আনন্দ দিনের কাব্য (একটি পারিরারিক শিক্ষা সফরের মজার অভিজ্ঞতার কথা)
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১৪ মে, ২০১৬, ০৮:৩৫:৩২ রাত
“এ ধরায় মোরা যেদিকে তাকাই অথৈ নিয়ামতে ডুবে আছি সবাই”- এ শ্লোগানকে সামনে রেখে গত পরশু রাহীদের নতুন সাংস্কৃতিক ক্লাব, “কর্ণফুলী সাহিত্য ও সংস্কৃতি কেন্দ্র” কর্তৃক আয়োজিত পিকনিক হয়ে গেল। স্থান নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলানিকেতন সীতাকুন্ডের কুমিরাস্থ আইআইইউসি ক্যাম্পাস। মূলত এ সফরের মূল পরিকল্পনাকারী মহল্লার বড় ভাই ও ক্লাবের সভাপতি মনোয়ার হোসেন। পিকনিকে মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান মেহমান ছিলেন এলাকার মুরব্বী ও সমাজসেবক রকিব চৌধুরী আরো যারা বিশেষ মেহমান হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ সেবক নুরুদ্দিন সাহেব, শিক্ষাবিদ আহমদ মিয়া সাহেব ও ব্যাংকার রফিক সাহেব। পিকনিকের শুরুতে গাড়ী ছাড়া পূর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নুরুদ্দিন সাহেব। তিনি এ পিকনিক আনন্দময় এবং সকল কষ্ট-ক্লেশ থেকে পানাহ চেয়ে আল্লাহর কাছে তিনি দোয়াও করেন।
“হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এ সফর সহজ কর এবং এর দূরত্বকে কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই সফরের সাথী ও পরিবার পরিজনের মধ্যে প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! সফরের কষ্ট অবাঞ্চিত দৃশ্য ও ঘরে ফিরার কালে মালপত্র ও সন্তানাদির দূরবস্থা দর্শন থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমিন।”
আমরা যাত্রা শুরু করি চট্টগ্রাম শহরের স্থানীয় একটি মাঠ থেকে সকাল ৯টায়। প্রায় দু’শতাধিক অংশগ্রহণকারী ৪টি বাস নিয়ে সকাল ১০টায় গাড়ী যথাস্থানে পৌঁছে। ডেলিগেট, মেহমানদের আসন ও নাস্তাসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারার পর প্রোগ্রামের মূল পর্ব শুরু হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের পর স্বাগত বক্তব্য দেন “কর্ণফুলী সাহিত্য ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের” সম্মাণিত সভাপতি মনোয়ার হোসেন। তিনি এ ধরনের পিকনিকে প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরে প্রোগ্রামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডেলিগেটদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে এক নাতিদীর্ঘ বক্তব্য দেন।
এ ধরনের পিকনিকের সামাজিক গুরুত্ব অনেকখানি,
আল্লাহপাক নিজেই সফর, (পিকনিক, আতিথেয়তা ইত্যাদি) তথা দেশভ্রমণের জন্য আল্ কোরআনে উৎসাহ দিয়েছেন।আর পরিবারের সাথে সফর নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। ভ্রমণের প্রতিও রয়েছে মানুষের সহজাত দূর্বলতা। আমরা মহান আল্লাহর অজস্র নিয়ামতে ডুবে আছি। এর শোকরিয়া কিভাবে করব? ব্যস্ততার মাঝে মানুষের সময় বের করা সুকঠিন। তবুও জানার আগ্রহে লালিত সুপ্ত মন সর্বদা ব্যাকুল। সফরের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর সৃষ্টির গভীর রহস্য। এ রহস্য মানব মন ভেদ করতে না পারলেও প্রবল আকাঙ্খা থাকে জানার, দেখার। সত্যিই এ আইআইইউসির এই মনোরম শিক্ষার পরিবেশ, চারদিকে পাহাড় বেষ্টিত সবুজ চুড়া, ঐ দূরে নীল আকাশ সাগরের বুকে মিশে একাকার। মানুষ আসলে আনন্দ-বেদনার মুহুুর্তগুলো প্রকৃতির মাঝে, ঝর্ণাধারা উচ্ছ্বাসে ভাগাভাগি করে আরো বেশী আন্দোলিত হতে চায়। মুহুতেই ভাবুক মন কবিতার পংক্তিতে ধরা দেয় এভাবে-
“তারা কি এ উদ্দেশ্যে দেশভ্রমণ করেনি যাতে তারা কোমল হৃদয় এবং শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ হয় না। কিন্তু বক্ষস্থিত অন্তরই অন্ধ হয়।” (সূরা হজ্ব-৪৬) “তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব তোমরা তার বুকে বিচরণ বা ভ্রমণ করো এবং তাঁর দেয়া রিজিক থেকে আহার করো।” ( সূরা মূলক-১৫)
“স্নিগ্ধ কোমল এই আনন্দময় প্রাকৃতিক পরিবেশে
ব্যাকুল এই মন, পুলকিত, সকলি হিয়া নির্বিশেষে।
অনাবিল সৌন্দর্য যেন পরিপাটি করা প্রকৃতির সাজ
সাদর সম্ভাষন হে বন্ধু, হে প্রেমিক তোমায় আজ।
ঐ দূর দিগন্তের আহ্বান আসে, নীল কান্ত মনি
ঢেউয়ের সানাই মাতোয়ারা, বাজে কলকল ধ্বনি
দিনযাপন সারাক্ষণ মন নেই কোন কাজে
নিজেকে খুঁিজ কবিতার কাছে প্রকৃতির মাঝে।
দেখো পাহাড়ের পাশ দিয়ে সুনীল আকাশ
এই ধরিত্রির বুকে কত সুন্দরের বহিঃপ্রকাশ।
সৃষ্টিকর্তার রহস্য ভরা তামাম পৃথিবী জাহান
কাজল নয়ন দেখে তাঁর অপরূপ পূর্ণ বাগান।
গাঙচিল ওড়ে আকাশ জুড়ে নেই কোন সীমানা
রহস্যভরা ধরণীর কার আছে কতটুকু জানা?
আসলে এই আনন্দের মাঝে প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যায় মন। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন আল্ আমিন শিল্পী গোষ্ঠী”র পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিল্পীরা ইসলামী সংগীত, টক শো, কৌতুকসহ অংশগ্রহণকারী শ্রোতাবৃন্দকে নানাভাবে আনন্দ দেন। সেদিন জুমাবার থাকায় নামাজের আগেই শিল্পীদের প্রোগ্রাম শেষ করে। নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ক্যান্টিনে প্রথমে মহিলারা এবং পরে পুরুষরা দুপুরের আহার গ্রহণ করে।
ক্যান্টিনের পাশে দেখা গেল মনোয়ার হোসেন ভাইকে। আমরা ক’জন কথা বলছিলাম। তিনি বললেন, ভাইজান, মাইন্ড করবেন না। হল রুমে গিয়ে বসুন। এটা সংরক্ষিত এলাকা বুঝতেই পারছেন।
শফিক ভাই সদ্যোজাত তনয়াকে নিয়ে স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন। ক্যান্টিনের পাশে। তুলতুলে বাচ্চাটিকে কোলে নিলাম। কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম। পিকনিকের আনন্দ উপভোগে চারদিকে হাস্যময়-লাস্যময় অনুভুতি ছিল সবার মনে। আরেক মুরব্বী ও ক্লাবের সহসভাপতি একরাম সাহেব ছিলেন সদা হাস্যোজ্বল। মালেক ভাইয়ের তো ছিল প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা এক রহস্যময় অভিব্যক্তি। মনে হচ্ছিল এক ভাবুক মন, প্রোগ্রামের চাইতেও অন্য কোথাও মনটা! আর নাজিম ভাইয়ের মেজাজটা মাশাআল্লাহ শেষের দিকে উচ্চমার্গে উঠেছিল! শামীম খান ভাই তো সময় লাঞ্চের সময়ে যে ই না সময় পেল, অমনি বই হাতে। ফজল ভাইয়ের বড় টেনশন ছিলো, কখন যে প্রতিযোগিতার রেজাল্টটা ঘোষণা দিবেন? মহসিন ভাই তো খালি হাসিটা চাপা রাখতে চায়, বের হতে দিচ্ছে না।
সামাজিকতা ও সৌহাদ্যপূর্ণ এই পিকনিক আয়োজন ছিল সত্যি এক দারুণ ব্যাপার। চারদিকে জান্নাতি পরিবেশ। আল্লাহপাক কোন মু’মিন পরিবারকে জান্নাতে দিলে সবাই মিলে যে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাবে, তারই এক যেন ফটোসেশন বা রিহার্সেল। অনুষ্ঠান চলছে, পারফরমাররা ছাড়া সবাই এক আনুগত্যের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে যার যার কাজে ব্যস্ত। হলে সুনসান নীরবতা। কখনো গান চলছে, কখনো কবিতা আবৃত্তি, কখনো কৌতুক পরিবেশন। পরক্ষণেই করতালির আর উল্লাস। মারহাবা, মারহাবা।
খেলার মাঠে দূর থেকে আসা আরো কয়েকটি ক্লাবে আয়োজনও চোখে পড়ল। মাঝে মাঝে তাদের অনুষ্ঠানের দিকের মন হারিয়ে যাচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদেরও এদিক সেদিকে চলাচল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ কেউ স্থানীয়দের সাথে আলাপচারিতায় মত্ত। এদেশের মানুষ, শিক্ষা-দীক্ষা, আবহাওয়া, প্রকৃতি ও পরিবেশে তারা ভুয়সী প্রশংসা করছিল। সহজ-সরল মানুষের ভালবাসায় তারা মুগ্ধ।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী সকলের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেন ক্লাব সভাপতি। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টও সম্পন্ন হয়। পেশাজীবী ও ছাত্রদের জন্য ক্যুইজ এবং ছোটদের আসরে ক্বেরাত, ইসলামী সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে মোট ১৫ জন পুরষ্কৃত হন এবং অংশগ্রহণকারীদের মধ্য হতে দুইজন বয়োঃবৃদ্ধ মুরব্বীকে বিশেষ সংবর্ধনাও প্রদান করা হয়। নির্ধারিত সময়ে প্রোগ্রাম সমাপ্ত হওয়ায় বাকী সময় ক্যাম্পাস পরিদর্শন আইআইইউসির সেন্ট্রাল লাইব্রেরী এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক সুরম্য স্থাপত্যকলায় নির্মিত বিভিন্ন অট্টালিকা পরিদর্শন করি।
“মনোরম পরিবেশে সম্প্রীতির সুন্দর সফর
প্রতি পরিবারে বয়ে আনুক সুখের নহর।
মোরা মহামহিম আল্লাহর অনুপম সৃষ্টি
দু'নয়ন জুড়িয়ে যায় যেদিকে যায় দৃষ্টি।
মোদের জুড়ি যেন দু'জাহানে থাকে অটুট
না পড়ি যাতে বক্র পথে আর শয়তানি কুট।
এই দোয়া তোমার কাছে সকলে মাগি
দ্বীন কায়েমে মোরা ঘরে ঘরে জাগি।”
এমনি দিন, মুহুর্ত মানুষের জীবনে কমই আসে। আনন্দ ঘন্টার শেষ ধ্বনি বেজে উঠে। এবার বিদায়ের সুর সানাই প্রস্তুত। বিকাল সোয়া ৫টা নাগাদ হবে আমরা গাড়ীতে উঠি, ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দেয়। উদ্দেশ্য যার যার বাসায় ফেরার। পেছনে পড়ে থাকে একটি অনন্য শিক্ষাবান্ধব, অপূর্ব সুন্দরের লালন ক্ষেত্র। যেথায় মন বারবার ফিরে যেতে চায়।
=====
বিষয়: সাহিত্য
২২৯৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বেশ তো ঘোরাফেরা করলেন,
ছবি গুলো কি আপনার তোলা??
অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।
আপনাদের ভ্রমণ ভালই লেগেছে। মা-শা আল্লাহ
একটি কথা মাথায় ঘুরতাছে...
এটা হাদিস কিনা! জানাবেন, জাযাকাল্লাহ খাইর
অনেক বার গেলেও সবসময় কাজে তাই সুন্দর ক্যাম্পাস টার সেীন্দর্য বিশেষ উপভোগ করতে পারি নাই।
আগে শুনেছি দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ -- এখন শুনি এটা জাল হাদীস ।
আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুব সাহেবের একটা লেকচারে শুনেছি রাসুলের (সা নামে কথা বল্লে কিন্তু কথাটা যদি সত্যি রাসুলের (সা না হয় সে সরাসরি জাহান্নামি হবে !
তা ছাড়া লিখাটা ভাল লেগেছে ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন