প্রসঙ্গ : ঈদে মিলাদুন্নবী-নবীজী (সা)এর জন্মদিবস উৎসবের মাধ্যমে পালন করা ইসলামী শরীয়ত বহির্ভুত কাজ ..
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:২৬:১০ দুপুর
মিলাদুন্নবী বা নবীজীর (সা)এর জন্মকথা :
রাসূল (সা)এর জন্মদিন না জন্মসনও কোনটি তার কোন সঠিক তথ্য কেউ এখনও পর্যন্ত দিতে পারেন নি। অর্থাৎ নির্ধারিত নয়। আরবী মাস অনুযায়ী, কেউ বলেছেন ৮ রবিউল আউয়াল, কেউ বলেছেন ৯ রবিউল আউয়াল, কেউ ১২ বলেছেন রবিউল আউয়াল, কেউ রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন যে তাঁর জন্ম তা নিঃসন্দেহ। আমি এখানে ঐতিহাসিক সীরাত রচয়িতাদের থেকে তথ্য নিয়ে যথা সম্ভব তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যে দিন নির্দিষ্ট নয় তা পালন করার যুক্তি সিদ্ধ নয়। আর ইসলামে জন্ম দিন পালন করার রীতিও ইসলাম উৎসাহিত করে না। এ নিয়ে তর্ক করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রের বনি হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন। প্রচলিত ধারণা মোতাবেক, উনার জন্ম ৫৭০ খৃস্টাব্দে। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে ৫৭০ সনই ব্যবহার করেছেন। তবে উনার প্রকৃত জন্ম তারিখ বের করা বেশ কষ্টসাধ। তাছাড়া মুহাম্মদ (সা) নিজে কোনো মন্তব্য করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি. এজন্যই এ নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। ইতিহাস গ্রন্থসমূহে অনেক উক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। এমনকি জন্মমাস নিয়েও ব্যাপক মতবিরোধ পাওয়া যায়। যেমন, এক বর্ণনা মতে, উনার জন্ম ৫৭১ সালের ২০ বা ২২ শে এপ্রিল। সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সোলায়মান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে শেষোক্ত মতই ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশী নির্ভরযোগ্য। যাই হোক, নবীর জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহনের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।
(উৎস :http://sunnatemadina41.com)
সীরাতে ইবনে হিশামে আছে,
“আমুল ফীল অর্থাৎ হস্তীবাহিনী নিয়ে আবরাহার কা’বা অভিযানের ঘটনা যে বছর ঘটে, সেই বছরের রবিউল আউয়াল মানের দ্বাদশ রজনী অতিক্রান্ত হবার শুভ মুহূর্তে সোমবারে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন। কায়েস ইবনে মাখরামা থেকে বর্ণিত, তিনি কলেছেন, “আমি ও রাসূলুল্লাহ (সা) আবরাহার হামলার বছর জন্মগ্রহণ করি। তাই আমরা সমবয়সী”। হাসসান ইবনে সাবিত বলেন, “আমি তখন সাত আট বছরের বালক হলেও বেশ শক্তিশালী ও লম্বা হয়ে উঠেছি। যা শুনতাম তা বুঝতে পারার ক্ষমতা তখন হয়েছে। হঠাৎ শুনতে পেলাম জনৈক ইহুদী ইয়াসরিবের (মদীনার) একটা দুর্গের ওপর উঠে উচ্চস্বরে ওহে ইহুদী সমাজ!’ বলে চিৎকার করে উঠলো। লোকেরা তার চারপাশে জমায়েত হয়ে বললো, “তোমার কি হয়েছে?” আজ রাতে আমাদের জন্য সেই নক্ষত্র উদিত হয়েছে।”
আল্লামা শিবলী নোমানীর সীরাতুন্নবী (সা)তে আছে,
“বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহ) বলেন : “ইমাম মালিক (রাহ) ও অন্যান্য মুহাদ্দিসরা প্রসিদ্ধ তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুত্ইম থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল, রবিউল আওয়ালের ৮ তারিখ। অনেক ঐতিহাসিকগণ এ কথাকেই সঠিক মনে করেছেন। হাফেজ মুহাম্মদ ইবনে মূছা আল খাওয়ারিযমী এ উক্তিকে অকাট্য বলেছেন। আর ইবনে দেহয়াহ এ উক্তিকে প্রধান্য দিয়েছেন।”(সহীহুস সীরাতিন নববীয়্যাহ-পৃ: ১৩।)
মিসরের প্রসিদ্ধ গণিতশাস্ত্র বিশারদ মাহমূদ পাশা একটি পুস্তিকা রচনা করেন যাতে তিনি গণিত বিদ্যার অকাট্য দলীল প্রমাণাদি দ্বারা একথা প্রমাণ করেছেন যে, রাসূল কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল রবিউল আওয়ালের ৯ তারিখ মুতাবিক ৫৭১ খৃষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল।” (সীরাতুন্নবী-আল্লামা শিবলী পৃ: ১০৮)
(উৎস : : onlinemedia.net/archives /2409#sthash.clSN93um.dpuf)
বাংলা পিডিয়াতে বলা হয়েছে,
“সঠিক জন্ম তারিখ নির্ধারণে চারটি মত রয়েছে, যথা-রবিউল আউয়াল মাসের ৮, ৯, ১০, ও ১২। তবে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন যে তাঁর জন্ম তা নিঃসন্দেহ। সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘উলামার মতে তাঁর জন্ম ১২ রবিউল আউয়াল। হাফিয ইব্ন হজর আল্-‘আসকালানী ও ইব্নুল আসীর প্রমুখ এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে আবরাহার আক্রমণ ২০ এপ্রিল ৫৭০ (বা ৫৭১) সনে (মতান্তরে ১৯ এপ্রিল ও ২১ এপ্রিল) ঘটেছে।
(উৎস :http://bn.banglapedia.org/index.php?title)
উইকিপিডিয়াতে আছে,
“মুহাম্মাদ বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। প্রচলিত ধারণা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগষ্ট বা আরবি রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মান।”
(উৎস: https://bn.wikipedia.org/wiki)
তাহলে জানা গেল প্রিয়নবী (সা) জন্মদিন নিয়ে ব্যাপক মতান্তর আছে। আলেমগণও ঐতিহাসিকগণ তাঁর জন্মতারিখ সম্পর্কে অনেক মতভেদ করেছেন।
রাসূল (সা)এর ওফাত :
নঈম সিদ্দিকীর মানবতার বন্ধু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা) গ্রন্থে আছে, “ইন্তিকাল-১২ই রবিউল আউয়াল হি: সোমবার দুপুরের আগে। (সোমবার সম্পর্কে সবাই একমত। কিন্তু তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ ১ তারিখ, কেউ ২ তারিখ, আবার কেউ ১৩ তারিখও বলেছেন) দাফন (হযরত আয়েশার কক্ষে কবর তৈরী)-১৩ই রবিউল আউয়াল ও ১৪ই রবিউল আউয়ালের মধ্যবর্তী রাত।
ঈদে মিলাদুন্নবী কেন?
আল্লাহর প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা) প্রদর্শিত শরীয়তে ঈদ দু’টি : ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা। হযরত আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সা. যখন মদীনায় আসলেন তখন দেখলেন বছরের দুটি দিনে মদীনাবাসীরা আনন্দ-ফুর্তি করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ দিন দুটো কি? তারা বলল যে আমরা ইসলামপূর্ব মুর্খতার যুগে এ দুু’দিন আনন্দ-ফুর্তি করতাম। রাসূলুল্লাহ সা বললেন : “আল্লাহ তাআলা এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটো দিন তোমাদের দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ) ইসলামে ঈদ শুধু দু’ টি এ বিষয়টি শুধু সহীহ হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত নয় তা রবং ইজমায়ে উম্মত দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত। যদি কেউ ইসলামে তৃতীয় আরেকটি ঈদের প্রচলন করে তবে তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। আবার অনেকে ঈদে আজমও বলে। ধর্মে কোন নতুন জিনিস উদ্ভাবনকে ‘বিদআত’ বলে। বিদআতীরা গোমরাহী বা পথভ্রষ্ট এবং গোমরাহীর স্থান জাহান্নামে বলেছেন রাসূল (সা)। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, “আমাদের এ ধর্মে যে নতুন কোন বিষয় প্রচলন করবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম।)
মুসলিম বিশ্বকে বিভক্তকারী তথাকথিত ‘জশনে জুলুস’ বা বাংলায় শোভা যাত্রা বা আনন্দ র্যালির অনুমোদন শরীয়তে নাই। রাসুল (সা)এর শরীয়তকে বিকৃতকারীরা সুন্নী হতে পারে না। এরা শিয়াদের চাইতেও মারাত্মক। শিয়ারা হযরত আলী (রা)কে মানে আর বিদআতীরা প্রিয়নবী (সা)কে মানে না। মানলে ধর্মের নামে নতুন নতুন প্রথা আবিষ্কার করত না। জসনে জুলুসের নামে ইসলাম বিকৃতকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ওরা মুসলমানের ছদ্মবেশে ইহুদী এবং শিয়াদের ন্যায় ইসলামের শত্রু। সরল প্রাণ মুসলমানরা না বুঝে এক শ্রেণীর তথাকথিত আলেমদের খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। আমরা জানি আল্লাহর রাসূল (সা) যেদিন দুনিয়ার বুকে এসেছেন আবার ঐদিনই ওফাত বরণ করেছেন। তাহলে যুক্তি কী বলে? যেদিন আগমন করেছেন তার জন্য উৎসব করব নাকি চির প্রস্থান করার জন্য শোক সন্তপ্ত হবো? ঐদিন উৎসব পালন করা মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড. বিএম মফিজুর রহমান আল আযযহারী বলেন, মিলাদুন্নবী পালনকারীকে আমরা যদি প্রশ্ন করি, রাসূল (স.) কি তাঁর মিলাদ উদযাপন করেছেন? জবাবে যদি সে বলে: না, তিনি উদযাপন করেন নি। তবে আমরা বলবো: রাসূল (স.) স্বয়ং যে কাজ করেন নি, সে কাজটি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায় তথা ইবাদাত হিসেবে মনে করার দুঃসাহস আপনি কিভাবে/কোথায় পেলেন? অথচ রাসূল (স.) উম্মতকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সমস্ত বিষয় বলে দিয়েছেন। একটিও বাদ দেন নি।
আর যদি সে বলে, রাসূল (স.) পালন করেছেন। তাহলে আমরা বলবো, এরশাদ হয়েছে,
“যদি আপনারা সত্যবাদি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাদের প্রমাণাদি পেশ করুন” (সূরা বাকারাহ : ১১১)।
এ পর্যায়ে তাদের কাছে কোন দলীল পাওয়া যাবে না। সুঁইয়ের ছিদ্র দিয়ে যতদিন উট প্রবেশ করতে পারবে না, ততদিন পর্যন্ত...। অতএব, মিলাদুন্নবী উদযাপন করা কারো জন্য শরীয়তসিদ্ধ নয়।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, তবে এটি কোত্থেকে এলো?
ইতিহাসের আলোকে যতটুকু জানতে পেরেছি, দুই ঈদের বাইরে কোন দিবসকে সামাজিক ভাবে উদযাপন শুরু হয় হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শিয়াদের উদ্দোগে। সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরীতে (৯৬৩খ্রি বাগদাদের আববাসী খলীফার প্রধান প্রশাসক ও রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক বনী বুয়াইহির শিয়া শাসক মুইজ্জুদ্দৌলা ১০ই মুহররাম আশুরাকে শোক দিবস ও জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ গাদীর খুম দিবস উৎসব দিবস হিসাবে পালন করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে এই দুই দিবস সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। যদিও শুধুমাত্র শিয়ারাই এই দুই দিবস পালনে অংশ গ্রহণ করেন, তবুও তা সামাজিক রূপ গ্রহণ করে। কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ফলে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রথম বৎসরে এই উদযাপনে বাধা দিতে পারেন নি। পরবর্তী যুগে যতদিন শিয়াদের প্রতিপত্তি ছিল এই দুই দিবস উদযাপন করা হয়, যদিও তা মাঝে মাঝে শিয়া-সুন্নী ভয়ঙ্কর সংঘাত ও গৃহযুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করার ক্ষেত্রেও শিয়াগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। উবাইদ বংশের রাফেযী ইসমাঈলী শিয়াগণ। ফাতেমী বংশের নামে আফ্রিকার উত্তরাংশে রাজত্ব স্থাপন করেন। ৩৫৮ হিজরীতে (৯৬৯ খ্রি তারা মিশর দখল করে তাকে ফাতেমী রাষ্ট্রের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন এবং পরবর্তী ২ শতাব্দীরও অধিককাল মিশরে তাদের শাসন ও কর্তৃত্ব বজায় থাকে। গাজী সালাহুদ্দীন আইঊবীর মিশরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের মাধ্যমে ৫৬৭ হিজরীতে (১১৭২খ্রি মিশরের ফাতেমী শিয়া রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে। এই দুই শতাব্দীর শাসনকালে মিশরের ইসমাঈলী শিয়া শাসকগণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২ ঈদ ছাড়াও আরো বিভিন্ন দিন পালন করতেন, তন্মধ্যে অধিকাংশই ছিল জন্মদিন। তাঁরা অত্যন্ত আনন্দ, উৎসব ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৫টি জন্মদিন পালন করতেন: ১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন, ২) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন, ৩) ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্মদিন, ৪) হাসান (রা)ও জন্মদিন ও ৫) হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন। এ ছাড়াও তারা তাদের জীবিত খলীফার জন্মদিন পালন করতেন এবং ‘‘মিলাদ’’ নামে ঈসা (আ) জন্মদিন (বড়দিন বা ক্রীসমাস), যা মিশরের খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল তা আনন্দপ্রকাশ, মিষ্টি ও উপহার বিতরণের মধ্য দিয়ে উদযাপন করতেন।
সৌদি গ্রান্ড মুফতি বলেছেন-ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হারাম :
মহানবী (স.)-এর জন্মদিন বা ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করা পুরোপুরি হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল আশ-শেখ। তিনি বলেন, এই ধরনের বাড়তি আরেকটা ঈদ পালনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। (সূত্র : জেকে নিউজ) ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা পুরোপুরি হারাম ফতোয়া দিয়ে গ্রান্ড মুফতি বলেন, এটি একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন অনুশীলন এবং ইসলাম ধর্মে অবৈধভাবে তা ঢুকে পড়েছে। সৌদির রিয়াদে তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ মসজিদে শুক্রবারের জুম’আর খোতবায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নবীর শিক্ষা হচ্ছে, তাঁর সুন্নাহকে মেনে চলা এবং অনুশীলনের মাধ্যমে তা অনুসরণ করা। ইসলামের শুরুতে নবীর (সা.)-এর জন্মদিন উদযাপন ছিলো না। অন্তত তিন শতাব্দী পর এই রীতিটি ইসলাম ধর্মে ঢুকে পড়ে। সুতরাং বলা যায়, নবীর (সা.) জন্মদিন উদযাপন বিদআত। নিঃসন্দেহে এটি একটি পাপ অর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। মহানবী (স.)-কে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতে হলে তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষাকে অনুসরণ করতে হবে জানিয়ে গ্রান্ড মুফতি বলেন, নবীজির সুন্নাহকে নিয়মিতভাবে পালন করার নামই প্রকৃত ভালবাসা। তিনি কোরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে বলেন,
আল্লাহ বলেন, ‘যদি তুমি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন এবং তোমার পাপ সমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ অন্য এক স্থানে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই রাসুল (স.)-এর মধ্যেই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।(২১ ডিসেম্বর ২০১৫)
http://www.bangla.24livenewspaper.com/world/3796-
অতএব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় একথা বুঝা গেল যে, ঈদে মিলাদুন্নবী নামের তৃতীয় ঈদটি শরীয়ত বিরোধী কাজ। ঈদে মিলাদুন্নবী' আমরা কেন মানবো না? পালন করবো না? এর বিরোধিতায় বা কেন করছি?
যেহেতু কুরআন-হাদিস ফিকহ এমনকি রাসূলের সীরাতগ্রন্থেও এমন জন্মদিন পালনের বিষয়ে কিছুই নেই। জন্মদিন পালন ব্যাপারটিই ইসলামে নেই।
যেহেতু রাসূল তাঁর জীবদ্দশায় এমনটি কখনোই করেন নি, কাউকে নির্দেশ দেন নি এবং কাউকে উৎসাহ দেন নি।
যেহেতু খোলাফায়ে রাশেদীনসহ লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরামদের কেউই জীবনে এমনটি করেন নি।
যেহেতু তাবেঈদের কেউ এটি পালন করেন নি।
যেহেতু তাবে তাবেঈদেরও কেউই পালন করেন নি।
যেহেতু পুরো ইসলামের সত্য ও স্বর্ণ যুগব্যাপী এই মিলাদুন্নবীর কোন প্রচলনই ছিল না। এর একটি মাত্রও নজির নেই।
যেহেতু দিনটি, তারিখটি কেবলই জন্মবার নয়, মৃত্যুবারও। আনন্দ থেকে শোকটাই বেশি হবার কথা। এতো জশনে জুলুস বা ফূর্তি উৎসব কেমনে আসে?
যেহেতু কুরআন হাদীস সুন্নাহ সত্য যুগে কেউই করেন নি, মানে নি, সেটি আপনি-আমি কেন করতে যাবো?
ছোট্ট একটি প্রশ্ন করেই শেষ করবো। শরীয়ত প্রবর্তিত দু’টি ঈদের দু’ রাকাআত করে সালাত আছে। বিদআতীদের আবিষ্কৃত ঈদে মিলাদুন্নবীতে কয় রাকাআত সালাত আছে? আর সালাত-ই নাই তা ঈদে মিলাদুন্নবী নামে তৃতীয় ঈদ কিভাবে হবে?
আসুন কুরআন-হাদীসের মেনে চলে যাবতীয় ভ্রান্তি নিরসন করি।
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, তাঁর রাসূল এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল, তাদের আনুগত্য কর। যদি তোমরা কোন বিষয়ে মতবিরোধে উপনীত হও, তবে তার সিদ্ধান্তআল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই উত্তম এবং পরিণতিতে সবচেয়ে সুন্দর।” (সূরা আন নিসা-৪:৫৯)
নবীজী (সা) বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা বহু বিভক্তি দেখতে পাবে। আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি আমার এবং আমার পরবর্তী সঠিক পথপ্রাপ্ত খলিফাদের সুন্নাতের অনুসরণ করার। শক্তভাবে একে আঁকড়ে ধরে থাক। (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কে সাবধান থাক, কেননা প্রতিটি বিদআতই পথভ্রষ্টতা।” (আহমদ ও তিরমিযী)
====
বিষয়: সাহিত্য
২৮৫২ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাই বলেন না কেন, যারা ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করে তারা আমল আখলাকে অত্যন্ত কঠোর, যত্নবান। আমারও প্রশ্ন ইসলামের এতো বেশি অনুশীলন করে, অথচ এই একটা ব্যাপারে তারা কি জেনে শুনে ভুলটাই করে যাচ্ছে, নাকি দিবসটি পালন করার পক্ষে তাদের রয়েছে যুক্তিতর্ক, কোরআন হাদীসের রেফারেন্স, এবং ঘটা করেই যখন পালন করছে তখন রেফারেন্স থাকার কথাও, সে বিষয়গুলোও তুলে নিয়ে আসতেন তাহলে লেখাটি পূর্নাঙ্গ হত। নয়ত আপনার লেখাটি পড়ার একজন পাঠক দিবসটি পালনকারী কারও লেখা পড়লে বিভ্রান্ত হবে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনি মেজবাইন্যার গোশতের দাওয়াত পাইছে নাকি কোথাও?
ধন্যবাদ।
আমার প্রশ্ন হল ১২ রবীউল আওয়াল রসূল(সাঃ)এর জন্মদিন কিন্তু একই দিন তো উনার ওফাত দিন হিসেবে বেশীরভাগ মানুষ মনে করে,তারাসহ। তাহলে আনন্দ মিছিলটা তো এমন হওয়া উচিত,যে যাওয়ার সময় আনন্দে লাফাতে লাফাতে যাবে,আর ফেরার সময় কেদে মাতক করতে করতে ফিরবে....তা তো করেনা..
ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন