এপ্রিল ফুল (April fool) : প্রতারণা ও বিভ্রান্তির বেড়াজাল..@@
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ৩১ মার্চ, ২০১৬, ০৬:২১:০৫ সন্ধ্যা
“এপ্রিল ফুল” (April fool) মানে এপ্রিলের বোকা। কে বা কারা ছিল এই এপ্রিলে বোকা অথবা কাদের চক্রান্তে একটি করুণ ও মর্মান্তিক ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল বিশ্বের বুকে, তা জানতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ১৪৯২ সালের ১লা এপ্রিলে। সুমহান আদর্শ আল্ ইসলামকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে খৃষ্টান, ইয়াহুদী ও মুশরিকদের চক্রান্ত সে-ই ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ (সা)এর থেকেই শুরু-যা আজও থেমে নেই। আবু জাহেল, আবু লাহাব, উৎবা, শায়বা, ফেরাউন ও নমরূদদের মানসপুত্ররা তাদের মিশন সফল করার লক্ষ্যে তাণ্ডব লীলা চালাচ্ছে আজ অবধি। ৭১১ খৃষ্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি জাবির আল তারিক স্পেনের অত্যাচারী শাসক রডারিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে ইউরোপের মাটিতে ইসলামের বিজয় কেতন উড়ান।
স্পেন অভিযানের কারণ হিসেবে জানা যায়, “৮ম শতাব্দীর প্রথম দিকে স্পেন নিয়ন্ত্রণে ছিল এক অত্যাচারী ভিসিগোথিক রাজা, রডারিক। রোমানদের ত্রিতত্ত্ববাদ নীতিও রডারিক অব্যাহত রাখে এবং নিজের এই বিশ্বাস জনসাধারণের উপরও চাপিয়ে দেয়ার জোর প্রচেষ্টা করে, যদিও জনসাধারণের বেশীরভাগই ছিল একেশ্বরবাদী। মুসলিম ইতিহাসবিদ, বিশেষ করে ইবন খাল্দুন, উত্তর আফ্রিকার একজন অভিজাত বংশীয় ব্যক্তি ‘জুলিয়ান’ এর কাহিনী বর্ণনা করেন। জুলিয়ান এর কন্যা রডারিক দ্বারা অপহৃত এবং ধর্ষিত হয়। জুলিয়ান উত্তর আফ্রিকার এক মুসলিম নেতার কাছে যান যার নাম ছিল ‘তারিক বিন জিয়াদ’ এবং রডারিককে অপসারণের ব্যাপারে তাঁর কাছে সাহায্য চান।
ফলশ্রুতিতে, ৭১১ খ্রিস্টাব্দে তারিক বিন জিয়াদ এর নেতৃত্বে কয়েক হাজার সৈন্যের এক বাহিনী স্পেন উপদ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে আক্রমণ করেন। ছোটখাট কিছু বাধা পেরিয়ে তাঁর বাহিনী রডারিক এর বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হন ‘গুতালেতে এর যুদ্ধ’-তে ১৯ জুলাই ৭১১ খ্রিস্টাব্দে। যুদ্ধের ফলাফল ছিল তারিক এর চূড়ান্ত বিজয় এবং রডারিক এর মৃত্যু। ভিসিগোথিকদের রাজসিংহাসন কালের গর্ভে হারিয়ে যায়, মুসলিমরা বাকি স্পেন উপদ্বীপ জয় করে নেয় ৭ বছরের মধ্যেই। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আক্রমণের পর ২০০-৩০০ বছরের মধ্যেই স্পেনের ৮০ শতাংশেরও বেশী মানুষ ছিল মুসলিম, সংখ্যায় যা ৫০ লক্ষেরও বেশী। এদের বেশীর ভাগই স্পেনের স্থানীয় অধিবাসী, যাদের পূর্বপুরুষগণ ইসলাম গ্রহণ করেছিল, বহিরাগত অভিবাসী নয়। ”
সুদীর্ঘ ৮শত বছরেরও অধিককাল ইসলামী শাসনের অধীনে স্পেনের মুসলমানরা ইউরোপের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে প্রচ- আলোড়ন তুলে সভ্যতাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। ইউরোপের ঐতিহাসিকগণ ও অকপট স্বীকার করেছেন, “মুসলমানরা তরবারির জোরে নয়, বরং তাদের উন্নত চরিত্র ও উৎকৃষ্ট শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বদৌলতে ইউরোপকে আলোকিত করেছিলেন এবংন কয়েকশত শতাব্দী রাজত্ব করেছিলেন।”
অবস্থা সবসময় একরকম যায় না। মুসলমানরা ত্যাগ-সংগ্রামের শিক্ষা ভুলে গিয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত হলে তাদের জন্য ধীরে ধীরে দূর্দিন নেমে আসে। খৃস্ট শক্তির ষড়যন্ত্র থেমে ছিল না কোন কালেই। তারা সুযোগ বুঝে হারানো দেশ- ধর্মকে উদ্ধারের পথে অগ্রসর হয়। মুসলমানদের রক্তে হোলি খেলায় মেতে উঠল খৃষ্টান চক্র। তাদের দীর্ঘ গোপন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে পার্শ্ববর্তী খৃষ্টান রাজ্যগুলোর সাহায্য নিল। পর্তুগীজ রানী ইসাবেলা স্পেনের রাজা ফার্ডিনান্ডের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হলেন। শুরু হলো নতুন খেল। উভয়ের মিলিত শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল আর মুসলমান শক্তি তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে প্রচ- প্রতিরোধ গড়ে তুলল। খৃষ্টশক্তি বুঝল সন্মুখ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজিত করা অসম্ভব। তারা সন্মিলিতভাবে অবরোধ আরোপ করল। গ্রানাডাবাসীর উপর নতুন বিপদ আপতিত হলো। ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষের খড়গ নেমে এলো। মুসলমানরা একত্রিত হয়ে গ্রানাডায় অবস্থান নিল। এতে খৃষ্টশক্তি সফল হচ্ছিল না। ফলে তারা নতুনভাবে চাল চালল, জঘন্য প্রতারণা আশ্রয় নিল ফার্ডিনান্ড বাহিনী।
ফার্ডিনান্ড বাহিনী ঘোষণা করল, “ওহে মুসলমানরা! তোমরা যদি বাঁচতে চাও, তবে নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে মসজিদে আশ্রয় গ্রহণ করো। তোমাদের বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেয়া হবে।” মুসলমানরা উপায়ান্তর না দেখে প্রতারণার জালে আবদ্ধ হলো এবং মসজিদে সমবেত হলো। খৃষ্টান চক্র পূর্ব প্রস্তুতি মোতাবেক সকল মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দিল। তারপর করল ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা। পেট্রোল ঢেলে সকল মসজিদে দিল আগুন লাগিয়ে। ৭ লক্ষ গ্রানাডা বাসী ভস্মীভূত হয়ে গেলে নিমেষেই। গ্রানাডার রাজপথ রক্তের স্রোতে ভেসে গেল। সেদিন ছিল ১লা এপ্রিল। ফার্ডিনান্ড দম্ভোক্তিসহ বললেন, ওহে! মুসলমানরা তোমরা হলে এপ্রিলের বোকা। গ্রানাডা ট্রাজেডির এ নির্মমতাকে খৃষ্টানরা পালন করে হাসি-তামাশার দিন হিসাবে। একজন অপরজনকে হাসিচ্ছলে বোকা বানায়, প্রতারণা করে। আর আত্মবিস্মৃত মুসলিম জাতিও ইতিহাস না জেনে তাদের সাথে তাল মিলায় এবং অপরকে বোকা বানিয়ে মজা উপভোগ করে!
আমাদের দেশেও এক শ্রেণীর মানুষ একে অপরকে বোকা বানানোর উদ্দেশ্যে এ দিনে বিভিন্ন দৃশ্যের নিছক অবতারনা করে। ছাত্রজীবনে একবার এমন অবস্থায় পড়েছিলাম ক্লাসমেটদের কারণে। বোকা বনে ছিলাম ঐদিন। তারপর যখন বুঝতে পেরেছি, জেনেছি এর প্রকৃত ইতিহাস সাধ্যমত কলম চালিয়েছি এর বিরুদ্ধে। আজ মুসলিম মিল্লাতের যে করুণ অবস্থা তার অন্যতম কারণ ভোগ-বিলাস এবং দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা।
প্রিয়নবী ঠিকই বলেছিলেন,
“এমন একসময় আসবে যখন পৃথিবীর সকল জাতি একজোট হয়ে তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, যেমনভাবে পেয়ালার মধ্যে খাদ্যবস্তু এক হয়ে যায়। একজন সাহাবী প্রশ্ন করলেন? ‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম থাকবো?’ উত্তরে রাসূল (সা) বললেন, না। ‘বরং সংখ্যায় অনেক বেশি থাকবে। কিন্তু তোমরা বন্যায় ভেসে যাওয়া খড়খুটোর মত দুর্বল হয়ে যাবে এবং আল্লাহর শত্রুদের অন্তরে তোমাদের ব্যাপারে কোন ভয় থাকবে না এবং তোমাদের অন্তরে দুর্বলতা সৃষ্টি করে দেবেন।’ আরেকজন সাহাবী কি ধরনের দুর্বলতা জানতে চাইলে রাসূল (সা) বললেন, ‘তোমাদের দুর্বলতা হলো দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (আহমদ ও আবু দাউদ)
ভোগ-বিলাস আর দুনিযার প্রতি ভালবাসার কারণে একটি জাতি কিভাবে স্পেনের বুক থেকে হারিয়ে গেল তা আমাদের চোখের সামনে রয়েছে। আত্মবিস্মৃত জাতিকে লক্ষ্য করে কবি বলেছেন, “দেখ একবার ইতিহাস খুলি, কত উচ্চে তোরা অধিষ্ঠিত ছিলি।” পাশ্চাত্য সভ্যতার করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে আরো কত বিভ্রান্তিতে আছি আমরা? সভ্যতা-সংস্কৃতি বিনাশী তৎপরতা-ডিসকো পার্টি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, থার্টি ফাস্ট নাইটের ছোবল তো আছেই। ১৯৯৩ সালের ১লা এপ্রিল বিশ্ব খৃষ্ট সম্প্রদায় স্পেনে মিলিত হয়ে " Holy Mary Fund" গঠন করে এপ্রিল ফুল দিবসের ৫০০ বৎসর উদযাপন করেন। বিশ্বব্যাপী খৃষ্টধর্মের তৎপরতাকে আরো জোরালো করা প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আসুন আর কোন এপ্রিল ফুল নয়, কেউ কাউকে বোকা বানানো থেকে বিরত থাকি। গুগল সার্চ করলেই এধরনের কুতৎপরতার তান্ডব দেখা যাবে। অপসংস্কৃতি পরিহার করে দৈত্যটাকে রুখে দিয়ে, প্রতারণা ও বিভ্রান্তির বেড়াজালকে ছিন্ন করতে হবে। আজ তরুণ মুসলমানদের জেগে উঠতেই হবে নব শক্তিতে বলিয়ান হয়ে। বিদ্রোহের রূপকার কবি কাজী নজরুল ইসলাম অবিরামভাবে আমাদের জাগিয়ে তুলছেন এই বলে :
“যাতনা সহেছি আগুনে পুড়েছি ডুবেছি মোরা অতল নীড়ে
মরিয়া হয়ে লড়াই করেছি অজেয় করেছি ইসলামেরে।
নস্ নস্ তুই হীন নস্ আছেরে তোর অজেয় খ্যাতি
মুসলিম তুই বিশ্বাস কর দুনিয়া মাঝে তুই শ্রেষ্ঠ জাতি ॥”
(বক্ষ্যমান নিবন্ধটি আমার প্রথম বই “হৃদয়ে বাংলাদেশ” গ্রন্থে আছে। একটু সংক্ষেপ এবং প্রয়োজনীয় মোডিফাই করে পোস্ট করা হল)
@@@@@@@
বিষয়: সাহিত্য
১৩৪৪ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার জানা মতে 'অজেও' শব্দের অর্থ যা জয় করা হয়নি বা জয় করা যায়না৷তাই যদি হয় তবে আপনার কবিতার ভাব কি ঠিক থাকে? চিন্তা করার পরামর্শ রইল৷ ধন্যবাদ৷
এ লেখাগুলো পড়ে নিজেই নিজের বিচার করুন-
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা: ইতিহাসে ‘এপ্রিল ফুল’
এপ্রিল ফুল ভুলে যান, স্পেনর মুসলিমদের না - লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই
এপ্রিল ফুল এবং মুসলিমদের পুড়ে মারার ভ্রান্ত গল্প
@শেখের পোলা : অজেয় শব্দের অর্থ ওটাই
কিন্তু কবি বলেছেন "অজেয় করেছি ইসলামেরে" [মুসলিমেরে নয়]
এ লেখাগুলো পড়ে নিজেই বিচার করুন-
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা: ইতিহাসে ‘এপ্রিল ফুল’
এপ্রিল ফুল ভুলে যান, স্পেনর মুসলিমদের না - লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই
এপ্রিল ফুল এবং মুসলিমদের পুড়ে মারার ভ্রান্ত গল্প
এ লেখাগুলো পড়ে নিজেই বিচার করুন-
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা: ইতিহাসে ‘এপ্রিল ফুল’
এপ্রিল ফুল ভুলে যান, স্পেনর মুসলিমদের না - লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই
এপ্রিল ফুল এবং মুসলিমদের পুড়ে মারার ভ্রান্ত গল্প
এইরকম পোস্ট স্টিকি না করে কিসব আবোল তাবোল স্টিকি করে রাখে! ঘেন্না ধরে গেছে!
স্পেনের যে ইতিহাস বিদেরা বলেছেন, তরবারির জোরে নয়..... তাদের নাম রেফারেন্স দিলে ভাল হত
জাযাকাল্লাহু খাইর
এ লেখাগুলো পড়ে নিজেই বিচার করুন-
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা: ইতিহাসে ‘এপ্রিল ফুল’
এপ্রিল ফুল ভুলে যান, স্পেনর মুসলিমদের না - লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই
এপ্রিল ফুল এবং মুসলিমদের পুড়ে মারার ভ্রান্ত গল্প
এ লেখাগুলো পড়ে নিজেই নিজের বিচার করুন-
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা: ইতিহাসে ‘এপ্রিল ফুল’
এপ্রিল ফুল ভুলে যান, স্পেনর মুসলিমদের না - লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই
এপ্রিল ফুল এবং মুসলিমদের পুড়ে মারার ভ্রান্ত গল্প
তাই আমিও জানতে চাই?
২।
৩।https://www.google.com/search?q=april+fool+day&espv=2&biw=1366&bih=667&source=lnms&tbm=isch&sa=X&ved=0ahUKEwjkkf2Pme_LAhXEBI4KHS8YAxUQ_AUIBigB#imgrc=FkVOIx-0gWzHvM:
৪। আপনার রেফারেন্সগুলো বিবেচ্য বিষয়..
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা: ইতিহাসে ‘এপ্রিল ফুল’
http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=21467&utm_source=feedburner&utm_medium=email&utm_campaign=Feed:+WeeklySonarbangla+(সোনার+বাংলা)
@প্যারিস থেকে আমি
৪/৫নং মন্তব্য দেখুন
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : মনে হয় বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে তার জন্য স্টিকি করেননি!
মনে কি হয় এতে তাদের নতুন প্রজন্ম অনুতপ্ত ?
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা: ইতিহাসে ‘এপ্রিল ফুল’
http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=21467&utm_source=feedburner&utm_medium=email&utm_campaign=Feed:+WeeklySonarbangla+(সোনার+বাংলা)
ইতিহাসে চিরকালই বিজয়ীদের পক্ষের কথাই প্রতিফলিত হয়- অনেকটাই মিথ্যা, অনুমান এবং প্রতিপক্ষ দমনের উপাদান দিয়ে।
ধন্যবাদ ভাই জান
মন্তব্য করতে লগইন করুন