ইসলাম : ব্যক্তির বিবেক থেকে শুরু করে সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রতিটা রন্ধ্রে প্রবেশ করে তবেই ক্ষান্ত হয়..
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৯ মার্চ, ২০১৬, ০১:১৬:৩৪ দুপুর
পৃথিবীতে ইসলামের চেয়ে মজলুম ধর্ম আর নেই বলা যায়। কারণ ইসলাম এবং ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা) বিরুদ্ধে আদা পানি খেয়ে লেগেছে পৃথিবীর ইসলাম বিরোধী সকল শক্তি সে-ই শুরু থেকেই। বাংলাদেশেও যখন তখন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বা তথাকথিত শিল্পকর্মের দ্বারা আঘাত করে থাকেন ইসলাম বিরোধী শক্তি। ২৮ বছর আগের রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটের কারণে উৎকন্ঠিত ছিল পুরো মুসলিম জাতি! অবশেষে রিট খারিজ করে দেওয়ার মাধ্যমে দেশ মহা সঙ্কট থেকে রক্ষা পেল বলে আপাত: মনে হয়। কী কারণে এমন একটি সময় বেছে নিল কতৃর্পক্ষ তা ভেবে পাই না। অবশ্য আমি না পেলেও জনগণ কিন্তু জানে কোন্ ইস্যু চাপা দিতে কী দরকার তা করতে যেমন কর্তৃপক্ষ ওস্তাদ তেমনি দেশের একটি দুধের ছেলেও জানে জ্বলন্ত ইস্যুর ব্যবহার এবং যাতে ধামা চাপা পড়ে সে সম্পর্কে। এদিকে আর না-ই বা গেলাম। গত কয়েক বছর পূর্বে এক কুলাঙ্গার “কুরবানী”কে নিষিদ্ধ করার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিল। অবশ্য তাও খারিজ হয়েছিল। ষড়যন্ত্র থেমে নেই, কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ নিউইর্য়ক শাখা বাংলাদেশে গরু জবাই নিষিদ্ধের দাবী জানিয়েছে। কত বড় স্পর্ধা! এসব নেপথ্য প্রশ্রয়ের কারণে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ইসলাম বিরোধী লেবেল এঁটে গেছে প্রকান্তারে! এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারকে এসব বিষয়ে পাত্তা না দিয়ে কঠোর অবস্থান দরকার। পানি ঘোলা হয়ে যাওয়ার পর করলে তাতে খুব একটা ফায়দা হয় না। তবে কার কী নিয়ত বা মতলব জনগণ ঠিকই বুঝে?
ইতিমধ্যে সবাই জানেন, ইসলামের রাষ্ট্র ধর্ম থাকা না থাকা নিয়ে রিটটি খারিজ করে দিয়েছেন মাননীয় আদালত। মিডিয়ার খবর অনুয়ায়ী, “ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে রাষ্ট্রধর্ম আগের মতোই বহাল থাকছে। আজ সোমবার (২৮মে মার্চ ২০১৬) এ রিটের ওপর শুনানি গ্রহণের কথা ছিল। দুপুর ২টায় বিচারপতি নাঈমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ না করেই রিটটি খারিজ করে দেওয়ার আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেনবিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৮৮ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এরপর থেকেই আবেদনটি হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল। ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ব্যাপক পরিবর্তন আনা হলেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিষয়টি অপরিবর্তিত থাকে। এর প্রেক্ষিতে সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ রিটটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে ২০১১ সালের জুন মাসে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ ওই বছরের ১১ জুন রুল জারি করেন। রুলে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম অন্তর্ভুক্তির বিধান কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর বিরুদ্ধে রিটকারীদের পরিচয়ও জাতির জানা থাকা দরকার। “১৯৮৮ সালের আগস্ট মাসে করা রিটের রিট কারীরা হলেন ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। সাবেক বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, সাবেক বিচারপতি কে এম সোবহান, অধ্যাপক খান সরওয়ার মুর্শিদ, আইনজীবী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত, বদরউদ্দীন উমর, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, ড. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান। এদের মধ্যে ১০ জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন।” মারা গেলে কী হবে? রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের খায়েস তো মারা যায় নি!
বদরুদ্দিন উমর আজ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রধর্ম আইন করার সময় যে প্রতিরোধ কমিটি হয়েছিল আমি তার প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলাম। কমিটির পক্ষ থেকে একটি মামলা তার বিরুদ্ধে করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। এখন সেই মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। আমার নামও তার সঙ্গে জড়িত করা হয়েছে। বিবৃতিতে বদরুদ্দীন উমর বলেন, আমি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি। রাজনৈতিকভাবে আমরা সে সময় আন্দোলন করেছিলাম এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু তখন যে পরিস্থিতিতে মামলা করা হয়েছিল সে পরিস্থিতি এখন আর নেই। এখন যারা সরকারের ক্ষমতায় আছে সে সময় এরশাদের প্রস্তাবিত আইনটির বিরোধিতা তারাও করেছিল। ইচ্ছা থাকলে তারা ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এই আইন বাতিল করতে পারতো। কিন্তু তারা তা করেনি। উপরন্তু তারা সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম আইন বহাল রেখেছে।”
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ন্যায় বিশিষ্ট আইনজীবী ড. তুহিন মালিক কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করে মতামত দেন। তিনি বলেন, “১। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিট মামলাটি সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর। ২। ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সংযুক্ত করা হয়। ৩। এ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৮৮ সালে রিট দায়ের করা হয়। ৪। এই রিটের প্রধান দাবি ছিল, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিধানটি সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘বৈষম্য মুক্ত নীতির’ সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ৫। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের মাধ্যমে এই বৈষম্য দূর করে সকলের জন্য সমঅধিকারের বিধান যুক্ত করে বলে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে’। ৬। তাই ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের পর, পূর্বের বৈষম্যমূলক বিধানটি না থাকার কারণে, ২৮ বছর আগের দায়ের করা মামলাটি এখন সম্পূর্ণভাবে আইনি ভাষায় ‘ইনফ্রাকচুয়াস’ বা অকার্যকর। ৭। এরকম অকার্যকর কোন মামলা উচ্চ আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার কোন নজির নেই। এরকম রিট সরাসরি খারিজযোগ্য। ৮। তাছাড়া গতবছরের ৭ই সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামীর দায়ের করা একইরকমের আরেকটি রিট খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। তাই উচ্চ আদালত কর্তৃক একবার নিষ্পত্তি করা বিষয়ে নতুন করে আবার শুনানির কোন সুযোগ নেই।
মূলত ড. তুহিন মালিকের ৭ ও ৮ নং মতেরই প্রতিফলিত হয়েছে। আসলে এর দ্বারা কারা ফায়দা লুটতে চেয়েছিল জনগণের কাছে তা অজানা নয়। এর প্রতিবাদে হরতাল ডাকা হয়েছিল দেশের প্রধান ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী। গত শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রধান বিচারপতিকে স্মারক লিপি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু মাজার পন্থী, তাবলীগী, সুফী-সাধকদের দলগুলো বরাবরের মতই নীরব ছিল। এরা ইসলাম চলে গেলেও কোন “রা” করেন না কেন বিস্ময়ের বাপার! আসলে প্রকৃত ইসলামের ধারক-বাহকরা ইসলামের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ষড়যন্ত্রই বরদাশত করেন না। ফলে ঈমান ও ইসলাম বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হয় মূলধারার দলগুলোকে। জামায়াতের ডাকা অন্যান্য হরতালের সময় হরতাল বিরোধী মিছিল সমাবেশ করতো ক্ষমতাসীনরা, কিন্তু এবার ব্যতিক্রম দেখা গেল। দমন নিপীড়নের কারণে জামায়াতে হরতাল বিরোধী মিছিল ছিল সীমিত। আর ক্ষমতাসীনরা কেমনে নামবে মাঠে. এবার ইস্যু তো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ক্ষমতাসীনদেরও অনেকের উদ্বেগ ছিল কী হয় এই ভেবে! আমরা এ ধরনের স্পর্ধা যাতে ভষ্যিতে কারো না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে চাই।
আমরা ক্ষুদ্র মানুষ সর্বশক্তিমান আল্লাহর খেলা কতটুকুই বা বুঝি। পৃথিবী থেকে সুমহান আদর্শ ইসলামকে ধ্বংস করতে ফেরাউন, নমরুদ, আবু জাহেল, আবু লাহাবরা তো কম চেষ্টা করেনি। আজও সেই সব জালেমরা পৃথিবীর বুকে কুখ্যাত হয়ে আছে। আসুন আমরা ইসলামকে নির্বাপিত করার হীনচেষ্টা না করে ইসলামকে জানার, বুঝার এবং মানার চেষ্টা করি। কারণ আল্লাহর দ্বীনকে পূর্ণতা দান করার কথা তো এই জগতের মালিকই দিয়েছেন। ধ্বংস করার চেষ্টা মানে তো আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। আজ সময় এসেছে ভাবার, আল্লাহর বিরুদ্ধে আর কতকাল যুদ্ধে লিপ্ত থাকবেন? আল্লাহর ঘোষণা, “সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত-মিথ্যার পতন অবশ্যম্ভাবী"-আল কুরআন। “তিনিই সেই সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি একে অন্য সব দ্বীনের উপর বিজয়ী করবেন। মুশরিকদের নিকট এটা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন?” (আল কুরআন, সূরা সফ : আয়াত-৯)
এই কথা বলে আজকের লিখা শেষ করতে চাই।
“চারদিকে জুলুম নির্যাতনের জয়-জয়কার দেখেও হাত-পা সঞ্চালনের শক্তি-সামর্থ্যরে অধিকারী হয়েও যারা হাত-পা গুটিয়ে রেখেছে-জুলুমের বিরুদ্ধে ‘টু’-শব্দটা পর্যন্ত উচ্চারণ করে না, প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করেনি। কারণ এদের অন্তরে যদি ইসলাম প্রবেশ করতো তাহলে ইসলামের বিদ্যুৎ স্পর্শে এরা এক একজন বিপ্লবী মুজাহিদে পরিণত হতো, হক ও বাতিলের সংগ্রামে উন্মাদের মত ঝাঁপিয়ে পড়তো।”.. .. বস্তুত : ইসলাম শুধুমাত্র একটা ধর্মের নাম নয়, এটি একটি আজাদী আন্দোলন, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, একটি বিপ্লবী মতবাদ এককথায় মানব রচিত মতাদর্শের বিরুদ্ধে একটা সংগ্রাম। ব্যক্তির বিবেক থেকে শুরু করে সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রতিটা রন্ধ্রে প্রবেশ করে তবেই সে ক্ষান্ত হয়।”
সহায়কসূত্র :
১। দৈনিক মানব জমিন ২। দৈনিক সংগ্রাম এবং ৩। ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা
বিষয়: বিবিধ
১২৭২ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অথচ ভারতে জনসংখ্যার পার্সেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের হিন্দুদের তুলনায় ওখানে মুসলিমের সংখ্যা বেশি। কখনো কি সেখানে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোন মুসলমান কথা বলার সাহস পাবে?
নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন মহৎশক্তির ইন্দন রয়েছে।
ধন্যবাদ
ইনারা কেবল, সৎ কাজে আদেশ প্রদান কোঁড়ও, আল্লাহ্র এই নির্দেশকেই সাচ্ছাভাবে পালন করে, তবে অসৎ কাজে বাধা প্রদান কর, এই কামে নাই। কারণ এটাতো আগেরটার মত সহজ নয়।
লেখাটি খুবই ভালো লেগেছে। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। জাযাকাল্লাহু খাইর।
,
বসে থাকলে চলবেনা, সংবিধানে মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থাও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী দের হিজাব নিষিদ্ধ করতে পারবেনা এই মর্মে আইন পাশ করতে হবে।
ধন্যবাদ আপনাকে
চালিয়ে যান
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন