বিবিধ - ৭ : আমার এক দিনের ঢাকা সফর : যেন ক্রমাগত বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে!
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১৫ জুন, ২০১৫, ০৬:৫৭:০৪ সন্ধ্যা
অফিসিয়াল কাজে গত ১৩ জুন রাতে ঢাকা যেতে হয়েছিল। কাজ শেষে আবার যথারীতি বন্দর নগরীতে প্রত্যাবর্তন করেছি। এই মুহুর্তে যেতে মন চায় নি। একদিকে নিজের শরীরও তেমন ভাল না, অন্যদিকে ছেলেদের মায়ের অবস্থাও শোচনীয়। যেহেতু কর্তব্য বলে কথা, দায়িত্ব বলে বেশি মাথা-ব্যথা! নানা ঝক্কি ঝামেলা, সরকারী কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পরিবেশের প্রতিকুলতা, যানজট, উষ্ণ আবহাওয়া, টাউট বাটপার-ছিনতাইকারীদের দৌরাতœ্য, রাস্তার কাহিল অবস্থা, অফিসে ঘন ঘন বিদ্যুতের মিস্ কলিং আরও কত কি! দেশ চলছে ডিফিকাল্ট হালতে!
এসি বাস হওয়ায় গরম থেকে বেঁেচছি। একসময় এসি বাসগুলোতে যাত্রী সেবার মান অনেক ভাল ছিল। আপ্যায়ন করা হতো ফ্রি। এখন কোন কোন বাস একটা করে পানীয় বোতল দেয়। তারপরও ভাগ্য-বরাত ভাল বলা যায়! ২০/২২ হাজার টাকার বেসরকারী প্লেনে (ফ্লাই দুবাই, এয়ার আরাবিয়া) চড়ে যেখানে যাত্রীরা এক বোতল পানি পায় না ফ্্ির-খারাপ কী! ৯৬তে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাজেটে এসি বাসে টিকেটের উপর ব্যাট বসানোর পর মালিক পক্ষ খরচ বেশি হওয়ার কারণে আপ্যায়নের ব্যবস্থাটা তুলে নিয়েছিল। আমার মত হাজার হাজার যাত্রী হতাশ হয়েছিল সেদিন। তখন এসি বাসের ভাড়া ছিল ২৩০ টাকা। নাস্তার মেন্যু ছিল : সোহাগ পরিবহন দিত ১টি ভাল মানের কেক, ১টি স্যান্ডউইচ, ছোট ১টি বিস্কিটের প্যাকেট, ১ বোতল পানি এবং ‘‘গ্রীন লাইন’’ দিত একটি ভাল হোটেলে ১ বেলা আহার।গত এবারের সফর ছিল সৌদি এসি মাসিডিজ বেঞ্জ, আমার শালা সম্বন্বীয় জুয়েল সাহেব থাকাতে টিকেটিং সুবিধাও ভোগ করি প্রতিবার। সেজন্য তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আশাকরি এ পোস্টটি তার চোখে পড়বে এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনটুকু গ্রহণ করবে।
সারাদিন কর্মব্যস্ততার মাঝে চলে গেছে। যে কাজে গিয়েছি তা সম্পন্ন করতে পারিনি বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। ঢাকা অফিসের ম্যানেজার করিম সাহেবের নিকট দায়িত্ব অর্পণ করে চলে এসেছি। সন্ধ্যায় বনশ্রীতে মেজ ভাইয়ের বাসায় যাই। তাদের সদ্যোজাত সন্তান মুহাম্মদ ইয়াহিয়া ইবনে দিদারকে দেখে আসি। ভাতিজিরা দারুণ খুশী তাদের আঙ্কেলকে পেয়ে। কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করে নাস্তা খেয়ে সবার সাথে ফটোসেশন করি। ইতিমধ্যে ফেরার টিকেটটা কনফার্ম রাখার জন্য জুয়েলকে আবার রিং দিই। জার্নিতে মাথা-ব্যথা করছিল সাংঘাতিক ভাবে। ফলে গ্রীণ রোডে অবস্থিত সেজ ভাই মামুন সাহেবের বাসা যেতে পারিনি। করিম সাহেব মাথাব্যথার অষুধ কিছু দেয় এবং রাতে আহারের ব্যবস্থা করে। এরপর আরামবাগে গাড়ীর কাউন্টারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই।
রাত সাড়ে ১১টার গাড়ী। চট্টগ্রামে পৌঁছার কথা ছিল সকাল সাড়ে ৫টা বা ৬টা। কিন্তু এমন যানজটে পড়ি যে সকাল ১০টায় এসে গন্তব্যে পোঁছি। দিনের কথা বলছি। কী দেখার কী দেখছি! চারদিকে বিল বোর্ড বার বিলবোর্ড। নেতা-পাতি নেতা সবার। একজন ওয়ার্ড বা ইউনিট নেতার কী এমন ক্ষমতার জোর যে, যত্রতত্র বিলবোর্ড লাগানোর। এত টাকা পেয়েছে কোত্থেকে? কিছুদিন আগে একতরফা ভোট ডাকাতির সিটি নির্বাচনও হয়ে গেল। কী লাভ হলো এত নাগরিকের? রাজধানীটাকে এক নিমিষেই দু’টুকরো করা হল, তারপরও স্বস্তিতে নেই জনজীবন। কী হচ্ছে? কী হবে? কেমন করে আমরা চলব, দিনে-দুপুরে মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে-এই আর কি! চারদিকে শুধু নেই আর নেই! ঢাকা শহরের ফকিরাপুল বা ধানমণ্ডি থেকে যদি এয়ারপোর্ট যেতে আসতে আপনার সারাদিন চলে যাবে, এমন সাংঘাতিক যানজট! ওরা শুধু বলছেন উন্নয়ন আর উন্নয়ন, যাদের নিত্য জল ভাসছে দু’নয়নে-কী করবে এতে উন্নয়নে। আরে বাবা-কয়েকটি ওভা ব্রিজ আর কয়েকটা বড় বড় দালন করলে উন্নয়ন বুঝায় না। নীতি-নৈতিকতার যে অধ:পতন হচ্ছে তার লক্ষ্য কে করবে? শাহবাগীদের অপতৎপরতা সর্বত্রই, রমরমা দেহ-বাণিজ্য, ইয়াবার থাবা, ফেন্সিডিল, মাদকের গ্রাস, নীল ছবির দৌরাতœ্য, ক্ষুধা, দারিদ্র ও বেকারত্ব এবং সন্ত্রাস উপদ্রুত ঢাকা মহানগরী এখন। এমপির ছেলে রনির জোড়া খুন টক অব দা সিটি!
ফেরার পথে বিরতি যখন হয় প্রতিবারের মতই কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই এবং অন্যান্য মিষ্টান্ন কিনি। খাদি ঘর থেকে পরিবারের সবার জন্য ১টা করে জামাও কিনি। যাক আর লম্বা ফিরিস্তি দিতে চাই না। যেই সরকারই আসুক না কেন কন্ট্রোলটা হাতে না থাকলে অধ:পতন এবং ধ্বংস ডেকে আনবেই চারিদেকে। বিভিন্ন দেশি-বিদেশী সংস্থার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ঢাকা শহর হচ্ছে পৃধিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল, অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ এবং বসবাসের অযোগ্য নগরী। ধীরে ধীরে বসবাসের সূচক নেগেটিভের দিকেই যাচ্ছে। আমরা কি পারি না ভেদাভেদ ভুলে সুন্দর এই জন্মভুমিকে বসবাসের যোগ্য করে তুলতে? আসুন আমরা বিভেদ ভুলি এবং সাম্রাজ্যবাদ যাতে বাংলাদেশকে নিয়ে খেলতে না পারে সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হই।
=====
বিষয়: বিবিধ
১৯০৮ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কুমিল্লাহ দধি ও রসমালাইর ছবি কই। খেতে না পারলেও অনন্ত ছোখ জুড়াতাম। ধন্যবাদ
চট্টগ্রামে যারা থাকে ঢাকায় আসলে তাদের যে জিনিসটা খুব পেইন দেয় তাহলো যানজট ।
এটা এমন যে আপনি যেখানে ৩০ মিনিটে চলে যাবার কথা যানজটের কথা চিন্তা করে আপনাকে ৩ ঘন্টা আগে বের হতে হবে ।
এটা সমাধানের জন্য সরকারকে কোনভাবেই আন্তরিক দেখিনি । এখন এমন যানজট লাগছে যে মতিঝিল থেকে সন্ধ্যা ৬ টায় বের হয়ে মিরপুর যেতে রাত সাড়ে নয়টা লেগে যায় ।
আসছে রমজানে এটার প্রকট আরও বেশী হবে ।
যদি আপনি রাস্তা একেবারে ফ্রি পান তাহলে ঢাকার এক মাথা থেকে আরেক মাথা যেতে ৩৫-৪০ মিনিটের বেশী লাগার কথা নয় ।
কিন্তু বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা , প্রয়োজনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন রাস্তায় নামানো , মানুষদের আইন ভাঙ্গার মানসিকতা এসব পথকে দুর্বিষহ করে তোলে ।
দৈনিক অফিসে আসতে যেতে চাকুরিজীবীদের ৪ ঘন্টা মিনিমাম অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয় । এগুলোর কোন মূল্য সরকারের কাছে নেই । অথচ তাদের চলাচলের জন্য রাস্তা ফাঁকা করে দেওয়া হয় ।
যা হোক , চট্টগ্রামে গিয়েও বুঝেছি যে আর বেশী সময় নেই চট্টগ্রামেও ঢাকার মত যানজট দেখা দেবে ।
রাসুল (সাঃ) যখন মদিনার লোক সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল তখন আর কাউকে মদিনাতে বসতি স্থাপন এর অনুমতি দেননি। আর আমরা সবকিছুকে যেভাবে ঢাকা কেন্দ্রিক করে ফেলছি তাতে ঢাকা ও নস্ট হচ্ছে দেশটাও নস্ট হচ্ছে
জাযকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন