প্রবন্ধ-২/২ : সিরাতুল মোস্তাকিম : জান্নাতের রোডম্যাপ (ধারাবাহিক পর্ব-২)

লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১৭ মে, ২০১৫, ০৪:৪৬:৩৪ বিকাল

দ্বিতীয় পর্ব :

আল্ল¬াহ যাকে চান সরল পথে পরিচালিত করেন :

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“অবশ্যি নির্বোধ লোকেরা বলবে, এদের কি হয়েছে, প্রথমে এরা যে কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়তো, তা থেকে হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? হে নবী! ওদেরকে বলে দি, পূর্ব ও পশ্চিম সবই আল¬াহর। আল¬াহ যাকে চান তাকে সোজা পথ দেখান। আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়াবাসীর ওপর সাক্ষী হতে পার এবং রাসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী।” (সূরা বাকারা : ১৪২-১৪৩)

সূরা বাকারার ২১৩ নং আয়াতে আল্লাহপাক আরো বলেন,

“কাজেই যারা নবীদের ওপর ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্ল¬াহ নিজের ইচ্ছাক্রমে সেই সত্যের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, যে ব্যাপারে লোকেরা মতবিরোধ করেছিল। আল্ল¬াহ যাকে চান সত্য-সরল পথ দেখিয়ে দেন।”

সূরা আন্ নিসায় আল্ল¬াহপাক বলেন,

“অথচ তাদেরকে যে নসীহত করা হয় তাকে যদি তারা কার্যকর করতো তাহলে এটি হতো তাদের জন্য অধিকতর ভালো ও অধিকতর দৃঢ়তা ও অবিচলতার প্রমাণ। আর এমনটি করলে আমি নিজের পক্ষ থেকে তাদেরকে অনেক বড় পুরষ্কার দিতাম এবং তাদেরকে সরল পথ দেখাতাম।” (আয়াতস : ৬৭-৬৮)

সূরা আন্ নিসার ১৭৫ নং আয়াতে বলেন,

“এখন যারা আল্ল¬াহর কথা মেনে নেবে এবং তাঁর আশ্রয় খুঁজবে তাদেরকে আল¬াহ নিজের রহমত, করুণা ও অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে নেবেন এবং নিজের দিকে আসার সোজা রাস্তা দেখিয়ে দেবেন।”

সূরা আল্ মায়েদার ১৬ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, “যার মাধ্যমে আল্ল¬াহ তাঁর সন্তোষকামী লোকদের শান্তি ও নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং নিজ ইচ্ছাক্রমে তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন এবং সরল পথের দিকে পরিচালিত করেন।”

সূরা আল্ আন’আমের ৩৯ নং আয়াতে উল্লে¬খ করেছেন, “তারপর তাদের সবাইকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে। কিন্তু যারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা বলে তারা বধির ও বোবা, তারা অন্ধকারে ডুবে আছে, আল্ল¬াহ যাকে চান বিপথগামী করেন, আবার যাকে চান সত্য সরল পথে পরিচালিত করেন।”

“আল্ল¬াহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী এবং সত্য সরল পথ দেখান”Ñএর ব্যাখ্যা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদীর তাফহীমুল কোরআনে এভাবে দেয়া হয়েছে। “আল্ল¬াহর বিপথগামী করার অর্থ হচ্ছে একজন মূর্খতা ও অজ্ঞতাপ্রিয় ব্যক্তিকে আল¬াহর নিদর্শনসমূহ থেকে অধ্যয়ন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা। আর একজন পক্ষপাতদুষ্ট, বিদ্বেষী ও সত্যবিরোধী জ্ঞানান্বেষী কখনো আল¬াহর নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করলেও সত্যের পক্ষে পৌঁছার নিশানীগুলো তার দৃষ্টির অগোচরে থেকে যাবে এবং বিভ্রান্তির অক্টোপাসে জড়িয়ে ফেলার মতো জিনিসগুলো তাকে সত্য থেকে দূরে টেনে নিয়ে যেতে থাকবে। অপর দিকে আল¬াহর হেদায়াত তথা সরল সত্য পথে পরিচালিত করার অর্থ হচ্ছে এই যে, একজন সত্যান্বেষী ব্যক্তিজ্ঞানের উপকরণসমূহ থেকে লাভবান হবার সুযোগ লাভ করে এবং আল¬াহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে সত্যের লক্ষ্যে পৌঁছার নিশানীগুলো লাভ করে যেতে পারে।” (৩য় খন্ড পৃষ্টা-১১৬)

সূরা আল্ আন’আমের ৮৬, ৮৭ ও ৮৮ নং আয়াতের বলা হয়েছে, তাদের মধ্য থেকে প্রত্যেককে আমি সমস্ত দুনিয়াবাসীর ওপর মর্যাদাসম্পন্ন করেছি। তাছাড়া তাদের বাপ-দাদা, সন্তান-সন্ততি ও ভ্রাতৃ সমাজ থেকে অনেককে আমি সম্মাণিত করেছি, নিজের খেদমতের জন্য তাদেরকে নির্বাচিত করেছি এবং সত্য-সরল পথের দিকে তাদেরকে পরিচালিত করেছি। এটি হচ্ছে আল্ল¬াহর হেদায়াত, নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে তিনি যাকে চান তাকে এর সাহায্যে হেদায়াত দান করেন।”

সূরা ইউনুস ২৫ ও ২৬ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, “আর আল¬াহ তোমাদের শান্তির ভুবনে আহবান জানাচ্ছেন। যাকে তিনি চান সরল পথ দেখান। যারা কল্যাণের পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য আছে কল্যাণ এবং আরো বেশি।”

সূরা আন্ নুরের ৪৬ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, “আমি পরিষ্কার সত্য বিবৃতকারী আয়াত নাযিল করে দিয়েছি তবে আল্লাহই যাকে চান সরল পথ দেখান।”

সূরা ফাতহ্-এ এরশাদ হয়েছে, “হে নবী, আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি, যাতে আল্ল¬াহ তোমার আগের ও পরের সব ত্র“টি-বিচ্যুতি মাফ করে দেন। তোমার জন্য নিয়ামতকে পূর্ণতা দান করেন, তোমাকে “সরল পথ” দেখিয়ে দেন এবং অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে সাহায্য করেন।” (আয়াত : ১-৩)

সূরা ফাতহ্-এর ২০ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, “আল্ল¬াহ তোমাদেরকে অঢেল গনীমতের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন যা তোমরা লাভ করবে। তিনি তোমাদের তাৎক্ষনিকভাবে এ বিজয় দিয়েছেন এবং তোমাদের বিরুদ্ধে মানুষের হাত উত্তোলনকে থামিয়ে দিয়েছেন, যাতে মু’মিনের জন্য তা একটি নিদর্শন হয়ে থাকে। আর আল্ল¬াহ তোমাদেরকে “সোজা পথ”এর হেদায়াত দান করেন।”

নবী-রাসূলগণ মানুষকে সরল পথে চলার দাওয়াত দিয়েছেন :

সূরা আলে ইমরানের ৫০ ও ৫১ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা,

“কাজেই আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। আল্ল¬াহ আমার রব এবং তোমাদেরও রব। অতএব তোমরা তার বন্দেগী করো। এটিই সোজা পথ।”

সূরা হুদ-এর ৫৫ ও ৫৬ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে যা করার করো, তাতে কোন ত্র“টি রেখো না এবং আমাকে একটু অবকাশ দিয়ো না। আমরা ভরসা আল্ল¬াহর ওপর, যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব। তিনিই প্রতিটি প্রাণীর ভাগ্যনিয়ন্তা। নিঃসন্দেহে আমার রব সরল পথে আছেন।”

“আর (ঈসা বলেছিল), আল্ল¬াহ আমার রব এবং তোমাদেরও রব। কাজেই তোমরা তার বন্দেগী করো। এটিই সোজা পথ।” (সূরা মরিয়ম-৩৬)

রাসূল (সা)এর দাওয়াত ছিল সোজা পথের। আল্ল¬াহ তাঁকে সার্টিফাই করছেন তিনি অবশ্যই সরল পথে আছেন। সূরা হজ্বে এরশাদ হচ্ছে, “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি একটি ইবাদতের পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দিয়েছি, যা তারা অনুসরণ করে; কাজেই হে নবী! এ ব্যাপারে তারা যেন তোমার সাথে ঝগড়া না করে। তুমি তোমার রবের দিকে দাওয়াত দাও। অবশ্যই তুমি সঠিক সরল পথে আছো।” (আয়াত-৬৭)

সূরা আল্ মু’মিনুন-এর ৭৩ ও ৭৩ নং আয়াতে এরশাদ হচ্ছে, “তুমি কি তাদের কাছে কিছু চাচ্ছো? তোমার জন্য তোমার রব যা দিয়েছেন, সেটাই ভালো এবং তিনি সবচেয়ে ভালো রিযিকদাতা। তুমি তো তাদের সহজ সরল পথের দিকে ডাকছো, কিন্তু যারা পরকাল স্বীকার করে না তারা সঠিক পথ থেকে সরে ভিন্ন পথে চলতে চায়।”

সূরা ইয়া-সীনে এরশাদ হয়েছে, “বিজ্ঞানময় কোরআনের শপথ। তুমি নিঃসন্দেহে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। “সরল পথ” অবলম্বন কারী। (এবং এ কোরআন) প্রবল পরাক্রমশালী ও করুনাময়ের সত্তার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, যাতে তুমি সতর্ক করে দাও এমন এক জাতিকে যার বাপ-দাদাকে সতর্ক করা হয় নি এবং এ কারণে তারা গাফিলতিতে নিমজ্জিত।” (আয়াত : (২-৬)

সূরা ছোয়াদ-এর ২২ নং আয়াতে উলে¬খিত আছে, “যখন তারা দাউদের কাছে পৌঁছলো, তাদেরকে দেখে সে ঘাবড়ে গেলো তারা বললো, ভয় পাবেন না, আমরা মামলার দুই পক্ষ। আমাদের একপক্ষ অন্য পক্ষের ওপর বাড়াবাড়ি করছে। আপনি আমাদের মধ্যে যথাযথ সত্য সহকারে ফয়সালা করে দিন, বেনিসাফী করবেন না এবং আমাদেরকে “সঠিক পথ” দেখিয়ে দিন।”

সূরা আয্যুখরুফে এরশাদ হয়েছে, “অহীর মাধ্যমে তোমার কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে, সর্বাবস্থায় তুমি দৃঢ়ভাবে তা আঁকড়ে থাকো, নিশ্চয়ই তুমি সোজা পথে আছো।” (আয়াত-৪৩)সূরা আয্ যুখরুফে আরো এরশাদ হয়েছে, “অতএব তোমরা আল¬াহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। প্রকৃত সত্য এই যে, আল্ল¬াহই আমার এবং তোমাদের রব। তাঁরই ইবাদত করো। এটাই “সরল পথ”। (আয়াত : ৬৩-৬৪)

ঈমানের পরিবর্তে কুফরী নীতি গ্রহণকারীরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত :

আল্ কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “তাহলে কি তোমরা তোমাদের রাসূলের কাছে সেই ধরনের প্রশ্ন ও দাবী করতে চাও যেমন এর আগে মুসার আছে করা হয়েছিল? অথচ যে ব্যক্তি ঈমানী নীতিকে কুফরী নীতিতে পরিবর্তিত করেছে, সে-ই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। আহলি কিতাবদের অধিকাংশই তোমাদেরকে কোনক্রমে ঈমান থেকে আবার কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নিতে চায়।” (সূরা বাকারা : ১০৮-১০৯)

অন্য জায়গায় এরশাদ হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা এই আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে একটি দলের কথা মানো, তাহলে তারা তোমাদের কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তোমাদের জন্যে কুফরীর দিকে ফিরে যাবার এখন আর কোন্ সুযোগটি আছে, যখন তোমাদের শুনানো হচ্ছে আল¬াহর আয়াত এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে আল¬াহর রাসূল? যে ব্যক্তি আল্ল¬াহকে মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধরবে, সে অবশ্যি সরল পথ লাভ করবে।” (সূরা আলে ইমরান : ১০০-১০১)

সূরা মায়েদায় এরশাদ হয়েছে, “কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুফরী নীতি অবলম্বন করবে, সে আসলে ‘‘সাওয়াউস সাবীল’’ তথা সরল পথ হারিয়ে ফেলেছে।” (আয়াত-১২) সে ব্যক্তি ‘‘সাওয়াউস সাবীল’’ পেয়ে আবার তা হারিয়ে ফেলেছে এবং ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয়েছে। ......মানুষ নিজের জীবনের ক্ষেত্রে চলার জন্য যতগুলো পথ তৈরি করেছে সবই বক্র রেখার মতো। একটি ভুল দিক থেকে যাত্রা শুরু করে আর একটি ভুল প্রান্তে গিয়ে তার চলা শেষ হয়। আবার সেখান থেকে যখন চলা শুরু করে তখন কোন ভুল দিকেই এগিয়ে চলে। এ অসংখ্য বক্র ভুল পথের মধ্য দিয়ে এমন একটি পথ চলে গেছে যার অবস্থান ঠিক মধ্যভাগে। এ পথে মানুষের সমস্ত শক্তি, সামর্থ্য, প্রবণতা, আশা-আকাঙ্খা, আবেগ-অনুভুতি, তার দেহ ও আতœার সমস্ত দাবী ও চাহিদা এবং তার জীবনের যাবতীয় সমস্যার সাথে পূর্ণ ইনসাফ করা হয়েছে। এ পথে বক্রতার কোন প্রকার লেশ মাত্র নেই। কোন দিকের প্রতি অযথা পক্ষপাতিত্ব ও তাকে সুযোগ সুবিধা দান এবং কোন দিকের সাথে জুলুম ও বেইনসাফী করার প্রশ্নই এখানে নেই। মানুষের জীবনের সঠিক উন্নয়ন, ক্রমবিকাশ এবং তার সাফল্য ও অগ্রগতির জন্য এ ধরনের একটি পথ একান্ত অপরিহার্য। মানুষের মূল প্রকৃতি এ পথেরই সন্ধানে ফিরছে। এ সোজা সরল রাজপথটির অনুসন্ধানে লিপ্ত থাকার কারণেই তারা বিভিন্ন বক্র পথের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় এ রাজপথের সন্ধান লাভ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। একমাত্র আল¬াহই তাকে এ পথের সন্ধান দিতে পারেন। মানুষকে এ পথের সন্ধান দেবার জন্যই আল¬াহ তাঁর রাসূল পাঠিয়েছেন। কোরআন এ পথকেই “সাওয়াউস সাবীল’’ ও ‘‘সিরাতুল মোস্তাকীম’’ আখ্যা দিয়েছে। দুনিয়ার এ জীবন থেকে নিয়ে আখেরাতের জীবন পর্যন্ত অসংখ্য বক্র পথের মধ্য দিয়ে এ সরল সোজা রাজপথটি চলে গেছে। যে ব্যক্তি এ পথে অগ্রসর হয়েছে সে এ দুনিয়ায়ও সঠিক পথের যাত্রী এবং আখেরাতেও সফলকাম হয়েছে। আর যে ব্যক্তি এ পথটি হারিয়ে ফেলেছে সে এখানে বিভ্রান্ত হয়েছে, ভুল পথে চলেছে এবং আখেরাতেও অনিবার্যভাবে জাহান্নামে লিপ্ত হবে। কারণ, জীবনের সমস্ত বক্র পথ জাহান্নামের দিকেই চলে গেছে। (তাফহীমুল কোরআন-৩য় খন্ড পৃষ্টা, ২২-২৪)

সরল পথ বা হেদায়েতের পথ আল্ল¬াহর নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে বুঝা যায় :

এরশাদ হচ্ছে, “এভাবেই আল্ল¬াহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন। হয়তো এই নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের হেদায়েতের পথ দেখতে পাবে।” (সূরা আলে ইমরান-১০৩)

অর্থাৎ যদি তোমাদের সত্যিকার চোখ থেকে থাকে, তাহলে এই আলামতগুলো দেখে তোমরা নিজেরাই আন্দাজ করতে পারবে, কিসে তোমাদের কল্যাণ -এই দ্বীনকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার মধ্যে, না একে পরিত্যাগ করে আবার তোমাদের সেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার মধ্যে? তোমাদের আসল কল্যাণকামী কে-আল্ল¬াহ ও তাঁর রাসূল, না সেই ইয়াহুদী, মুশরিক ও মুনাফিক, যারা তোমাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে? (তাফহীমুল কোরআন-২য় খন্ড পৃষ্ঠা-৫৫, টীকা-৮৫)

তাগুতের অনুসরণ করলে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে :

আল্ল¬াহপাক এরশাদ করেছেন, “বস্তুত যাদের ওপর আল্ল¬াহ লানত বর্ষণ করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধান্বিত, যাদের মধ্য থেকে কতককে বানর ও শুয়োর বানানো হয়েছে এবং যারা তাগুতের ইবাদত করেছে, তারা আরো নিকৃষ্ট এবং তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে অনেক দূরে সরে গেছে।” (সূরা আল্ মায়েদা-৬০)

“হে আদম সন্তানেরা! আমি কি তোমাদের এ মর্মে হেদায়াত করিনি যে, শয়তানের বন্দেগী করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। এবং আমারই বন্দেগী করো, এটিই সরল পথ?” (সূরা ইয়া-সীন : ৫৯-৬১)

সূরা আল্ মুমতাহিনায় এরশাদ হয়েছে, “অথচ তোমরা গোপনে যা করো এবং প্রকাশ্যে যা করো তা সবই আমি ভাল করে জানি। তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই এরূপ করে নিশ্চিতভাবেই সে সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।” (আয়াত-১)

দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি এবং নিজের খেয়ালখুশী মত চললে পথভ্রষ্ট হবে :

সূরা আল্ মায়েদায় এরশাদ হচ্ছে, “বলে দাও, হে আহলি কিতাব! নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না এবং তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করো না, যারা তোমাদের পূর্বে নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং আরো অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে, আর সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।” (আয়াত-৭৭)

এখানে যেসব জাতি থেকে খৃষ্টানরা ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস ও বাতিল পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল তাদের প্রতি ইংগিত দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে এখানে গ্রীক দার্শনিকদের কথা বলা হয়েছে। তাদের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে খৃষ্টানরা সেই সিরাতুল মোস্তাকিমÑসঠিক-সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল, যেদিকে প্রথমত তাদেরকে পরিচালিত করা হয়েছিল। হযরত ঈসা (আ)এর প্রথম দিকের অনুসারীরা যে আকিদা-বিশ্বাস পোষণ করতেন তা বেশির ভাগ তাদের প্রত্যক্ষ জ্ঞানলব্ধ সত্য ছিল এবং তাদের নেতা ও পথ প্রদর্শক তাদেরকে সেগুলো শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী কালের খৃষ্টানরা একদিকে ঈসার প্রতি ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শনের প্রশ্নে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে এবং অন্যদিকে প্রতিবেশী জাতিসমূহের অলীক ধ্যান-ধারণা ও দর্শনে প্রভাবিত হয়ে নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসের বানোয়াট দার্শনিক ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে। এভাবে তারা একটি সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম তৈরি করে ফেলে। এ নতুন ধর্মের সাথে হযরত ঈসার আসল শিক্ষাবলীর কোন সম্পর্কও ছিল না। (তাফহীমুল কোরআন-৩য় খন্ড, পৃষ্টা : ৬৬-৬৭)

সরল সোজা পথ দেখানোর দায়িত্ব আল্ল¬াহর :

আল্ল¬াহপাক মানুষ সৃষ্টি করে সঠিক পথ বাতলে না দিয়ে ছেড়ে দেন নি। মানুষ যখনি তাঁর দেয়া শিক্ষা ভুলে গেল, নবী-রাসূল পাঠিয়ে হেদায়েতের দিশা দিয়েছেন। যারা সত্য পথে চলার জন্য সংকল্প বদ্ধ হন, তাদের বক্ষ হেদায়েতের নুর দিয়ে ভরে দেন। আর যারা গোমরাহীতে থাকতে চান, তাদের বক্ষদেশ সংকীর্ণ করে দেন।

আল্ কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “প্রকৃতপক্ষে আল্ল¬াহ যাকে সত্যপথ দেখাবার সংকল্প করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে তিনি গোমরাহীতে নিক্ষেপ করার সংকল্প করেন তার বক্ষদেশ সংকীর্ণ করে দেন এবং এমনভাবে তাকে সংকুচিত করতে থাকেন যে, তার মনে হতে থাকে যেন তার আতœা আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে। এভাবে আল্ল¬াহ আবিলতা ও অপবিত্রতা বেঈমানদের ওপর চাপিয়ে দেন। অথচ এ পথটিই তোমাদের রবের সোজা পথ। আর তার নিদর্শনগুলো তাদের জন্য সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যারা উপদেশ গ্রহণ করে। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের কাছে শান্তির আবাস এবং তিনি তাদের অভিভাবক। কারণ, তারা সঠিক কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে।” (সূরা আল্ আনআ’ম : ১২৫-১২৭)

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, “বলুন, আমার রব নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একদম সঠিক-নির্ভুল দ্বীন, যার মধ্যে কোন বক্রতা নেই, ইবরাহীমের পদ্ধতি, যাকে সে একাগ্র চিত্তে একমুখী হয়ে গ্রহণ করেছিল এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।” (সূরা আল্ আন’ আম-১৬১)

“আর যেখানে বক্র পথও রয়েছে সেখানে সোজা পথ দেখাবার দায়িত্ব আল্ল¬াহর ওপরই বর্তেছে। তিনি চাইলে তোমাদের সবাইকে সোজা পথে পরিচালিত করতেন।” (সূরা আন্ নাহল-৯)

“প্রকৃতপক্ষে ইবরাহীম নিজেই ছিল একটি পরিপূর্ণ উম্মত, আল্ল¬াহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ। সে কখনোই মুশরিক ছিল না। সে ছিল আল্ল¬াহর নিয়ামতের শোকরকারী। আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছেন এবং সরল পথ দেখিয়েছেন।” (সূরা আন্ নাহল : ১২০-১২১)

সূরা আল্ কাসাসের ২২ নং আয়াতে এরশাদ হচ্ছে, যখন মুসা মাদ্য়ানের দিকে রওয়ানা হলেন, তখন সে বললো, “আশা করি আমার রব আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।” সূরা সাবায় আল্ল¬াহপাক এরশাদ করেছেন, “জ্ঞানবানরা ভাল করেই জানে, যা কছিু তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে তা পুরোপুরি সত্য এবং তা পরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল¬াহর পথ দেখায়।” (আয়াত-৬)

সূরা আস্ সাফ্ফাতে আল্ল¬াহপাক এরশাদ করেছেন, “তাদেরকে (মূসা ও হারুন) আমি সুস্পষ্ট কিতাব দান করেছি। উভয়কে সোজা পথ দেখিয়েছি এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে তাদের উভয়ের সম্পর্কে সুখ্যাতি অক্ষুন্ন রেখেছি। (আয়াত : ১১৭-১১৯)

(চলবে..)

বিষয়: সাহিত্য

১২৯৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

320614
১৭ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৯
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
১৭ মে ২০১৫ রাত ০৮:০৬
261702
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ, সুন্দর কমেন্ট করার জন্য। আল্লাহ আপনার উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।
320814
১৮ মে ২০১৫ বিকাল ০৫:২৭
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো।
১৮ মে ২০১৫ রাত ০৮:৪৪
261999
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File