“আল্লাহ যদি একদল লোক দিয়ে আরেক দলকে না দমাতেন, তাহলে পৃথিবী ফ্যাসাদে পরিপূর্ণ হয়ে যেতো.. .. ”(আল কুরআন)
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:৫৩:১১ দুপুর
কেউ স্বীকার করুন বা আর না-ই করুন, বাংলাদেশ যে একপ্রকার রাজনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে তা মোটামুটি বলা যায়। চারদিকে যেন এক ত্রস্ততা, অস্থিরতা! কী হচ্ছে কী হবে! কী হতে পারে! সবার মনে এই প্রশ্নগুলো বার বার উঁিক দিচ্ছে। একজোট তাদের হাতে দেশের সমস্ত কিছু কুক্ষিগত করতে চাইছে চিরতরে। আর এক পক্ষ যেন প্রকারে দেশের চালকের আসরে বসতে চাইছে। প্রথম পক্ষ মরিয়া হয়ে উঠেছে, যদি আমরা কোন মতে হেরে তাহলে তো নাস্তানাবুদ হবো-তাদের উপর যা করেছি কয়েকগুণে তার শোধ তুলবে। প্রবীণ লেখক ও কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বিখ্যাত ‘‘বিষাদ সিন্ধু’’ গ্রন্থের রাষ্ট্রনীতি ও স্বাধীনতা নামক প্রবন্ধে রাজনীতিকে অত্যন্ত জটিল এবং কুটিল বলে স্বীকার করেছেন। সবাই রাজনীতি করছে জনগণের সেবা করার জন্য। আর রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করছেন প্রতিপক্ষ দলকে যেন বিনাশ করার জন্য। এ ধরনের হীন কর্মকাণ্ড কারো কল্যাণ বয়ে আনবে না।
সঙ্কট! সঙ্কট!! সঙ্কট!!! দেশ-বিদেশ কোথাও সঙ্কটের শেষ নেই। যেন সঙ্কটকে মোকাবেলার জন্যই আমরা কেবল এ ধরায় জন্মেছি। শরণার্থী সঙ্কট, ঋণ সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট, বিদ্যুত সঙ্কট, পানি সঙ্কট, আদর্শের সঙ্কট, রাজনৈতিক সঙ্কট-সঙ্কটেই সবকিছু স্থবির, তথা ঘুরপাক খাচ্ছে। একটা সঙ্কটের শেষ না হতেই নতুন সঙ্কট হাজির। সান্ত্বনা হিসেবে সবাই বলে, সব সঙ্কটের সমাধান আছে। আশাবাদী মানুষেরা তা-ই মেনে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। আসলে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন সঙ্কটে সবাই জর্জরিত। যা-ই হোক তারপরও আশার আলো প্রত্যাশা করেই যাপিত জীবন। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস রয়েছে। সবার মাঝে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি অন্য যে কোন দেশের প্রেক্ষাপটে অতুলনীয়। ধর্মের প্রতি অনুরাগ এটা স্বভাবজাত ব্যাপার। কিছু লোক ছাড়া সবাই ধর্মপ্রিয়। সবার মাঝে কম-বেশি রাজনৈতিক চেতনা আছে, সময়ে তা প্রয়োগ করে বা অনেক সময় তা করতে বাধাগ্রস্ত হয়। নিকট অতীতে সে রকম অভিজ্ঞতা সবার আছে। আমি একজন ধর্মপ্রিয় মুসলমান হিসেবে দেশ-সমাজ-রাজনীতি নিয়ে বেশি জড়িত না হলেও নিজস্ব একটা মত আছে। চেষ্টা করি প্রাত্যহিক জীবন ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে। যেহেতু ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান, তাই ধর্মগ্রন্থগুলোতে যেকোন সঙ্কটের কোন সুরাহার ইঙ্গিত থাকতেও পারে। সর্বশেষ হেদায়েতের গ্রন্থ আল কুরআন যাপিত জীবনের গাইড বুক হিসেবে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে বলে বিশ্বের বড় বড় মনীষীরাও স্বীকার করেছেন।
মানুষ অনেক সময় বিভিন্ন পারিপাশ্বিক কারণে অহংকারী হয়ে উঠে। অথচ সে নিজের জানে অহংকার হচ্ছে পতনের মূল। অহংকার আল্লাহর চাদর বলে তিনি নিজেই বলেছেন। তাঁর চাদর নিয়ে যে টানাটানি করবে সে উপযুক্ত পরিণাম ভোগ করবে। আলী (রা) বলেছেন, মানুষের এত কীসের অহংকার? যে সূচনা তো শুরু হয়েছে এক ফোটা পানি থেকে। তাই সে-ই নাপাক পানিতে সৃষ্ট কোন দল বা সংগঠন কোন নির্দিষ্ট দায়িত্ব পেলে অনেক সময় স্বেচ্ছাচারী হয়ে যায়। এ ধরনের অনেক উদাহরণ পৃথিবীর বুকে আছে। ফেরাউন, নমরূদ, হিটলার, বুশ, মুসোলিনী, স্ট্যালিন আর অনেক..। রাজনীতি বা সমাজ-পরিবর্তন নিয়ে অনেকেরই হতাশা থাকতে পারে, চেষ্টার পর ব্যর্থ হলে হাল ছেড়ে দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে যায়। অথচ আল্লাহ নিজেই বলছেন, নিশ্চয়ই তিনি কোন জাতির অবস্থা/ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যে পর্যন্ত না তারা তাদের মাঝে তা পরিবর্তন করে।” তার মানে একদম সহজ নিজের চেষ্টা সাধনা ছাড়া সাফল্য লাভ দূর অস্ত! আবার এটা ঠিক যে খালেছ নিয়তে যে চেষ্টা করা হয়, তাতে আল্লাহর সাহায্য থাকে।
আমাদের বর্তমান শাসকদল ৫ জানুয়ারী ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন সম্পন্ন করে সকল দল, মত বা শ্রেণী বা দেশকে অগ্রাহ্য করে। বিরোধীদের কঠোর আন্দোলনেও এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারেন নি। এর কারণ নানাবিধ, আমরা জানি কিছু পাশ্চাত্য দেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশের আগলে থাকায় দেশের বেশির ভাগ মানুষকে তাদের পছন্দের নেতা নির্বাচন করে নিজস্ব মতামত দেবার কোন সুযোগই দেননি। ফলে যা হবার তাই হয়, আন্দোলন ব্যর্থ হয়। কোন আন্দোলন বা বিপ্লব যখন ব্যর্থ হবে, স্বভাবতই আন্দোলনকারীদের উপরই এর দায় বর্তাবে। সত্যের উপর মিথ্যা জয়ী হলে ইতিহাস কিন্তু বিজয়ীদের পক্ষে কথা বলে। এর পরিণাম কত মারাত্মক হতে পারে চলমান বাংলাদেশের কঠিন বাস্তবতাই চোখের সামনে। চরম, নির্যাতন, গুম, খুন, জেল-জুলুম-নির্যাতন-গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে প্রতিপক্ষরা। প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! রাজপথে আন্দোলন করলে গুলির মুখে পড়তে হচ্ছে। এখন রাজপথ থেকে এক প্রকার বিতাড়িত। ঘরেও থাকতে পারছে না, আগের কৃতকর্মের কারণের মামলার পাহাড়ে নিষ্পেষিত। ফেরার জীবন যাপন করছে বিরোধী মতের লোকেরা। আবার সাধারণ জনগণও দ্রব্যমূল্য, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন দুর্বৃত্তায়নের বৃত্তে বন্দী। সাধারণ মনের ভাবনা যেখানে নেতাদের এই অবস্থা আমরা আর কি! আন্দোলন ব্যর্থ ঠেলা সামলাতে গলদঘর্ম, এখন সকলে বলাবলি করছে-বর্তমান শাসক দলকে আর আন্দোলন করে নামাতে পারবে না। আজীবনই হয়তো তারা ক্ষমতায় থাকবেন! এধারণাই এখন জনমনে দৃঢ় হতে চলেছে। ফলে সরকার বাহাদুরও আরো বেশি অহংকারী হয়ে উঠছে। প্রতিপক্ষ নেই, মাঝে মাঝে নিজেদের অন্তর্:দ্বন্দ্বে নিজ দলের নেতা-কর্মী হত্যার শিকার হচ্ছে। আসলে মানব-প্রকৃতিতে এই হতাশা বা অহংকারী মনোভাব তৈরি হচ্ছে কেন তা বোধগম্য হওয়া কঠিন ব্যাপার। তবে মানুষ যে কিছু একটা হবে সে ব্যাপারে যেন কেমন নিশ্চিত! সেটাও কখন? বা কিভাবে? এরকম বলতে পারে তা আমি মোটামুটিভাবে আল কুরআনেই খুঁজে পেয়েছি। এরশাদ হয়েছে : “আল্লাহ যদি একদল লোক দিয়ে আরেক দলকে না দমাতেন, তাহলে পৃথিবী ফ্যাসাদে পরিপূর্ণ হয়ে যেতো।” এখানে শিক্ষনীয় অনেক বিষয় আছে যা হয়তো আমাদের বোধ শক্তিতে কুলোচ্ছে না। আল্লাহ পৃথিবীতে কাউকে বেশিদিন অহংকারী বা স্বৈরাচারী মনোভাবের হতে দেন না। দিলে পৃথিবী ফ্যাসাদে আরো ভরপুর হয়ে যেতো। ক্ষমতার বাইরের লোকদের এটাই ধারণা যে পরিবর্তন একসময় হবেই! তারা জানে না কিভাবে? কেউ কি এসে কোলে করে বসিয়ে দেবে? এমনটি ভাবলে এ ধরা থেকে বিনাশ হতে বাধ্য।
যারা আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের মনযিল এখন অনেক দুরবর্তী। প্রবল রাষ্ট্রীয় বাহিনী, দলীয় বাহিনী প্রশাসনিক বাহিনী কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেবেন? আল্লাহ কুরআনে বলছেন, “যারা আমার পথে সংগ্রাম করে তাদের আমি পথ দেখাই।” তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে পূর্বের চেষ্টা-সাধনা কি ন্যায় বা সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য হয়নি? বিরোধী পক্ষের আন্দোলনে যথেষ্ট জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এটা স্বীকার করতে হবে। তবে এটাও ঠিক যে বিরোধীরা যেহেতু মনে করেছেন, বর্তমান শাসকদলও জ্বালা-পোড়াও করে মসনদে আসীন হয়েছে-আমরাও সে-পথ অনুসরণ করব? আবারও প্রশ্ন্ উঠতে পারে তাহলে কোন আন্দোলনটা সঠিক ছিল? আসলে এটা সঠিক বা বেঠিকের ব্যাপার নয়, আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, “আল্লাহ যদি একদল লোক দিয়ে আরেক দলকে না দমাতেন, তাহলে পৃথিবী ফ্যাসাদে পরিপূর্ণ হয়ে যেতো। বলা যায় ওরা ওই কাজে পারদর্শী ছিল। আপনারা ওদের ডিঙ্গাতে পারেন নি। ফলে ব্যর্থ হয়েছে-প্রমাণ হয়েছে শক্তি-সামর্থ্যরে দিক থেকে বিরোধীরা পিছিয়ে ছিলো? এখন বাধা প্রাপ্ত হয়ে দু;খ যন্ত্রণায় ভুগলে চলবে না, জীবনকে পরিশুদ্ধ করতে হবে দু:খ-যন্ত্রণাকে অতিক্রম করে। বাধা-বিপত্তিতে ভয় পায় তারা যারা দুর্বলচেতা, প্রতারক এবং ভণ্ডামিতে যাদের জীবন পরিপূর্ণ। তাই বীর বিক্রমে যারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে জয় চিনিয়ে আনতে চায় তাদের দীর্ঘসময় চুপ করে থাকা শোভা পায় না।
অতএব বিজয়ের জন্য জীবনকে-ঢেলে সাজিয়ে তাকওয়ার অলংকারে ভুষিত করতে হবে। জীবনের লক্ষ্য সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তোষ অর্জন। এভাবে ব্যক্তি, সমাজ ও পরিবার গঠন করে মু’মিনের জিন্দেগীতে শামিল হতে হবে। আল্লাহর ওয়াদা মু’মিনদের বিজয় দেবেন, এটা তাঁর কর্তব্য বলে কুরআনের ঘোষিত হয়েছে। তাই আমাদের সবার লক্ষ্য একটাই আল্লাহর সন্তোষ অর্জন। দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি। একটি দেশ বা রাষ্ট্র চালাতে আসলে অনেক কঠিন কাজ। সে-ই কাজটি করার জন্যই সমাজের অগ্রগণ্যরা রাজনীতিতে জড়ান। স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের। গণতান্ত্রিক সমাজে নানা দল, মত থাকবেই, সবার মতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা একান্তই উচিত। আমি যা বলি আমারটাই সত্য এবং মানতে বাধ্য-তা একান্ত স্বৈরাচারী পদ্ধতি। একজন অপর জনকে বিনাশের রাজনীতি করলে এ সুন্দর ধরনীটা ধ্বংস হয়ে যাবে। কেউ আর চিরকাল থাকবে না, নশ্বর ধরাধামে কিসের এত বড়াই? আল্লাহ বলছেন, “তোমাদের পূর্বে বহুকাল অতিবাহিত হয়েছে। পৃথিবীতে বিচরণ করে দেখ আল্লাহর আদেশ ও বিধান অমান্যকারীদের পরিণতি কী হয়েছে ? প্রকৃতপক্ষে এটা লোকদের সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং আল্লাহকে যারা ভয় করে তাদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ। মন-মরা হয়ো না, চিন্তা করো না, তোমরাই হবে বিজয়ী যদি তোমরা ঈমানদার হও। (সূরা আলে ইমরান)
“তোমাদের পূর্বে বহু কাল অতিবাহিত হয়েছে। পৃথিবীতে বিচরণ করে দেখ, আল্লাহর আদেশ ও বিধান অমান্যকারীদের পরিণতি কী হয়েছে।” হেদায়েতের সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থের এই আয়াতে সকল মহলের বোধগম্য ম্যাসেজ এতে আছে। আশাকরি জাতীয় জীবনের সকল সঙ্কট উত্তরণের জন্য এ আয়াতটি হোক একটি অনন্য আলোকবর্তিকা। প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশকে ভালবেসে নিরহংকারী ভাবে দেশের জন্য কাজ সবাইকে করতে হবে। একদল আরেক দলকে বিনাশের নীতি কখনও সুস্থ রাজনীতি হতে পারে না। হিংসা-বিদ্বেষ, গর্ব-অহংকার ছেড়ে দিন। মনে রাখবেন সংক্ষিপ্ত এই জীবন, প্রাণপ্রিয় পরিবার,সম্পদরাজি, দেশসেবার দায়িত্ব-আল্লাহ পক্ষ থেকে এক যেমন নেয়ামত তেমন মহাপরীক্ষা। আসুন আত্মপর্যালোচনা করি বিগত দিনগুলোতে যা করেছি তা পরকালের কঠিন দিবসের জন্য যথেষ্ট কি না?
====
বিষয়: বিবিধ
১৪০২ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কারন তার শাগরেদ রা বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি শয়তানি করছে!
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন