ে যায়। ফলে মুসল্লীদের সবাই যে যেখানে যাই না কেন একই পদ্ধতিতে হলে একজন লোক যেখানে যাক না কেন তার মাঝখানে কোরআন শুনা বাদ পরার সম্ভাবনা থাকে না। আশা করি বিষয়টি ভেবে দেখলে সবার জন্য কল্যাণকর হবে।


সেহরীর গুরূত্ব:

রোজা পালনের উদ্দেশ্যে সেহরী খাওয়া সুন্নত ও সওয়াবের কাজ। মুসলমান ও ইয়াহুদী-নাসারাদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, তারা সেহরী খায় না। খিদে লাগুক বা না লাগুক কিছু হলেও অন্তত খাওয়া চাই। সেহরী খাওয়া ও কতক্ষণ পর্যন্ত সেহরী খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে আল্লাহপাক সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে বলেন, “আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রাত্রি পর্যন্ত তোমরা রোজা পূর্ণ করো।” (আল কোরআন) সেহরী খাওয়াতে বরকত রয়েছে। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, তোমরা সেহরী খাও, কারণ সেহরী খাওয়াতে বরকত নিহিত রয়েছে। যদি সেহরী খাওয়া না হয় তাহলে রোজা এবং ইবাদতে লোকেরা দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে রোজা রাখতে গিয়ে কষ্টে পতিত হতে পারে। হযরত ইবনে উমর থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতারা সেহরী গ্রহণকারীর জন্য প্রার্থনা করেন। (তাবরানী ও ইবনে হিব্বান) সেহরীর ফজীলত সম্পর্কে আরো জানা যায় যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত রাসূল (সা) বলেছেন, খাবার হালাল হলে তিন ব্যক্তির খাওয়ার কোন হিসাব নেয়া হবে না। ১. রোজাদার ২. সেহরী বা শেষ রাতের খাবার গ্রহণকারী ও ৩. আল্লাহর পথের সৈনিক বা মুজাহিদ। (বাজ্জার) সেহরী খেতে তাড়াতাড়ি বা আগে ভাগে খাওয়া উচিত নয়। সুবেহ সাদিক হতে সামান্য বাকী আছে এতটা পর্যন্ত বিলম্ব করা মুস্তাহাব এবং এতেও সওয়াব আছে।

ইফতারের গুরূত্ব :

ইফতার মানে রোজা ভঙ্গ করা। রোজা কারীর রোজা পালনে ইফতার করা অশেষ কল্যাণ নিহিত রয়েছে। ইফতার তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব। প্রিয়নবী (সা) বলেছেন, মানুষ ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন তারা ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করে। (বুখারী ও মুসলিম) নবী করিম (সা) আরো বলেছেন, তিনটি বিষয় পয়গম্বরদের আচার-আচরণের ন্যায়। ১. সেহরী দেরী করে গ্রহণ ২. তাড়াতাড়ি ইফতার করা ও ৩. নামাজে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। হাদীস শরীফে আছে, নবীজী খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করতেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন রোজা রেখে ইফতার করে, সে যেন খোরমা-খেজুর দিয়ে ইফতার করে। যদি খোরমা খেজুর না পায়, তবে পানি দিয়ে ইফতার করা উচিত। কারণ পানি হচ্ছে পাক-পবিত্র। (আবু দাউদ ও তিরমিযী) একা একা ইফতার করার চাইতে কয়েকজন মিলে ইফতার করা ভাল। আর যে ব্যক্তি কাউকে ইফতার করাবে, তবে সে রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে। কেউ যেন মনে না করে, কাউকে ইফতার করালে তার সওয়াব কমে গেল। আল্লাহর নবী (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে কাউকে ইফতার করায়, সে ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় এবং রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে। আমাদেরকে ইফতার গ্রহণ করার সময় মনে রাখা উচিত পরিমিত ভাবে গ্রহণ। বেশী খাওয়ার ফলে রাতে তারাবীহ নামাজ পড়তে যাতে শারীরিক অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ইফতার গ্রহণ করতে হবে।

এতেকাফের গুরূত্ব:

মাহে রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। একটি মসজিদের মুসল্লীদের মধ্য থেকে কাউকে না কাউকে এতেকাফ করতেই হবে, নয়তো সবাইকে গুনাহগার হতে হবে। হযরত আয়েশা (রা) বলেছেন, হুজুর পাক (সা) রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত এ নিয়ম তিনি পালন করেছিলেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর পবিত্র স্ত্রীগণ এতেকাফের এ সিলসিলা জারী রাখেন। (বুখারী) হযরত আবু হোরায়রা (রা) বলেছেন, রাসূল (সা) প্রতি রমজানে শেষ দশদিন এতেকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর বিশ দিন এতেকাফ করেন। (মুত্তাফাকুন আলাইহি) ইসলাম বৈরাগ্যবাদকে কখনো সমর্থন করে না। সমাজ-সংসার, লোকালয় ছেড়ে নির্জনে ধ্যানমগ্ন হয়ে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করাকে বাতিল করেছে। রমজান মাসের এই এতেকাফ বা মসজিদে অবস্থান আল্লাহ প্রাপ্তির অপূর্ব সুযোগ। এটি অত্যন্ত ফজীলত ও গুরূত্ববহ। এতেকাফের কারণে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর প্রাপ্তিও ঘটে যায়। কে হতে পারে এত বড় সৌভাগ্যবান-যার লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি হয়, এতেকাফের বদৌলতে। রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি একদিন এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অতিবাহিত করে জাহান্নাম তার কাছ থেকে আসমান-জমীনের দূরত্ব তিনগুণ দূরে সরে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন এতেকাফে বসে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার মধ্যে এবং জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দকের ব্যবধান করবেন। এক খন্দক সমান পাঁচশত বছরের পথ। রাসূল (সা) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করে, তা দু’হজ্ব এবং দু’উমরার সওয়াবের সমান। (বায়হাক্বী)

মূলতঃ রমজান অশেষ পূণ্য হাসিলের অনন্য মাস। সালাতুত তারাবী, সেহরী খাওয়া, পারস্পরিক ইফতার করা, এতেকাফ করা, রাতে তাহাজ্জুদের অপূর্ব সুযোগ, পারস্পরিক সহানুভুতি-সহমর্মিতা প্রকাশের অনুশীলন, ধৈর্যের ব্যাপক প্রচলন, অসহায়ের সহায় হিসাবে যাকাত-দান-সদকা প্রদান, কোরআন তেলাওয়াত করে পূণ্য অর্জন, আত্মশুদ্ধি ও আত্মজাগৃতির মাধ্যমে চরিত্র গঠন, যা তাকওয়া অর্জনে, মুত্তাকী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সহায়ক-মোট কথায় সিয়াম সাধনার এ এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটে এই মাসে। উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য তাই তো আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে কাল কিয়ামতে আমাদেরকে নিজ হাতে পুরষ্কার এবং দিদার করবেন। রোজাদারের জন্য এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে কি?

--------



বিষয়: সাহিত্য

২৫৫০ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370789
০২ জুন ২০১৬ রাত ০৮:০৮
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ভাইয়া। মা-শা আল্লাহ, আপনি তো অল্প কথায় সব বিষয় এক সাথে আলোচনা করেনে। আপনার লিখাটি সবার জন্য উপকার বয়ে আনুক। অনেক অনেক শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর
০৪ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৩২
307823
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যটির জন্য জাযাকাল্লাহ। আল্লাহপাক সবাই রমজানের যথাযথ হক আদায় করার তৌফিক দিন।আমিন।
370797
০২ জুন ২০১৬ রাত ০৮:২৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া.........
০৪ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৪০
307824
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়ারাকাতুহু..ভাল থাকবেন। জাযাকাল্লাহ।
370802
০২ জুন ২০১৬ রাত ০৮:৪৪
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

মা শা আল্লাহ!! সবকিছু একসাথে!!
কিন্তু অতৃপ্তি রয়ে গেল যে!!

মাহে রমজানের গুরুত্ব ও রোজাদারের ভুমিকা.. শিরোনাম থেকে মাহে রমজানের গুরুত্ব পেলাম, কিন্তু রোজাদারের ভুমিকা.. পেলাম না!
মানে বলতে চাই- পরিবার ও সমাজের জন্য রোজাদারের ভুমিকা.. সম্পর্কে তেমন কিছু পেলামনা, যা-কিছু পড়লাম সবই একজন "স্বার্থপর" রোজাদারের আমল, অন্যেরা তার থেকে উপকৃত হবার মত কিছু দেখিনা!
ইফতার করানোর কথাটা গতানুগতিকভাবে বলা হয়েছে, কিন্তু ওটা পাঠকের মনে তেমন দাগ কাটার মত হয়নি!
বিশেষতঃ কুরআল শিক্ষা করা ও শিখানো ও কুরআনের দাওয়াত এবং গরীব ইয়াতীম ও প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেয়া ও তাদের নিয়ে ইফতার করার মত পূণ্য অর্জনে বিশেষ উতসাহিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার মত করে বিশেষভাবে বলা হলে খুব ভালো হতো!

সবাইকে ধন্যবাদ, জাযাকুমুল্লাহ
০৪ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৪
307825
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ৩০ দিনব্যাপী এই সাধনার মাসের আলোচনাও অনেক মহাসাগরের ন্যায়।..আপনার অনুসন্ধানী দৃষ্টি আরো প্রসারিত হোক এই কামনা করছি। জাযাকাল্লাহ..
370815
০২ জুন ২০১৬ রাত ০৯:১০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন।আমরা ভুলে যাই রমজান হলো প্রশিক্ষন এর সময়। রোজাদার এর সুযোগ আদায় না করলে সেটা তার ব্যর্থতা।
০৪ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৭
307826
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : রমাদানের প্রশিক্ষণ, ভলে যাই প্রতিক্ষণ-রোজা শেষে আমাদের সকল সাধনা বিফলে যায়।একদম সঠিক। আপনার উপস্থিতি ও মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় সবুজ ভাই।..
370819
০২ জুন ২০১৬ রাত ০৯:১৭
আফরা লিখেছেন : আল্লাহ এই রমাদানের সিয়াম থেকে উত্তম ফায়দা হাসিলের তৌফিক দিন । আমীন
০৪ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৯
307827
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : রমাদানের শিক্ষাকে আমরা যাতে সারা বছর প্র্যাকটিক্যাল লাইফে কাজে লাগাতে পারি। আমিন..ধন্যবাদ আপনাকে।
370840
০২ জুন ২০১৬ রাত ১০:০৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া। এতো ভালো ভালো বিষয়ে লিখা পড়ে আনন্দে ভাসছি। সাইফ ভাইয়ের মত ত্রুটি খোঁজার ফুরসৎ পাচ্ছি না। আর সে মেধাজ্ঞানও নেই।

ভীষণ ভালো লাগলো লিখাটি। জাজাকাল্লাহু খাইর।
০৪ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০২
307829
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম। সাইফ ভাই দোষ ধরেননি-পরামর্শ দিয়েছেন। লেখার ক্রিটিসাইজকে আমি স্বাগত জানাই, নচেৎ কিছু শেখা যাবে না। শিখতে হলে সমালোচনা সহ্য করতেই হবে।
জাযাকাল্লাহ খায়রান।
370844
০২ জুন ২০১৬ রাত ১০:৪০
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া আপনার মুল্যবান লিখাটি পড়ে অনেক কিছুই শিখতে পারলাম। জাযাকাল্লাহ খাইর
০৪ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৪
307830
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : রমাদানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর রঙে রাঙাতে হবে জীবন। দোয়া চাই-মামুন ভাই।জাযাকাল্লাহ খায়রান।
370863
০৩ জুন ২০১৬ রাত ০৩:০৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম।

ফজিলতের হাদিস গুলো জানা হয়ে গেলও আরো একবার জাযাকাল্লাহ খাইর!
০৪ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৪
307831
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম। অ-নে-ক দিন পর মনে হয়।
370879
০৩ জুন ২০১৬ সকাল ০৭:৪৯
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের প্রকৃত রোজাদার বানিয়ে দিও। আমিন।
০৪ জুন ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৯
307828
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আমিন, ছুম্মা আমিন।
১০
377359
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১২:১০
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের প্রকৃত রোজাদার বানিয়ে দিও
১৯ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮
313775
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আমিন। জাযাকাল্লাহ আপনার সুন্দর মন্তব্যখানির জন্য..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File