বিবিধ-৪ : পরিবেশ সংরক্ষণ-প্রেক্ষিত ইসলাম এবং আমাদের করণীয়
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ০৪ জুন, ২০১৫, ১১:০৩:৩৩ সকাল
(৫ই জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে রচিত হয়েছে)
সমগ্র বিশ্বে ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। প্রত্যেক দেশের সরকার স্ব স্ব দেশের বাস্তব প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে আবহাওয়া, জলবায়ু, মাটির প্রকৃতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, ভৌগলিক পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় এনে পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন ও বৃক্ষরোপন অভিযান পরিচালনা করে। এ ব্যাপারে বিশ্ব সংস্থাগুলো, স্ব স্ব দেশের পরিবেশ সংস্থাগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে ইসলামের কি নির্দেশনা আছে এবং একজন সুনাগরিক হিসেবে আমাদের কি করণীয় তা আমরা আলোকপাত করার চেষ্টা করব। পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলামের নিদের্শনাগুলো বাস্তবায়ন করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পেয়ে একটি সুস্থ পরিবেশ বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠবে। আমাদেরকে বনাঞ্চল উজাড়, বৃক্ষ নিধন না করে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে পরিকল্পিত ভাবে প্রচুর পরিমাণ বৃক্ষরোপন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় না কাটা, বন্যপ্রাণী নির্বিচারে শিকার বন্ধ, যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া, তেজস্ক্রিয় দূষণ, যত্রতত্র ইট ভাটা তৈরি, মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করা ইত্যাদির ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ১৯৭১-২০৭১ : রক্তে জন্ম জলে মৃত্যু?
এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ ঢেউয়ের নীচে তলিয়ে যাবে বা অদৃশ্য হয়ে যাবে বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য হলেও বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে নিষ্ঠুর এ পূর্বাভাস দিয়েছেন প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক “দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট” এর জোহান হ্যারি। তাঁর প্রকাশিত (২০.৬.২০০৮) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরের পানির স্তর বৃদ্ধি এবং হিমালয় পর্বতমালা গলতে থাকায় পর্বত পরিবেষ্টিত সমতল বাংলাদেশ এ নির্মম পরিণতির শিকার হতে যাচ্ছে। এ পরিণতির জন্য মানুষকে দায়ী করে প্রতিবেদনের ইতিটানা হয় এভাবে-“আমরা যা করছি, তা যদি করতে থাকি, বাংলাদেশের মৃত্যু অত্যাসন্ন। যারা পরিবেশকে ধ্বংস করছে দেশটির সাথে তাদের সলিল সমাধি হবে অথবা অন্য কোন উপকুলে ভেসে গিয়ে উদ্বাস্তু হবে তারা। নিহত কিংবা উদ্বাস্তুর সংখ্যাও দাঁড়াবে কোটি কোটি। বাংলাদেশের কবরের উপর খোদাই করা থাকবে-বাংলাদেশ ১৯৭১-২০৭১ ঃ রক্তে জন্ম জলে মৃত্যু।” যুক্তরাষ্ট্রেরও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানায়, “বাংলাদেশ কয়েক দশকের মধ্যে সাগরের বুকে বিলীন হয়ে যেতে পারে।” পরিবেশ বিজ্ঞানীরা শুধু বাংলাদেশ নয়, এ তালিকায় মালদ্বীপ ও হল্যান্ডের নামও রেখেছেন। এই তিনটি দেশ সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে নীচে অবস্থিত। এর তলিয়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা গ্রীন হাউজ ইফেক্টের প্রভাবকে উল্লেখ করেন। গ্রীন হাউজ ইফেক্টের কারণে মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে বরফ গলতে শুরু করেছে। এ কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সমুদ্র উপকুলীয় দেশগুলো প্লাবিত হবার আশংকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞগণ বাংলাদেশের পরিবেশ ব্যবস্থাপনার সার্বিক চিত্রে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পরিবেশ আইন ও নীতি থাকলেও এর যথাযথ ব্যবহার ও প্রয়োগ নেই। তবে আশার কথা এই যে, ইদানীং বেশ কিছু সংস্থা পরিবেশ সংরক্ষণের সচেতনতা তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) নামের সংস্থাগুলোর কার্যক্রম মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। কম-বেশী সবাই জানেন, বিশ্বে পরিবেশ দূষণের জন্য উন্নত বিশ্বই বেশী দায়ী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাদের ভুমিকাও আরো বেশী হওয়া উচিত। বাংলাদেশের ব্যাপারে জনগণকেই সচেতন হতে হবে এবং সরকারকে এজন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
তৃতীয় বিশ্ব নয়, উন্নত বিশ্বই পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী :
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সচেতনতা সৃষ্টির আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন একদল পরিবেশবাদী। আন্তর্জাতিকভাবে নিউজিল্যান্ডের “গ্রীনপিস” অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখছে। দেশে দেশে গবেষণা, সংলাপ, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা হবে? বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ দিন দিন অবনতিশীল অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এর জন্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো শিল্পোন্নত দেশগুলোকে দায়ী করছে। এক রিপোর্টে জানা গেছে, “সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর জন্য তৃতীয় বিশ্ব নয়, বরং উন্নত বিশ্বই দায়ী।’’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শুধু সচেতনতা বাড়ালেই চলবেনা। যথাযথ আইন-প্রণয়ন ও প্রয়োগের উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা যখন আরো ৩০০ কোটির মত বেড়ে যাবে তখন পানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। জীবন ধারণের জন্য পানির কি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সকলেই অবগত। পানি সংকট মানেই পরিবেশের উপর মারাতœক হুমকি। সর্বকালের অন্যতম সেরা পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেন, “আমার আশংকা হচ্ছে, গ্রীন হাউজ ইফেক্ট হয়ত রোধ করা যাবে না, সেক্ষেত্রে মানবজাতির অস্তিত্ব এক হাজার বছরের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পৃথিবীর আবহাওয়া হয়ে যাবে শুক্র গ্রহের মত। শুক্র গ্রহে সালফিউরিক এসিড বৃষ্টি ঝরে।” গ্রীন হাউজ ইফেক্টের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত তৈরীর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “এটা করা না গেলে আমরা আর এক হাজার বছরও টিকব না।”
ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবেশ সচেতনতা :
ইসলামকে বলা হয় ফিতরাত বা স্বভাবগত বা প্রকৃতির ধর্ম। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ মূলতঃ সামাজিক জীব। মানুষকে ঘিরেই পরিবেশ-প্রকৃতি ও সমাজের সৃষ্টি। আর পরিবার, পরিবেশ ও সমাজ নিয়ে ইসলামের পরিবেশগত চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। লন্ডনের ইসলামিক কালচারাল সেন্টার থেকে প্রকাশিত, “দি ইসলামিক কোয়ার্টারলি’’ পত্রিকার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর সাইয়্যেদ নাসের হোসাইন, “ইসলাম এন্ড এনভায়রনমেন্ট ক্রাইসিস’’ নামক এক প্রবন্ধে বলেন, “পরিবেশ সংকট” আধুনিক মানুষের প্রকৃতিকে আধ্যাতিœক নিরপেক্ষ হিসাবে বিবেচনা করারই ফল।”কোরআনে আল্লাহপাক নিজেকে আল্ মুহিত বলে ঘোষণা করেছেন। আল্ মুহিত হিসাবে আল্লাহকে স্মরণ করার অর্থ হচ্ছে প্রকৃতির পবিত্রতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া। প্রকৃতির বাস্তবতাকে আল্লাহর নিদর্শন হিসাবে দেখা এবং সচেতন থাকা। তাঁর মতে, “প্রাকৃতিক পরিবেশ-সংক্রান্ত ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ঐশী পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের এক অনস্বীকার্য স্থায়ী সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত।” পরিবেশের সাধারণ সংজ্ঞা হচ্ছেঃ আমাদের চারপার্শ্বস্থ সবকিছুকেই পরিবেশ বলে। আল্ কোরআনের ভাষায় পরিবেশের সংজ্ঞা হচ্ছে ঃ তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও না কেন, সে দিকই আল্লাহর দিক। (সূরা বাকারা-১১৫) পরিবেশে জীবের বাসোপযোগী গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পানি ও মাটি। মূলতঃ মাটি থেকেই অনেক কিছু উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদিত শস্য পানি দ্বারা জীবিত থাকে। আল্ কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “তাদের জন্য নিদর্শন একটি মৃতভুমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা ভক্ষণ করে। আমি তাতে উৎপন্ন করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝর্নাধারা, যাতে তারা ফল খায়।” (সূরা ইয়াসীন-৩৩) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভুমিকে বিছানা ও আকাশকে ছাদরূপে স্থাপন করেছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপন্ন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করোনা। বস্তুতঃ তোমরা এসব জান।” (সূরা বাকারা-২২)
পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে রয়েছে ইসলামের তাকিদ। আল্ কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “তোমরা নিজেদের ধ্বংস নিজেরা ডেকে এনো না।” (সূরা বাকারা-১৯৫) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “মানুষের কৃতকর্মের দরুণ সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।” (সূরা রূম-৪১) অন্য আয়াতে আছে, “তোমরা কি দেখ না কিভাবে পৃথিবীর সবকিছুকে আল্লাহ তোমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন।” (সূরা হজ্ব-৬৫) পরিবেশ দুষণ থেকে বাঁচতে হলে পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। আল্লাহপাক পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। এরশাদ হচ্ছেঃ “আমি বিস্তৃত করেছি ভুমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম, বিবিধ উদ্ভিদরাজি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ।” (সূরা কাফ ঃ ৭-৮) সমগ্র সৃষ্টি জগতের কল্যাণের জন্য আল্লাহপাক পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন। ভুমিকম্প, ভুমিধ্বস কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যাতে মানুষকে নিয়ে এ পৃথিবীর নড়া-চড়া করতে না পারে অথবা। সেজন্য আল্লাহপাক্ পাহাড়সমূহকে পেরেকের মত গেড়ে দিয়েছেন বলে এরশাদ করেছেন। “এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয়।” (সূরা আন্ নহল-১৫) অন্যত্র বলা হয়েছে, “তিনিই স্থাপন করেছেন ভুপৃষ্ঠে অটল পর্বতমালা এবং তাতে রেখেছেন প্রভুত কল্যাণ।” (সূরা হা-মীম-আস্ সাজদা-১০) অন্য আয়াতে আছে, “আর পাহাড় গুলোকে পেরেকের মত গেড়ে দিয়েছি।” (সূরা নাবা-৭) আরো এরশাদ হয়েছে, “আর পাহাড়কে শক্ত করে দাঁড় করানো হয়েছে।” (সূরা গাশিয়া-১৯) অথচ আমরা নিজেরাই পাহাড় কেটে, গাছ কেটে, পুকুর ভরাট করে, মারণাস্ত্রের অশুভ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংস করছি এবং পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি।
বৃৃক্ষ বা গাছ মানুষ ও পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু। সবুজ গাছপালার উপরই নির্ভর করে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর টিকে থাকা। জীবের জন্য গাছপালা সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুত করে। শুধু খাদ্য তৈরী নয়, সালোক-সংশ্লেষণের সময় তারা কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন বের করে দেয়। ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা হয়। হাদীসে রাসূল (সা) থেকে জানা যায়, একজন লোক যখন অকারণে একটি গাছের ডাল ভাঙ্গে তখন নবী করিম (সা) সে লোকটির চুল মৃদুভাবে টান দিয়ে বললেন, “তুমি যেমন শরীরে আঘাত বা কেটে গেলে ব্যথা পাও, গাছের পাতা বা ডাল ছিড়লে গাছও তেমন ব্যথা পায়।” পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য গাছ লাগাবার শিক্ষা আমরা মহানবী (সা) থেকে পাই। তিনি বলেছেন, “যদি তুমি মনে করো আগামীকাল কিয়ামত হবে, তবু আজ একটি গাছ লাগাও।” রাসূল (সা) বৃক্ষরোপনকে উৎসাহিত করে বলেছেন, “বৃক্ষরোপন সদকায়ে জারিয়া হিসাবে পরিগণিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম) রাসূল আরো (সা) বলেছেন, “কোন মুসলমান যদি একটি বৃক্ষ বা গাছ রোপন করে অথবা ক্ষেত-খামার করে, অতঃপর তা হতে মানুষ, পাখি বা কোন প্রাণী ভক্ষণ করে, তা তার জন্য দান বা সদকার সওয়াব হবে।”
সুন্দর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সামাজিক পরিবেশ গঠনে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য। রাসূল(সা) বলেছেন, “ঈমানের ৭৩টি শাখার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক বস্তু দুরীভূত করা। তিনি আরো বলেছেন, “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ।” হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা) পানিতে প্রস্্রাব করতে নিষেধ করেছেন। রাসূল (সা) আরো বলেছেন, “তোমরা অভিশাপ পাওয়ার তিনটি কাজ অর্থাৎ পানির ঘাটে, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়া তলে মলত্যাগ থেকে বিরত থাক।” হাদীসে রাসূল (সা) থেকে আরো জানা যায়, মৃত শরীরের কোন অংশ তিনি যত্রতত্র ফেলতেন না, কারণ তা একসময় শুকিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যেতে পারে। যা পুঁতে না ফেললে তা কোন প্রাণী বা পাখির দ্বারা ছড়িয়ে পরিবেশ দুষিত করতে পারে। এজন্য রাসূল (সা) রক্ত বা গোশত মাটিতে পুঁতে ফেলতেন বা পুঁতে ফেলার নির্দেশ দিতেন। বায়ু দুষিত হয়ে একজনের রোগ অন্যজনের কাছে স্থানান্তর হয়। ধূমপানের মাধ্যমেও বায়ু তথা পরিবেশ দুষিত হয়। পোড়া তামাকের গন্ধ পরিবেশের জন্য কতখানি ক্ষতিকর তা নিয়ে বিজ্ঞানীরাও শঙ্কিত। সিগারেটের নিকোটিন এত মারাতœক ক্ষতিকর যে, দু’টো সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন আছে, তা দ্বারা কোন সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করলে মৃত্যু নির্ঘাত। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটা জ্বলন্ত সিগারেটে কম করে হলেও চার হাজার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ইবনে সিনা বলেছেন, “পৃথিবীর এত ধূলা-বালি, ধোঁয়া ও গ্যাস যদি মানুষের ফুসফুসে না ঢুকত তাহলে মানুষ হাজার হাজার ধরে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারত।”
আমাদের করণীয় :
এই অনন্ত মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক ছোট্ট গ্রহে জীবের বেঁচে থাকার জন্য সকল উপাদান দিয়ে আল্লাহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আমাদের কারণে পৃথিবীর পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ফলে জীবের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ হারাচ্ছে। গ্রীন হাউজ ইফেক্টের ফলে বিশ্বের কিছু কিছু নিম্নভুমি বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ইসলামের অনন্য পরিবেশ নীতির আলোকে বিশ্বের পরিবেশকে আবার সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি। প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণে সুষ্ঠু নিয়ম মেনে চলা, মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়া, বন-বনানী থেকে বৃক্ষ উজাড় না করা, গগনচুম্বী অট্টালিকা তৈরীর জন্য পাহাড় না কাটা, পশু-পাখি নির্বিচারে শিকার না করা কল-কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনে যথাযথ নিয়ম মেনে চলা, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়ার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জনসাধারণকে আরো অধিক সচেতন হওয়া অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় আইন রচনা করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়াটাও অত্যন্ত জরুরী। পরিবেশ দুষণের জন্য কে বা কারা দায়ী? উন্নত না অনুন্নত বিশ্ব পারস্পরিক দোষারোপ না করে নিঃর্স্বাথ ভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করতে হবে যে, আমরা কি ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাচ্ছি?
=====
বিষয়: বিবিধ
৩৬৩৪ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
http://chhatrasangbadbd.com/পরিবেশ-সংরক্ষণ-প্রেক্ষিত/
রহিম ভাই পুরো পড়বেন কি?
লিং্ক দিলাম..http://chhatrasangbadbd.com/পরিবেশ-সংরক্ষণ-প্রেক্ষিত/
আসলে আপনি সত্যিই একজন ভালো লেখক, আপনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আপনাকে উত্তম পুরস্কার দেন। লেখা খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে
http://chhatrasangbadbd.com/পরিবেশ-সংরক্ষণ-প্রেক্ষিত/
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
আপনারা শুধু শুধু ইসলামের খিস্তি/খেউড়ি করেন কেন? আল কোরানের কোথাও বলা আছে কি?
১। "তোমরা বৃক্ষ রোপন কর"
২। "নদীর পানি দুষিত করবে না"
৩। "যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করবে না, কফ/থুতু ফেলবে না"
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : পোষ্ট পড়েই মন্তব্য করেছি। কোরাণের কোথায় পরিবেষ পরিচ্ছন রাখার কথা বলা হয়েছে? সুরা/আয়াতের নাম বলেন তো, শুনি?? আপনার আল্লা বরং নিজের হামবড়া বাহাদুরি প্রমান করার জন্য অতি ক্ষুদ্র মানুষকে হামতাম জাহির করে ভয়ভিতি দেখিয়েছেন। আল্লার কথা হচ্ছে ভিলেনের মত- আমার তোষামদ কর, নইলে শাস্তি। এখানে পরিবেষ পাইলেন কই।আপনি হাদিসের উদাহরন টেনে ইসলামকে না জানি কি ভাবছেন। আরে ভাই, আমাদের গ্রামের ছাত্তার ব্যাপারি তার জীবনে ৫০০০ বৃক্ষ রোপন করেছেন। তাহলে ছাত্তার ব্যাপারিরও আল্লার নবী। নাকি?? @ বার্তা কেন্দ্র।
আধুনিকতার নামে যত বেশি বৃদ্ধি হচ্ছে অপ্রয়োজনিয় বিলাসিতা পরিবেশ ও ততই ধ্বংস বাড়ছে।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : একটা বিজ্ঞান সম্মত জীবন!!!!!তা বটেই- কোরাণের পরতে/পরতে জ্বিন, ভুত, কান্দের উপর ফেরেস্তা, ৬০০ ডানা জিবরাইল, গাধার পিঠে মিরাজ গমন, আল্লার আরসের নীচে সূর্য, নিম্ন আকাশে তারকা, উল্কা মিজাইল দিয়ে উর্দ্ধ আকাশে শয়তানের সাথে আল্লার যুদ্ধ... আরো কত কি বৈজ্ঞানিক কাজ কারবার।
মন্তব্য করতে লগইন করুন