আল্ কোরআনের আলোকে মহানবী (সা) এর আগমনের উদ্দেশ্য ..
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৭:৪৬:৫০ সন্ধ্যা
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। একটি শাশ্বত, চিরন্তন ও জীবন্ত কালজয়ী মতাদর্শ। আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের মধ্যে ইসলামই হচ্ছে সবচেয়ে সেরা ও কলাণধর্মী বিধি-ব্যবস্থা। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা)এর মাধ্যমেই আল্লাহপাক তা মানুষের জন্য কোরআনকে হেদায়েতের সর্বশেষ বিধান হিসাবে দান করেছেন। হযরত মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না তা কালামে পাকে উল্লেখ আছে। তিনি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীবের মাধ্যমে ইসলামের পরিপূর্ণতা দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমাদের জন্য আমার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। পূর্ণ করে দিলাম আমার নেয়ামতকে এবং ইসলামকে তোমাদের জীবিন বিধান হিসাবে মনোনীত করে দিলাম।” (সূরা মায়েদা-১৩)
আল্লাহর হাবীব (সা)এর উপর মানবজাতির সংবিধান আল্ কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআন ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ দলীল, এটি ইসলামী আন্দোলনের গাইড বুক প্রেরণার উৎস। মহানবী (সা)এর আগমন সম্পর্কে আল্ কোরআনে অনেক সূরায় বর্ণিত আছে। মোহাম্মদ (সা) মানব জাতির জন্য কোন নতুন নবী নয়, তাঁর পূর্বেও সকল জাতির প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী এসেছিলেন। তাঁদের প্রতিও আল্লাহপাক মানুষের হেদায়েতের জন্য কিতাব দিয়েছেন, কাউকে ছহিফাও দিয়েছেন। মহানবী (সা) এর আগমন সম্পর্কে সূরা নিসায় বর্ণিত আছে, “হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের জন্য সুষ্পষ্ট কিতাব এসেছে এবং একটি নুর অবতীর্ণ হয়েছে।” বস্তুতঃ তিনি এসেছিলেন, মানবজাতির শিক্ষকরূপে মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্য, সত্য জীবন বিধান ইসলাম প্রচার করার জন্য, মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার জন্য, মানবসমাজকে ভীতি প্রদর্শনকারী, সুসংবাদ ও সতর্ক করার জন্য, জীবনবিধান ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে তথা রান্নাঘর থেকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করার জন্য। মূলতঃ এটিই ছিল নবীর মিশন।
মহানবী (সা) এর আগমনের কারণ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহপাক কোরআনের অনেক সূরায় বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি এসেছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রচারক হিসাবে।
কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা প্রচার কর।” (সূরা মায়েদা-৬৭) তিনি এসেছিলেন, মানবজাতির জন্য সাক্ষী হিসাবে, সুসংবাদদাতা হিসাবে, ভীতি প্রদর্শনকারী ও উজ্জল আলোকবর্র্তিকারূপে এবং সর্বোপরি একজন উপদেশ দাতা হিসাবে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, “হে নবী! আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে। আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁহার দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল আলোর প্রদীপরূপে।” (সূরা আহযাব : ৪৫)
অন্যত্র আরো বলা হয়েছে, এইভাবে তোমাদিগকে আমি এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি, যাহাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষীরূপে এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হইবে।” (সূরা বাকারা-১৪৩)
পবিত্র কোরআনে আবার বলা হয়েছে, “অতএব তুমি উপদেশ দাও, তুমি তো একজন উপদেশদাতা।” (সূরা গাশিয়া-২১) তিনি এসেছিলেন মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য, যাতে মানুষ নিশ্চিত জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পারে এবং চির আকাঙিখত মুক্তির পথে জান্নাতে যেতে পারে।
আল্ কোরআনে তা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, “প্রেরণ করিয়াছেন এমন এক রাসূল যে তোমাদিগের নিকট আল্লাহর সুষ্পষ্ট আয়াত আবৃত্তি করে, যাহারা মু’মিন ও সৎকর্মপরায়ণ তাহাদিগকে অন্ধকার হইতে আলোতে আনিবার জন্য।” (সূরা আত্তালাক-১১) তিনি এসেছিলেন মানবজাতির একমাত্র সংবিধান, অকাট্য দলিল এবং আল্ ইসলামকে মানুষের নিকট পেশ করার জন্য।
আল্ কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “যাহারা অনুসরণ করে বার্তা বাহক উম্মী নবীর যাহার উল্লেখ তাওরাত ইনজিল, যাহা তাহাদিগের নিকট আছে তাহাতে লিপিবদ্ধ পায়। যে তাহাদিগকে সৎকার্যে নির্দেশ দেয় ও অসৎকার্যে বাধা দেয়। যে তাহাদিগের জন্য পবিত্র বস্তু বৈধ করে ও অপবিত্র বস্তু অবৈধ করে এবং যে মুক্ত করে তাহাদিগকে তাহাদিগের গুরুভার হইতে ও শৃঙ্খল হইতে যাহা তাহাদের উপর ছিল। সুতরাং যাহারা তাহার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাহাকে সম্মান করে। তাহাকে সাহায্য করে এবং যে নুর তাহার সাথে অবতীর্ণ হইয়াছে উহার অনুসরণ করে তাহারাই সফলকাম।”(সূরা আ’রাফ-১৫৭) মানবজাতিকে হিকমত শিক্ষাদান ও পরিশুদ্ধ করে তোলাই মহানবী (সা)এর আগমনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “যেমন আমি তোমাদের মধ্য হইতে তোমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছি, যে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট আবৃত্তি করে, তোমাদিগকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়।” (সূরা বাকারা-১৫১) এ আয়াত দ্বারা এও প্রমাণ হয় যে মোহাম্মদ (সা) মানবমন্ডলীর একজন শিক্ষক ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, আল্লাহপাক তাঁকে শিক্ষকরূপে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন।
মহানবী (সা) আল্লাহ কর্তৃক নিযুক্ত কোরআন মজীদের একজন ব্যাখ্যা দানকারী তথা ভাষ্যকার। সুরা আন্ নহলে এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে, “প্রেরণ করিয়াছিলাম স্পষ্ট নিদর্শন, কিতাবসহ এবং তোমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করিয়াছি; মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝাইয়া দিবার জন্য যাহা তাহাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হইয়াছিল, যাহাতে উহারা চিন্তা করে।”
মহানবী (সা)এর আগমনের পূর্বে আরবজাতি জাহিলিয়াতে নিমজ্জিত ছিল। শৈশবে মহানবী (সা)গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ বিগ্রহ দেখে তাঁর মন বড়ই ব্যাকুল হত। তখন যুবকদিগকে নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “হিলফুল ফুযুল” গঠন করেন। তাঁর জীবনও ছিল অত্যন্ত সংঘাত মুখর। তিনি কাফের, মুশরিক এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ২৩ বৎসরের নুবুওয়াতী জিন্দেগীতে তিনি অনেক যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কাফের ও মুনাফিকদের বিরূদ্ধে রাসূল (সা)কে যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহতায়ালার নির্দেশ, “হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরূদ্ধে জিহাদ কর এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন।” (সূরা তাহরীম-৯) সুতরাং কাফের ও মুনাফিকদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে দ্বীন বিজয় করার জন্য মহানবী (সা)এর আগমন। মূলতঃ রাসূল (সা)কে পাঠানো হয়েছে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ। পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, “আমি তো আপনাকে সমগ্র বিশ্বের প্রতি রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।”(সূরা আম্বিয়া-১০৭)
মানুষের প্রতি মহানবী (সা)এর দয়া ও প্রেম ছিল অগাধ। এর কোন সীমা পরিসীমা নেই। তিনি ছিলেন রহমতের নবী, দয়ার নবী, পরকালে উম্মতদিগের কান্ডারী নবী। মানবজাতির পথ প্রদর্শক। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য নবী অনুসৃত পথে চলতে হবে এবং তাকেই একমাত্র নেতা ও পথপ্রদর্শক মানতে হবে। কোরআনের ঘোষণা, “হে মু’মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর, তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর; আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাহাদের যাহারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী। কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটিলে উহা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট। ইহাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” (সূরা নিসা-৫৯) কাজেই রাসূলের আনুগত্য করা একান্ত অপরিহার্য। রাসূল (সা)কে আনুগত্য প্রদর্শন এবং তাঁকে ভালবাসার মাঝেই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালবাসা নিহিত।
মোটের উপর, মহানবী (সা)এর আগমন আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করার জন্য, সকল মানবরচিত মতবাদের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, “তিনি তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করিয়াছেন হেদায়াত ও সত্যদ্বীন সহকারে, যাতে অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করার জন্য, যদিও মুশরিকরা ইহা অপছন্দ করে।” (সূরা ছফ-৯)
সুতরাং আল্লাপাকের পবিত্র কোরআনের এ সকল আয়াত দ্বারা মহানবী (সা)এর আগমনের কারণ সুষ্পষ্টভাবে বুঝা যায়। এককথায় সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়েই তাঁর আগমন ঘটেছিল। তাই আজকের এই অশান্ত, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় সকল মানুষকেই হযরত মোহাম্মদ (সা)এর পূর্ণাঙ্গ জীবন চরিত সম্পর্কে অবগত হয়ে তাঁর দেখানো পথে চললে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে।
("রাসূল সা.আমার ভালবাসা" গ্রন্থ থেকে)
বিষয়: সাহিত্য
২০৫৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন