ইসলামের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো জানা সত্ত্বেও আমরা কেন এড়িয়ে চলি?
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:২১:১৪ রাত
ইসলামের জন্য ক্ষতিকর বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
হজ্জ ইসলামের পাঁচ রুকনের একটি ফরয রুকন। হজ্জ করতে গিয়ে অজ্ঞানতার কারণে গোটা ইসলামরূপ ঘরকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হই। আমরা ঈমান কুফর সম্পর্কে জানি না, শিরক কি বিদআত কি বুঝি না। চরিত্রে নিফাকী থাকলেও এর কোন ধারণা নেই। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত সম্পর্কে ধারণা নেই। জানার চেষ্টা কোন দিন করেছি বলে মনে হয় না। জ্ঞানার্জন ফরয জেনেও জানার জন্য আগ্রহ থাকে না। অহেতুক বির্তক করে সময় নষ্ট করি। জানার ক্ষেত্রে, মানার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকা বিশেষ ভাবে জরুরী। তাই ঈমান অনুযায়ী আমাদের সকল আমল হওয়া উচিত।
নিম্নে যে যে কাজ করলে ইসলামের ক্ষতি হয়, তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল। আশাকরি তা থেকে পরহেজ হওয়ার চেষ্টা করবেন।
১। ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা :
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শাশ্বত গ্রন্থ আল্ কুরআনে এরশাদ করেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দেবেন। জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা, জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা আল্ মায়েদা :৭২)
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে :
“ শিরক করলে তাদের যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগীর কাজ সম্পূর্ণ নিস্ফল হয়ে যাবে।” (সূরা আন’আম-৮৮)
শিরক হচ্ছে তাওহীদের বিপরীত। অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদের বিরুদ্ধে বহুত্ববাদের ধারণা। আল্লাহর কর্তৃত্ব ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় কাউকে শরীক করা।
২। কুফরী করা :
যারা নিজেদের ও আল্লাহর মধ্যে এমন বিশেষ কাউকে মাধ্যম সাব্যস্ত করে যাদেরকে তারা আহ্বান করে এবং তাদের উপর ভরসা করে তারা সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যায়।
৩। ইসলামকে ধর্মের মত মনে করা :
যারা মুশরিকগণকে কাফির মনে করে না বা তাদের কুফুরীতে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের ধর্মকে সঠিক বলে সাব্যস্ত করে তারা কাফির হয়ে যায়। আল্লাহপাক বলেছেন,
“নিশ্চয়ই ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা।” (সূরা আলে ইমরান-১৯)
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে :
“যে ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন দ্বীনকে তালাশ করে, আল্লাহ তা গ্রহণ করেন না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে থাকবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
৪। কুফরী মতবাদকে রাসূল (সা)এর আদর্শ থেকে উত্তম মনে করা :
যে ব্যক্তি বা দল, এ বিশ্বাস পোষণ করে যে রাসূল প্রদর্শিত আদর্শ অপেক্ষা অন্যান্য মতবাদ অধিকতর উন্নততর বা অনুসরণ যোগ্য বা পরিপূর্ণ অথবা নবীজী (সা)এর চেয়ে অন্যের হুকুমকে বা আইনকে প্রাধান্য দেয় বা তাগুতের অনুষারী তারা কাফির। যেমন :
ক) মানব রচিত বিধানগুলো ইসলামী শরীয়তের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও বিংশ শতাব্দীতে ইসলামী আইন চলতে পারে না। ইসলামই মুসলমানদের পশ্চাৎপদতার কারণ এবং ধর্ম, সৃষ্টিকর্তা ও মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ব্যক্তি ব্যাপার, জীবনের অন্য কোন ক্ষেত্রে ধর্মের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
খ) ইসলামের দন্ডবিধিকে বর্বর বলা, যুগোপযোগী নয় বলে ধারণা পোষণ করা।
গ) শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তির ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন ব্যতীত অন্যান্য আইন দিয়ে বিচার ফয়সালা করা বৈধ বা উৎকৃষ্ট বলে মনে করা।
৫। শরীয়তের বিধি-বিধানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা :
আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত বিধানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী কাফির, যদিও সে উক্ত বিধানের প্রতি লোক দেখানো আমল করে। আল্লাহ পাক আল্ কুরআনে এরশাদ করেছেন,
“এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। সুতরাং আল্লাহ তাদের কর্ম নিষ্ফল করে দেবেন।” (সূরা মুহাম্মদ : ৯)
৬। আল্লাহ, কিতাবসমূহ এবং রাসুলদের বিদ্রুপ করা :
আল্লাহপাক্, তাঁর অবতীর্ণ কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলদেরকে অথবা দ্বীনের কোন কিছুর প্রতি বিদ্রুপকারী ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। আল্লাহপাক কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন,
“আপনি বলুন, তোমরা কি ঠাট্টা-তামাশা করছিলে আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসুল সম্বন্ধে? এখন আর কৈফিয়ত পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমান প্রকাশ করার পর কুফরী করে বসেছ।” (সূরা তাওবাহ : ৬৫-৬৬)
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে :
“যারা আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, রাসুলগণ, জিবরাইল, মিকাইলের সাথে শত্রুতা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই কাফিরদের শত্রু (সূরা বাকারা :৯৮)
৭। যাদু-টোনা এবং শয়তানী মন্ত্রণার কাজে প্রতি উৎসাহ প্রদান করা :
যাদু টোনা দ্বারা মানুষকে আকর্ষণ করা, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করা এবং আল্লাহর নাফরমানী কাজে শয়তানের কুমন্ত্রণায় সম্পাদন করলে অথবা এসব কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকলে, সে আল্লাহর কালাম অনুযায়ী কাফির হয়ে যায়। আল্লাহপাক কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন,
“তারা কাউকে শিক্ষা দেয়ার পূর্বেই অবশ্য বলে দিত যে, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ। সুতরাং তোমরা কুফরী করো না।” (সূরা বাকারা-১০২)
যাদুকর, গণক এবং জ্যোতিষীদের নিকট যাওয়া, তাদের কর্মকা-কে বিশ্বাস করা বৈধ নয়। রাসূল (সা) তাদের কাছে যেতে নিষেধ করতেন।
হযরত মুয়াবিয়া বিন হাকাম থেকে বর্ণিত, “তিনি রাসূল (সা)এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুল (সা) আমাদের এখানে জ্যোতিষী আছে, তিনি বললেন : তাদের নিকট যাবে না। সে আরো বলল: আমাদের মাঝে কিছুু মানুষ আছে, তারা শুভ অশুভ নির্ধারণ করে, তিনি বললেন: এটা এমন জিনিস যে এতে তোমাদের কারও মনে সংশয় হতে পারে, কিন্তু তা যেন কাউকে তার কর্ম সম্পাদনে বাধা না দেয়।”(মুসলিম)
রাসূল (সা) আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন গনকের নিকট আসল এবং তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করল, ৪০ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না।” (মুসলিম)
৮। মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকগণকে সাহায্য করা :
আল্লাহপাক কুরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন,
“তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে তারা তাদের মধ্যে পরিগণিত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।” (সূরা মায়েদা-৫১)
৯। রাসুল (সা) আদর্শ বা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া বৈধ মনে করা:
যদি কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, ইসলাম থেকে বের হয় যাওয়া যে কারো জন্য বৈধ, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। আল্লাহপাক কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন,
“কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীনকে গ্রহণ করে নিতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শামিল হবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
১০। আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বা সঠিক জ্ঞানার্জন না করে গাফেল থাকা :
আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বা যে সব বস্তু ছাড়া ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না, সে সব বস্তু সম্পর্কে অজ্ঞান থাকা এবং তার উপর আমল না করে গাফিল থাকা উচিত নয়। আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন,
“যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী দ্বা উপদিষ্ট হয়ে তা’ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে আর অধিক জালিম কে আছে? আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ নিয়ে থাকি।” (সূরা সিজাদাহ-২২)
১১। বিদআতীকে সম্মান করা :
রাসুল (সা) ধর্মে নব আবিষ্কৃতদের নিন্দা জানিয়ে বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন বিদআতকারীকে সম্মান করল, সে যেন ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে সাহায্য করল। (বায়হাকী)
তিনি আরো বলেছেন, “আল্লাহ বিদআতকারীকে অভিশাপ দিয়েছেন সে ব্যক্তিকে যে বিদআতবারীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে।” (মুসলিম)
উপরোক্ত ইসলাম বিনষ্টকারী কাজগুলো তামাশাচ্ছলে বা ভয়স্বরূপ কেউ করে ফেলে তাহলে কাফির হিসেবে গণ্য হবে। তবে এ কাজগুলো করতে বাধ্য করলে তাতে সে কাফির হবে না। আমাদের ঈমান নামক ইসলামের মূলকে যদি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে রাখা যায় তবে ধ্বসে পড়বে না। জ্ঞানার্জনকে করে কুফর, নিফাক, শিরক, বিদআতকে সঠিকভাবে জানতে ও বুঝতে হবে। ইসলামের আবরণে আজ নানা কুসংস্কার, নানা বিকৃতি, অপকর্ম, গর্হিত অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে-তা রোধ করার জন্য বেশি করে জ্ঞানার্জন করার দরকার।
উপরোক্ত বিষযগুলোকে এড়িয়ে চলার বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই।
(সূত্র : হজ্জ উমরাহ ও মসজিদে রাসুল (সা)-ইসলামী দাওয়াহ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, রিয়াদ, সৌদি আরব-বই অবলম্বনে)
------------------------------------------------------------------
বিষয়: বিবিধ
১১৭৮ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর পোষ্ট ধন্যবাদ ভাইয়া ।
একদম সত্যি কথা। অনেক অনেক ধন্যবাদ
সুন্দর লিখার জন্য জাজাকাল্লাহ
০ দিন কয়েক আগে কেউ একজন হলিউড নায়িকা লিন্ডসে লোহান এর [b]ইসলাম ধর্ম গ্রহন করা নিয়ে ভাবছেন এ নিয়ে উচ্ছসিত হয়ে পোস্ট করেছিলেন । এরা তো ঈসা(আঃ)কে আল্লাহ বলতো/আল্লাহর পূত্র বলত (নাউজুবিল্লাহ) যেটা শিরক ।
এরা ইসলাম গ্রহন করলে কি লাভ হবে যেহেতু আগেই শিরক করেছে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন