উস্কানি ! ..Call Me Call Me Call Me

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৮:০৬:২৭ রাত



তখন সন্ধ্যে ৭টা, ক্লাবের সভা চলছে। সে-ই বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়েছে। বায়ান্নের অমর ভাষা শহীদদের স্মৃতি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য যখন শুরু হয়, তখন পিনপতন নীরবতা। আলোচক বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্জ এনায়েত শাহ। এলাকার সজ্জন, নির্বিবাদী, পরোপকারী, দানবীর এবং আমানতদারিতার ব্যাপারে সুপরিচিত। মঞ্চে উপবিষ্ট আছেন সভার প্রধান অতিথি এলাকার চেয়ারম্যান আলহাজ্জ সমীর উদ্দিন চৌধুরী। পরপর তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এনায়েত শাহের বক্তব্য শুনে জনগণ উল্লসিত! এমন দরদী নেতা-ই তো চাই।

হঠাৎ শ্লোগান দিয়ে উঠে একজন, “আমার ভাই, তোমার ভাই, এনায়েত ভাই, এনায়েত ভাই।”

“এনায়েত ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মত পবিত্র।”

চেয়ারম্যান নড়ে চড়ে বসে, বক্তার দিকে তাকায়। কী যেন চিন্তা করে?

এনায়েত শাহ বলতে থাকেন, “আজ আমাদের এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে। চলছে মদ, জুয়া, ফেনসিডিল, সার্কাসের নামে বেহায়াপনা, লটারী এবং ইয়াবার করাল থাবা চলছে। এর ছোবল থেকে বাঁচাতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে এলাকার সাহসী সন্তানদেরকে। আমি আজকের উপস্থিত সভার পক্ষ থেকে এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন তাকে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আর যারা যুব সমাজকে চরিত্র নষ্ট করে দেশ-সমাজকে ধ্বংস করতে চায় তাদের কুপথ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। পরিশেষে ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।”

বক্তব্য শেষ হওয়ার সাথে সাথে বেশির ভাগ শ্রোতা সভা এলাকা থেকে চলে যেতে উদ্যত হন। ঘোষক সবাইকে শৃঙ্খলা রক্ষা করে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে সভাকে সফল করার আহ্বান জানাতে থাকেন।

চেয়ারম্যান সাহেব বিব্রত বোধ করেন।

এবার ঘোষক সভাপতিকে বক্তব্য রাখার জন্য চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করেন।

চেয়ারম্যানের বক্তব্যেও এনায়েত শাহের কথা জোর সমর্থন দেন। (যদিও ভেতরে প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল তা প্রকাশ হতে দেন নি) এ ব্যাপারে স্বউদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে শ্রোতাদের আশ্বস্ত করেন।

সভা শেষ হয়, যে যার গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।

দু’বন্ধু শাহেদ ও শাকিল বাড়ীর দিকে চলতে থাকে।

: শাহেদ বলে, “দেখছিস কিভাবে চেয়ারম্যান পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে গেল। অথচ সবাই জানে ঐসব কুকর্ম চেয়ারম্যানের সহযোগিতা ছাড়া হয় না, হতে পারে না।”

: শাকিল বলে, আরে উনি পলিটিশিয়ান না! কিভাবে কি ম্যানেজ করতে হয় তা জানা আছে না!

: আরে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছিস? শাহেদ বলে।

: কোন ব্যাপারটা? শাকিল বলে।

: যখন এনায়েত শাহ বক্তব্য দিচ্ছিল, তখন বারবার চেয়ারম্যান সাহেব তার দিকে তাকাচ্ছিলেন। শাহেদ বলে।

: কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে এলাকাবাসী চায় এবার এনায়েত শাহ নির্বাচন করুক। তাই চেয়ারম্যান সাহেব তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে। এদিকে চেয়ারম্যানের জনপ্রিয়তাও একেবারে তলানীতে।” শাকিল বলে।

: একদম ঠিক বলেছিস। শাহেদ বলে।

------------

রাতে জগলু চেয়ারম্যানকে রিং দেয়।

: চেয়ারম্যান বলে, “কই জগলু? চলে আয়।”

: কোথায় আসব? জগলু বলে।

: জীবনের দোকানে, পেছনের রুমে আছি আমরা। চেয়ারম্যান বলে।

: ওকে আসছি। জগলু মোবাইলটা অফ করে।

চেয়ারম্যান বলে, এত দেরি করে আসলি জগলু?

: “ভাই, আপনার সাথে রাগ করে আসতে মন চাইছিল না।” জগলু মৃদু রাগত স্বরে বলে।

: কেন আমার সাথে তোর আবার কিসের রাগ?

: বারে, আপনি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার কথা বললেন না।

: দুর বোকা, এখন বোকাই রয়ে গেলি। সামনে নির্বাচন না, অনেক বুদ্ধি খরচ করতে হয় রাজনীতি করতে। বুঝেছিস?

: না, ভাল করে বুঝিনি।

: তোর বুঝার দরকার নেই। জানিস তো আমার হাত অনেক লম্বা। যা করার আমরা করছি। রাজ্জাককে বুঝিয়ে দিয়েছি, কাল ঠিক রাত ১১টায় থানার ওসিকে ফোন দিবি। ঠিক যেভাবে বলেছি।

মনে মনে বিড়বিড় করে বলে রাজনীতি করার সাধ মিটিয়ে দিব!

----------

ওসির মোবাইল রিং বাজছে। রিসিভ করেন।

: হ্যালো। কে বলছেন?

: স্যার, আস্সালামু আলাইকুম। আমি সমীর চেয়ারম্যানের লোক। নাম আবদুর রাজ্জাক। নতুন হাটে তো আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।

: কী রকম? ওসি সাহেব বললেন।

: এলাকায় যেভাবে আমাদের বিরুদ্ধে এনায়েত শাহর লোকজন উঠে পড়ে লেগেছে। আজকেও ওরা ক্লাবের মিটিং বসেছে। এখনও চলছে।

: ওকে। আমি চেয়ারম্যানকে পরে কল দেব বলে কেটে দেয় লাইন।

এস.আই মাহবুবকে রেডি হতে বলে ওসি সাহেব। তারপর নির্দেশনা মতে অভিযানে বের হয়।

কবি গোলাম মোস্তফা স্মৃতি সংসদের কার্যকরী পরিষদের বার্ষিক মিটিং। ১১ জনের মধ্যে উপস্থিত ক্লাবের ৭ জন সদস্য। প্রোগ্রামের শেষ সমাপ্তি ঘোষণা করলেন সভাপতি জনাব আবদুল্লাহ আল্ মাহমুদ।

হঠাৎ পুলিশ দেখে সভাপতি উঠে দাঁড়ান। সালাম দেন তাদের।

: “ওসি সাহেব আপনাদের সালাম দিয়েছেন এবং একটু সাক্ষাতের জন্য বলেছেন।” বলেন এস. আই মাহবুব।

: কেন ? এত রাতে তো সম্ভব না। আগামীকাল যাব। বলে ক্লাব সভাপতি।

: মানতে পারছি না, আমাদের সাথে যেতে হবে। এখানে গোপনে কী করছেন?

: গোপন কই?

: দেখি খাতা কী লিখেছেন?

: দেখানো যাবে না।

পুুলিশ জোর করে খাতা দেখতে চাইল। সভাপতি আর না করলেন না।

খাতায় লেখা-ক্লাবের সভার আজকের সিদ্ধান্তগুলো নিম্নরূপ:

১। “ আমাদের এলাকায় যুব সমাজের ধ্বংসকারী সকল কুকর্মের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

২। আসন্ন নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও আমানতদার নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।

৩। গরীব, অসহায়, এতিমদের এবং শিক্ষার ব্যাপারে ছাত্রদের সর্বাত্মক সাহায্য করতে হবে।


১ ও ২ নং সিদ্ধান্তটা তো আপত্তিজনক। এগুলো আপনাদের কাজ তো নয়। আসেন সবাই। গাড়ীতে উঠেন।

সভাপতি-সেক্রেটারী এক অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করে। অন্য সদস্যরা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছে না।

সেক্রেটারী খাদেমুল ইসলাম বলে, “আমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আছে বা কেউ করেছেন?”

: ওটা থানায় গেলে বুঝতে পারবেন।

ঠিক আছে । চল সবাই।

------------

রাতে তাদের হাজতে কেটে গেল। ওসি সাহেব রাত ১টার দিকে বাসায় চলে গিয়েছিল গেল। সকালে এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়েছে থানা কম্পাউন্ডে। সবার নাম ধরে মুক্তি দেয়ার দাবী জানাচ্ছে।

ওসি সাহেব ৯টার দিকে অফিসে আসছেন। সবাই তার গাড়ীর গতি আটকে দিয়েছে।

ওসি সাহেব জনতার প্রতি আহ্বান জানালেন। আপনার ধৈর্য ধরুন, শান্ত হোন। আমরা উনাদের সাথে একটু কথা বলে ছেড়ে দেব।

বয়োবৃদ্ধ হাজী শামসুল আলম সবাইকে শান্ত হতে বলেন। জনতা শান্ত হলেন।

ওসি সাহেব রুমে গিয়ে একজন সিপাহীকে রুমে নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন।

ক্লাবের ৭জন কর্মকর্তা ওসি সাহেবের সামনে দন্ডায়মান।

ওসি তরিকুল ইসলাম বললেন। আপনারা বসুন।

: “আসল ঘটনা কী বলুন তো সভাপতি সাহেব?” ওসি সাহেব বললেন।

: এখানে ঘটনার কী হবে ওসি সাহেব। এটা আমাদের নিয়মিত সভা এবং আজ থেকে ৩৫ বছর আগে থেকে এই ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে প্রকাশ্যে। এই ক্লাব অনেক ঐতিহ্যবাহী সারা বছর খেলাধূলা, সমাজসেবামূলক কাজ ইত্যাদি করছে।

: কিন্তু ক্লাবের আগের মত ভাল কোন এজেন্ডা তো নেই। বিতর্কিত বিষয় নিয়েও নাকি এখানে উস্কে দেয়া হয়। আপনারা কী কারো কথায় প্ররোচিত হচ্ছেন। আপনার সবাই ইয়াং জেনারেশনের লোক। আগে তো এমন ছিল না।

: বুঝিনি আপনার কথা।

: আপনাদেরকে কেউ উস্কে দিচ্ছেন না তো?

: কেন, আমরা এলাকার উন্নতি ও ভালর জন্যই তো কাজ করছি, দেশের জন্যই কাজ করছি। এখানে বাইরের কেউ নেই।

: আমাদের কাছে খবর আছে। সব খবর আছে! ঠিক আছে আপনারা যান।

ওসিকে সালাম দিয়ে সবাই বেরিয়ে গেল।

জনতার হর্ষধ্বনি শোনা যাচ্ছে!

“সভাপতি মাহমুদ ভাই জিন্দাবাদ।”

“ওসি সাহেব জিন্দাবাদ।”

এলাকায় সবাইকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হল দুপুরে ক্লাব প্রাঙ্গনে।

---------

সন্ধ্যায় একটি দু : সংবাদ শুনে সবাই ’থ’ বনে যায়। টিভি স্ক্রলে খবর প্রচারিত হচ্ছে : জাহানপুরের বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্জ এনায়েত শাহ নগরীর সুগন্ধা থেকে গ্রেফতার।

=====

বিষয়: সাহিত্য

১২৪৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358632
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৪৮
শেখের পোলা লিখেছেন : উস্কানীই বটে৷ ভাল লাগল৷ ধন্যবাদ৷
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
297689
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : সুতরাং উস্কানী থেকে সাবধান। একদম চুপ থাকতে হবে, পিঠালেও ওহ, আহ! করা যাবে না?
ধন্যবাদ।
358634
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৫৬
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : খুব ভালো লাগল. একদম বাস্তব বিষয়গুলো ফুটে তুলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
297690
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনার অনুভুতি প্রকাশ করে উৎসাহিত করার জন্য। ভাল থাকবেন্। আপনাকেও ধন্যবাদ।
358649
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:৫৬
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : ভালো লাগলো, ধন্যবাদ ।।
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
297691
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
358669
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৫১
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
297692
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।
358978
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:২০
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : দারুন লিখেছেন অনেক ধন্যবাদ
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৪২
297861
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File