Good Luck Good Luck হজ্জ শেষে, অবশেষে-প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশে (শেষ পর্ব) Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৬:১১:২৫ সন্ধ্যা



শেষ পর্ব :

হাজীরা সৌদি আরবে পৌঁছার পর প্রথম কাজ, প্রয়োজনমত বিশ্রাম নিয়ে উমরা করা। উমরা করার পর হজ্জের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা এবং সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় ছাড়া আর তেমন কাজ নেই। কেউ কেউ একাধিক উমরাহও করে থাকেন, মৃত আব্বা-আম্মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের জন্য। অনেকে নিকট আত্মীয়-স্বজনদের বাসায়/কর্মস্থলে বেড়াতে যান অথবা ঘুরে বেড়ান। পরিচিতজনরা হাজীদের খেদমতে অনেক কষ্ট স্বীকার করে থাকেন। সুযোগ পেলে তাদের নিয়ে একাধিক উমরাহও সম্পন্ন করেন। যারা প্রথমে মদীনা গমন করেন, তারা মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতে আদায় এবং রওজা শরীফ জিয়ারাত করে হৃদয়ের কাঙিখত বাসনা পূরণ করেন। সময়-সুযোগ মত কাফেলাও মক্কা-মদিনার ঐতিহাসিক স্থানগুলো জিয়ারাত করিয়ে নিয়ে আসেন হাজীদের।



মক্কায় যেসব স্থান কাফেলা কর্তৃক জিয়ারাত করা হয় তা হল :

জবলে সাওর, জবলে নুর, জবলে রহমত, মিনা-মুযদালিফা-আরাফাতের বিস্তীর্ণ প্রান্তর, মাশায়েরুল হারাম মসজিদ (যা মুযদালিফায়), মসজিদে খায়েফ, জামারাত বিল্ডিং, জান্নাতুল মুয়াল্লা, মসজিদে জীন ইত্যাদি।

মদীনায় যেসব স্থানে জিয়ারাত করা হয় তা হল :

মসজিদে কুবা, মসজিদে সাবা বা খন্দকের প্রান্তর, মসজিদে কিবলাতাইন, উহুদের প্রান্তর ও শহীদগণের কবর ইতাদি। মসজিদে কুবা জিয়ারাতের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি নিজ ঘরে পবিত্রতা অর্জন করে মসজিদে কুবায় আসে, অত:পর এখানে সালাত আদায় করে, তার জন্যে এক ওমরার সওয়াব রয়েছে।” (ইবনে মাযা, নাসাঈ ও হাকেম) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সপ্তাহে একবার মসজিদে কুবায় আসতেন এবং দুই রাক’আত সালাত আদায় করতেন। ইসলামের প্রথম মসজিদ কুবা, প্রথম জামাতে জুমার সালাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুবা মসজিদে। যে মসজিদ তাকওয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে কুরআনে এরশাদ হয়েছে।



মদীনাতে ওয়াদী জীন নামক স্থান আছে। এতে অনেক রহস্য থাকতে পারে! জানি না, সেখানেও ব্যক্তিগত ভাবে যেতে হবে কারো সহযোগিতা নিয়ে। তবে স্থানটি বেশি দূর না, এই স্থান নিয়ে অনেক কল্পিত কাহিনী আছে-যার সত্য-মিথ্যা যাচাই কোন সুযোগ আছে কি না জানি না। আমি অনেকবার হজ্জে গেলেও শুধু মাত্র একবারও মাত্র সেখানে গিয়েছি। আর বদর প্রান্তরে এখনও যায়নি আমি! সেখানেও ব্যক্তিগতভাবে কারো সহযোগিতা নিয়ে হাজীরা যান। এছাড়া আরো বহু নবী-রাসূলদের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত স্থান আছে, এগুলো ব্যক্তিগত ভাবে সময় পেলে সফর করা যায়। জিয়ারাত সম্পর্কে বিস্তারিত বলার অবকাশ নেই। প্রয়োজনীয় বই/কিতাব সংগ্রহ করে হজ্জের আগে পাঠ করলে স্থান গুলো দেখার সার্থকতা আসবে এবং নয়ন জুড়াবে।

আগামীতে যারা হজ্জ করবেন তাদেরকে এ বছর নিবন্ধন নিয়ে যে ঝামেলা হয়েছে তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ফলে অনেক হাজী নিবন্ধন এবং মুয়াল্লিম ফি জমা দেওয়ার পরও হজ্জে যেতে পারেননি। এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী বা আমরা বলি সাধারণভাবে দালাল, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কতিপয় হাব নেতারা এবং কিছু এজেন্টদের অসতর্কতার কারণে তা হয়েছে এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কারণ হজ্জ নিয়ে যে বাণিজ্য হয় তা কোন প্রকারেই প্রশ্রয় দেয়া যায় না। অনেক এজেন্সী মধ্যস্বত্বভোগীদের বেশি ছাড় দিতে গিয়ে হাজীদের ঠকান। এ অবস্থা থেকে কোন এজেন্টমুক্ত নয়। তাই যারা আগামীতে হজ্জ করতে যাবেন তারা সরাসরি হজ্জ এজেন্সীতে গিয়ে দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে লেনদেন করবেন। ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কখনো নগদ টাকা বা চেক না দেয়ার অনুরোধ রইলো। এ ব্যাপারে অনেক দুর্ঘটনা অতীতে হয়েছে। তাই সময় থাকতে সতর্ক হওয়া জরুরী বৈকি।



যারা এখন হজ্জ করার জন্য নিয়ত করেছেন ও কাফেলা বা এজেন্সীকে পাসপোর্ট এবং টাকা জমা দিচ্ছেন, তারা অবশ্যই জমার রশিদ নেবেন। আর ভাল করে হজ্জের নিয়ম-কানুন জেনে নিবেন। হাজীদের মধ্যে এমনও দেখা যায় তালবিয়া জানেন না? কমপক্ষে ৮০%এর কম না। আফসোস! হজ্জের শ্লোগান, হজ্জের অন্যতম সৌন্দর্য তালবিয়াও জানিনা, আমরা কেমন হাজী? প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন না করে হজ্জে গেলে অন্যজনের উপর নির্ভর করতে হবে। এটা কাম্য নয়। অনেক হাজী আছে সেখানে গিয়ে ইবাদতের চেয়েও গল্প-গুজব, বেড়ানো, শপিং, মোবাইলে অতিরিক্ত কথাসহ অনেক বেহুদা কাজে লিপ্ত থাকেন। তারা চিন্তাও করেন না যে, আল্লাহ আমাকে একবার হজ্জ করার সুযোগ দিয়েছেন ভবিষ্যতে আর আসতে পারব কি না? তাই আল্লাহ প্রদত্ত এই মহান নেয়ামতকে রাসূল (সা)এর দেখানো পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে। নীচে এজন্য কয়েকটি সীরাত গ্রন্থের রেফারেন্স দেয়া গেল। এছাড়া শিরক এবং বিদআত কি? তাওহীদ-রেসালাত-আখেরাত সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে হজ্জ নাম মাত্র করবেন। আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে, কারণ হজ্জে গিয়ে অনেকেই শিরক-বিদআতে না জেনে লিপ্ত হয়। হজ্জ একমাত্র আল্লাহরই জন্য, একথা দৃঢ়ভাবে মনে রাখতে হবে। আল্ কুরআন বলছে, “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা পালন করো।” (সূরা বাকারা-১৯৬)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর প্রদত্ত বিধান ইসলাম অনুযায়ী পরিচালিত করুন এবং যারা এ পর্যন্ত হজ্জ করার সৌভাগ্য লাভ করেন নাই, তাদের তৌফিক দিন। যারা আদায় করেছেন তাদের সকলের হজ্জ কবুল করুন। আমিন।



বি.দ্র: হজ্জ বিষয়ক কিছু সহজ বইয়ের রেফারেন্স দেয়া গেল, যারা ভালভাবে হজ্জ সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য-

১। হজ্জ ওমরাহ ও জিয়ারাত-শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন বায (র)

২। হজ্জের হাকীকত-সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী (র)

৩। ফিকহুস সুন্নাহ: ১ম খণ্ড-সাইয়্যেদ সাবেক (র)

৪। ইসলামে হজ্জ ও উমরা-আবদুদ্দাইয়ান মোহাম্মদ ইউনুছ

৫। পবিত্র মক্কার সচিত্র ইতিহাস-আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (র)

৬। পবিত্র মদিনার সচিত্র ইতিহাস- আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (র)

৭। হজ্জ : কেন ও কিভাবে-ড. আবু বকর রফিক আহমদ

৮। মক্কা শরীফের ইতিকথা-এ.এন.এম.সিরাজুল ইসলাম

৯। আসান ফিকাহ-মাওলানা ইউসুফ ইসলাহী (র)

১০। আর রাহীকুল মাকতুল- আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (র)

১১। সীরাতে ইবনে হিশাম-বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার

১২। মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ (সা)-নঈম সিদ্দিকী


===

বিষয়: বিবিধ

২১৮৫ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

349270
১০ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৯
অপি বাইদান লিখেছেন : আপনার ভাগ্য ভাল। আল্লার নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা মসজিদুল হারামে পদতলে পিষ্ট হয়ে মরতে হয় নি। ধন্যবাদ ।
১১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:১০
289959
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : অপি বাইদান লিখেছেন : আপনার ভাগ্য ভাল।
-সেজন্যই তো বেশি বেশি করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে..
349288
১০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৫৭
রফিক ফয়েজী লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:১০
289960
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। ভাল থাকুন..
349296
১০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
হজ্জ করতে গিয়ে বানিজ্য করা সম্ভবত নাজায়েজ নয়। আমাদের দেশিয় হাজিরা অনেকে হজ্জে গিয়ে শিরক করাই শিখে আসেন সেটাই বড় দুঃখ।
১১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:২৬
289962
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন :হজ্জ করতে গিয়ে বানিজ্য করা সম্ভবত নাজায়েজ নয়-নাযায়েজ তো বলি নাই।
ধন্যবাদ..জনাবকে
349298
১০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৫৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
অনেক অনেক শুকরিয়া ভাই, আপনার দ্বিতীয় পর্বটিও পড়েছি, সময়ের অভাবে মন্তব্য করতে পারি নাই। সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর
১১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩৮
289972
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ প্রিয় আবু জান্নাত ভাই। কষ্ট করে পড়ে আমাকে ঋণী করার জন্য..দোয়া করবেন..দেশে কবে আসবেন?
১১ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪১
290009
আবু জান্নাত লিখেছেন : লজ্জা দিবেন না প্লিজ!
ইন শা আল্লাহ রামাদানে আসার খেয়াল।
১১ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:২২
290012
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ..Good Luck Good Luck
349318
১১ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:২৬
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম।

আশাকরি পরবর্তী ভবিষ্যত হাজ্বীদের জন্য সহায়ক হবে আপনার পোস্ট ও বইগুলোর নাম!

শুকরিয়া।
১১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৪০
289973
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম। অনেক ধন্যবাদ..
এগুলো আমার পড়া বই। অবশ্য এর বাইরেও অনেক ভাল ভাল বই আছে। তবে আমাদের দেশের বিদআত নির্ভর বই না পড়াই ভাল।
349338
১১ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:০২
কাহাফ লিখেছেন :
প্রতি মুসলিমের অন্তরের একান্ত চাওয়া 'বায়তুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববী সাঃ' যিয়ারত করা!
মহান আল্লাহ এই তাওফিক একাধিকবার আপনাকে দিয়েছেন!আলহামদুলিল্লাহ!
হজ্ব-উমরা নিয়ে মুয়াল্লিম নামধারী অনেক ব্যক্তি বর্গের শুধুই ব্যবসায়ী মনোভাব 'আল্লাহর মেহমান'দের অনেক কষ্ট দেয়!
তাদের কে আল্লাহ হেদায়েত দান করুন,আমিন!
১১ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:২২
290003
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, খুবই সুন্দর এবং গঠনমূলক মন্তব্য প্রদান করার জন্য..।
349914
১৬ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১৮
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : হাজী সাহেবানদের জন্য সুন্দর পরামর্শ যুক্ত শেষ পর্বটি খুবই ভালো লাগলো। আল্লাহ সকল মুসলমানকে সহীহ শুদ্ধ হজ্জ পালনের তাওফিক দান করুন।
১৬ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩১
290417
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আমিন। অনেক ধন্যবাদ লোকমান ভাই..
350026
১৭ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৪২
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ..ধন্যবাদ
১৭ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৫২
290493
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File