এক্সিডেন্ট! (ছোট গল্প).......
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৬:৪৭:৫৭ সন্ধ্যা
আইনুন এখন তিন সন্তানের জননী। গত সপ্তাহে তৃতীয় সন্তান স্থানীয় একটি ক্লিনিকে হয়েছে। আজ মেয়েটির আকিকা, নাম রেখেছে তৃতীয়া। প্রথম সন্তান মেয়ে, দ্বিতীয় সন্তান ছেলে এবং তৃতীয়টি মেয়ে। স্বামী একটি বেসরকারী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার। মোটামুটিভাবে স্বচ্ছল অবস্থায় আছে। সুখী পরিবার বলা চলে।
বান্ধবী নুজহাত এসেছে খুলসী থেকে আকিকার দাওয়াতে। সাথে শাকিলও আছে, নুজহাতের স্বামী। তার কোন সন্তান হয়নি-বিয়ের ৮ বৎসর চলছে। তৃতীয়ার জন্মের পর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে তাকে জানায়, পরস্পর বিভিন্ন বিষয়ে সেই কলেজ লাইফ থেকে শেয়ার করে। দু’জনেরই একই বছর বিয়ে হয়েছে। প্রথমে নুজহাত যখন শুনে আইনুন আবারও কনসিভ করেছে, তখন দু’কথা শুনিয়ে দিয়েছিলো। কেন সে কনসিভ করতে গেল? আধুনিক যুগের মেয়ে এত ছেলে-মেয়ের দরকার কী? একটা মেয়ে ও একটা ছেলে যথেষ্ট না! সিম্ফল লাইফ ভাল, স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং কেয়ারিং-এ সমস্যা-ইত্যাদি।
পাশের ফ্ল্যাট থেকে শশী ভাবীও এসেছে। তিনজনের খোশ গল্প। শশীর আবার দু’ছেলে। আরেকবার কনসিভ করতে চায়, স্বামী-স্ত্রীর প্ল্যানিংএ।
: একথা শুনে মৃদু রাগতস্বরে নুজহাত তো তেড়ে উঠে, ‘আরে আর কী দরকার! লাইফটা হেল করবি নাকি! তিন বান্ধবীই সমবয়সী।’
বিরক্তি প্রকাশ করলেও চাপা স্বভাবের আইনুন বান্ধবীকে কিছু বলে না।
নুজহাত বক বক করেই চলে। আমাদের মায়েরা, দাদীরা সাত-আট, দশ সন্তান কিভাবে জন্ম দিয়েছে! ওহ! মাই গড! ভাবতে অবাক লাগে! ওরা সন্তান জন্ম দেয়া ছাড়া আর কিছু করেছে বলে মনে হয় না। জীবনটা এমনি এমনিই শেষ করে দিয়েছেন। সংসারের ঘানি টেনে টেনে।
: শশী ভাবী বলে, ‘তা যা-ই হোক। আমি পাঁচ ভাই-বোনের চতুর্থ। যদি এত সন্তান আমার মা না নিত, তাহলে আমি পৃথিবীতেই আসতে পারতাম না!’
এ কথা শুনে আইনুন এবং নুজহাত পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।
সত্য সবসময় তিক্ত। কথাটা হজম করে ওরা।
: নুজহাত প্রতিক্রিয়ায় বলে, ‘আরে! ওরা তো সেকেলে! শুধু সন্তানই-জন্ম দিয়েছে। আর কী ই বা করেছে?’
শশী ভাবী দমে না, ‘মা-দাদীরা আমাদের মত এক চিকিৎসা সেবাও পায়নি, কি স্বাস্থ্য, নীরোগ এবং স্মার্ট দেখেছেন আমার শ্বাশুড়ী এখনও?’
: আইনুন বলে, আসলেই তো। তারা আমাদের মত এত মাসে মাসে চেকআপও করাতে পারেনি। প্রসব বেদনা উঠেছে, ধাত্রী ডেকে সারাও, ধাত্রী আসতে প্রচণ্ড বেদনা সহ্য করা লাগে, কত সমস্যা ছিলো। এখনকার মত অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা পায়নি তারা।’
: শশী ভাবী বলে, ঠিক তাই।
: নুজহাত আইনুনকে বলে, ‘তাহলে তুই আরো সন্তান নিবি?’
: না। আসলে তৃতীয়া তো ছিল এক্সিডেন্ট!’
আইনুন কি মন থেকে নাকি মুখ ফসকে বলে ফেলল, আবার সাথে সাথে জিভে কামড় কাটে। তওবা তওবা।
: শশী ভাবী বলে উঠে, ‘আপনি এক্সিডেন্ট বলছেন, আল্লাহর দেয়া এই নেয়ামতকে? আশ্চর্য! ইদানীং অনেক মায়েরই যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে-তৃতীয় বা চতুর্থ সন্তানকে অবাঞ্ছিত করে দেখা হয়, একটা ইনপিরিয়রিটিতে অবস্থায় ভোগে।’
: নুজহাত বলে, ‘ঠিকই তো। ছোট পরিবারই তো সুখী পরিবার! আইনুন তো আমাকে আগে বলেছে, আর সন্তান নেবে না। আমি তৃতীয়া হওয়ায় ওকে ফোনে ঝারি দিছি! ’
আরে! তার নিজের এখন সন্তানই হয়নি, যার জন্য মাতৃ হৃদয়টা হাহাকার, সে কিনা বলে লাইফটা হেল! নুজহাত বিয়ের আগেই শাকিলের সাথে বোঝা পড়া করে আগামী পাঁচ বছর কোন সন্তান নেবে না। রক এন্ড রোল চলবে। আর এখন আট বছর হয়ে গেলেও বুকটা মাঝে মাঝে হাহাকার করে উঠে। আবার কারো সন্তান বেশি শুনলে দু’ কথা না শুনিয়ে ক্ষান্ত হয় না। আধুনিকাদের কী এত সন্তান নেয়া সাজে!
রাতে বাসায় ফিরলে বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকে শাকিল। তারা এখন সন্তানের ডাক শুনতে পায়নি, ডাক্তারও দেখিয়েছে। কারো সমস্যা নেই। ডাক্তার ধৈর্য্য ধরতে বলেন, বলে সবই উপরওয়ালার ইচ্ছা। হয়তো আপনাদের মঙ্গল আছে এতে।
সন্তান ছাড়া কি সংসারটা চলে? সন্তানের বাবা ডাক, মা ডাক কে না শুনতে চায়? একটা সন্তান যেন মরুও বুকে আশার আলোর ঝলকানি। তপ্ত রোদে শীতল অনুভুতির ছোঁয়া। আসলে সন্তান না থাকলে দাম্পত্য জীবনের বন্ধনটা শক্ত হয় না।
কী করবে শাকিল ভেবে পায় না। তার মাও একটা নাতি-নাতনীর জন্য পেরেশান। বন্ধুরা মাঝে মাখে দুষ্টুমি করে। দোস্ত আরেকটা ট্রাই করবি নাকি? মনমরা ভাবে শুয়ে থাকে। আস্তে আস্তে নুজহাতও পাশে শুয়ে পড়ে। শাকিলের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করে। আকীকা থেকে আসার পরই মনমরা ভাব। হয়ত একটা সন্তানের জন্য উতলা। হওয়ারই কথা। এত দিন হল, কত বছর পেরিয়ে গেল। তার মনটাও কেমন শিউরে উঠে। এতদিন অন্যের বেশি সন্তান হওয়াকে নিজে উপদ্রব হিসেবে দেখেছে। নিজের সংসারটা তো বিরান ভুমি, সেদিকে খেয়াল ছিল না।
আসলে মাতৃত্বের স্বাদ পেতে নারী মাত্রই উদগ্রীব, মাতৃত্ব ছাড়া যে নারী পূর্ণতা পায় না। সেটা তার চাইতে আর কে বেশি বুঝে? সকাল হলে শাকিল কিছু না খেয়ে অফিসে চলে যায়, নুজহাত ঘুমিয়েছিল। জেগে দেখে সকাল সাড়ে ১০টা। সেল ফোনে রিং দিলে শাকিল ধরছে না। হয়ত বা ব্যস্ত, নাকি ইচ্ছেকৃতভাবে ধরছে না। মোবাইল সেটা ড্রেসিং টেবিলে রেখে ওয়াশরুমে ডুকে।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মোবাইলে শাকিলের ম্যাসেজ। শাকিল লিখেছে, ‘সন্ধ্যায় ডাক্তারের কাছে যাব, রেডি থেকো।’
=====
বিষয়: বিবিধ
১৮৯২ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আললাহ সবাইকে ইসলামের বুঝ দান করোন
আমিন
বলার ছিল অনেক কিছু কিন্তু বল্লাম না ভাইয়া আবার আমাকে ইচরে পাকা বলবেন তাই ।
যাক, সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ছোট বেলায় আমার মা প্রায়ই সুর করে গাইতেনঃ
ধন ধন ধন ঘরেতে ফুলের বন
এই ফুল নেই যার ঘরে তার কীসের জীবন?
আসলেই সত্যি!!
তবুও বলি ভাল লাগল!!
আমি বললাম আগে ২/৩ টা নিয়ে নিই তারপর প্লানিং করে দেখবো আর কয়টা নেওয়া যায়!! তখন আমার স্ত্রী বললে ২/৩ টা নেওয়ার পরও প্লানিং??? আমি বললাম, যারা ফকিন্নি তারাই ১/২ টা নেয়। আলহামদুলিল্লাহ আমার আব্বু আমাকে অনেক সম্পদ দিয়ে গেছেন তারউপর আমিও সম্পদ বাড়ানোর চেষ্টায় আছি, এত সম্পদ খাবে কে??? তখন বুঝতে পারলাম আমার স্ত্রী রীতিমত টেনশনে পড়ে গেছে!!!
অনেক ক্ষন মজা করলাম, শেষে বললাম, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না সুতরাং সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করিও। তাহলেই দুনিয়া ও পরকালে শান্তি পাইবা।
আপনার শিক্ষণীয় গল্পটার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার সিড়ি থেকে ঘর পর্যন্ত বাচ্চা কাচ্চায় ভরপুর থাকবে ইনশাআল্লাহ। পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করলে বলব...জি আরও নেওয়া পরিকল্পনা আছে
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
আর সন্তান যেহেতু তার শরীরেই আসবে সেহেতু সিদ্ধান্তও তার
আইনুনের আরও সতর্ক হওয়া উচিত সামনের দিন গুলোতে
এখনকার স্মার্ট আপুদের কাছে এই বড়িটা খুবই জনপ্রিয়
মন্তব্য করতে লগইন করুন