অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল, তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুছিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল (দারসুল কুরআন)
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১২ মে, ২০১৬, ০২:৪৫:২২ দুপুর
সূরা বাকারা-২১৪ নং আয়াত :
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُواْ الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْاْ مِن قَبْلِكُم مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاء وَالضَّرَّاء وَزُلْزِلُواْ حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللّهِ أَلا إِنَّ نَصْرَ اللّهِ قَرِيبٌ
উচ্চারণ : আম হাসিবতুম আন তাদখুলুল জান্নাতা ওয়ালাম্মা ইয়া’তিকুম্ মাছালুল্ লাযিনা খালাও মিন কাবলিকুম, মাছ্ছাতহুমুল বা’ছা’ঔ ওয়ার্দ্বা রাঔ ওয়াজুল জিলু হাত্তা ইয়া কুর্লা রাসূলু ওয়াল্লাযিনা আমানু মাআ’হু মাতা নাছরুল্লাহ, আলা ইঁন্না নাছরুল্লাহে কারিব।” (সূরা বাকারা-২১৪)
সরল অর্থ : তোমরা কি মনে করেছো, এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুছিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল (ভিত-শিহরিত হয়েছিল)। এমনকি সমকালীন রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে? তখন তাদের এই বলে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছিল, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।
শাব্দিক অর্থ : ১। আম হাসিবতুম-তোমরা কি মনে করেছো, ২। আন-যে, ৩। তাদখুলুল জান্নাতা- জান্নাতে প্রবেশ করবে, ৪। ওয়ালাম্মা ইয়া’তিকুম্-অথচ এখনও নেমে আসে নি, ৫। মাছালুল্ লাযিনা-অবস্থা তাদের যারা, ৬। খালাও-অতীত হয়েছে ৭। মিন কাবলিকুম-তোমাদের পূর্বে, ৮। মাছ্ছাতহুমুল-নেমে এসেছিল তাদের ওপর, ৯। বা’ছা’ঔ-অর্থ সংকট, ১০। ওয়ার্দ্বা রাঔ-এবং দুঃখ-কষ্ট, ১১। ওয়াজুল জিলু-শিহরিত হয়েছিল, ১২। হাত্তা-এমনকি, ১৩। ইয়া কুর্লা রাসূল-বলেছিল রাসূলকে, ১৪। ওয়াল্লাযিনা আমানু-যারা ঈমান এনেছিল ১৫। মাআ’হু-তার সাথে, ১৬। মাতা-কখন (আসবে), নাছরুল্লাহ-আল্লাহর সাহায্য, ১৭। আলা ইঁন্না- হ্যাঁ নিশ্চয়ই, ১৮। নাছরুল্লাহে কারিব-আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।
এ সূরাতে মোট আয়াত ২৮৬। এটি আল্ কোরআনের সর্ববৃহৎ সূরা। মোট রুকু ৪০ এবং মাদানী সূরা। এটি ১ম পারার ২নং সূরা।
সূরাটির নামকরণ :
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَذْبَحُواْ بَقَرَةً قَالُواْ أَتَتَّخِذُنَا هُزُواً قَالَ أَعُوذُ بِاللّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
"আর যখন মুসা স্বীয় গোত্রকে বলেছিল আল্লাহ তোমরে একটি গাভী যবেহের নিদের্শ দিয়েছেন,তারা বলেছিল তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্রা করছ ? মুসা বলল আল্লাহর স্মরন নিচ্ছি যাতে আমি অজ্ঞ দলের না হই।" (আয়াত-৬৭)
সূরার এক জায়গায় (৬৭নং আয়াতে) বাকারাহ শব্দের উল্লেখ আছে। তা থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। বাকারাহ অর্থ গাভী। এখানে নামকরণে বাকারা বলতে গাভীর কথা আলোচনা করা হয়নি, বরং এখানে গাভীর কথা বলা হয়েছে। আল্ কোরআনের অধিকাংশ সূরাই আলামত বা চিহ্ন বা নিদর্শন ভিত্তিক নামকরণ করা হয়েছে, তন্মধ্যে সূরা বাকারাহও অন্যতম।
নাজিলের সময়কাল :
হিজরতের পরপরই সূরাটির বেশী অংশ নাজিল হয়। কোনো কোনো অংশ অনেক পরেও নাজিল হয়েছে। সুদ হারাম হওয়ার আয়াত দশম হিজরীতে এবং সূরার শেষ কয়েকটি আয়াত হিজরতেরও আগে মক্কায় নাজিল হয়েছে। বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্যের কারণে সেগুলোকেও এ সূরার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আলোচ্য বিষয় :
প্রথম রুকুর প্রথম দিকের আয়াতগুলোতে মু’মিন ও কাফিরের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। মদিনার মুনাফিক গোষ্ঠীর পরিচয়ও বিভিন্ন আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। মু’মিনের করণীয় এবং এর সফলতা সম্পর্কে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
আয়াতে কারীমার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :
নবী-রাসূলগণ পৃথিবীতে যখন আগমন করেছেন, তখন তাদের এবং তাদের অনুসারীদের (উম্মত) খোদাদ্রোহী শক্তির সাথে মোকাবিলা করতে হয়েছে। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাতিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এরপরেই জান্নাত লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছে। আল্লাহপাকের জান্নাত এত সস্তা নয় যে, আপনি তাঁর দ্বীনের জন্য এতটুকু কষ্ট স্বীকার না করে জান্নাতে চলে যাবেন!
রাসূল (সা)এর ওপর নির্যাতন, শি’আবে আবু তালেবে তিন বছর অবরোধ, দারুন নদওয়ায় রাসূল হত্যার ষড়যন্ত্র, আবিসিনিয়া হিজরত, তায়েফে দাওয়াতী কাজে বাধা ও অত্যাচার, বদর-ওহুদ-খন্দকের যুদ্ধ। হযরত ইবরাহীম (আ)এর অত্যাচার, হযরত মুসা (আ)এর প্রতি নির্যাতন। হযরত বেলাল এর ওপর অত্যাচার, হযরত খাব্বাবের ওপর অত্যাচার অনান্য সাহাবীদের ওপর অত্যাচারের স্টীম রোলার। ইমামগণের উপর রাষ্ট্রীয় জুলুম, নির্যাতন ও সীমাহীন অত্যাচার। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট, দেশীয় প্রেক্ষাপট এবং এই জমিনের বুকে শতাধিক ভাইয়ের শাহাদাত। ইসলামী আন্দোলন এবং নেতৃবৃন্দের উপর বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ইত্যাদি মনে করে দেখুন-ইসলামের কাজ করবেন আর শয়তান বাধা দেবে না, জুলুম নির্যাতন মোকাবেলা করতে হবে না, যদি তাই মনে করেন তাহলে আপনি ইসলাম বুঝেন নি।
“চারদিকে জুলুম নির্যাতনের জয়-জয়কার দেখেও হাত-পা সঞ্চালনের শক্তি-সামর্থ্যরে অধিকারী হয়েও যারা হাত-পা গুটিয়ে রেখেছে-জুলুমের বিরুদ্ধে ‘টু’-শব্দটা পর্যন্ত উচ্চারণ করে না, প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করেনি। কারণ এদের অন্তরে যদি ইসলাম প্রবেশ করতো তাহলে ইসলামের বিদ্যুৎ স্পর্শে এরা এক একজন বিপ্লবী মুজাহিদে পরিণত হতো, হক ও বাতিলের সংগ্রামে উন্মাদের মত ঝাঁপিয়ে পড়তো।” (ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা)
وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلَّا أَن يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ ( 8 )
ওয়ামা নাকামু মিনহুম ইল্লা আঁন ইয়্যূ’মিনু বিল্লাহিল আ’যিযিল হামিদ।
“ওই ঈমানদারদের সাথে শত্রুতার কোন কারণ ছিল না যে, (তাদের কোন অপরাধ ছিল না) তারা সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল, যিনি মহাপরাক্রমশালী ও সর্বপ্রশংসিত। (সূরা বুরুজ-৮)
আল্লাহর কাছে সাহায্য কিভাবে চাইতে হবে? আল্লাহ শিখিয়ে দিচ্ছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
ইয়া আইয়্যূহাল্ লাযিনা আমানুস্তায়্যি’নু বিছাবরে ওয়াচ্ছালাত, ইন্নাল্লাহা মাআ’চ্ছাবেরীন।
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ছবর এবং সালাতের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ছবরকারীদের সাথে আছেন।”
সূরাতুল আসরের ধ্বংস থেকে বাঁচার ৪টি উপায়ের মধ্যে ধৈর্য্যরে উপদেশ বা ধৈর্য্য ধারণ করা অন্যতম।
প্রশ্ন হলো, ধৈর্য্য কি?
সহিষ্ণুতা, অবিচলতা। ক) তাড়াহুড়া না করা, নিজের কাজের ফল লাভের জন্য অস্থর না হওয়া এবং বিলম্ব দেখে হিম্মত হারিয়ে না বসা। খ) তিক্ত স্বভাব, দুর্বল মত ও সংকল্পহীনতায় না ভোগা গ)বাধা-বিপত্তি, বিপদ-মুবিতে বীরোচিত মোকাবিলায় ক্রোধ সম্বরণ করা ও ঘ) ভয়ভীতি ও লোভ-লালসার মোকাবিলায় অবিচল থাকা।
এটা আল্লাহর পরীক্ষা
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
ওয়ালা নাবলুওয়ান্নাকুম বিশাইয়্যিম মিনাল খাওফে ওয়াল জুইয়ে ওয়ানাকছিম মিনাল আমওয়ালে ওয়াল আনফুসে ওয়াছচ্ছামারাত, ওয়া বাশিরীছ্ ছাবিরিন।
“আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো ভীতি, ক্ষুধা এবং সম্পদের ক্ষতি, জান-মালের ক্ষতির মাধ্যমে, তবে ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।” (সূরা বাকারা-১৫৫)
বিপদে-মুছিবতে, অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতনের সময় করণীয়-
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ
أُولَـئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
আল্লাযিনা ইযা আছাবাতহুম্ মুছিবাতুন, কালু ই্ন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। উলাইয়িকা আ’লাইহিম ছলাওয়াতুম্ র্মি রাব্বিহিম ওয়ারাহমা, ওয়া উলাইয়িকা হুমুল মুহতাদুন।
“যাদের কোন বিপদ আসলে তারা বলে, আমরা তো আল্লাহরই জন্য, আর তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই তারা যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রয়েছে অফুরন্ত অনুগ্রহ ও কর”ণা। আর এরাই তারা যারা হেদায়াত প্রাপ্ত।” (সূরা বাকারা-১৫৬ ও ১৫৭)
নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রাম করতে হবে, উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে অর্থ, শারীরিক শ্রম দিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও আপ্রাণ চেষ্টা চালতে হবে।
শিক্ষনীয় :
১। বিপদে-মুছিবতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
২। জান্নাত পেতে হলে দুঃখ-কষ্ট, জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন হাসি মুখে বরণ করতে হবে।
৩। সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মানসিকতা তৈরি করে দিন। আসমানী ও জমিনী মুসিবত থেকে হেফাজত করুন। বিপদ-আপদকে মোকাবেলা করার শক্তি, সাহস ও ধৈর্য দিন। আমাদের সকল নেক আমলসমূহ কবুল করুন।আমিন।
========
বিষয়: বিবিধ
২৫১১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
৭১ এ উনারা কি ধরনের ধৈর্য্য ধরেছিল ? নিরীহ মুসলমান ভাইদের মারা কোন লেভেলের সওয়াবের কাজ ?
উনি পাকিস্তানে চলে গেলেই তো পারতেন। আমাদের এখানে মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে ট্রিটেড হয় সেখানে নিজামী সাঈদীরা সেভাবেই ট্রিটেড হত!
উনারা ভুল সময়ে ভুল জায়গায় বসবাস করে গেছেন । কারণ হাসুবু এখন কোহলির মত ব্যাট চালাচ্ছে।
http://www.bd2day.net/newsdetail/detail/34/212684
মন্তব্য করতে লগইন করুন