দানবাক্সের(Danbox)হাকীকত : এভাবে দান-ভিক্ষা করার পদ্ধতি বন্ধ করা হোক..
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৭:৪৪:২৪ সন্ধ্যা
ইসলামে দান বা সদকার গুরুত্ব :
ইসলামে দান দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি ফরয বা আবশ্যকীয় দান, যেমন-যাকাত, ওশর এবং অপরটি নফল বা অতিরিক্ত দান যেমন-আত্মীয়-স্বজন, দীন-দু:খী, মুসাফির, বিপন্ন ও ঋণগ্রস্তকে সাহায্য করা। এ জাতীয় দান বাধ্যতামূলক নয়। তবুও মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে দান করেন। দান করা একটি মহৎ গুণও বটে।
আল্ কুরআনে এরশাদ হয়েছে : "যে মাল তোমরা ব্যয় কর, তা নিজ উপাকারার্থেই কর। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না। তোমরা যে, অর্থ ব্যয় করবে, তার পুরস্কার পুরোপুরি পেয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না। যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, রাত্রে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্যে তাদের সওয়াব রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের কোন আশঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না।" (সূরা বাকারা-২৭২ ও ২৭৪)
১। হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা) বলেছেন, “মানুষ যখন মারা যায়,তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কেবলমাত্র ৩টি আমল জারি থাকে: এক. সদকায়ে জারিয়া দুই. উপকারী জ্ঞান এবং তিন. নেককার সন্তান, যে দোয়া করে। (বুখারী ও মুসলিম)
২। হযরত ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায় (১) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে হক পথে অকাতরে দান করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং (২) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, অতঃপর সে তার দ্বারা ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
৩। “সর্বোত্তম সদকা হলো মিসকিনকে পেট পুরে খাওয়ানো। ” (মিশকাত)
৪। হযরত সালমান ইবনে আমের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “মিসকিনকে দান করলে দানের সওয়াব পাওয়া যায় আর গরীব আত্মীয়কে দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। দানের এক সওয়াব আর আত্মীয়তার আরেক সওয়াব।” (নাসাঈ, তিরমিযী)
৫। হযরত আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকা করে হয়!’’ (বুখারী ও মুসলিম)
৬। হযরত আবু হোরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘কৃপণ ও দানশীলের দৃষ্টান্ত এমন দুই ব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে দু’টি লোহার বর্ম রয়েছে। যা তাদের বুক থেকে টুঁটি পর্যন্ত বিস্তৃত। সুতরাং দানশীল যখন দান করে, তখনই সেই বর্ম তার সারা দেহে বিস্তৃত হয়ে যায়, এমনকি (তার ফলে) তা তার আঙ্গুলগুলোকেও ঢেকে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন (পাপ বা ত্রুটি) মুছে দেয়। পক্ষান্তরে কৃপণ যখনই কিছু দান করার ইচ্ছা করে, তখনই বর্মের প্রতিটি আংটা যথাস্থানে এঁটে যায়। সে তা প্রশস্ত করতে চাইলেও তা প্র্রশস্ত হয় না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
দানের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক কুরআন-হাদীস উদ্ধৃত করা যাবে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকা থেকে বিরত থাকছি। দানের এই মোক্ষম হাতিয়ারকে সঠিকভাবে মুসলমানগণ ব্যবহার করছে না, সুবিধা মত ব্যবহার করছে। ছয় অন্ধের হস্তী দর্শনের ন্যায় যে যেভাবে পারছে ইসলামকে ব্যখ্যা করছে। ওয়াজ-মাহফিলে আমাদের ওয়ায়েজীন আলেমগণও দানের ফজীলত এমন ভাবে বলেন যে দাতা পকেটে যা থাকে তাই দিয়ে দেন। বাড়ী যাওয়ার গাড়ী ভাড়াও অনেক সময় কম পড়ে। এমন ভাবে কারুণের ধনের ধ্বয়সের কথা বলেন যেন কারুণ বনে না তাই ঝটপট পকেট খালি করে দেন!
ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে দান গ্রহনের ঘৃণ্য পদ্ধতি :
ইসলামিক সেন্টিমেন্ট কিভাবে কাজে লাগায় দেখুন। আল্লাহ ও নবী (সা)এর নামে বানোয়াট কাহিনী, ছন্দে ছন্দে পুঁথি, কবিতা, লোক কাহিনী বলে, ওলি-মাজারের মাহাত্ম্যের কথা ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেমন- “একদিন নবী মোস্তফায়, রাস্তা দিয়া হাঁইটা যায়, হরিণ একটা বান্দা ছিল গাছেরও তলায়।” “দানকারীদের মাতা-পিতা সুখে থাকবেন কবরে, নুরের টুপি মাথায় দিয়া উঠাইবেন হাশরে।” “ আমার আল্লাহ-নবীজির নাম”। “তোমার বাবা আমার আয়নার কারিগর, আয়না বানাইয়া দিবেন ক্বলবের ভিতর” বলে অনেক সময় কোরাস করে। বিভিন্ন মাজারের সামনে দেয়া যায় ফকিরকে ফকির, হাজার হাজার, এখানে ল্যাংড়া লুলা থেকে সক্ষম কোনটাই বাদ নেই। মাজারগুলো অপরাধের একেকটি আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। বড়লোক এসে গাড়ী করে দিচ্ছে সাহায্য। খাওয়া দাওয়া সব ফকিরকে ফকির আর কাজ করার দরকার কী? কী আরাম, কী মজার দুনিয়াদারী? পেট পুরে খেলাম, আল্লাহর বদলে বাবারে সিজদা দিলাম-নামাজ কালামের দরকার নেই। উসিলা ধরছি, একটানে বাবার পার করে দিবে সব বালা-মুছিবত! একবার পত্রিকায় পড়েছিলাম, কিভাবে জন্ম নেয়া শিশুকে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য পঙ্গু করে দেয়া হয়? আহারে! আশরাফুল মাকলুখাত মানুষ। নবীর শিক্ষা, করো না ভিক্ষা। মেহনত করে খাও। যে মেহনত করে সে আল্লাহর বন্ধু এবং আল্লাহর সাহায্য সে পায়। ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহমূলক কত হাদীস আছে রাসূল (সা)এর। আর আমরা ইসলাম যা বলে, নবী যা বলেছেন-তার বিপরীত কর্মটাই করি। হাতপাতার মত ঘৃণ্য কাজ আর আছে?
হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “ভিক্ষাবৃত্তি হলো ক্ষতস্বরূপ। এর দ্বারা মানুষ মুখমন্ডলকে ক্ষত-বিক্ষত করে।” (আবু দাউদ) আর দাবী করি মুসলিম! তাই তো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেছেন, “আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান।” সাইয়্যেদ কুতুব বলেছেন, “আমরা কি মুসলমান?” ইসলামকে যে যেভাবে পারছে বিক্রি করে খাচ্ছে-মাজার ব্যবসায়ীদের তাই পোয়াবারো। গডফাদারদের শেল্টারে তো আছেন-চুল ছিঁড়ার সাধ কার? এভাবে মানুষের অঙ্গহানি করে মানুষকে অকমর্ণ্য করা কোন্ ধরনের ইসলাম? আমরা বিধর্মীদের কি ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছি না?
চোখ বুঁজে আমরা দান করছি। সেই দানের টাকা কোথায় যায়-কী হয়! তার খবর কী রাখি? অনেক সময় বলে লোকে, নিয়ত করে দিয়েছি টাকা কোথায় যাক বা না যাক তার দরকার কী, নিয়তই হল আসল। তাজ্জব ব্যাপার তো! ২টি জাতীয় পত্রিকার রিপোর্ট দেখুন: দানের হাকীকত কতটুকু বুঝতে পারবেন।
১। মানব জমিনের রিপোর্ট এবং লিঙ্ক : তারিখ-১০ জুন ২০১৪
শিরোনাম : ভাড়ায় খাটে দানবাক্স -
তার নাম আবদুল হালিম। মির্জাগঞ্জ ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রহ.)-এর মাজারে দানবাক্সের তত্ত্বাবধায়ক। ছদ্মবেশী ডাব বিক্রেতা। অজ্ঞানপার্টির চক্রের সঙ্গে জড়িত। তার অধীনে রাজধানীর বাসাবো-কদমতলী এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩০০ দানবাক্স। সে এগুলোর দেখাশোনা করে। বিনিময়ে যে টাকা জমা হয় তার অর্ধেক পায় সে, আর বাকিটা চলে যায় মাজার কর্তৃপক্ষের কাছে। আবদুল হালিমের মতো অনেকেই দান বাক্সগুলো ভাড়া নিয়ে আয়-রোজগার করছে। তবে এ দানবাক্সগুলো অনেকের কাছেই রহস্যাবৃত। যার দোকানে এ দান বাক্সগুলো ঝুলছে তিনিও জানেন না কারা এর তত্ত্বাবধানে আছে। তাদের ধারণা রাতের আঁধারে লোকচক্ষুর আড়ালে খোলা হয় বাক্সগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মসজিদ, মাদরাসা, পীর, মাজারের নামে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝুলানো রয়েছে কয়েক হাজার দানবাক্স। এসব দানবাক্সের বেশির ভাগই রাজধানীর বাইরের। বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মসজিদ-মাদরাসা, মাজার ও পীরের নামে। লাল ও কালো রঙের এসব দানবাক্স থেকে প্রতিদিন আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সব দানবাক্সই প্রায় একই আকৃতির। সাধারণত গরীব, অল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকজন এসব দানবাক্সে টাকা দেয়। ধর্মীয় অনুভূতি, বিভিন্ন ধরনের মুসিবত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আশায় তারা দান করেন। কিন্তু বেশির ভাগরই ধারণা নেই টাকাগুলো কোথায় যাচ্ছে? কি উদ্দেশ্যে ব্যয় হচ্ছে? কেউই জানেন না এ বাক্সগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজে কারা নিয়োজিত আছেন..
বিস্তারিত:
http://mzamin.com/details.php?mzamin=MjczNTQ=
শিরোনাম: চট্টগ্রামে দানবাক্সের পাঁচ লাখ টাকা লুট-[/b]
চট্টগ্রামে দানবাক্সের পাঁচ নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের দানবাক্সের প্রায় ৫ লাখ টাকা লুট করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারীরা। রোববার দুপুর ১টার দিকে মসজিদ কমপ্লেক্সের ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিস থেকে এ লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টাকাগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুরে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের দানবাক্সগুলো একসঙ্গে খোলা হয়। এরপর টাকাগুলো গণনা করা হয়। গণনা করে দেখা যায় গত এক সপ্তাহে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দানবাক্সে পড়ে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসে দানবাক্স থেকে সংগৃহীত আগের সাড়ে ৩ লাখ টাকা জমা ছিল। টাকা গণনার পর মুসল্লি কমিটি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে টাকা জমা রাখাকে কেন্দ্র করে বাকবিত-া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সরকার দলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের কাছ টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, মুসল্লি কমিটির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম ও আমজাদ হাজারীর নেতৃত্বে ১১-১৩ নেতাকর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। লুট হওয়া টাকাগুলো হাজী আবদুল হাই নামে একটি হিসাবে জমা রাখা হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। নিয়মানুসারে সরকারি মসজিদের আর্থিক বিষয়গুলো দেখাশোনার দায়িত্ব ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। মুসল্লি কমিটির নয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন আইনে তা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ক্ষমতার জোরে টাকাগুলো লুট করেছে....
বিস্তারিত:
http://www.jugantor.com/old/last-page/2014/11/11/172130
শুধু তাই নয়, আমরা বিধর্মীদের নানা পূজা-পার্বনেও শরীক নিজেকে। মহান দাতা হিসেবে জাহির করার জন্যে। তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক হওয়ার জন্যে। যাই-হোক, দানের হাকীকত আশাকরি আর বেশি বুঝাতে হবে না। সতর্ক থাকুন ধর্মপ্রিয় মুসলমানগণ। আপনার কষ্টার্জিত টাকা কাকে দিচ্ছেন-কোথায় দিচ্ছেন? কেন দিচ্ছেন তা একবার নয়-হাজারবার ভাবুন। এ দানের মধ্যে কোন সওয়াব আদৌ পাবেন কিনা নিশ্চিত হোন। এ ধরনের দ্বীন-ধর্ম বিরোধী কাজ প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটলেও ধর্মের দোহাই বা বাবার বদ দোয়ার ভয়ে কেউ ”রা’ করেন না। বাধা দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে আপনি হয়ে যাবেন ধর্ম বিরোধী লোক। বাবাদের আর কত পেট পুজা করবেন। ওরা আপনাদের ঈমান-আকিদার দুশমন। সাক্ষাত শয়তানের মাসতুতো ভাই। তাই জন্মগত মুসলমান হিসেবে ঈমান যেটুকু আছে তা রক্ষা করার চেষ্টা করুন।
========
বিষয়: বিবিধ
২৮২০ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন