নাজিব কিলানী : সাহিত্যের ইসলামীকরণ আন্দোলনের অগ্রদূত

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ০৬ মার্চ, ২০১৬, ০১:৩১:১৪ দুপুর



ড. নাজিব আল্ কিলানী (১৯৩১-১৯৯৫ খৃ.) খ্যাতনামা আরব ঔপন্যাসিক, কবি, সাহিত্যিক ও দক্ষ সংগঠক, জন্ম মিসরে। দক্ষিণ মিশরের জিফ্ফাতাই অঞ্চলের শারশাবাহ গ্রামে ১৯৩১ সালে। তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন স্থানীয় সানবাট মেডিক্যাল স্কুলে। ১৯৫১ সালে কায়রো মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে ডাক্তারি পাশ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে কারিমা শাহীনের সাথে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর সন্তানেরা সবাই সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত।

আধুনিক আরবী কথাসাহিত্যের উৎকর্ষ ও বিকাশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। পাণ্ডিত্যের গভীরতায়, মানসিকতার উদারতায়, সমাজ সংস্কারের তৎপরতায় এবং শিল্পকর্মে ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশ সাধন প্রচেষ্টায় তাঁর অবদান মিসরের সমাজ সংস্কৃতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি মিসরের আধুনিক ইসলামী উপন্যাস সাহিত্যের অগ্রদূত। ইসলামকে উপজীব্য করে বিশ্বে যে ক’জন সাহিত্য রচনা করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম। আরবী উপন্যাসকে তিনি পূর্ণতার শিখরে পৌঁছতে অনন্য ভুমিকা রাখেন। তাঁর জীবন ছিলো আপাদমস্তক ইসলামের পূর্ণ চেতনায় বিশ্বাসী। তাঁর স্বপ্ন ছিলো ইসলামের আদর্শে খোলাফায়ে রাশেদীনের আদলে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের। তাঁর সাহিত্যেও এর প্রতিফলন ঘটে। ১৯৬১ সালে কায়রোর এক হাসপাতালে তিনি চাকরি শুরু করেন এবং সেখান থেকে যোগাযোগ মন্ত্রণালযে স্থান্তান্তরিত হন। পরবর্তীতে দেশের বাইরে কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ১০ বৎসর অবস্থান করেন। কর্মজীবনে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি কলেরা আক্রান্ত হন। বেশ কিছুদিন এ রোগে ভোগেন।

নাজিব কিলানী ছাত্রাবস্থা থেকে সাহিত্য চর্চায় সম্পৃক্ত হন। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনকে নিয়ে তাঁর লেখা প্রথম প্রকাশিত হয়। কবিতা দিয়ে শুরু হলেও সাহিত্যের সব শাখায় তার বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। নাটক, ছোট গল্প, শিশুতোষ, সমালোচনা, কবিতা, আত্মজীবনী রচনায় তিনি বেশ পারদর্শী ছিলেন। ছোটবেলায় তিনি ইখওয়ানুল মুসলেমিনের দাওয়াত পান এবং ঐ দলে তিনি সম্পৃক্ত হন। পেশাগতভাবে এ লেখক রাজনৈতিকভাবেও সচেতন ছিলেন। তাঁর চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসলে তিনি সক্রিয় হয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ১৯৪৮ সালের অক্টোবর মাসে স্বৈরশাসক জামাল নাসেরের বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং কারান্তরালে নির্যাতিত হন। কারাগারেও চলে তাঁর সাহিত্য সাধনার কাজ। “লুমহাত ফি হায়াতি” গ্রন্থে কারাগারে জুলুম-নির্যাতনের ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। ইসলামী সভ্যতার পাদপীট মিশরের দিকে সাম্রাজ্যবাদী থাবা সব সময়ই ছিলো। ফলে মিশর থাকত সব সময় উত্তাল। নাজিব কিলানীর লেখায় সব সময়ই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, জুলুম নিপীড়ন বিরোধী বক্তব্য থাকত। স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে তিনি সর্বদা লেখালেখির মাধ্যমে সোচ্চার ভুমিকা পালন করতেন।

নাজিব কিলানীর লেখালেখির ভুয়সী প্রশংসা করেন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব নাজিব মাহফুজ। ‘মুসাওয়ার’ নামক সাহিত্য পত্রিকায় তিনিই নাজিব কিলানীকে ইসলামী সাহিত্যকরণ আন্দোলনের প্রবক্তা হিসেবে উল্লেখ করেন। মুসলিম মনীষী শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী বলেন, “সাহিত্যের ইসলামীকরণ আন্দোলনের অনতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হবার কারণেই তাঁর লিখার মধ্যে আমরা মুসলিম বিশ্বের চমকপ্রদ বর্ণনায় প্রলুব্ধ হই। সম্ভবত তিনিই একমাত্র ঔপন্যাসিক যিনি তাঁর উপন্যাসে নিজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভিন দেশের পরিবেশ, প্রতিবেশ, সে দেশের সভ্যতা-সংস্কৃতি ইত্যাদিরও বাস্তব প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন।”

নাজিব কিলানী রচিত উপন্যাসের সংখ্যা ত্রিশেরও অধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসসমূহ হল লায়ালী তুর্কিস্তান (তুর্কিস্তানের রজনীগুলো), আযরা জাকার্তা (জাকার্তার কুমারী), আল-যিল্ল আল-আসওয়াদ (কালো ছায়া), আকওয়াল আবি আল-ফাতহ আল-আসকারী (আবুল ফাতহ আসকারীর বাণীসমূহ), আহল আল-হামীদিয়্যাহ (হামিদিয়াবাসী), আল-রাজুল আল্লাযী আমানা (ঈমানদার ব্যক্তিটি), নূরুল্লাহ (আল্লাহর আলো), আল-তারীক আল-তাভীল (দীর্ঘপথ), আল-নিদা আল-খালিদ (শ্বাশত আহবান), রিহলাত ইলাল্লাহ (আল্লাহর পথে যাত্রা), কাতিলু হামযা (হামযার হত্যা), উমর য়াযহারু (ওমরের আবির্ভাব), ফী আল-কুদস (বায়তুল মুকাদ্দাসে) প্রভৃতি। (আল-কাউদ, ১৪১৬ হি. : ১৯৭৮-৮০)

তাঁর সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভুষিত হন। মহাকবি আল্লামা ইকবালে উপর অভিসন্দর্ভ রচনা করে তারাজিম ও সিয়ার মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৯৫৭ সালে পুরষ্কারে ভুষিত হন। ছোট গল্প প্রতিযোগিতায় ১৯৫৯ সালে পুরস্কৃত হন। একই বছর তিনি ড.ত্বহা হোসাইন পদক লাভ করেন। ১৯৬০ সালে আল ইয়াওম আল মাউদ রচনার জন্য শিল্প সাহিত্য পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৭২ সালে “কাতিলু হামজা” উপন্যাস লিখে আরবি একাডেমি পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানে ড. আল্লামা ইকবাল পদকে ভুষিত হন। এছাড়া তিনি দেশে অনেক জাতীয় পুরষ্কার লাভ করেন।

১৯৯৫ সালের ৬ মার্চ সাহিত্যের ইসলামীকরণের এ মহান অগ্রদুত পরপারে পাড়ি দেন।

সূত্র :

১। আরবী উপন্যাসের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ-আ.ক.ম. আবদুল কাদের ও মুহাম্মদ এনামুল হক

২। দৈনিক সংগ্রাম-ঈদ সংখ্যা-২০১৫

বিষয়: সাহিত্য

৩৭৩৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

361596
০৬ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:০০
হতভাগা লিখেছেন : জিলানী নাম শুনেছি , কিলানী নাম এই প্রথম শুনলাম ।
০৬ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১৭
299663
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : কেন সবজান্তা ভাই?
০৭ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৯:৪৯
299718
হতভাগা লিখেছেন : ভাই সাহেব কি এরকম আরও কিছু নাম জানেন ?
০২ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৯:১২
302313
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : জানি তো-ফেলানী..!
361607
০৬ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৪:২৯
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
০৬ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১৬
299662
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
361622
০৬ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৪
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আজকে ব্লগে দুইটা লেখা আসছে, যা পড়ে জানার ইচ্ছেটা অনেক বেড়ে গেলো। আপনি লিখেছেন নাজিব কিলানীকে আরেক জন লিখেছে আল্লামা যামেখশারিকে নিয়ে।

ইসলামের প্রচার ও প্রসার, অন্য সব ধর্মের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করার জন্য আজকেও উনাদের লেখক সাহিত্যিক জ্ঞানী গুনী খুব দরকার। আপনি অবশ্য সে প্রচেষ্টায় শামিল আছেন।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটা লেখা উপর দেয়ার জন্য। আ

আমি কিন্তু আপনার বইয়ের সৌজন্য কপি এখনো পাইনি!
০৭ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:১১
299736
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ অতীব সুন্দর মন্তব্যখানির লাগি। এড্রেস দেন নি তো আপনি?
০৭ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:২৩
299747
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আমার থাকার কোন ঠিক ঠাকানা নাইতো! আচ্ছা একটা ঠিকানা ফিক্সট করেই আপনাকে জানাবো
০৭ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:৩১
299748
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওকে গাজী সাহেব..Good Luck Good Luck
361630
০৬ মার্চ ২০১৬ রাত ০৮:১৪
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ একজন গুণী মানুষের িষয়ে জানানোর জন্য৷ ধন্যবাদ৷
০৭ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:১২
299737
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় বড় ভাই।
361661
০৭ মার্চ ২০১৬ রাত ০১:২৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam. Excellent writing mashallah. Jajakallahu khair.
০৭ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:১৪
299738
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম। জাযাকাল্লাহ..
361692
০৭ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ। তার তিনটি উপন্যাস বাংলায় অনূদিত হয়েছিল কিন্তু এখন বাজারে পাওয়া যায় না।
০৭ মার্চ ২০১৬ দুপুর ০২:১৫
299740
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বিশেষ করে ইসলামের মূলধারা লেখকদের সকল বইগুলোর একই অবস্থা।আপনাকেও ধন্যবাদ।
362141
১০ মার্চ ২০১৬ রাত ১১:৫৯
১১ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৫
300148
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।।।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File