নিবন্ধ-১০ : রমজান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৯ জুন, ২০১৫, ০৪:৩৯:৩৬ বিকাল
মাহে রমজান আসলেই আমাদের দেশের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি পাগলা ঘোড়ার ন্যায় ছুটতে থাকে। যেন এ মাসে ইবাদত বন্দেগীর জন্য পূন্য হাসিলের কোন সীমারেখা নেই, তেমনি আকাশ ছোঁয়া মূল্য ছাড়িয়ে গেলেও কারোর কিছুই করার থাকবে না। আমরা কেমন মুসলমান? আল্লাহর বান্দাদের জন্য এভাবে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ইবাদত-উপাসনাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়? কোথায় আছে এমন জুলুম? কি জবাব আছে সৃষ্টিকর্তা মনিবের কাছে? এদেশের তো সিংহভাগ ব্যবসায়ী মুসলিম, মুসলিম হয়ে পবিত্র মাসে জালিমের মত অনৈতিক কাজ করা কতটুকু উচিত? এ মাস এলে অমুসলিমরা ভাই-বোনেরাও কষ্টে পতিত হন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর আগুন মূল্যের ফলে। আমাদেরকে সকলের কথা ভাবতে হবে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে-যাতে আল্লাহর রহমতের মাসে প্রত্যেক মানুষই রহমত ও করুণা ধারায় সিক্ত হতে পারেন।
মহানবী (সা)এর অমূল্য বাণী, রমজান মাসে মানবতার শত্রু শয়তানকে বন্দী করা হয়, সমস্ত অশুভ শক্তির অপচ্ছায়া থেকে রক্ষার ব্যবস্থা হয়ে থাকে। রমজান মাস রহমতের, বরকতে, মাগফিরাতের এবং নাজাতের। তিনি সৎ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেছেন পরকালে ব্যবসায়ীরা নবী, শহীদ এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকবেন। (অর্থাৎ সৎ ব্যবসায়ীরা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা বা ভিভিআইপির মর্যাদা পাবেন) আমরা দানবীয় আচরণ করে কিভাবে মাগফেরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পেতে পারি? অসম্ভব আমাদের জন্য কঠিন ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ তথা মুসলিম জাহানে এমন হীন কাজ হয় না বলেই আমাদের কাছে খবর আছে। এদেশের কেন হয় বার বার? কারণ তাদের মধ্যে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী আছেন তাদের সাথে সরকারের উচ্চমহলের যোগসাজস থাকে।
অথচ এ সঙ্কট কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়, রোজা শেষ-দ্রব্যমূল্যের পারদ নিম্নমুখী। একমাস টাকার অবৈধ পাহাড় গড়লাম, বিনিময়ে কি পেলাম-পরকালের ভয়াবহ যন্ত্রণা, নয় কি? ইফতার সামগ্রী সুলভ বা প্রকৃতমূল্যে লেনদেন হলে জীবন যাত্রা সহজ হয়। তিনি ইফতারের ফজীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে ইফতার করাবে; তার এ কাজ তার পাপ মাফ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে রক্ষার কারণ হবে। এ রোজাদারের রোজায় যত পূন্য হবে, তাতে তারও ঠিক ততখানি পূণ্য হবে। কিন্তু রোজাদারের পূণ্য একটুও কম হবে না।” জিনিসপত্রের দাম যদি বেশি হয় মানুষ কি অপর ভাইকে ইফতার করাতে পারবে? পূন্য অজর্নের মাসে বিপুল উৎসাহ নিয়ে কি ইবাদত করতে পারবে?
রমজান আমাদের কাছে প্রতি বছর নাজাতের বার্তা নিয়ে, আসে জীবনকে পরিশুদ্ধ করার জন্য, পাপমুক্ত করার জন্য এবং আল্লাহকে ভয় করে চলার জন্য। তাই বলা যায়, রমজান আত্মশুদ্ধি, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আত্ম গঠনের মাস হল রমজান। আল্ কুরআনে বলা হয়েছে, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো বা তোমরা যাতে খোদাভীতি অর্জন করতে পারো।” মহানবী (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও পূন্যের নিমিত্তে রমজানের রোজা রাখে এবং রাত্রে সালাতে দাড়াঁয় তার পূর্ববর্তী সমস্ত পাপ মাফ করে দেয়া হয়।” আল্লাহর ভয় থাকলে কী আমরা খাদ্যে ভেজাল দিয়ে (ফরমালিন, কার্বাইডের ন্যায় একপ্রকার মারণাস্ত্র) মানবহত্যার মিশনে নামতে পারি? ক্ষুধার কী কষ্ট গরীবদের চাইতে আর কে বেশি ভুক্ত ভোগী। চিন্তা করুন, রমজানে গরীব অসহায়দের কী অবস্থায় হয়! রমজানে এ কী শিক্ষা! যদি আমরা বুঝতে না পারি গরীবের ক্ষুৎ-পিপাসার কি যন্ত্রণা? এই রোজা আমাদের পরকালে কী প্রতিদান দেবে? হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ না করে (পাপাচার ত্যাগ), সে ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করা আল্লাহর কাছে কোন প্রয়োজন নাই।” (বূখারী ও আবু দাউদ) আমাদের রোজা তখনই কবুল হবে, যখন আমরা প্রকৃতভাবে রোজার হক আদায় করে, আল্লাহর নিকট তওবা করে-সমস্ত পাপাচার থেকে বিরত থাকব। বারো মাসের মধ্যে এগার মাসব্যাপী এর প্রতিফলন ঘটবে কথা, কাজ ও চরিত্রে এবং সার্বিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে।
রমজানের পবিত্রতা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ (অন্ততঃ ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা) এবং মাহাত্ম্য রক্ষার জন্য আরো যা প্রয়োজন তা হল এই। রমজানের পবিত্রতা বিরোধী সমস্ত উপায়-উপকরণের লাগাম টেনে ধরতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দিয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হতে হবে। খাদ্যে ভেজাল, মজুদদারী, মুনাফাখারী ও প্রতারণামূলক সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
অশ্লীলতা, অপসাংস্কৃতিক কাযকলাপ এবং দিনের বেলায় হোটেল-রেস্তোরা বন্ধ করতে হবে। দুঃস্থ-গরীব, অভাবী, অনাহারীদের প্রতি সাহায্যের হাত প্রসারিত করে, আতœকেন্দ্রিতকা এবং হীনমন্যতা পরিহার করে তাদেরকেও শামিল করতে হবে। পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত, দুস্কৃতিকারী এবং শোষণ- নিপীড়নমূলক কাজ বন্ধ করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইবাদতের মহোৎসবে শামিল করতে সুন্দর পরিবেশ ও রমজানের পূর্ণ অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সকল অশুভ শক্তির বিনাশে মহান রবের নিকট তাহাজ্জুদ সালাতে দাড়িঁয়ে তাঁরই শাহী দুয়ারে ধরনা দিতে হবে। সর্বোপরি রমজানের সুফল যাতে সকল নাগরিক ভোগ করতে পারে সেজন্য রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন তাদেরই সর্বাগ্রে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ রমজান হচ্ছে মহামনিব সৃষ্টিকর্তার দান, সূর্য, চন্দ্র, পানি-আলো-বাতাস যেমন সবাই সমান ভাবে গ্রহণ করতে পারে, তেমনি এই পৃথিবীর মালিকের দেয়া রহমত ও বরকতের বিধান রমজান মাস থেকে সবাই উপকৃত হোক। লাভ করুক শাশ্বত মুক্তির অনন্য পথের দিশা।
বিষয়: সাহিত্য
১৩০৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কারণ এ মাসে তাদের বিগত মাস গুলোতে যদি কোন ক্ষতি হয় তা পুষিয়ে এমন লাভ করে যা তাদের সারা বছর পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকতে সাহায্য করে ।
রোজার মাসেই সব ভোগ্যপন্যের দাম ২৫-৫০/৬০% বেড়ে যাওয়া এখন ক্রেতারা স্বাভাবিকই মনে করে ।
দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লে যে মানুষ নিজেকে কিছুটা খিঁচিয়ে আনবে খরচের ব্যাপারে সেটা কেউই করে না । বরং সবাই এ মাসে খাওয়ার আইটেমের জন্য দেদারসে খরচ করে । ব্যাপারটা অনেকটা প্র্যাস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় ।
আমাদের মনে এটা স্থায়ী দাগ কেটে বসে আছে যে , ইফতারীতে বেগুনী না হলে সেটা কে কি রোজা বলে !! ফলে ১০০ টাকা কেজি হলেও বেগুন কিনে এনে বেগুনী খাওয়া চাইই চাই ।
মূলত মানুষের এরকম মানসিকতার কারণেই বিক্রেতারা পণ্যের দাম ইচ্ছেমত লাগামহীন ভাবে বাড়িয়ে দেয়।
আল্লাহ সকল মুসলিম ব্যবসায়ী ভাইরা সৎ পথে চলার তোফিক দান করুন। আমিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন