ইসলাম (ISLAM): সর্বাবস্থায় বিজয়ী দ্বীন বা জীবন বিধান..
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:১১:১২ রাত
বিশ্ব বিখ্যাত মনীষী সাইয়্যেদ কুতুবের “কালজয়ী আদর্শ ইসলাম” পড়ার পর আমার ভুল ধারণার অপনোদন হল। এর আগে আমি মনে করতাম অন্য দশ জনের মত, পৃথিবীতে কোন ইসলামী রাষ্ট্র যেহেতু প্রতিষ্ঠিত নেই তাহলে ইসলামী আদর্শ বিজয়ী নেই! রাসূল (সা) এবং সাহাবাদের প্রতিষ্ঠিত খোলাফায়ে রাশেদীনের ৪০ বৎসরের পর এই ১৪০০ বৎসরেও আর কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। হযরত ইমাম হোসাইনের খেলাফাত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এবং কারবালার বিয়োগান্তক কাহিনীও আমরা জানি। অবশ্য পঞ্চম খলিফা খ্যাত উমর ইবনে আবদুল আজিজ পরবর্তীতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত করে শাসন পরিচালনা করেছিলেন। মাঝে মাঝে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হয়েছিল-তা তৎকালীন সাম্্রাজ্যবাদীদের হাতে পর্যুদস্ত হয়েছে। বাগদাদেও তাতারীদের আক্রমণ এবং ফেৎনায় ইসলামী ঐতিহ্যের অনেক কিছু ধ্বংস হয়েছে। উপমহাদেশে বালাকোটের ইতিহাস, ফরায়েজী আন্দোলন, তিতুমীরের আন্দোলনও বৃটিশ বেনিয়াদের হাতে ধ্বংস হয়েছে। বর্তমানে ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম দেশ থাকলেও কেউই প্রকৃত অর্থে ইসলামী রাষ্ট্র নয়। কিছু কিছু রাষ্ট্রে ইসলামী কানুনের কিছু প্রয়োগ আছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে। ইরানের বিপ্লব ইসলামী বিপ্লব বলা হলেও শিয়া প্রভাবিত দেশ শিয়াদের আকিদা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে। আলজেরিয়ায় “ইসলামী সালভেশন ফ্রন্ট” নির্বাচনে জেতার পর ফ্রান্সের সহযোগিতায় সেদেশের সেনাবাহিনী ইসলামিস্টদের ক্ষমতায় আসীন হতে দেয়নি। তুরস্কের এরদোগান সরকারও পুরোপুরি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা, সুদানেরও প্রেসিডেন্ট ওমর বশিরও পাশ্চাত্যের কোপানলে আছেন। ফলে মোটামুটিভাবে মনে করতাম, ইসলাম তো কোথাও বিজয়ী নেই!
আল্ কুরআনের সূরা ছফের ৯নং আয়াতে বলা হয়েছে, “তিনিই সেই সত্তা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি একে অন্য সব দ্বীনের উপর বিজয়ী করবেন। মুশরিকদের নিকট এটা যতই অপছন্দ হোক না কেন?”
কথা হল, রাসূল (সা) এবং সাহাবারা বিজয়ী করেছিলেন দ্বীনকে, এখন কি বিজিত? না মোটেই নয়। ইসলাম সর্বকালেই বিজয়ী ছিল, আছে এবং থাকবে। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? একটু চিন্তা করুন, যে সকল শাসকবৃন্দ বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে, যারা ক্ষমতায় আসীন ছিল তারা কি ইসলামের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পেরেছিল? সম্্রাট আকবর ইসলামের বিরুদ্ধে “দীন এ ইলাহী” নামক শয়তানের ধর্ম আবিষ্কার করেছিল-তার অনুসারী কি একজনও আছে? যারাই ইসলামের বিরোধিতা করেছে তারাই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে ইসলামী কানুন কোন দেশে পুরোপুরি চালু না থাকলেও কিন্তু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ইসলামকেই ব্যবহার করছেন।
আমরা নবী-রাসূল(সা)দের সীরাতেও দ্বীন-প্রতিষ্ঠায় তাদের ত্যাগ, সমকালীন শাসকদের জুলুম নির্যাতনের বর্ণনা পড়েছি। যখনই প্রকৃতপক্ষে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন হবে কায়েমী স্বার্থবাদীরা বিভিন্ন প্রকারে বাধা দান করবেনই। বাধা প্রদানে সফল না হলে অত্যাচারের স্টীম রোলার চালাবে। এটা সর্বসময়ের আন্দোলনকারীদের জন্য একটা কঠিন ছবক বৈকি! “ইসলামের সত্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের মধ্যে একটা আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করতে হয়। এই সংগ্রাম অনিচ্ছা ও অনীহার বিরুদ্ধে। লোকদেরকে ইসলামের পথে আনার প্রয়োজনে। এটা জবানের সংগ্রাম। যুলুম-নির্যাতন ও সত্য প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতা উৎপাটনের সংগ্রাম। এই সংগ্রাম পরিচালনা করতে গেলে দুঃখ দুর্দশার শিকার হতে হয়। এই দুঃখ-দুর্দশায় প্রয়োজন হয় ধৈর্য-ধারণের। সংগ্রাম-সাফল্যের দ্বার প্রান্তে উপনীত হলেও ধৈর্য্যের প্রয়োজন। সেই সময়ে ধৈর্য অবলম্বন করা রীতিমত কঠিন ব্যাপার।” (কালজয়ী আদর্শ ইসলাম-সাইয়্যেদ কুতুব, পৃষ্টা-১১)
“প্রশ্ন উঠতে পারে অবতীর্ণ জীবন বিধান ইসলামকে যদি মানবিক চেষ্টা-সাধনা, শক্তি-সামর্থ্য ও বস্তুগত বাস্তবতার ওপরে নির্ভর করেই পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠিত হতে হয়, তাহল মানব রচিত মতবাদগুলো থেকে তার পার্থক্য রইলো কোথায়? অন্যান্য মতবাদের মতো এর প্রতিষ্টার জন্যও যদি মানব প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয় তাহলে নির্দিষ্ট করে এর জন্যই আমরা প্রচেষ্টা চালাতে যাব কেন? আবার কেউ কেউ যুক্তি দেখান, মানুষ দীর্ঘদিন ইসলামের অনন্য ও মহান পথে চলতে পারে না। কোথাও হয় একবার গ্রহণ করল, কিছুকাল প্রতিষ্ঠিত থাকল। তারপর সে তাকে পরিত্যাগ করবে। অন্য কোন পথ তালাশ করবে। অন্য কোন মতবাদের দিকে আকৃষ্ট হবে, এটাই স্বাভাবিক!” এ ধরনের প্রচারণার পেছনে একটা ধুর্তামি আছে। এরা মানুষকে নৈরাশ্যবাদ সৃষ্টি করতে চান। ইসলামের অনুসরণে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চান। ইসলামের বিধান প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করাই তাদের উদ্দেশ্য।” (কালজয়ী আদর্শ ইসলাম-সাইয়্যেদ কুতুব, পৃষ্টা-১৪) আমরা অপপ্রচারের ডামাডোলে হারিয়ে যাচ্ছি অসচেতনভাবে। বলা হয় ইসলাম মাত্র কিছুদিনের জন্য পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত ছিল, এটা সত্য নয়। চাতুর্যপূর্ণ অপপ্রচার মাত্র।
পৃথিবীর সমস্ত শক্তি সব সময়ই ইসলামের বিরুদ্ধে ছিল, আজও আছে। ধ্বংস করতে চাইলেও সম্ভব নয়। যত বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন কোন না কোন ভাবে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে চলতেই থাকবে। দাবিয়ে রাখার মত কোন বিধান নয় এটা। “ইসলাম বাস্তব পরিবেশ-পরিস্থিতির কাছে হাত জোড় করে আত্মসমর্পন করেনি। পরিবেশের প্রতিকুলতাকে সে পরিবর্তিত করেছে। নিজের অনন্য সুন্দর কাঠামো অতি মজবুত বুনিয়াদের উপর দাঁড় করিয়েছে। আর এজন্য সে ব্যবহার করেছে মানব-প্রকৃতির সম্ভাবনাময়তাকে।”(কালজয়ী আদর্শ ইসলাম-সাইয়্যেদ কুতুব, পৃষ্টা-৪১) পাশ্চাত্য সঙ্কীর্ণভাবে ইসলামকে নিছক একটি ধর্ম মাত্র বলে চালাতে চায়, অথচ তা মানব-প্রকৃতির সাথে সুসামঞ্জস্য বিধান। কেবলমাত্র কিছু নিছক আচার সর্বস্ব অনুষ্ঠানের নাম নয়।
মানব রচিত বিভিন্ন মত ইতিমধ্যে মানুষের মুক্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই শোষিত, বঞ্চিত, নিগৃহীত এবং নিপীড়িত মানুষের সর্বশেষ আশ্রয় স্থল সুমহান আদর্শ আল ইসলাম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কর্তৃক মনোনীত ধর্মই হল ইসলাম। নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থা (সূরা আলে ইমরান-১৯) এবং যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন বিধান তালাশ করার প্রচেষ্টা চালান, তাহলে আল্লাহ তা গ্রহণও করবেন না। (সূরা (সূরা আলে ইমরান-৮৫) মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সা) বিদায় হজ্জে আরাফাতের ময়দানে সর্বশেষ অবতীর্ণ হেদায়াত বিশ্ববাসীর নিকট জানিয়ে দিয়েছেন। “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম, তোমাদের উপর যাবতীয় নেয়ামত সম্পন্ন করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।”(সূরা মায়েদা-৩) সর্বশেষ হেদায়াত মানুষের জীবনাদর্শ ইসলাম সব সময়েরই জন্য প্রযোজ্য বিধান। কোন কাল, সময়, গণ্ডি, সীমানা দিয়ে এর প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলে অপপ্রচার থেকেই বুঝা যায়-ইসলামের বিশ্বজনীনতা। সকল মতবাদকে চ্যালেঞ্জ করে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে দেয়ার একমাত্র ক্ষমতা ইসলামেরই রয়েছে। বিজয়ী দ্বীন হিসেবে সর্বদা এবং সর্বাবস্থায় টিকে আছে ছিল এবং থাকবে।
====
বিষয়: সাহিত্য
১৪৭২ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
-চিরন্তন সত্য..অনেক ধন্যবাদ আপনাকে..
ধন্যবাদ..
আপনাকে ধন্যবাদ
প্রকৃত সত্য হছ্ছে- ইসলাম আস্তাকুরে যাওয়া অপেক্ষায় আছে মাত্র।
এই ভেড়িটাকে ব্লগ করে দেন ওর থেকে আমাদেরকে উপদেশ নিতে হবে ! নেড়ি কুত্তার মতো ওর ঘেউ ঘেউ শুনার সময় আপনার থাকলে আপনি ওকে রাখেন
আগেও বলেছি আল্লাহ সম্পর্কে রাসুল সম্পর্কে ইসলাম সম্পর্কে আজে বাজে কথা বলা এই রেন্ডিকে ব্লগ করেন এখনও বলছি ব্লগ করেন
সুন্দর উপস্হাপনায় বিষয়টা কিছুটা হলেও ক্লিয়ার হল!
জাযাকাল্লাহু খাইর মুহতারাম!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার উত্তম মন্তব্যটির জন্য আল্লাহপাক উত্তম জা যা দিন।..
মন্তব্য করতে লগইন করুন