প্রবন্ধ-২/৩ : সিরাতুল মোস্তাকিম : জান্নাতের রোডম্যাপ (ধারাবাহিক পর্ব-৩)
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১৮ মে, ২০১৫, ০১:৪৪:০৮ দুপুর
তৃতীয় পর্ব :
বক্র পথ নয়, সরল পথ অবলম্বনের জন্য আল্লাহপাকের নির্দেশ :
সূরা আল্ আনআ’মের ১৫৩ নং আয়াতে আল্লাহপাক নির্দেশ দিচ্ছেন এই বলে, “এছাড়াও তাঁর নির্দেশ হচ্ছে এই, এটিই আমার সোজা পথ। তোমরা এ পথেই চলো এবং অন্য পথে চলো না। কারণ তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে সরিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে। এ হেদায়াত তোমাদের রব তোমাদেরকে দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা বক্র পথ অবলম্বন করা থেকে বাঁচতে পারবে।”মানুষ তার রবের দেখানো পথে চলবে, এটাই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক অংগীকার হিসাবে অনিবার্য দাবী। কারণ তার রবের নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং আতœম্ভরিতা, স্বেচ্ছাচার ও অন্যের দাসত্বের পথে পা বাড়ানো মানুষের পক্ষ থেকে সে অংগীকারের প্রাথমিক বিরুদ্ধচরণ হিসাবে পরিগণিত হবে। এরপর প্রতি পদক্ষেপে তার ধারাগুলো লংঘিত হতে থাকবে। আল্লাহর নির্দেশ না মানার ফলে মানুষকে দু’টি বিরাট ক্ষতির সন্মুখীন হতে হয়। এক, অন্যপথ অবলম্বন করার কারণে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র পথ থেকে মানুষ অনিবার্যভাবে সরে যায়। দুই, এ সঠিক পথ থেকে সরে যাওয়ার সাথে সাথেই অসংখ্য সরু পথ সামনে এসে যায়। এ পথগুলোয় চলতে গিয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে সমগ্র মানব সমাজ বিক্ষিপ্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মানব সমাজের এ বিপর্যয় ও বিক্ষিপ্ততা তার উন্নতি ও পূর্ণতা প্রাপ্তির সুখ-স্বপ্নকে চিরতরে ধুলিস্মাত করে দেয়। (তাফহীমূল কোরআন, ৩য় খন্ড, পৃষ্টা, ১৮৪-১৮৫)
সূরা আয্ যুখরুফে এরশাদ হয়েছে, “অতএব সে ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করো না এবং আমার কথা মেনে নাও। এটাই সরল “সোজা পথ”। শয়তান যেন তা থেকে তোমাদের বিরত না রাখে। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।” (আয়াত : ৬১-৬২)
রাব্বুল আলামীনের সামনে মানুষকে সরল পথ থেকে গোমরাহীতে নিক্ষেপের শয়তানের চ্যালেঞ্জ :
সূরা আল্ আ’রাফ-এর ১৬ ও১৭ নং আয়াতের বলা হয়েছে, সে বললোঃ “তুমি যেমন আমাকে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করেছো তেমনি আমিও এখন তোমার সরল-সত্য পথে এ লোকদের জন্য ওঁত পেতে থাকবো, সামনে-পেছনে, ডানে-বামে, সবদিক থেকে এদেরকে ঘিরে ধরবো এবং এদের অধিকাংশকে তুমি শোকর গুজার পাবে না।’’
ইবলিসের চ্যালেঞ্জের জবাবে আল্লাহপাক সূরা আল্ হিজর-এ এরশাদ করেছেন, বললেন, “এটিই আমার নিকট পৌঁছবার সোজা পথ। অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোন জোর খাটবে না। তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে এবং তাদের সবার জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তির অঙ্গীকার।” (আয়াত : ৪১-৪৩)
পূর্ববর্তী কিতাবগুলো সঠিক পথ প্রদর্শনকারী ছিলো :
পূর্ববতী নবীদের প্রতি নাযিলকৃত কিতাবগুলোর প্রতি বিশ্বাসও ঈমানের অঙ্গ। সেগুলোও (বিকৃতির পূর্বে) সঠিক হেদায়াতসহ আল্লাহর প্রেরিত।
এরশাদ হচ্ছে, “তারা গিয়ে বললো, হে আমাদের কওমের লোকজন! আমরা এমন কিতাব শুনেছি যা মুসার পরে নাযিল করা হয়েছে। যা ইতিপূর্বেকার সমস্ত কিতাবকে সমর্থন করে, ‘ন্যায় ও সঠিক পথ’ প্রদর্শন করে। (সূরা আহক্বাফ-৩০)
যারা ঈমান আনে তাদের আল্লাহপাক সরল পথেই রাখেন :
সূরা হজ্বের ৫৪ নং আয়াতে কারীমায় আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, “এবং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জেনে নেয় যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে এটা সত্য এবং তারা এর প্রতি ঈমান আনে এবং এর সামনে তাদের অন্তর ঝুঁকে পড়ে; যারা ঈমান আনে তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ চিরকাল সত্য-সরল পথ দেখিয়ে থাকেন।”
সরল পথের উদাহরণÑআল্লাহ নিজেই দিয়েছেন :
আল্লাহ মানুষের জন্য সরল পথে আসার জন্য, টিকে থাকার জন্য কত উদাহরণ দিচ্ছেন।
এরশাদ হচ্ছে, “আল্লাহ আর একটি উদাহরণ দিচ্ছেন। দু’জন লোক। একজন বধির ও বোবা, কোন কাজ করতে পারে না। নিজের প্রভুর ঘাড়ে বোঝা হয়ে চেপে আছে। যেদিকেই তাকে পাঠায় কোন ভাল কাজ তার দ্বারা হয়ে উঠে না। দ্বিতীয় জন ইনসাফের হুকুম দেয় এবং নিজের ‘সত্য-সরল পথে’ প্রতিষ্ঠিত আছে। বলো, এরা দু’জন কি সমান?” (সূরা আন্ নাহলÑ৭৬) “ভেবে দেখো, যে ব্যক্তি মুখ নিচু করে পথ চলছে, সে-ই সঠিক পথ প্রাপ্ত, না যে ব্যক্তি মাথা উঁচু করে ‘সোজা পথ’এ হাঁটছে সে-ই সঠিক পথ প্রাপ্ত?” (সূরা মূলক-২২)
সরল পথের টিকে থাকার উপায় আল্ কোরআন ও আস্সুন্নাহ :
রাসূলুল্লাহ (সা) বিদায় হজ্বে ভাষণে এ সম্পর্কে যা বলেছিলেন,
হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতদিন তোমরা ঐ দু’টিকে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং অন্যটি হচ্ছে আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ”। (মুয়াত্তা, ইমাম মালেক) হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে কারীম (সা) কে বলতে শুনেছি, এটা অর্থাৎ আল্ কোরআন হল আল্লাহর মযবুত রশি, হিকমত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ এবং সহজ সরল পথের নাম। তা অনুসরণ করলে মানুষের চিন্তাধারা বিপথগামী হয় না এবং জবানও পঙ্কিলতায় আবিষ্ট হয় না।” (তিরমিযী)
সরল পথের উদাহরণ দিয়েছেন-রাসূল (সা)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, আমাদের (বুঝাইবার) জন্য রাসূল (সা) একটি সরল রেখা টানিলেন এবং বলিলেন ঃ ইহা আল্লাহর রাস্তা, অতঃপর উহার ডানে-বামে আরও কতক রেখা টানিলেন এবং বলিলেন, এগুলিও রাস্তা; তবে ইহার প্রত্যেক রাস্তার ওপরই একটা করিয়া শয়তান দাঁড়াইয়া আছে; সে লোকদিগকে ইহার দিকে আহ্বান করে। অতঃপর হুযুর (ইহার প্রমাণে কোরআনের এই আয়াতটি) পাঠ করিলেন।
“ওয়া আন্না হাযা সিরাতাল মোস্তাকিমান ফাত্তাবিউয়্যুহু আয়া।” অর্থাৎ নিশ্চয় ইহাই আমার ‘সরল-সঠিক পথ’, তোমরা ইহাই অনুসরণ করিবে। [আহমদ, নাসায়ী ও দারেমী থেকে মিশকাত ১ম খন্ড, হাদীস নং ১৫৯(২৭)] এখানে সরল রেখা দ্বারা ইসলামের উপমা দেওয়া হইয়াছে এবং অন্যান্য রেখাসমূহ দ্বারা গোমরাহ মতবাদসমূহের (পুঁজিবাদ, কমিউনিজম, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি) দিকে ইঙ্গিত করা হইয়াছে।
সাহাবাগণ সরল পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন :
নবীজী (সা)এর পর তাঁর উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ছিলেন সাহাবাগণ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, যে ব্যক্তি কাহারও তরিকা অনুসরণ করিতে চাহে, সে যেন তাঁহাদের তরিকা অনুসরণ করে যাহারা দুনিয়া হইতে চলিয়া গিয়াছেন। কেননা জীবিত ব্যক্তি ফিতনা হইতে নিরাপদ নহে। (হয়ত বাকী জীবনে কোন দ্বীনী ফিতনায় পড়িয়া পথভ্রষ্ট হইতে পারেÑএই যে মৃতদের কথা বলিলাম) তাঁহারা হইতেছেন হযরত মোহাম্মদ (সা)এর সাহাবীগণ, যাঁহারা এ উম্মতের শ্রেষ্ঠতম লোক ছিলেন। পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসাবে ও পরিপূর্ণ জ্ঞান হিসাবে এবং স্বল্পতম ছিলেন কৃত্রিমতার দিক থেকে। আল্লাহতায়ালা তাঁহাদিগকে তাঁহার নবীর সাহচর্য এবং আপন দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মনোনীত করিয়াছেন। সুতরাং তোমরা তাঁহাদের ফজীলত এবং মর্যাদা উপলব্ধি কর। তাঁহাদের পদচিহ্নের অনুসরণ কর এবং যথাসাধ্য তাঁহাদের আখলাক ও চরিত্র আঁকড়াইয়া ধর। কেননা তাঁহারা সরল-সঠিক পথে ছিলেন। (রাযীন থেকে মিশকাত ১ম খন্ড)
খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর সরল পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য হযরত আবু বকর (রা)এর দোয়া :
তিনি বলেন, “হে জনগণ! আমাকে তোমাদের খলিফা নিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ আমি তোমাদের অপেক্ষা উত্তম ব্যক্তি নহি। কাজেই আমি যদি সঠিক কাজ করি, তাহলে তোমরা আমাকে সাহায্য ও সহযোগিতা করিও। আর যদি ভুল করি, তবে আমাকে সংশোধন ও সরল-সঠিক পথের অনুসারী করে দেবে।”
(খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ১ম ভাষণের একাংশ-খেলাফতে রাশেদা ঃ মাওলানা আবদুর রহীম, পৃ-৯৪)
আমীরুল মোমেনীন হযরত উমর ফারুক (রা) এর দোয়া :
তিনি বলেন, “তোমাদের যে কেউ আমার মধ্যে নীতি বিচ্যুতি দেখতে পাবে, সে যেন আমাকে সঠিক পথে, হকের পথে পরিচালিত করতে চেষ্টা করে”। উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দের মধ্য হতে একজন দাঁিড়য়ে বলল, ‘আল্লাহর শপথ, তোমার মধ্যে আমরা কোন নীতি ভ্রষ্টতা দেখতে পাই, তাহলে এই তীব ্রধারালো তরবারি দ্বারা উহাকে ঠিক করে দিব।’ হযরত উমর এই জবাব শুনে শোকর আদায় করলেনও বললেন, “আল্লাহ এই জাতির মধ্যে এমন লোক তৈরী করেছেন, যারা তার নীতি বিচ্যুতির সংশোধন করতে পারেন। এই জন্য আমি আল্লাহর শোকর আদায় করছি”
(খেলাফতে রাশেদা ঃ মাওলানা আবদুর রহীম, পৃ-১৩১)
সরল পথ, আল্ ইসলাম ৫টি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তি বা স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নাই এবং মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও তাঁহার রাসূলÑএই ঘোষণা, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্ব করা এবং রমজানের সাওম রাখা। সরল পথ আল্ ইসলাম যে ভিত্তি গুলোর ওপর স্থাপিত, তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল ঃ
কলেমা :
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।” অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। এই বাক্যটি ইসলামের মৌলিক আকিদা। ইসলাম নামের প্রাসাদে এই কলেমা পাঠ করে ঈমান এনে প্রবেশ হয়। যে ঈমান আনে তাকে মুসলমান বলে। আল্লাহই একমাত্র ইলাহ। সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, আইনদাতা ও বিধানদাতা। ইবাদতের একমাত্র যোগ্য, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তাঁর কোন শরীক নাই। তাই আমাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাকেও সাহায্যকারী, রক্ষাকারী, প্রয়োজন পূরণকারী ফরিয়াদ শ্রবণকারী, বিপদদূরকারী মনে করা যাবে না। আল্লাহকে ছাড়া কাকেও ভয় করা, ক্ষমতার মালিক মনে করা, কারো ওপর নির্ভর করা, কারো সন্মুখে মাথা নত করা, কারো নামে মানত করা, কারো কাছে কিছু প্রার্থনা বা চাওয়া যাবে না।
মোহাম্মদ (সা) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তারপর আর কোন নবী আসবেন না। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর দেখানো পথে চলতে হবে, তাঁর ওপর নাযিল হওয়া আল্ কোরআন ও সুন্নাহকেই একমাত্র অকাট্য, নির্ভুল ও বিশ্বস্ত দলিল মনে করতে হবে। কোরআনই ছিল তাঁর বাস্তব চরিত্র, সত্যের মাপকাঠি একমাত্র তিনিই। তিনিই একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ নেতা, ভুল-ত্র“টির উর্ধ্বে। আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে তিনি এ ধরায় আগমন করেছিলেন। তাঁর উম্মত হিসাবে আমাদেরকে দ্বীন বিজয়ের জন্য কাজ করে যেতে হবে। এটাই কলেমার দাবী। ‘মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ বলে রিসালাতের স্বীকৃতি দিয়ে আমরা কার্যত আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ, আখেরাতে বিশ্বাস এবং তাকদীরের যে শিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন তার প্রতিও ঈমান এনেছি। ইবাদত ও আনুগত্যের যে পথ তিনি প্রদর্শন করেছেন, তা আমাদেরকে অনুসরণ করতে হবে।
সালাত :
সালাত আরবী শব্দ। ফারসীতে নামায বলে। আমাদের কাছে নামায বলেই বেশি পরিচিত। আল্ কোরআনে সালাত আদায়ের জন্য বেশি বেশি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দৈনন্দিন ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা মুসলমানদের জন্য ফরজ। এটা আল্লাহর গোলামের পরিচায়ক। সালাত আদায় ব্যতীত মুসলমান হওয়া যায় না। কারণ আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, মুসলমান এবং কাফিরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত। সালাতের হেফাজতকারীরাই দ্বীন ইসলামের হেফাজতকারী। সালাত জান্নাত লাভের উপায়, জান্নাতের চাবি, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, মাগফিরাতের উপায়, কিয়ামতের দিন সালাত হিসাব নেয়া ছাড়া আদম সন্তানকে এক পাও নড়তে দেয়া হবে না, দ্বীন ইসলামে সালাতের অশেষ গুরুত্বও ফজীলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) জামায়াতে সালাত আদায়ের জন্য বেশি বেশি তাগিদ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কোরআন ও হাদীস থেকে কিছুটা আলোকপাত করা হল। আল্লাহপাক কোরআনে বিভিন্ন স্থানে এরশাদ করেছেন,
১। “ যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, নামায কায়েম করে এবং যে রিজিক আমি দিয়েছি তা থেকে খরচ করে।” (সূরা বাকারা-৩)
২। “তোমরা সালাত আদায় করো, যাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো।” (সূরা বাকারা-৪৩)
৩। “তোমরা সালাত আদায় করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করো। (সূরা আহযাব-৩৩)
৪। “সালাত মানুষকে পাপ, অন্যায় ও অশ্লীলতা এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আন কাবুত-৪৫)
৫। “তারা এমন লোক যাদেরকে আমি জমিনে কর্তৃত্ব দিলে সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর সব বিষয়ের চুড়ান্ত নিষ্পত্তি আল্লাহর হাতে।” (সূরা হজ্ব-৪১)
৬। “সালাত সম্পন্ন হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো; আল্লাহর দান জীবিকা উপাজর্নের চেষ্টা করো এবং এ প্রচেষ্টা ব্যাপদেশে আল্লাহকে খুুব বেশি করে স্মরণ করো। তবেই সম্ভবত তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারবে।”(সূরা জুমু’আ-১০)
রাসূল (সা) বলেছেন,
১। “তোমাদের সব কাজের মধ্যে আমার নিকট সালাতের গুরুত্ব বেশি। যে ব্যক্তিসালাতের সংরক্ষণ করবে এবং করাবে সে তা দ্বীনের সংরক্ষণ করবে। আর যে ব্যক্তি সালাতকে ধ্বংস করবে সে অন্য সব জিনিস সবচেয়ে বেশি ধ্বংসকারী বলে প্রমাণিত হবে।” (মিশকাত, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব থেকে বর্ণিত)
২। “যে ব্যক্তি সঠিকভাবে সালাত আদায় করবে কিয়ামতের দিন তার জন্য তৈরি হবে এক নূর (আলো), এক দলিল এবং মুক্তির মাধ্যম। যে ব্যক্তি সঠিকভাবে সালাত আদায় করবে না তার জন্য তৈরি হবে না নূর (আলো), দলিল এবং মুক্তির উপায়।” (মিশকাত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস থেকে বর্ণিত)
৩। “তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে যদি নদী থাকে এবং সে যদি ঐ নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে কি”? সাহাবাগণ বললেন, “তার শরীরে তোন ময়লাই থাককে পারে না”। রাসূল (সা) বললেন “পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্তও তাই। এগুলোর দ্বারা আল্লাহ সকল পাপ মোচন করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম, হযরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত)
৪। “একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে জামায়াতে সালাত আদায় করার সওয়াব সাতাশ গুণ বেশি।” (বুখারী ও মুসলিম, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত)
৫। “যে ব্যক্তি আযান শুনে ওজর ব্যতীত মসজিদে না গিয়ে একাকী সালাত আদায় করে তার এ সালাত কবুল করা হবে না।” লোকেরা বললো, “ওজর কি?” তিনি বললেন, “ভয় ও রোগ।” (আবু দাউদ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত)
(চলবে..)
বিষয়: সাহিত্য
১২৮৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগা রেখে গেলাম............।
আপনি সৌদি প্রবাসী, জেদ্দায় থাকেন। এখনও কি থাকেন? আমি বছরে ২/৩ বার
সৌদি আরব যাই। যাক, আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন