*** রাসূল (সা) আমার ভালবাসা*** : গ্রন্থে আমার বক্তব্য বা ভূমিকা

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ০২:৫২:২৪ দুপুর



আল্হামদুলিল্লাহ!

বিশ্ব জগতের মহান প্রতিপালক, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে অযুত নিযুত সিজদা পেশ করছি, যার একান্ত রহমত না পেলে অত্র বইখানা প্রকাশ করা সম্ভব হত না। উসওয়ায়ে হাসানা রাসূলে আকরাম (স) এর প্রতি অসংখ্য দরূদ ও সালাম পেশ করছি, যার পেশকৃত মহাকালজয়ী জীবনাদর্শ আল্ ইসলামই মানব জাতির ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি।

“নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা নিজে ও তাঁর ফেরেশতারা সবাই নবী মোহাম্মদের উপর দরুদ পাঠান, অতএব হে মানুষ, তোমরা যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছো-তোমরাও তাঁর উপর একনিষ্ঠভাবে দরুদ ও সালাম পাঠাও।” (আল্ কোরআন)

“হে আল্লাহ, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর তুমি শান্তি ও বরকত নাযিল কর। যেমন শান্তি ও বরকত নাযিল করেছিলে হযরত ইবরাহীম (আ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী।” (আল্ কোরআন)

“তোমাদের কেউ সে পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত আমি তার নিকট সবচেয়ে প্রিয় না হই। তার পিতা-মাতা থেকে, তার সন্তান-সন্ততি থেকে এবং সমস্ত মানুষ থেকে।” (আল্ হাদীস)

যারা যুগে যুগে ইসলামকে প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের তপ্ত খুনকে বিলিয়ে দিয়ে সবুজ জমিনকে করেছে রক্তাভ-তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি, আল্লাহর দরবারে। “রাসূল (সা) আমার ভালবাসা” নামক এই বইটি কোন সীরাত গ্রন্থ নয়, বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধের সংকলন। আগামীতে মানবতার মুক্তির দিশারী রাসূলে আকরাম (সা)এর ওপর সীরাত লেখার পরিকল্পনা রয়েছে। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার কাছে এই জন্য বিশেষ রহমত প্রত্যাশী।



অত্র বইতে ইসলামী আদর্শের বিভিন্ন দিক, রাসূল (সা)এর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ, ইসলামের মৌলনীতি সমূহ, ইবাদতের বিভিন্ন দিক, মাসলা-মাসায়েল, বিধি-বিধান, সমকালীন বিশ্বের ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আসলে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলামকে খণ্ডিতভাবে অনুসরণ করার কারণে মানব জীবনে এত অশান্তি ও বিপর্যয়। আমরা ইসলামকে অন্ধের হাতি দেখার মতই মনে করছি। অথচ ইসলামে রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, যুদ্ধ ও বন্দীনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, স্বরাষ্ট্রনীতি, শ্রমনীতি, শিক্ষানীতি, নারীনীতি, শিশুনীতি এবং বিচার বিভাগ সম্পর্কিত সবই বিদ্যমান। মানব জীবনের সব সমস্যার সমাধান ইসলামেই নিহিত। দেখুন এই দু’টি বাক্যের মধ্যে কি সমাধান রয়েছে। আল্ কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “তবে কি তারা কোরআনের কিছু অংশ বিশ্বাস এবং কিছু অংশ প্রতাখ্যান করে ? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনহীনতা এবং পরকাল দিবসে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে।” (সূরা বাকারা-৮৬) হাদীসে রাসুলে বলা হচ্ছে, “তোমরা কখনো গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে না, এ দু’টি জিনিস দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে ধরলে : তা হল এই, কালামুল্লাহ শরীফ এবং আমার সুন্নাহ।” আমাদেরকে সমস্যার সমাধান নিজেদেরকেই করতে হবে, পাশ্চাত্যকে দিয়ে নয়। কাউকে ডেকে এনে সালিশ মানলে, সমস্যা আরো ব্যাপক হবে, তৃতীয় পক্ষ ফায়দা লুটবে। কোরআনের ঘোষণা, “হে মু’মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর, তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর; আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাহাদের যাহারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী। কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটিলে উহা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট। ইহাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” (সূরা নিসা-৫৯) আসলে মানবতা সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যেই এই পৃথিবীর সর্বশেষ হেদায়েতের বিধান ইসলাম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(সা)এর আগমন।



শিরক ও বিদআ’তি কার্যকলাপের বেড়াজালে বন্দী মুসলমান সমাজ। দ্বীনের জন্য তা ক্যান্সার ও এইডস্ স্বরূপ! এগুলোর পরিচয় এবং ক্ষতিকর পরিণতি সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান না থাকার কারণে ইবাদতরূপী দ্বীনঘাতী এসব কার্যকলাপের প্রসার হচ্ছে। একশ্রেণীর আলেম নামধারী ধর্মব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতায় সুন্নতের লেবাসে সুন্নত বিরোধী কাজ চলছে। প্রিয়নবী (সা)এর প্রেমে মশগুল নবীর বিরোধী কাজ, অথচ নবীও এসব আমল করতে বলেন নাই। সাহাবারাও করেন নাই। ইসলাম তো আল্লাহর রাসূল (সা) থেকে খোলাফায়ে রাশেদার ৪০ বছর পর্যন্ত। যে কাজ তারা করেন নাই তা আমরা করতে যাব কোন দুঃখে? আমরা কি প্রিয়নবীর কথা মানছি না তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করছি? প্রিয়নবীর যা করতে বলেছেন, তাই করব এটাই তো ঈমানের দাবী। এরশাদ হয়েছে, "রাসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো।’’ (সূরা হাশর-৭) নতুন নতুন রসম রেওয়াজের কারণে আজ শতধা বিভক্ত হয়ে গেছি আমরা। আমাদের দলিল-প্রমাণ তো হবে কোরআন-সুন্নাহ। কোন বুজুর্গ নয়। বুজুর্গ যদি কোরআন-হাদীসের আলোকে আমাদের চলতে বলেন, তবেই আমরা মানব, মনগড়া কথা নয়। আমাদের ভেবে দেখতে হবে, আমরা যা করছি তা কোরআন হাদীসে আছে কিনা?



বাজারের বেশীর ভাগ ধর্মীয় কিতাব নিম্ন মানের এবং মুনাফাখোর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজার জাত হচ্ছে ঈমান বিধ্বংসী নকল ও নিুমানের বইসমূহ। আমাদেরকে ধর্মীয় বই ক্রয়ের সময়ও ভাল কোম্পানী দেখে ক্রয় করতে হবে। এসব বইতে হাদীসের বহু ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলো মিথ্যা, জাল, দুর্বল, অগ্রহণযোগ্য ও ইসরাইলী রেওয়ায়েত রয়েছে। এদের কোন সঠিক তথ্য উৎস নেই। একটু কষ্ট করে খোঁজ করলে ভাল মানের কিতাব সংগ্রহ করা যায়। টাকা দিয়ে কোন নিম্নমানের বই কেনার কোন মানে নেই। সংস্কৃতির জগতে চলছে, অপসংস্কৃতি সয়লাব। মাজারে চলছে বেহায়াপনা, শিরক-বিদআতের আসর, মদ-জুয়া-গাঁজার আসর-এসব কি ইসলামী কার্যকলাপ? আসলে ব্রাক্ষণ্যবাদীদের কালচার থেকে আমাদের লোকদের কাছে ধর্মাবরণে অনেক শিরকি কর্মকাণ্ড অনুপ্রবেশ করেছে। মাজার গুলোতে দেখা যায়, মুসলমানদের চেয়ে অন্য ধর্মের লোকজন কম নয়। ওরা তো মুশরিক, মাজারে সিজদার সময় তো আর কে মুসলমান কে অন্যধর্মের সে খেয়াল কে রাখে? দাও মাজারে সিজদা-বহুত বড় কাজ? ওরা নিজেরা মুশরিক, আমাদের সরল প্রাণ ভাই-বোনেরাও না বুঝে শিরকে লিপ্ত হচ্ছে। আমাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে এসব বর্জন করতে হবে।



আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ভুল-ভ্রান্তি পাঠকের দৃষ্টিতে আসতে পারে, ক্ষমাসুলভ আচরণ প্রত্যাশা করি। ভুল-ত্রুটি সংশোধন সাদরে গ্রহণীয়। কোন ভুলের জন্য সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, অগোচরে কারো মনে ব্যথার উদ্রেক করলে পাঠকের কাছে বিনীত ক্ষমার আবেদন রইলো। নিজের কোন প্রচার, প্রসার নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হয়ে পরকালীন মুক্তিই লেখার একমাত্র উপজীব্য বিষয়। লিখাগুলো বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বইটি প্রকাশে যাঁদের একান্ত সহযোগিতা পেয়েছি তাদের নেক নিয়তকে কবুল করার জন্য আল্লাহর কাছে মোনাজাত করছি। বিশেষ করে শতাব্দীর ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক জ্ঞান চর্চার পাদপীঠ চট্টগ্রামের দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ ড. এ. টি. এম তাহের সাহেবের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। যিনি তাঁর অত্যন্ত ব্যস্ত সময়ের মাঝেও যথেষ্ট আন্তরিকতা সহকারে সমগ্র পাণ্ডুলিপি খানা দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। বইয়ের প্রকাশক বন্ধুবর ইশরাত হায়দার জুয়েলের প্রতিও রইলো সবিশেষ কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহর কাছে আমাদের পরিবারকে দ্বীনের পথে প্রতিষ্ঠিত রাখার তৌফিক কামনা করছি। “হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এমন স্ত্রী-সন্তান-সন্ততি দান করো, যারা আমাদের নয়নকে শীতল রাখবে এবং আমাদের মুত্তাকীদের ইমাম বানাও।” পরিশেষে আমার আব্বা ও আম্মার জন্য সবার কাছে দোয়া ভিক্ষা করছি।

রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানী ছাগিরা। অর্থ : হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতার উপর রহম করো, যেমনিভাবে তাঁরা ছোট বেলায় আমাদের উপর রহম করেছেন। (সূরা বনী ইসরাইল-২৪)


মহান আল্লাহ্পাকের রহমতের মুখাপেক্ষী-

মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম


বিষয়: সাহিত্য

১৩৫৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357585
২৪ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৪
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আমিন সুম্মাআমিন আমার মা বাবাকেও তুমি মাফ করে দিবা এবং আমাদের গুনাহ সমুহকে ও মাফ করে দিবা
সুন্দর লাগলো
ধন্যবাদ
২৪ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৫০
296684
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও..
357599
২৪ জানুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ৷ আপনার মনোবাসনা পূরণ হোক৷
২৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৩২
296692
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় শেখ ভাই। আল্লাহ যেন সকলের মনের আশা পূরণ করেন। আমিন। (ইদানীংএর আপনার প্রাপ্য কপিটা প্রেরণ করার কোন উপায় বাতলে দিন। নয়তো আমার কাছে জমা থাকবে)
২৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৪২
296694
শেখের পোলা লিখেছেন : ধন্যবাদ৷ কানাডায় পাঠাতে বলিনা, তবে যদি একান্তই পাঠাতে চান তবে দেশের বাড়ির ঠিকানায় দিতে পারেন৷
আঃ সাদেক/গ্রাম;-সেনহাটী কাজুলী পাড়া/ পোঃ-সেনহাটী ফকির বাড়ি/জেলা;-খুলনা৷
আবারও ধন্যবাদ৷
357600
২৪ জানুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৭
জাইদী রেজা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৩২
296693
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও সুপ্রিয় জাইদী রেজা ভাই।
357621
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১২:৫৬
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ ভাইয়া ।
২৭ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৭
296877
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপি।
357644
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ জাযাকাল্লাহ খাইর
২৭ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৮
296878
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম।আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File