গল্প-১ : স্লো পয়জনিং (Slow Poisoning)
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১৩ মে, ২০১৫, ০৮:২৮:০৮ রাত
"মনে রবে কিনা রবে আমারে, সে আমার মনে নাই মনে নাই, মনে রবে কিনা রবে আমারে / পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন আমার নেচে উঠে/ আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাই নি তোমাকে/আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই, তাই গো আমার পরান যাহা চায়।" গেয়ে চলেছে একে একে অনেক গান পাশের ফ্ল্যাটের শান্তা। গানের আওয়াজ শুনে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় সায়মন। এভাবে প্রায়ই বিকেল বেলা রেওয়াজ চলে। কোথাও বের হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কোন এক দুর্নিবার আকর্ষনে বের হতে ইচ্ছে করে না। সায়মনের একমনে গান শোনার ব্যাপারটা লক্ষ্য করে নাবা। কিছুক্ষণ আগে সে খালাকে দেখতে এসেছে মাকে নিয়ে। খালা সায়মনের আম্মা ক'দিন ধরে অসুস্থ। সে কিছু বলে না। অবজারভেশনে রাখছে সায়মনকে। গান তো শুনছেই মাঝে মাঝে বিরক্ত প্রকাশ করছে। হয়তো নাবা এসেছে এটা তার ভাল লাগছে না। অবশ্য অন্য সময় হলে ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাত না সায়মন। খালাত ভাই হলেও প্রাণের দোস্ত। দু'জনের সবকিছুই বিপরীতমুখী। যেমন এই বেশী বেশী গান শোনা, নাচ দেখা, সিনেমা দেখা। এগুলো নাবার পছন্দ না। সায়মন কিন্তু নাটক, সিনেমার দারুণ ভক্ত। কোন নাটক পারতপক্ষে বাদ যায় না।
সায়মন তোর অবস্থা তো খারাপ তুই কি করিস? আমি কি আন্টি কে বলে দেব?
একটু রাগান্বিত স্বরে বলে, বল। বলে দে, কি বলবি?
-তুই যে পশের ফ্ল্যাটের মেয়েটার প্রেমে পড়েছিস?
-গান শুনতে তো সবাই পাচ্ছে। তা এমন কি?
-তা অবশ্য ঠিক।
-তুই কি আসলে গান শুনিস নাকি মেয়েটির জন্য এমন করিস।
-দু'টাই মনে কর।
-পরিচয় আছে?
-হয়ে যাবে।
-তা হলে তো এখনও প্রাথমিক অবস্থায়।
-আমরা তো এখানে এসেছি ৫/৬ মাস হলো।
-খোঁজ-খবর নিয়েছিস কিনা সবকিছু?
-লোক লাগাইছি। একেবারে কাজের লোক।
-হবে তো? নাকি?
-দেখা যাক।
দরজায় ঠকঠক। চা নিয়ে কাজের মেয়ে দাঁড়িয়ে।
-কে?
ভাইয়া আমি শাহানা।
-রেখে যা।
সারা দেশে যা অবস্থা গান প্রতিযোগিতা, সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। টিভি চ্যানেলগুলো খুললেই রমরমা অবস্থা। হায়রে! দিনে দিনে স্টার। এত স্টার করবে কি?
-তুই কি এরকম বাসা বন্দী থাকিস নাকি? বের হস না।
-বেকার জীবন কোথায় যাব?
-আসলে সমস্যা তোর অন্যখানে।
-কি রকম?
-তুই গানাসক্ত। প্রেমাসক্ত। সঙ্গীতভক্ত নাকি নারীভক্ত?
-গানগুলো তো বেশ ভালই লাগে।
বয়সটা তো এমনি।
-তুই আগের চেয়ে শুকিয়েও গেছিস বেশ। একটু বিকেলে হাঁটাচলা করিস। গায়ে হাওয়া লাগা। মেজাজ ফুরফুরে থাকবে। না হলে তো স্লো পয়জনিং এর প্রভাবে শেষ হয়ে যাবি।
-কি বললি, স্লো পয়জনিং?
-নয় তো কি? শুধু তুই না সারা দেশের এক শ্রেণীর যুব সমাজই এ রোগে আসক্ত। দেখিস না, লম্বা চুল, কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ। পেছনে বা পাশাপাশি একটা মেয়ে। হাতে হাত ধরে চলা, দোকানে, লাইব্্ররেীতে যথাতথা আড্ডা। একটু আঁধার হলে গায়ে হাত, সুযোগ সন্ধানী। বেখাপ্পা টাইপের চলাফেরা। লাইফটা হেল হয়ে যাচ্ছে কোন, খবর নাই। কোথায় বাসা, কোথায় মা! রাত নেই, বিরাত নেই। সন্ধ্যার পর পর বোতল হাতে, ডাইলও বলে। এর নাম প্রগতি! আধুনিকতা! গাঁজাখোরের দল।
-তুই আমাকে ওদের দলে ফেললি?
-না ফেলি নাই। তোকে সতর্ক করছি। তুই আমার ভাই-বন্ধু সবকিছু।
-তোর কি খবর? পড়ালেখা তো শেষ কি করবি?
-বিসিএসএর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
-তুই?
-আমি ওয়েস্টার্নে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
-বেশ। তাহলে তো আরো সুবিধা হবে। আরো একধাপ এগুবি। কি রে খালুর কোন শব্দ পাচ্ছি না।
-বাইরে গেছে মনে হয়।
-দু'ভাইয়ের আলাপ চলতে থাকে।
শান্তা লক্ষ্য করে জানালার পাশ থেকে সানার ভাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শোনে। আজকে দেখে আরেক একজন যুক্ত হলো। আগে তাকে দেখেনি। পরশু গলির মুখে সায়মন ভাইকে দেখেছিলাম, উনি তো মুখ ফিরিয়ে নিলেন। লজ্জা বেশী মনে হয়। হয়ত সাহসও কম। বেচারা! ধীরে ধীরে গানে শান্তার অবস্থা আরো পাকাপোক্ত হচ্ছে। কয়েকজন অভিযোগ করল। গানের আওয়াজে তাদের নাকি ডিসটার্ব হয়? তাই বলে গান প্র্যাকটিস ছেড়ে দিতে হবে নাকি ? সায়মন ভাইকে যদি একটু কাজে লাগানো যায়, তাহলে আর কেউ কিছু বলবে না। সায়মন ভাই বাসা থেকে কখন বের হবে মনে মনে খেয়াল রাখে। বিকেল বেলায় উনি সাধারণত বের হন। সন্ধ্যায় বেরিয়ে গেলে বেশী রাত করে ফেরে। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা মারে হয়তবা। নেশা-টেশা করে না তো? অবশ্য বড় মাস্তানরা নেশা করে না বলে শুনেছি। ইদানীং এলাকায় বেশ দুর্নামও রটেছে ওনার নামে। কোন্ বাড়ীওয়ালার ছেলেকে নাকি পিটিয়েছে। ভাড়াটি হয়ে জমিদারের ছেলের গায়ে হাত? এলাকার বদনাম। সায়মনের বেপরোয়া টাইপের জন্য ওদের ফ্যামিলি এক জায়গায় বেশী দিন থাকতে পারে না। সানা বলেছে তাকে। গানের টিচারটা সপ্তাহে তিনদিনই আসে। মাঝে মাঝে টিচারের বাসায়ও যায়। টিচারের বাসা রিকসায় কমপক্ষে ত্রিশ টাকা। মানে আধা কিলোমিটারের কম না। সুজন স্যার আজ হাঁপাতে হাঁপাতে বাসায় এলো। বাসার দরজা তাড়াতাড়ি বন্ধ করতে বলে। শান্তা জিগ্যেস করলে বলে, একটা ছেলে ফর্সা, লম্বা মত টিচারের দিকে কিভাবে যেন তাকাচ্ছে। কে হতে পারে? বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে সায়মন ভাই। জানালায়ও পর্দা টানানো। ধারণা সঠিক হলো। এই মাত্র পর্দা সরিয়ে দেয়া হলে সায়মন ভাইকে দেখা যাচ্ছে।
-স্যার আপনাকে কিছু বলেছে নাকি?
-না, তবে চাহনি দেখে ভয় লাগে।
-স্যার, আপনি একটা ভীতুর ডিম।
-আমি আর তোমাদের বাসায় আসতে পারব না। তোমাকে গান শেখার জন্য আমার বাসায় যেতে হবে।
-বলেন কি স্যার?
-স্যার ছেলেটা কে আমি অনুমান করতে পেরেছি। আমি ব্যবস্থা নেব।
-কি ব্যবস্থা নেবে?
-আমি আপনার সাথে হাসি মুখে সুন্দর করে কথা বলতে বলব।
-তুমি ঐ সন্ত্রাসী টাইপ ছেলের সাথে কথা বলবে? ভয় করবে না।
-জি না।
-স্যার আমাকে এখন থেকে নজরুলের গান শেখাবেন। নজরুলের গান শিখলে আরো বেশী সাহসী এবং সংগ্রামী হতে পারব। কাউকে ভয় পাবো না।
-আমি রবীন্দ্র শেখাই, নজরুল না।
-আপনি তো টিচার সব ধরনের গান জানেন। জানলেও না?
-টিচার মনে মনে ভাবে ছাত্রীর সাথে কি কোন ইয়ে টিয়ে আছে নাকি? এরকম হলে তো ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। শান্তা বলে, স্যার শুরু করব।
-আজ মন ভাল নেই। একটা কথা জিগ্যেস করব।
-করুন স্যার।
-তোমার সাথে ঐ ছেলের কোন..
-না স্যার। আমি এমনিতে বলেছি। সন্ত্রাসীরা সুন্দরী মেয়েদের ভয় করে কিনা তাই বললাম।
-ওহ তাই বুঝি!
-স্যার বেরিয়ে যায়। জানালায়ও কাউকে দেখা যায় না।
শান্তা এমন সময় বাসা থেকে বেরোল, মনে মনে সায়মনকে আশা করছিল। গলি পথের দু'পাশে দু'জন হাঁটতে থাকে। সায়মন ইচ্ছে করেই হাঁটা স্লো করে দিল। একটু এগিয়ে গেল শান্তা পেছনে তাকায় না। শান্তা লক্ষ্য রাখে কেউ কিছু বলে কি না? আরো গুটি কয়েক লোক আছে গলিতে, দোকান আছে ২/৩টা। শান্তা রিকসা দেখতে থাকে। একটা দোকানের পাশে সায়মন দাঁড়ায়। খোকাও কোত্থেকে এল।
-দোন্ত, তোর লাইলীকে তো রিকসায় উঠতে দেখলাম। তুই যা পিছন পিছন।
-না, না ও যেখানে গেছে যাক। খেয়াল রাখবি, যাতে আর কারো কুনজরে না পড়ে।
-ওকে বস।
-বস তোমাকে নাকি বিগ বস মোবাইলে পাচ্ছে না। একটা রিং দিন। রাত্রে নাকি কোথায় যেতে হবে। একটা চালান আসবে নাকি। ইদানীং তোমার ইমেজ, পারফরমেন্স নাকি খারাপ যাচ্ছে।
-আমি পরে কথা বলব। এখন রোমান্টিক মুডে আছি। মুড নষ্ট করিস না। রাহাতকে খবর দে সন্ধ্যার পর বাসায় আসতে। তুইও আসবি। এখন যা।
-ডেরায় গ্রুপের ১১ সদস্যের সায়মন ছাড়া সবাই উপস্থিত। ফোনও বন্ধ। বিগ বসের যথেষ্ট আস্থাভাজন। যে কোন কাজে যথেষ্ট পারদর্শী। বিগ বস চাইছিল আজকের গুরুত্বপূর্ণ এসাইনমেন্টটা সায়মন, রাহাত ও নিটোলকে দিতে। ১০ কোটি টাকার কাজ। বিগ বস রাহাতকে বলে তুমি সায়মনের বাসায় খোঁজ নাও। দেখি কি করা যায়? রাহাত সায়মনদের বাসার পাশে অবস্থান করে, রুমের দিকে লক্ষ্য করে। দেখে অন্ধকার। ভেতরে দারোয়ানকে ডাক দেয়, আঙ্কেল একটু শুনুন। দারোয়ান এগিয়ে আসলে সায়মনের খবর নেয়। দারোয়ান বলে উনি তো এখন বাসায় ফেরেনি। বসকে জানালে হতাশ হন। দায়িত্বটা অন্যকে হন্তান্তর করে।
সকালে বস পত্রিকায় দেখে এই শিরোনাম। "প্রায় ১০ কোটি টাকার ফেনসিডিলসহ ৩জন গ্রেফতার।" বসের চোখ মাথায় উঠে। লিডারকে জানায়, বলে জানি তো। তোরা আমায় ফাঁসালি। আপাতত সরে থাক। লিডার একটা কথা বলি। আমার সন্দেহ হচ্ছে সায়মনকে। ওতো গ্রুপের সাথে আর কোন যোগাযোগ করছে না। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত একটু সেভ করে চলো। ওকে লিডার বলে লাইন কেটে দেয়।
নাবা এত রাতে সায়মনকে দেখে অবাক হয়। তুই তো আমাদের যোগাযোগই রাখিস না। এমন কেন হয়ে গেলি রে ভাই। নাবা ভাল করে সায়মনকে লক্ষ্য করে, দেখে শার্ট-প্যান্টের অবস্থা সঙ্গীন। তোর কি হয়েছে?
-হাঁপাতে হাঁপাতে বলে আগে এক গ্লাস পানি দে। বস বলছি।
-শান্তার জন্য কি মনে একটা গিফট কিনতে মার্কেটের দিকে আসা। অমনি তিনজন লোক আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধ্বস্তাধ্বস্তি করে প্রাণটা নিয়ে পালিয়ে এসেছি। তোদের বাসা কাছে হওয়ায় এবং ভাগ্যের জোরে একটা সিএনজিও পেলাম। না আরো বড় বিপদও হতে পারত।
-ওরা কারা?
-আমার বিরোধী গ্রুপ। পরে চিনতে পারলাম।
-তোর বিরোধী কারা? এসবে আবার কখন জড়ালি?
শহরে মাস্তানির রকম ফের আছে। কেউ গলির মাস্তান, কেউ মহল্লার মাস্ত ান, কেউবা ওয়ার্ডের এবং কেই বা থানার। একেক জনের এক এক অঞ্চল। ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়েছে। বিভিন্ন দলের নেতারা তাদের প্রশ্রয় দাতা। প্রতিপক্ষকে বাগে পেলে অমনি ঝাঁপিয়ে পড়ে। খুন-খারাবি পর্যন্ত হয়ে যায়।
রাতে নাবার আম্মা জানে না, উনারা শুয়ে পড়েছিলেন।
ভাত ছিল না হাঁড়িতে, কিছু নাস্তা খেয়ে শুয়ে পড়ে রাতটা কাটার সিদ্ধান্ত নেয় সায়মন। মোবাইলটাও হারিয়ে গেঠে না ধ্বস্তাধ্বস্তিতে পড়ে গেছে খেলায় করেনি। মোবাইল মেমেরিতে সকলের নম্বর। কারোটা মুখস্থ নেই। নম্বর মনে না থাকায় বড় বিড়ম্বনায় পড়ে গিয়েছিল। গ্রুপ লিডারের সাথেও ক'দিন যোগাযোগ নাই। কি মনে করে?
-খালাম্মা তো সকালে সায়মনকে দেখে বলে তুই কখন এলি?
-রাত্রে। আপনারা ঘুমাচ্ছিলেন তো। আর নাবাকে ডাকতে দিইনি। -খালু চলে গেছে আন্টি?
-তোর খালু সকালেই অফিসে চলে গেছে।
-তোরা নাস্তার টেবিলে যা। রেডি আছে সব। দুপুরে খেয়ে যাস।
-না দুপুরে খাব না। আম্মা জানে না এখানে আছি, রাত্রে বলি নাই। মোবাইল হারিয়ে গেছে!
নাবাদের বাসা থেকে নাস্তা করে বাসার যাওয়ার জন্য একটা রিঙ্ায় উঠে। বাসার গলিতে ডুকার মুহুের্তই গুলির শব্দ। রিঙ্া থেকে সায়মন ঢলে পড়ল। লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেল। পরিচিত একজন দৌড়ে সায়মনদের বাসায় খবর দেয়। কান্নার রোল পড়ে গেল। শান্তা দেখে সায়মনদের বাসা থেকে কান্নার আওয়াজ। কি হলো জানার জন্য সায়মনদের বাসায় আসে। সানা কান্না জড়িত কন্ঠে বলে ভাইয়াকে কারা যেন গুলি করেছে। সকলে হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে যায়। হাসপাতালের ওটি রুম থেকে ডাক্তার বের হয়ে বলল, আপাতত পেশান্ট বিপদমুক্ত তবে, বিকেলে আরো রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।
-লিডার সায়মনতো বেঁচে গেছে। শেষ করতে পারলাম না।
-থাক। এ নিয়ে আর চিন্তা করিস না।
-আটককৃতদের কি খবর?
-৪/৫দিন পর জামিনে বেরিয়ে আসবে। পরে কথা বলব বলে কেটে দেয় বস।
কান্তার মনটা কেন জানি ভাল নেই? ইদানীং রেওয়াজের অবস্থাও তথৈবচ। সায়মনের জন্যই কি পেরেশান। কে জানে? এরকম হওয়ার কথা না। জানালার পাশে আর কেউ এসে দাঁড়ায় না। স্যার ক'দিন আসে নি। অসুস্থ ছিলেন তিনি। মোবাইলে সানার কাছ থেকে জানতে পারে তার ভাইয়া এখনও হাসপাতালে আছে।
এই ঘুম, এই জাগরণ। ঠিকমত ঘুমাতে পারছে না, ঔষধের প্রতিক্রিয়ায়। একটু একটু কথা বলতে পারে সায়মন। তার আব্বা এখন দেখতে আসে নি। মাকে আব্বার কথা জিগ্যেস করলে মা কিছু বলে না। কোন প্রকারে সুস্থ হও। আমরা আর এ বাসায় থাকব না। আর তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে বল ঐ কুপথে আর যাবি না। মাকে কথা দেয় সুস্থ হলে ভাল হয়ে যাবে। ভিসার কথা জিগ্যেস করে মার কাছে। তোর আব্বা বলছে, কেউ যেন জানতে না পারে একথা। জোরে সোরে চেষ্টা চলছে। মায়ের হাতের পরশে ঘুমিয়ে পড়ে। অবচেতন মনে শান্তা এসে হাজির হয়।
-আমি মরে গেলে তুমি আসতে বুঝি?
-বারে, আমি কে তোমার কেন দেখতে আসব?
-কেন, আসতে নেই বুঝি?
-সানার বান্ধবী হিসেবেও পার।
-কতদিন তোমার গান শুনতে পাই না।
-আমি গান গাওয়া ছেড়ে দেব ভাবছি?
-না, ও কাজ করো না।
-কেন আমি তোমার কথা রাখব?
-একটু মাথায় হাত রাখবা?
-পাশে দাড়াঁনো ছেলেটিকে দেখে ইতঃস্তত করে শান্তা।
-অসুবিধা নাই। খালাতো ভাই, ভাল ছেলে। তোমাকে জানে।
কিভাবে?
-ও তোমার নাম দিয়েছে স্লো পয়জনিং।
-কেন?
-তোমাকে না তোমার গান গাওয়াকে?
-নাবা তুই একটু বাইরে যা। যাস নারে ভাই!
-সায়মনের মা বলে, কই নাবা। নাবা তো সকালে চলে গেছে আজ আর আসে নি।
-সায়মন মনে মনে লজ্জা পায় স্বপ্নের কথা ভেবে।
সানার ফোন থেকে গতকাল জানতে পারে নতুন বাসায় চলে যাবে ওরা। একেবারে শহরের অন্যপ্রান্তে। ভাইয়ার জীবন নিয়ে শঙ্কিত সবাই। ভাইয়াকে হাসপাতাল থেকে সোজা বাসায় নিয়ে যাবে। শান্তা ওর রুমের হারমেনিয়াম, তবলা, গিটারের দিকে তাকায়। পাশের বাসা থেকে গাড়ীতে মাল উঠানামা চলছে। জানালার পাশে সংগোপনে ওর গান শুনতে আর কেউ দাঁড়াবে ভাবতেই দু'ফোটা অশ্রু গণ্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।
=====
বিষয়: সাহিত্য
২৩৬২ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি ব্লগে, আর আমি জানি না!
শুভ ব্লগিং।
সায়মনের একমনে গান শোনার ব্যাপারটা লক্ষ্য নাবা। লক্ষ্য’র পরে আরেকটা শব্দ বাদ গেছে হয়ত!
পুরাই মাথা নষ্ট করে দেওয়া মিষ্টি প্রেমের গল্প।
১৭ তারিখ রাত ৮।৫৪ মি,পর্যন্ত পাঠক দেখলাম ৫৫৭!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন