নিবন্ধ-৮: সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যাকাতের গুরুত্ব
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২২ জুন, ২০১৫, ০২:০২:৩৫ দুপুর
যাকাত কি?
যাকাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আল্ কোরআনে ঈমানের পর সালাত ও যাকাত আদায়ের ব্যাপারে পর পর অনেক আয়াত আছে। ফলে যাকাতের গুরুত্ব সালাতের পরই। এরশাদ হয়েছে,
“বস্তুত: যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, সালাত কায়েম করেছে ও যাকাত প্রদান করেছে, তাদের জন্যে তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে বিরাট প্রতিদান।’ (সূরা বাকারা-২৭৭) “অতঃপর যদি তারা কুফর থেকে তওবা করে, সালাত আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও।” (সূরা তওবা-৫) “ধ্বংস ঐসব মুশরিকদের জন্য যারা যাকাত দেয় না এবং আখেরাতকেও যারা অস্বীকার করে।” (সূরা হামীম আস্ সিজদা : ৬-৭)
রাসূল (সা) বলেছেন, আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন আমি ওদের (আরব বাসীর) সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকি, যতক্ষণ না তারা আল্লাহতাআ’লার মাবুদ হওয়ার এবং মোহাম্মদ আল্লাহর রাসূল হওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছে, যতক্ষণ না সালাত কায়েম করেছে এবং যাকাত দিয়েছে। যখন তারা এসব করবে, তখন তারা আমার কাছ থেকে নিজেদেরকে এবং নিজেদের ধন-সম্পদকে নিরাপদ মনে করবে। তারপর তাদের হিসাব নিকাশ আল্লাহর হাতে।” (মুসলিম)
হযরত মুয়ায(রা)কে ইয়ামেনে পাঠানোর সময় রাসূল (সা) বলেছিলেন, “তুমি আহলে কিতাবের একটি জনগোষ্ঠির কাছে যাচ্ছ। সেখানে পৌঁছে তাদেরকে এই সাক্ষ্য দিতে বলবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই এবং হযরত মোহাম্মদ (সা) তাঁর প্রেরিত রাসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তখন তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ দিনে রাতে পাঁচ বার সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তারপর বলবে যে, আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ধনীদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করে গরীবদের মধ্যে বন্টনের আদেশ দিয়েছেন।..’’ (সকল প্রামাণ্য সূত্রে সমর্থিত) যাকাত অস্বীকারকার কারী বা অনাদায়ীদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর (রা) কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “খোদার কসম, আমি ঐসব লোকের বিরুদ্ধে লড়বো যারা সালাত এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে।” (মুসলিম)
যাকাতের গুরুত্ব :
১। যাকাত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য :
এরশাদ হয়েছে, “মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি করবে বলে তোমরা যে সুদ দাও, মূলত আল্লাহর কাছে তাতে সম্পদ মোটেই বৃদ্ধি পায় না কিন্তু তোমরা যে যাকাত আদায় কর-একমাত্র আল্লাহর সন্তোষ লাভ করার উদ্দেশ্যে তা অবশ্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।” (সূরা আর রূম-৩৯)
২। যাকাতের মাধ্যমে সম্পদ পরিশুদ্ধ বা পবিত্রতা অর্জন করে :
এরশাদ হয়েছে, “তাদের ধন-সম্পদ থেকে তুমি সদকা গ্রহণ করো, যাতে করে তুমি তাদেরকে পাক-সাফ করতে পার এবং তাদের আতœশুদ্ধি করতে পার।” (সূরা তওবা-১০৩)
৩। যাকাত দারিদ্রতা নিরসন করে :
আল্ কোরআনের ঘোষণা, “ধনীদের সম্পদে ভিখারী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।” (সূরা আয্ যারিয়াত-১৯) অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, “সে সকল মু’মিনেরা যখন বিপদে আপতিত হয় তখন হতাশা আর অস্থিরতা প্রকাশ করে না এবং সুখে-সম্পদে গর্ব ও কৃপণতা প্রকাশ করে না। যারা সর্বদা সালাত কায়েম করে এবং যাদের ধন-সম্পদের সুনির্দিষ্ট অংশ রয়েছে ভিখারী ও বঞ্চিতদের জন্য। (সূরা মাআরিজ : ২২-২৫) এখানে যাকাতকে দুঃস্থদের অধিকার এবং যাবতীয় সমস্যা-সমাধানের উৎকৃষ্ট পন্থা বলা হয়েছে। দারিদ্রতার অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্তি দিতে যাকাত ব্যবস্থাকে কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরী।
যাকাতের সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব :
সূরা তাওবায় যাকাত কাদের জন্য প্রযোজ্য তার একটি রূপরেখা প্রদান করেছেন আল্লাহতাআ’লা। এরশাদ হেেয়ছে, “যাকাতের খাত নির্ধারিত করে দেওয়া হলো, ফকির, মিসকিন, যাকাত বিভাগের কর্মচারী, আর যাদের চিত্ত আকর্ষণ করার জন্য প্রয়োজন তাদের জন্য, আর দাস মুক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদকারী (বিপদগ্রস্ত) মুসাফিরদের জন্য। এ হচ্ছে আল্লাহর সুনিশ্চিত বিধান। আল্লাহতাআ’লা সুক্ষè শ্রোতা এবং সর্বজ্ঞাতা।” (আয়াত-৬০) আরো এরশাদ হয়েছে, “যাকাতের অর্থ সে সকল দুঃস্থ মুহাজিরদের জন্য, যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী ও ধন-সম্পদ হতে বহি®কৃত করা হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রিযামন্দির উদ্দেশ্যেই সব কিছু ত্যাগ করেছে।’’ (সূরা হাশর-৮)
সূরা হজ্বের ৪১ নং আয়াতের ঘোষণা অনুযায়ী যাকাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রের। ব্যক্তির ইচ্ছার-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে না। আদায়ে রাষ্ট্রকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে আল্লাহর রাসূল (সা) ঘোষণা করেছেন, “আমি তোমাদের অভিভাবক, যাদের কোন অভিভাবক নেই। হযরত উমর (রা) বলেছিলেন, “যদি ফোরাতকূলে কোন প্রাণী (কুকুর, ছাগল) যদি না খেয়ে মারা যায়, তবে আল্লাহর আদালতে আমাকে জবাবদিহী করতে হবে।” এই হল রাষ্ট্রনায়কোচিত ডিক্লারেশন। একটি সমাজের অভাবীদের মধ্যে যাকাতকে সুষম বন্টন করে দারিদ্রতা নিরসনে যথাযথ গুরুত্ব দিলেই দারিদ্রকে যাদুঘরে পাঠানো সম্ভব হবে। প্রচলিত নিয়মে যাকাত দিলে আজীবন চেষ্টা করলেও দারিদ্র দূর হবে না।
====
বিষয়: সাহিত্য
১২৭০ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে সময়োপযুগি পোষ্ট এর জন্য।
আসলে আমরা এ জীবনে সাপকে যেভাবে ভয় করি। পরকালে সাপের ভয়কে কমই কেয়ার করি। নইলে আমাদের যাকাত বিষয়ে আরো অনেক সচতনতা লক্ষ্য করা যেত।যাকাতের লুঙ্গি, যাকাতের শাড়ী বলে অনেক শব্দ আমাদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে উঠে যেত।
াঅনেক ধন্যবাদ সুন্দর প্রবন্ধটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন