নিবন্ধ- ২ : মুসলিম উম্মাহর বিরূদ্ধে ইয়াহুদী ষড়যন্ত্রের স্বরূপ
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১০ মে, ২০১৫, ০৯:৫২:৩৮ রাত
ইয়াহুদীদের পরিচয় ঃ
আল¬াহপাকের নবী হযরত ইবরাহীম (আ)এর পৌত্র হযরত ইয়াকুব (আ) নবীদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁর বংশধরগণ বনী ইসরাইল নামে পরিচিত। হযরত ইয়াকুব (আ)এর ১২জন ছেলে ছিল, এদের একজনের নাম ছিল ইয়াহুদা। বনী ইসরাইল শাখার একটি অংশ পরবর্তীকালে ইয়াহুদী নামে নিজেদের পরিচয় দিতে শুরু করে। একসময় বনী ইসরাইলীরা আল¬াহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত জাতি ছিল। কালক্রমে এরা আল¬াহর নাফরমানি শুরু করে। আল¬াহতায়ালা তাদের সংশোধনের জন্য অনেক নবী-রাসূলও প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু এই অভিশপ্তরা নবী-রাসূলদের উপরও অত্যাচার-নির্যাতনের স্টীম রোলার চালায়। এমনকি হাজার হাজার নবীকে তারা হত্যা করেছে। ফলে এদের উপর খোদায়ী গজব নাজিল হয়।
ইসলামের সাথে ইয়াহুদীদের শত্র“তা ঃ
বনী ইসরাইল বংশে আল¬াহপাক বহু সংখ্যক নবী প্রেরণের ফলে এদের ধারণা হয় বা বিশ্বাস করত, সকল নবীগণ বনী ইসরাইল বংশে জন্মগ্রহণ করবে। প্রিয়নবী মোহাম্মদ (সা) মক্কার কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করার পর মক্কার কাফেররা এবং হিজরতের পর মদীনায় ইহুদী এবং মুনাফিকরা চরম শত্র“তা শুরু করে। রাসূল (সা) মদীনায় হিজরতের পূর্বে সেখানে ইয়াহুদীদের বেশ প্রভাব ছিল। মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় সকল মুসলিম-অমুসলিম গোত্রকে নিয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য চুক্তি হয়। যা ঐতিহাসিক মদীনা সনদ নামে পরিচিত। চুক্তি অনুযায়ী সকল ধর্মের লোকজন স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে এমন নিশ্চয়তা থাকে। সকলে শান্তিতে বসবাস এবং বহিঃশত্র“র আক্রমণ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্র“তিও নেয়া হয়। ধীরে ধীরে ইয়াহুদীদের আসল স্বরূপ উন্মোচিত হতে থাকে। তারা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শত্র“দের সাথে গোপন সম্পর্ক গড়ে তোলে। ইসলামী রাষ্ট্রকে অংকুরে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালায়। সে অনেক দীর্ঘ ইতিহাস। রাসূল (সা)এর বিরুদ্ধে কত ধরনের ষড়যন্ত্র যে ইয়াহুদীরা করেছিল তার ইয়ত্ত্বা নেই। ইয়াহুদীদের ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী ভুমিকা মজ্জাগত। আজও তা অব্যাহত আছে।
ইয়াহুদী-খৃষ্টান-মুশরিকদের বর্তমান সখ্যতা ঃ
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইয়াহুদী, মুশরিক ও খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবেনা, যতক্ষণ না আপনি তাদের ধর্ম অনুসরণ করেন।” (সূরা বাকারা-১২০) অন্যত্র বলা হয়েছে, “হে নবী! আপনি ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কঠিন শত্র“ হিসাবে দেখতে পাবেন।” (সূুরা মায়েদা-৮২) আয়াতদ্বয় থেকে এই তিন কুচক্রী গোষ্ঠী সম্পর্কে দিবালোকের ন্যায় ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমানে এই তিন অক্ষশক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক জোট। আমেরিকা-ভারত-ইসরাইল মাখামাখি আজ জ্বলন্ত প্রমাণ। ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা “মোসাদ”এর মাধ্যমে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা “র” কে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাশ্মীরী স্বাধীনতাকামীদের দমনে সর্বাতœক সহযোগিতা দিচ্ছে। আরব বিশ্বকে পদানত করতে ইয়াহুদী নীলনক্সা এবং ভারতের ইন্দিরা ডকট্রিনের মধ্যে মিল আছে। ইয়াহুদীরা জাতিসংঘকে ব্যবহার করে সমগ্র বিশ্ব করতল করতে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ বাঁধাবার পাঁয়তারা করছে। তাদের বিশ্বাস প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে অনেকখানি এগিয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ইয়াহুদীদের ঘৃণ্য-কৌশল ঃ
বর্তমান বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মতবাদ ইয়াহুদী পন্ডিতদের মস্তিষ্কপ্রসূত। পুঁিজবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, বস্তুবাদ, দ্বন্দ্ববাদ, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি ইয়াহুদী প্রভাবিত মতবাদ। ‘জুইশ অব প্রোটোকল’ নামক গ্রন্থে মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে গৃহীত কিছু কৌশল জানা যায়। ভৌগলিক এবং ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্য বিনষ্ট করার মাধ্যমে, অর্থলোলুপ ও চরিত্রহীন মুসলিম শাসকদের ব্যবহারের মাধ্যমে, মুসলিম দেশসমূহে বিভিন্ন দল, উপদল, মতবাদ তৈরী করার মাধ্যমে, যেমন ঃ কাদিয়ানী মতবাদ, মুতাজিলা মতবাদ, বাহাই মতবাদ ইত্যাদি। বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে জনপ্রিয় ধর্মীয় নেতাদের চরিত্র হনন ও ঘৃণার পাত্র করা, অশ¬ীলতা, পতিতাবৃত্তি, মদ, জুয়া, লটারী, নাইট ক্লাব, ফ্যাশন শো ইত্যাদির মাধ্যমে যুবসমাজকে উন্মত্ত করা, মুক্ত বাজার অর্থনীতি, পুঁজিবাদী অর্থনীতি মাধ্যমে দেশে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরী করে, মুসলিম দেশের সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশ করে ক্ষমতা দখলে প্ররোচিত করা, সুন্দরী প্রতিযোগিতা তথা মিস ওয়ার্ল্ড, মিস ইউনিভার্স, মিস ফটোজেনিক ইত্যাদির আয়োজক দেশে দেশে সংশি¬ষ্ট ইয়াহুদী প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মাধ্যমে নারী সমাজ বেপর্দা হচ্ছে, ধর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে, ইভটিজিং এর ন্যায় অনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য নিয়োজিত আছে দেশে দেশে বিভিন্ন সংস্থা। যেমন ঃ লায়ন্স ক্লাব, রোটারী ক্লাব, ফ্রি ম্যাসন লজ, কাহাল, জুইশ এজেন্সী ইত্যাদি। এদের কাজ সদস্যদের গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রয়োজনের মুহুর্তে সংস্থার স্বার্থে ব্যবহার করে ব¬্যাক মেইলিং করা। দুঃখের বিষয় এই যে, বাংলাদেশের মুসলিম ভাইয়েরা লায়ন্স ক্লাবের মেম্বার হওয়াকে গৌরবের মনে করে। নামের পাশে লায়ন্স অমুক লিখা থাকে। এভাবে অনেকেই ইয়াহুদীদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে দেশ, জাতি ও নিজের ধ্বংস ঢেকে আনছি।
ইয়াহুদীদের নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যমসমূহ ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেনের অধিকাংশ গণমাধ্যম ইয়াহুদীদের একচেটিয়া দখলে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী হিংসা এবং হানাহানির বীজবপন করা হচ্ছে। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে সংবাদ প্রচারে তাদের বিবেকে বাধে না। মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিডিয়াগুলির মিথ্যার বেসাতিতে ভরপুর। সাম্প্রতিক ইরাক ও আফগানিস্তান আগ্রাসনে বিবিসি, সিএনএন, ফক্স এর মিথ্যাচার লক্ষনীয়। ইয়েলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতার জন্মস্থান খোদ আমেরিকায় এবং জন্মদাতা ইয়াহুদী বিশেষজ্ঞরা। ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের বাজিল নগরীতে কিভাবে ইয়াহুদীরা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবে তার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ৩০০ ইয়াহুদী বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক থিওডর হার্টজেলের নেতৃত্বে এই সন্মেলনে ১৯টি প্রোটোকল পরিকল্পনা নেয়। তন্মধ্যে দ্বাদশ প্রোটোকলটি হল সংবাদ মাধ্যমকে করায়ত্ব করার। বর্তমানে বৃটিশ এবং আমেরিকায় যে সব গণমাধ্যম ইয়াহুদী নিয়ন্ত্রিত সেগুলো হল ঃ বৃটিশ গণমাধ্যম রয়টার, বিবিসি, লন্ডন টাইমস্, সানডে টাইমস্, গার্ডিয়ান, উইক এন্ড, উইকলি সান, সিটি ম্যাগাজিন, দি জিওগ্রাফিক, সানডে রেডিও, অবজারভার, ইউনাইটেড প্রেস, ডেইলি মেইল, এ্যাংগি¬য়া টিভি। এক কথায় বৃটিশ গণমাধ্যম পুরো ইয়াহুদী নিয়ন্ত্রণাধীন এবং মালিকানাধীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আরো ভয়াবহ, বড় বড় টিভি কোম্পানীগুলো ইয়াহুদীদের। এবিসি, এনবিসি, সিবিসি, এবং পিবিসি টিভি ইত্যাদি ইয়াহুদীদের প্রতিষ্ঠিত। ফ্রান্সের এএফপি, লু-ফেগারো, ডেইলি এক্সপ্রেস, রোকাইডিয়ান প্রভৃতি ইয়াহুদীদের। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ইয়াহুদী এবং ‘‘র’’এর চর রয়েছে বলে জানা যায়। একটি ইসলামপন্থী পত্রিকা এদের খপ্পরে পড়ে ইসলাম ও মুসলমান এবং দেশবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত। প্রতিবেশী দেশ এবং জঙ্গীদের অর্থায়নেও দেশে অনেক সংবাদমাধ্যম গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ আছে।
জাতিসংঘ এবং আমেরিকাকে ব্যবহারের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে “লীগ অব নেশন্স” ভেঙ্গে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভুমিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জাতিসংঘকে ব্যবহার করে ইয়াহুদীরা কর্তৃত্ব করছে সমগ্র বিশ্বকে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসমূহ, আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিকে এরা ব্যবহার করে। একজন ইসরাইলী সাংবাদিকের মতে, “আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে, বর্তমানে হোয়াইট হাউস আমাদের হাতে, সিনেট আমাদের হাতে, নিউইয়র্ক টাইমস্ আমাদের হাতেÑঅতএব আমাদের চিন্তা কিসের ? আমাদের সাথে কারো তুলনা হয় না। ইয়াহুদীরা আজ মুসলমানদের প্রথম কেবলা “বায়তুল মোকাদ্দাস” কে অবৈধভাবে দখলে রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যের কান্সার ইসরাইল আজ সমগ্র বিশ্বের জন্য অশান্তির উৎস। ইয়াহুদীরা তাদের নিজহাতে রচিত “তালমুদ” গ্রন্থ অনুসারে চলছে। তালমুদের শিক্ষা হচ্ছে, “ইয়াহুদীরা অন্যধর্মের লোকদের নির্বিচারে হত্যা করতে পারবে। অন্যজাতির ধন-সম্পদ দখলের অধিকার তাদের আছে।” এজন্য যে কোন পদক্ষেপ নিতে তারা কারো পরোয়া করে না। জনৈক মনীষী বলেছেন, “পৃথিবীর যে কোন স্থানে যুদ্ধ বা বিশৃংখলা দেখা দিলে মনে করতে হবে সেখানে ইয়াহুদীদের হাত আছে। এমনকি সাগরের অতল গভীরে দু’টি মাছও যদি ঝগড়া করে তার মধ্যেও ইয়াহুদীদের হাত থাকতে পারে।”
*****
বিষয়: সাহিত্য
২২১৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আচ্ছন্ন হয়ে যায়। চারদিকে ডাইনীদের
ফুতকারের মত হাওয়ার ফিসফাস,
আর পাখিরা গুপ্ত সাপের আতন্কে
আশ্রয় ছেড়ে অন্ধকারে ঝাপ দেয়
ঠিক তখুনি ইহুদিরা হেসে উঠে।
ইহুদিরা প্রকাশ্য শত্রু! এদের শত্রুতাভাবাপন্ন বিষাক্ত মন থেকে দূরে থাকা উচিত!
শুকরিয়া শেয়ার করার জন্য!
একটা অনুরোধ খুব কষ্ট না হলে স্টিকি পোস্টে একটু নজর বুলানোর অনুরোধ রইলো! খুবি চমৎকার একটি লিখা!
আসলে ব্লগে নতুন, আপনার পরামর্শ কামনা করি।
এখনো অনেক কিছুই অজানা। আপনার মন্তব্যটা আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে।
লেখার কোডটা আসলে সংগৃহীত..আমার নয়..আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ..
আসলে আমরা এখন নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি তাই ওরা রাজত্ব করছে। এই দোষারোপ তখন অর্থবহ হবে যখন আমরা সমানে সমান টেক্কা দিয়ে বলব এটা করিস না ওটা কর চুরি বাদ দে, তথ্য বিকৃতি বাদ দে, নংরামি বাদ দে ইত্যাদি।
কিন্তু আমরা যোগ্য নই এবং শুধু ওদের দোষারোপ করতেই ব্যস্ত। আমরা যদি তাদের দোষ দেয়ার পাশাপাশি নিজের করনীয় ঠিক করে সকল মুসলিম নিজ নিজ যোগ্যতা অর্জন পূর্বক সামনে এগুতে পারি তবেই এই দোষারোপ অর্থবহ হবে।
ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্যটা আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন