বাড়ীওয়ালী (ছোট গল্প) Rose Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:২৪:২৯ দুপুর



এক.

“বাড়ী বাড়ী কর তুমি এই বাড়ী তোমার না, কবর হবে তোমার বাড়ী মাটি হবে বিছানা।”

এটি ইসলামী গানের অংশ বিশেষ। বহুলশ্র“ত গান এবং নীতিকথা হিসাবে মানা যায়।

“পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই, আমি তো সেই ঘরের মালিক নই।”

শিল্পী মরহুম আবদুল আলীমের গাওয়া এটিও তেমনি। অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে সেখানে। শহুরে মানুষ একটি ঘর, একটি বাড়ী, একটি প্লট, একটি ফ্ল্যাট কিংবা এক টুকরো জমির জন্য পাগল পারা। অন্যদিকে গ্রামের মানুষ যার একটি জমি বা বাড়ী আছে সে আরো চায়। মানুষের চাওয়ার কোন শেষ নাই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে চাইতে থাকে, যা আছে তা রক্ষায় ব্যস্ত থাকে। প্রয়োজনে লাঠিয়াল বাহিনীও পালন করে। এই সামান্য একটি বাড়ীর মালিক বা এক কাঠা জায়গার মালিক হতে পারলে তাকে আর কাছে পায় কে? অহংকারে তার মাটিতে পা পড়ে না। বিপূল পরিমাণ অর্থ-বিত্তের মালিক হলে অনেককেই দেখেছি জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকেও ভুলে যায়। এই পৃথিবীতে সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বের মতই মালিক-ভৃত্য, ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা, উঁচু-নীচু, আলো-অন্ধকার এবং জমিদার বা বাড়ীওয়ালা-ভাড়াটে দ্বন্দ্ব যেন চিরন্তন অধ্যায়। জমিদার একটু সুযোগ খুঁেজ কিভাবে আবার ভাড়া বাড়ানো যায়, না হলে কিভাবে, কোন কৌশলে ভাড়াটেকে তাড়াতাড়ি বাড়ী ছাড়া করা যায়, সেই চিন্তায় বিভোর। আর ভাড়াটে জমিদারের মন রক্ষায় ব্যস্ত। কিভাবে সেও জমিদার থেকে একটু বেশী সুবিধা আদায় করা যায়।

নতুন ভাড়াটিয়া কোন সময় যখন বলেন জনাব, বাথরুমের ট্যাপ দিয়ে পানি একটু কম পড়ে, সম্ভবত কোন ময়লা জমে গেছে। একটা মিস্ত্রী এনে দেখাবেন কি?

বাড়ীওয়ালা বলেন, ভাই, আসতে না আসতেই সমস্যার এত ফিরিস্তি? আপনাকে নিয়ে তো ঝামেলা পোহাতে হবে। প্লীজ, না পোষালে অন্য খানে দেখুন বাসা। আগামী মাস থেকে বাসা খালি করে দেবেন। আমি ‘টু লেট’ লাগিয়ে দিচ্ছি।
ভাড়াটিয়ার তখন কি বলার বা করার থাকতে পারে?

দুই.

মি. ইসলামের ২০-২৫ বৎসরের শহুরে জীবনে বসবাস করার সুবাদে কয়েকজন বাড়ীওয়ালীর সাথে জানাশোনা আছে। একজনের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। স্বামী প্রবাসে থাকে। মাসে মাসে টাকা পাঠায়। একটি মাত্র ভাড়াটে। মাঝে মাঝে টাকা পেতে দেরী হয়, পরিবারের স্বচ্ছলতার ঘাটতি আছে বলে মনে হয়। কিন্তু লেফাফা দুরস্ত। শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরে আছেন। প্রতিবেশীদের সাথেও গুরুগম্ভীর সম্পর্ক। সবকিছুতেই কর্তৃত্বের ভাব। সবসময় হাঁক ডাক। কে কোথায় আছিস? এদিকে এমন কেন? দারোয়ান কই?

জোর গলায় ডাকে, মিজান! মিজান!! গেল কোথায় পাজিটা?

ডাক শুনে মিজান দৌড়াতে থাকে। খালাম্মা আসছি।

এই তো খালাম্মা। আমি তো এখানেই ছিলাম। একটু দোকানে গেছিলাম। একটা মোবাইল কার্ড ভরতে। দেশের বাড়িতে কথা বলার জন্য।

সারাক্ষণ দোকান আর দোকান। শুধু ফোন আর ফোন। বাসায় কখন থাকিস।

মিজান এখনও বিয়ে করেনি। সবসময় তার ফোন ব্যস্ত। লাইন পাওয়াও কঠিন।

আমরা বাইরে যাচ্ছি। ঠিক মত দেখে রাখিস।

ঠিক আছে খালাম্মা।

অবস্থা দেখে তো বন্ধু মোস্তাকিম বলেই ফেলে। আরে দোস্ত। তোদের বাড়ী ওয়ালী তো আমাদের মন্ত্রী-এমপিদেরও হার মানাবে। যা দেখলাম।

মাসের শেষ হতে না হতেই নীচতলায় ভাড়াটের বাসায় আসে ধীর পায়ে। মিসেস ইসলামের সাথে কথা জুড়ে দেয়। এ রুম সে রুম ঘুরে ঘুরে দেখে। আবার কিছুক্ষণ পর চলে যায়। ইসলাম সাহেব বুঝতে পারে। হাতটান পড়েছে।

মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে বছর পাঁচেক কেটে যায়।



তিন.

আরেক বাড়ীওয়ালীর গল্পটা এই রকম। বাসা খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। কোনমতে সুইটেবল বাসা মিলছে না। মিললেও টাকার অংকটা বেশী অথবা লোকেশান পছন্দ হচ্ছে না। একটা না একটা মাইনাস পয়েন্ট আছেই। কথা বলতেই বাড়ীওয়ালীর সাথে ভালই লাগল। ঠিক হল বাসা ভাড়া। অগ্রীম দিতে হবে পাঁচ মাসের। প্রথমে আপত্তি করলেও পরে আর না করা গেল না। বাসায় উঠি। দিন চলে ভালভাবেই। উভয় পক্ষের আচরণ যেন রক্ত সম্পর্কের। বছর যেতে না যেতেই বাড়ীওয়ালী লাখ দুয়েক টাকা ধার চেয়ে বসে।

বলে, রাফি আমি ইনশাল্লাহ ২/১ মাসের মধ্যেই তোমাকে দিয়ে দেব। ওহ! ভাল কথা টাকা কিন্তু আমার জন্য নিচ্ছি না। আমার বড় ভাইয়ার জন্য নিচ্ছি। অনেকের কাছে চেয়েছে, পাইনি। শেষে আমাকে তোমার কথা বলল, আমি নিরুপায় হয়ে এসেছি। তুমি কিন্তু কিছু মনে করো না বাবা।

আমি বিশেষ উদ্দেশ্যে কিছু টাকা জমা রেখেছিলাম। যেহেতু অল্প কিছু দিনের কথা বলল, তাই দেয়া। তাছাড়া বিশ্বাস করার মতই ব্যাপার। আর না করিনি, দিয়েদিলাম।

টাকা, অর্থ-সম্পদ-এমন এক জিনিস যা থাকলেও সমস্যা না থাকলেও সমস্যা। টাকা বন্ধুত্বে ফাটল ধরায়, ভাইয়ের মধ্যে শত্র্রুতা তৈরী করে, আত্মীয়ের মধ্যে কলহের কারণ, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, ভালবাসা, হৃদ্যতা উঠা নামা করে। টাকার কারণে ভালবাসার মানুষ হারিয়ে যায়, চরিত্র নষ্ট হয়ে যায় এবং প্রেমিককে ছেড়ে প্রেমিকাও অন্যজনের হাত ধরে। সমাজে-পরিবারে-দেশে, জনগণের কাছে হেয় হতে টাকার কারণে। টাকায় বড় করে, আবার টাকায় পতনও ঘটায়। টাকার জন্য যেমন অনেক শান্তি, অশান্তিও কম নয়। টাকা এক মারাত্মক জিনিস!
কিছুদিন অনেক দিনে পরিণত হল। আমাকেও সমস্যায় পড়তে হল টাকার জন্য। বাড়ীওয়ালীকে বলি আঙ্কেলকে বলুন আমার এখন টাকার প্রয়োজন।

তিনি বললেন, ঠিক আছে। বাসায় এলে বুঝিয়ে বলব। যেন আমি টাকা ধার দিয়ে মহা অন্যায় করে ফেলেছি। দায়সারা গোছের কথা। কিংবা আমার মনে হয়েছে আমিই যেন উনার কাছ থেকে টাকা ধার চাচ্ছি। বাইরে ইচ্ছে হল নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়ি। ২/১ মাসের কথা বলে এখন প্রায় ৮ মাস। তোর গোষ্ঠীর কেতা পুড়ি। মনে মনে রাগ সম্বরণ করে চলে আসি।

একদিন ফোন করলাম। আঙ্কেল আমি রাফি বলছি।

কোন্ রাফি?

আমি.. ..

ওহ! চিনতে পেরেছি। দেখ রাফি। আমি আসলে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ভীষণ বেকায়দায় আছি। স্টাফদের এখনও বেতনও দিতে পারিনি। আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও।

দুই সপ্তাহ নয় আরো ৪/৫ সপ্তাহ চলে যায়। দেখি ফোন করছি। কেটে দিল। অল্প টাকা নিয়ে বাসায় হাজির। নিলাম যা দিয়েছে তা। এভাবে তাগাদা দিতে দিতে। অল্প অল্প করে লাখ খানেক শোধ করে। আমি দিয়েছিলাম একসাথে টাকা। আর উনি শোধ করছেন। অল্প অল্প করে । টাকার বরকতটা রইলো? নিজের ভাগ্য নিজেই পুড়েছি।

ওহ! ভাল কথা আমি কিন্তু যখন বাসায় থাকিনা তখন এসে পুতুলকে দিয়ে যেত। আমি পুতুলকে মৃদু তিরষ্কার করতাম। তুমি নাও কেন? অল্প অল্প টাকা নিয়ে লাভ কি? একসাথে দিতে পারে না?

পুতুল বলে, তুমি টাকা ধার দিছ,? ঠেলা তুমি সামলাও। আমি কি জানি?

বাকী টাকা দিতে গড়িমসি চলতে থাকে। ফোন করি, আমাকে ইতিহাস শোনায়। আমার এই সমস্যা, সেই সমস্যা। আমি ব্যবসায় লস খেয়েছি। একটু সময় লাগবে। সবার তো কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। মানুষের জীবনে তো সমস্যা থাকবেই। আজ আমার সমস্যা, কাল তোমার হতে পারে। শুনিয়ে দেয় একটা ক্যাসেট প্লেয়ার যেন। আমি কিছুই বলতে পারি না। সেই সুযোগ দেয়ার আগেই লাইন কাট।



একদিন সরাসরি উনার বাসায় চলে যাই। বলি এর একটা বিহীত করতে। দেখি পাশে বাড়ীওয়ালী। উনাকে বলি আপনি ব্যবস্থা করুন। যেহেতু টাকা আমি আপনার সুপারিশে দিয়েছি। বুঝতে পারি বাড়ীওয়ালী মাইন্ড করে। মাইন্ড করলেও কিছু করার নেই। ওনি বলে ঠিক আছে। ভাইয়া দিতে না পারলে আমি দেব। সাথে সাথে বলল, আগামী মাস থেকে দুই হাজার টাকা করে বাসা ভাড়া বাড়বে।

আমি বললাম, কেন এখনও তো চুক্তি অনুযায়ী দুই বছর হয়নি। আর দুই হাজার টাকা বাড়বে কিভাবে?

উনি বললেন, এখন বাসার ডিমান্ড অনেক বেশী। সময়ের সাথে তো বাসা বাড়বে।

তাহলে চুক্তি?

চুক্তি নতুন করে হবে।

এটা কেমন কথা? এটা তো বেআইনী।

আইনী-বেআইনীর কোন ব্যাপার না।

ভেবে কুল পাচ্ছিনা। চাইলাম পাওনা টাকা। উত্তর বাসা ভাড়া বাড়বে। পাওনা টাকার সাথে বাসা ভাড়া বৃদ্ধির সম্পর্ক কি?

এভাবে চলতে থাকে। একদিন বলল, বাকী টাকা আমি দেব। তোমরা বাসা ছেড়ে দাও।

মুশকিল? এখন তো দেখি নতুন যন্ত্রণা। প্রথমে বাসা ভাড়া বাড়বে বলেছে, এখন বলছে বাসা ছেড়ে দাও।

আমিও বললাম ছেড়ে দিলে দেব। কিন্তু মনে রাখবেন এটা জুলুম।

উনি রেগে গেলেন। কিসের জুলুম?

বললাম, দেখা যাক।

দেখা দেখি পরে। বাসা দেখ তোমরা এটাই ফাইনাল।

বললাম, যদি বাসা ভাড়া কিছু বাড়িয়ে দিই।

তাও হবে না তোমাদের সাথে আর সম্ভব নয়।

বাড়ীওয়ালীর সাথে এই গ্যাঞ্জাম সায়েম ভাই জানত।

বলল, দোস্ত এইসব জমিদারদের সাথে লড়তে হলে বাড়ী ভাড়া সংক্রান্ত আইন-কানুন জানা থাকলে সুবিধা মার্কেটে এই ধরনের বই পাওয়া যায়। একটা যোগাড় করে ফেল। আর এডভোকেট রফিক ভাইয়ের সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দেব। পরামর্শ নিস।

বললাম, ঝামেলায় গিয়ে লাভ কি?

তোর এই এক সমস্যা ঝামেলা, ঝামেলা। আরে এরা আইনকে বেশী কেয়ার করে।

ভাই, সম্পর্ক নষ্ট যখন হয়ে গেল, জোর করে থাকলে অশান্তি আরো বাড়বে। বাসা খোঁজ পেলে বলিস।

যা, তোর সাথে এই ব্যাপারে কথা বলা আর ছাগল ছড়ানো একই কথা।

মানুষ কত বিচিত্র ধরনের হয়। মানুষের সাথে লেনদেন না করলে বুঝা যায় না। আসলে একটা মানুষকে পরীক্ষা করার সবচেয়ে বড় কথা এই, লেনদেন করা। যার লেনদেন ঠিক। সেই সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য। মানুষকে বিশ্বাস করার জন্য পরীক্ষার আর কোন উপায় দেখি না।



চার.

বাসা ভাড়া করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। চুক্তি করার সময় চুক্তিতে কি আছে তা ভালভাবে পড়া দরকার। চুক্তির একটা কপিও ভাড়াটিয়াকে রাখতে হবে। অনেক জমিদার কিন্তু ভাড়াটেকে চুক্তির কপি দেয় না। বলে আসলে চুক্তি কোন ব্যাপার না। ব্যাপার উনার জন্য না হতে পারে। ব্যাপার ভাড়াটের। কোন সমস্যা হলে বলবে চুক্তিতে কি লেখা আছে পড়ে দেখবেন। আমি চুক্তির বাইরে তো কিছু করতে পারব না।

তানিমের পিছু তাকাল সিফাত।

কিরে কোথায় যাচ্ছিস শিশির।

কেন বাসায়? বাসায় মানে তোদের বাসা শিফট করলি কখন?

এই তো চলতি মাস থেকে। কয়েকদিন হল। চল বাসায়।

না রে আজ না, আরেক দিন। জরুরী কাজ আছে।

ঠিক আছে বাসায় আসবি।

মাইশা বলল, বুড়ি ডেকেছে।

কোন বুড়ি?

কেন বাড়ী সর্দারনী?

কিছু বলেছে নাকি। না, তোমাকে অফিস থেকে আসলে দেখা করতে বলেছে।

কলিং বেল দিয়ে অপেক্ষারত। দেখি, কাজের লোকটা দরজা খুলে দিল। বুড়ি, মানে মিসেস রহমান মোবাইল টিপাটিপি করছে। হাতে ২/৩টা সেট। আমাকে বসতেও বলেনি।

চোখে চোখে তাকিয়ে বলল, তোমরা বাসা ছেড়ে দাও। আগামীকাল থেকে।

আমার তো আক্কেল গুড়–ম। বুঝি নাই আন্টি। আবার বলুন।

তোমরা আমাদের নামে সমালোচনা করছ আসতে না আসতেই। দারোয়ানকে বলে দিল। সাইন বোর্ডটা লাগিয়ে দিতে।

আমি আন্টিকে বললাম, একমাসের ভাড়া তো পেইড, মাত্র এক সপ্তাহ হল। একমাস না থেকে যাই কি করে?

বাসার সবাই আমার মুখ দেখে আন্দাজ করতে পারে। কিছু একটা হয়েছে।

বলি, এই এই ব্যাপার।

কয়েকদিন পরপর লোক পাঠায় বাড়ীওয়ালী কবে যাচ্ছি আমরা।

একদিন গিয়ে কিছু শুনিয়ে দিই।

তিনি বললেন, অমুক নেতা আমার বেয়াই।

আমি ইঙ্গিতটা বুঝতে পারি।

দমবার পাত্র নই। তবুও আমার যা বলার বলে আসি।

সকলেরই স্বপ্ন একটু মাথা গুজার ঠাঁই। একটু খানি জায়গা। শহরে আসে কেউ বা চাকরীর স্বপ্ন নিয়ে। কেউ বা ব্যবসা বাণিজ্যের আশা নিয়ে। নানা মানুষ নানা উদ্দেশ্যে বসবাসের চেষ্টা চালায়, ভাড়া বাসায় থাকতে হয় অনেককে। বাড়ীওয়ালার উৎপাত সহ্য করেনি বা সহ্য করতে হচ্ছে না। এমন লোক কম আছে। কেউ কেটে শেখে, কেউ বা ঠকে শেখে। বাড়ী করা, জায়গা কেনা নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের জন্য কল্পনা বিলাস, দিবাস্বপ্নের। আর বিত্তশালীদের সুখবিলাস। চলছে ডেভেলপারদের রমরমা ব্যবসা। ভুমিদস্যূদের দৌরাত্ম্য। সহজ কিস্তি, সহজ লোন, ব্যাংক লোনে সহায়তা। ফ্ল্যাট বাড়ী বিক্রির কত কৌশল। অসাধুদের খপ্পরে কতজন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে একদল ব্যবসায়ী নিঃস্বার্থ, নিরলসভাবেও জনস্বার্থে, কম মুনাফায় ব্যবসা করে যাচ্ছে।


যতই দিন যাচ্ছে, বাড়ছে মানুষ। বাড়ছে জায়গা-জমির দাম। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রীর দামও। তারপর যার কিছু নেই, তবুও স্বপ্ন দেখে। একটু আশ্রয়ের খোঁেজ সবাই। জায়গা কিনতে হবে, জমি কিনতে হবে। কিন্তু আসল আশ্রয় মানুষের চিরস্থায়ী ঠিকানা সেই সাড়ে তিন হাত জায়গার কথা চিন্তা করে জীবনটা পরিচালিত করলে জীবনটা সুন্দর ও সবার জন্য কল্যাণময় হবে। সবার জন্য গড়ে উঠবে একটি সুখের বাসযোগ্যভুমি। থাকবে না বাড়ীওয়ালা-ভাড়াটে, মালিক-শ্রমিক, ছোট-বড় ইত্যাদি দ্বন্দ্ব।

রাত তখন সাড়ে ১০টা । মোবাইলটা বেজে উঠল শিশিরের। ভাগিনা রনির কল। সালাম দিয়ে বলল, মামা আমি বাসায় আসছি।

এসো। কিন্তু এত রাতে কেন?

মামা মেসে আর মনে হয় থাকা যাবে না। গতকাল রাতে আমার দু’বন্ধুকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পাশের আরেকটা মেস থেকে। মনে হয় যেকোন সময় এখানেও পুলিশ আসতে পারে। আম্মু বলেছে রাতটা আপনার এখানে থেকে কাল সকালে বাড়ী চলে আসার জন্য।

ভাগিনাটা ব্রিলিয়ান্ট। হলে সিট পায়নি। তাই বন্ধুরা কয়েকজন মিলে মেস করে থাকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর হলে সিট সংখ্যা কম। তাই ছাত্ররা বাধ্য হয়ে মসে থাকে। কোথায় যেন একটা ছাত্র আরেক দল ছাত্রের হাতে নিহত হয়েছে। সেজন্য সারা দেশে ধরপাকড় চলছে। এভাবে হলে তো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। যে বা যারা হত্যা করেছে, তাদের গ্রেফতার করলেই তো হয়। মেসের ছাত্ররা কি দোষ করেছে। এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন- নয় কি?এমনি ভাবতে ভাবতে কলিং বেল বেজে উঠলো। মনে হয় রনি এসেছে। শিশির দরজা খুলে দেয়ার জন্য বিছানা ছেড়ে উঠল।

===

বিষয়: সাহিত্য

১৯১১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352905
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৫৬
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫০
292971
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
352920
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৫১
ফুটন্ত গোলাপ লিখেছেন : Worried
০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:৫৩
293010
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : Good Luck Good Luck
352946
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৪৮
শেখের পোলা লিখেছেন : ঠিক এমনটাই হয়ে থাকে৷ ধন্যবাদ৷
০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:৫৩
293009
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও..
352989
০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:০৩
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : বাড়ী ওয়ালারা মনে করে চিরদিনই এরা বাড়ী মালিক< ধন্যবাদ
০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:১১
293012
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ।
353055
০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:১৪
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : নতুন বাসায় উঠেছি একবছরও হয়নি । গতকাল ১০০০ টাকা বাসা ভাড়ার নোটিশ দিছে । গতকালই বাসা ছেড়ে দেব বলে দিয়েছি । নতুন বাসা এখনও নেয়া হয়নি । বাংলাদেশে শুধু খাইয়াফালামু নীতিতে চলতেছে । এগুলো দেখার কেউ নেই ।
০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:১১
293055
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আসলে অনেকেই ভুক্তভোগী। অবশ্য কিছু ভাল জমিদারও আছেন।অনেক অনন্য সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ গ্রহণ করুন।
353262
০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১২:০৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় সুহৃদ ভাইয়া। বাস্তবতার আলোকে প্রাণবন্ত চমৎকার উপস্থাপনা। জাজাকাল্লাহু খাইর।
০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:১১
293306
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম।ভাল থাকবেন,অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File