প্রবন্ধ-১ : নারী সমাজের উন্নয়ন : প্রেক্ষিত ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ১০ মে, ২০১৫, ১২:০৫:৫৭ দুপুর
নারী মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্তায়ালার এক অনন্য ও মর্যাদাপূর্ণ সৃষ্টি। পুরুষ ও নারীকে একে অপরের সহযোগী ও বন্ধুরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে নারী সমাজের ক্ষমতায়ন বা উন্নয়ন নিয়ে যেন পাশ্চাত্য বিশ্বের মেকি মাথা ব্যথার অন্ত নেই। নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার, নারী স্বাধীনতা, নারীর মর্যাদা ও উন্নয়ন ইত্যকার মধুর বাকচাতুর্যপূর্ণ কথা বলে বেড়ায়। তারা নারীদের পণ্য হিসাবে ব্যবহার করে আজ নারীত্বের যে অবমাননাকর জীবন-যাপন পদ্ধতির দিকে ধাবিত করছে-সেইপথ নারীদের জন্য কল্যাণের নয়, ধ্বংসের। তাদের সমস্ত অভিযোগের তীর কালজয়ী মতাদর্শ আল্ ইসলামের দিকেই নিবদ্ধ। দেশে দেশে নারী উন্নয়নের নীতি মালা তৈরি করে বিভিন্ন সম্মেলনের মাধ্যমে জাতিসংঘকে ব্যবহার করে কৌশলে চাপিয়ে দেয় ক্ষমতাসীন সরকারগুলোকে আয়ত্বে এনে। অত্র নিবন্ধে ইসলামের আলোকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারী সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু লিখার প্রয়াস পাব।
নারী সমাজের উন্নয়ন বলতে কি বুঝায়?
'তাযকিয়া' বা নফসের পরিশুদ্ধিই উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত। যা মানুষের ইহকাল এবং পরকালের সমৃদ্ধিকেই বুঝায়। ইসলামের প্রধান কাজ হলো মানবিক উন্নয়নকে সঠিক পথ ও দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে ব্যক্তির মূল্যবোধের ধরণ পরিবর্তন এবং তার সামাজিক পরিবেশকে পুনর্গঠন করা। 'নারী সমাজের উন্নয়ন' বলতে আমরা স্বাভাবিক ভাবে বুঝি, "নারীর (মানব সম্পদ) আর্থিক উপার্জনের ক্ষমতা বৃদ্ধি, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বস্তুগত উন্নতি সাধন।" এটা পাশ্চাত্য ধারণা। ইসলামের দৃষ্টিতে এই সংজ্ঞার সাথে নারীর অর্থোপার্জনে নৈতিকতা ও ধর্মীয় বিধি-বিধান সম্পর্কযুক্ত। আমরা জানি সকল-নবী রাসূল (সঃ) আগমনের মূল উদ্দেশ্যে হল, নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তোলা। আল্ কোরআনের ভাষায় : "তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠাইয়াছেন তাহাদের মধ্য হইতে, যে তাহাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁহার আয়াত সমূহ; তাহাদিগকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; ইতিপূর্বে ইহারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।" আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে আত্নিক পরিশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যার ফলে একজন নর বা নারীকে পরিপূর্ণতা দান করে ইহলোকিক উন্নয়নে এবং পারলৌকিক জগতেও তারা সফলকাম হয়।
নারীর উন্নয়ন সহযোগী হচ্ছেন পুরুষ :
ইসলামের সোনালী দিনগুলোতে নারী-পুরুষ সমভাবে জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। আল্ কোরআনের ভাষায় : "মু'মিন নারী ও পুরুষ পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। তারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজে নিষেধ করে।" সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। মানুষের মধ্যে দু'টি শ্রেণী। একটি হচ্ছে পুরুষ এবং অপরটি নারী। একে অপরের পরিপূরক। আল্ কোরআনের ভাষায়, "তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।" বাংলাদেশের জাতীয় ও তৌহিদবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যে বিধৃত হয়েছে : "বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।" নারী জীবনের আবাহন, পুলকের সঙ্গীত, পবিত্র ও স্নেহ-মমতার প্রতীক, প্রতিমূর্তি, বিশ্ব-নিখিলের প্রাণ সম্পদ। কবি সম্্রাট আল্লামা ইকবাল (র) নারীর অবদানের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেছেন-'বিশ্ব-নিখিলের যা কিছু চাকচিক্য তা সবই নারীর কারণেই।'
ইউরোপ ও পাশ্চাত্যে বর্তমানে নারীর অবস্থান :
নারীকে পাশ্চাত্য পণ্যের চেয়ে বেশী কিছু মনে করে না। প্রাচীনকালেও রোমান সাম্রাজ্য, গ্রীস-কোথাও নারীর অবস্থান তেমন উন্নততর ছিল না। গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস নারীকে জগতের বিশৃংখলা ও ভাঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস বলে বর্ণনা করেন। প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রে নারী জাতিকে শুধু নাগরিক অধিকার বঞ্চিত করেই থামেননি বরং তাদেরকে ভোগ্য পণ্য হিসাবে অভিহিত করেছেন। এরিস্টটল নারীকে "সন্তান পুনঃউৎপাদন" যন্ত্রের অন্য নাম বলেছেন। বর্তমানে পাশ্চাত্য সভ্যতায় নারী ও পুরুষের মধ্যে মানবীয় সম্পর্কের শেষ বন্ধনটুকু নিঃশেষ করে দিয়ে মানুষকে নিতান্তই পাশবিক স্তরে উপনীত করার লক্ষ্যে নারী সম্পর্কে নানা ধরনের নীতিমালা দেশে দেশে তাদের বশংবদ তৈরীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। কারণ পাশ্চাত্য সভ্যতায় পাশবিক উত্তেজনা ও যৌন লালসার পরিতৃপ্তিই হচ্ছে সাধারণ নারী পুরুষের একমাত্র সম্পর্কে ভিত্তি।.... একারণেই তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে লিভ-টুগেদার প্রথা তথা বিয়ে ব্যতীতই নারী-পুরুষের একত্রে বসবাস এবং যে কোনো মুহুর্তেই যৌনসঙ্গী বদল করতে পারে। লিভ-টুগেদারের ছোবল নর-নারীকে পরিবার নামক সুন্দর আদি সংগঠনের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে সভ্যতাকে ধ্বংসের নিমিত্তে।
ইসলাম পূর্ব-আরব জাহেলিয়াতে নারীর অবস্থান :
আরব জাহানের কয়েকটি গোত্র কন্যা শিশু সন্তান হত্যায় বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। জালেমরা কন্যাদের জীবিত দাফনকে বড়ই কৃতিত্বের কাজ বলে জাহির করত। সেই নির্লজ্জ কাজের জন্য বড়াইও করত। কন্যা শিশু জন্ম হলেই কি প্রতিক্রিয়া হতো আল্ কোরআনের ভাষায় : "তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের জন্ম সংবাদ দেয়া হত, তখন তাদের চেহারা কালো মলিন হয়ে যেত, সে হয়ে পড়ত মর্মাহত। তাকে যে সংবাদ দেয়া হল সে লজ্জায় সে সমাজের লোকদের থেকে পালিয়ে বেড়াত। সে ভাবে সে কি অপমান বয়েই চলবে নাকি তাকে মাটির নীচে লুকিয়ে ফেলবে-বুঝে দেখ, কি মন্দ ফয়সালা সে নিচ্ছে।"(সূরা আন নাহল : ৫৭-৫৮) যারা এই সব মন্দ ও ঘৃণ্য কাজ করেছে, (কন্যাদের জীবন্ত মাটিকে পুঁতে ফেলেছে) তাদের কাল আদালতে আখেরাতে জিজ্ঞাসা করা হবে। কোরআনের বর্ণনায় : "যখন প্রোথিত কন্যাদিগকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন্ অপরাধে তাদেরকে এমন ভাবে হত্যা করা হয়েছে?" (সূরা আত তাকবীর : ৮-৯) ইসলামের নবী এসে নারীদের সেই অন্ধকার গহ্বর থেকে রানীর সিংহাসনে বসিয়েছেন।
সুমহান আদর্শ আল্ ইসলামে নারীর অবস্থান :
মহান আল্লাহ্পাক বলেন, "হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকেই সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দু'জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন এবং আল্লাহকে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্ছা কর এবং সতর্ক থাক আত্নীয়তার বন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখেন।" এই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহর নবী মোহাম্মদ (সা)ই নারী সমাজের মর্যাদা ও অধিকার সুনিশ্চিত করেন। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী হচ্ছে সুখ, শান্তি, স্থিতি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের আধার। প্রেম ও ভালবাসার পাত্রী। ইসলাম বলছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ আল্লাহভীরু নারী। মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত। এক হাদীসে পিতার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিন গুণ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। নারী-পুরুষ পরস্পর পরিপূরক। একজন ব্যতীত অপরজন সম্পূর্ণ অচল। ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রীই সুখ-আনন্দ ও সান্ত্বনার মূল। জীবনযাপনে শত তিক্ততা, হাড়ভাঙ্গা কঠোর পরিশ্রম আর ক্লান্তির পর যার কাছে গেলে একটু শান্তি পাওয়া যায় সেই কাছের মানুষ স্ত্রী। রাসূল (সা) বলেছেন, "দুনিয়া উপভোগের বস্তু। আর সবচেয়ে উপভোগ্য জিনিস হলো সতী-সাধ্বী স্ত্রী।" স্বামীর ভাল-মন্দের সার্টিফিকেটের ক্ষমতা আল্লাহপাক নারীকেই প্রদান করেছেন। রাসূল (সা) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।" সুতরাং ইসলামই নারীর পরিপূর্ণ মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেছেন এটা নিঃসন্দেহ।
নারী উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা এবং নির্যাতনের কারণ :
নারী উন্নয়নে বাধা-বিপত্তি কম নয়। সমাজে নারী নিগৃহীত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, শোষিত ও বঞ্চিত। অনেক নারী পাচারের মাধ্যমে মেধার ও পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ নারী পাচারের ক্ষেত্রে একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। নারী পাচারকারী চক্র বাংলাদেশকে রুট হিসাবে ব্যবহার করছে। পাচারকৃত নারীরা দাসত্ব, যৌন শোষণ এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতাগুলো হচ্ছে : যৌন নির্যাতন, যৌতুক প্রথা, নারী পাচার, পিতার সম্পত্তির নারী অংশ অনাদায়, অশিক্ষা ও কুশিক্ষা, এসিড সন্ত্রাস, ইভটিজিং, কন্যা শিশু শ্রম (গৃহকর্মী), বাল্য বিবাহ, অবাধ মেলামেশা, পতিতা বৃত্তি, নারী অপহরণ, বেকারত্ব ইত্যাদি। নারীদের নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনপুষ্ট এনজিওগুলোর এত কৌশল সত্ত্বেও নারী নির্যাতন থেমে নেই। আমরা সমস্যার মূল উৎস চিহ্নিত না করে শুধু গলাফাটা চিৎকার করে গেল গেল রব তুলছি। কাজের বেলায় নেই। শুধু আইন করলে চলবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নারী নির্যাতনের প্রধান কারণ গুলো হলো : শিক্ষা বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, সমাজপতিদের মোড়লিপনা, পুরুষতান্ত্রিকতা, যৌতুক প্রথা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, অজ্ঞ লোক দ্বারা যত্রতত্র ফতোয়া প্রদান, নারীত্বের অবমানা করা হিল্লা বিয়ে, সহশিক্ষা, মেয়েদের বেপরোয়া চলাফেরা এবং প্রচার মাধ্যমগুলোতে অশ্লীল অনুষ্ঠান পরিচালনা ইত্যাদি বলা যায়।
নারী উন্নয়ন বিষয়ক বিভিন্ন সম্মেলন ও নীতিমালা :
নারীদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সংস্থা সময়ে সময়ে বিভিন্ন নীতি মালা রচনা করেছেন। এ নীতিমালার আসল উদ্দেশ্য নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন না সার্বিক ভাবে অধোগতির এ প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তাদের টার্গেট থাকে কিভাবে ইসলামী আদর্শকে হেয় করা যায়। মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ও মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতি বিরোধী কার্যকলাপ বাস্তবায়ন করা যায়। নারী সম্পর্কিত এ ধরনের সম্মেলন সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে মেঙ্েিকাতে। উক্ত বিশ্বনারী সম্মেলনে বাংলাদেশকেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়ে বাংলাদেশের বাইরে নারী উন্নয়নের নামে ইসলাম বিদ্বেষীদের দ্বারা যে আন্দোলন চলছে উক্ত আন্দোলনের সাথে মুসলিম প্রধান এদেশকেও যুক্ত করা হয়। ১৯৮০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বনারী সম্মেলন। ১৯৮৫ সালে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবীতে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় বিশ্বনারী সম্মেলন। ১৯৯৪ সালে মিশরের রাজধানী কায়রোতে দু'টো আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সালে কমনওয়েলথ জেন্ডার ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। একই বছরের ৪ থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর চীনের বেইজিংয়ে চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ ১৯৯৫ সালে বেইজিং সম্মেলন এবং ২০০০ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় নারী সম্মেলন। বাংলাদেশে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০০৮ প্রণয়ন করা হয়-এ বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠে কতিপয় ইসলাম বিরোধী ধারার জন্যে। এসব নীতিমালা ও সম্মেলনে যেসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে, তা পাঠ করলে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পশ্চিমা দুনিয়ার প্রভাব বলয়ে আবদ্ধ জাতিসংঘ বিশ্বায়ন পরিকল্পনার আড়ালে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈনদের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে তাদের চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাস অনুসারে সারা দুনিয়ার নারী-পুরুষকে উলঙ্গ সভ্যতার স্্রােতে ভাসিয়ে দিতে চায়।
নারী উন্নয়ন নীতিমালা-প্রেক্ষিত ইসলাম :
নারীর অধিকার বা উন্নয়নের নিশ্চয়তা আধুনিক যুগ বা বর্তমান সভ্যতা বা পাশ্চাত্য সভ্যতা নয়। সপ্তম শতাব্দীতে আল্লাহর রাসূল মানবতার মুক্তির দিশারী মোহাম্মদ (সা)ই নিশ্চিত করেছিল। নিম্নে ইসলামের নবী পবিত্র জবান থেকে নিঃসৃত নারী সম্পর্কিত নীতিমালা পেশ করা হচ্ছে, যা এই পৃথিবীর স্থায়িত্বকাল বা অনাগত ভবিষ্যতের জন্যও পথের দিশারী স্বরূপ। ১। মনুষ্যত্বের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের পরিপূর্ণ সাম্যের কথা এবং সবরকমের ভেদাভেদ ও বৈষম্য প্রত্যাখানের ঘোষণা করা হলো। (দেখুন সূরা নিসার ১নং আয়াত) আর রাসূল (সা) বলেছেন, "নারীগণ পুরুষদের সহোদরা।" ২। পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলোর অনুসারীরা নারীকে সকল পাপের উৎস এবং বেহেশত থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার জন্য দায়ী করেছেন। কিন্তু আল্ কোরআন বলছে আদম ও হাওয়া উভয়ে সমভাবে দায়ী। "শয়তান তাদের দু'জনকেই সেই বৃক্ষের ব্যাপারে পদস্খলন ঘটালো এবং তারা যে স্থানে ছিল সেখান থেকে বহিষ্কার করালো।" ৩। পুরুষের মত নারী যদি সৎকর্মশীলা হয় তবে সে জান্নাতে যেতে পারবে এবং তার ধর্মপালন ও ইবাদত করার পূর্ণ যোগ্যতা ও অধিকার রয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে অসৎকর্মশীলা হলে জাহান্নামে যাবে। "যে ব্যক্তি সৎ কাজ করবে, চাই সে পুরুষ হোক বা স্ত্রী হোক, সে যদি মু'মিন হয়, তবে আমি অবশ্যই অবশ্যই পবিত্র ও নিরাপদ জীবন যাপন করাবো এবং তার কৃত সৎকর্মের বিনিময়ে যথোচিত পুরষ্কার প্রদান করবো।" ৪। ইসলাম নারীকে অপয়া ও অশুভ মনে করা ও মেয়ে সন্তান ভুমিষ্ঠ হলে উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠিত হওয়ার মানসিকতাকে প্রতিহত করেছে। (দেখুন সূরা আন্ নহল ৫৯ নং আয়াত)৫। ইসলাম কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলার মত ঘৃণ্য প্রথাকে নিষিদ্ধ করে এবং এর বিরুদ্ধে চরম নিন্দাবাদ উচ্চারণ করে। "তারা নিজেদের সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতাবশত হত্যা করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।" ৬। ইসলাম নারীকে সম্মান করতে ও মর্যাদা দিতে নির্দেশ দিয়েছে মেয়ে হিসাবেও, স্ত্রী হিসাবেও এবং মা হিসাবেও। ৭। নারীকে শিক্ষা দানে ইসলাম প্রবলভাবে উৎসাহ দিয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন, " প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর ওপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ"। ৮। ইসলাম নারীকে উত্তরাধিকারের অংশ করেছে, তা সে মাতা, স্ত্রী অথবা কন্যা যা-ই হোক না কেন, এমন কি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ও সে উত্তরাধিকার পেয়ে থাকে। ৯। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য সমান অধিকার বিধিবদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করেছে এবং পুরুষকে পরিবারের প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত করলেও তাকে স্বেচ্ছাচারী বা অত্যাচারী হবার অনুমতি দেয় নি। কোরআন বলছে, "স্ত্রীদের যেমন দায়দায়িত্ব রয়েছে তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকারও রয়েছে। তবে তাদের ওপর পুরুষদের কিছু অগ্রাধিকার রয়েছে।" ১০। নারীকে প্রাপ্ত বয়স্কা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বীয় অভিভাবকদের কর্তৃত্বে ন্যস্ত করেছে এবং এই অভিভাবক সুলভ কর্তৃত্ব কেবল তার রক্ষণাবেক্ষণ, শিক্ষাদীক্ষা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।.. ..ইসলামী ফেকাহ শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে কেউ ক্রয়-বিক্রয়, দান, ওয়াকফ্, বন্ধক, ইজারা, শরীকী ব্যবসায় ইত্যাকার যাবতীয় আর্থিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে পুরুষ ও নারীর ক্ষমতায় ও অধিকারে আদৌ কোন পার্থক্য খুঁজে পাবে না।
মানব সভ্যতার উন্নতির জন্য নারী-পুরুষ উভয়েরই অবদান রয়েছে। পুরুষের পক্ষে একা উন্নতির শিখরে আরোহন করা অসম্ভব। নারীর সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও পরামর্শ একান্ত প্রয়োজন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, "মানব দেহে যেমন দুই চোখ, দুই হাত, দুই পা, সমাজ দেহে তেমনি নর-নারী। যে দেহে এক চোখ কানা, এক হাত লুলা, এক পা খোঁড়া, সে দেহ বিকলাঙ্গ। নারী জাতির সুষ্ঠু উন্নয়ন ব্যতীত সমাজকে সমুন্নত বলা যাবে না।" মানব সসম্পদের মধ্যে নারী এমন এক সম্পদ যাকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে সমাজ তথা দেশের প্রভুত উন্নতি সাধিত হবে। নেপোলিয়ান বলেছেন, " আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।" ইসলাম নারীকে অর্থোপাজনের স্বাধীনতা দিয়েছেন। চাকরি করার স্বাধীনতা দিয়েছে। জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ নারীদের আছে। তবে নারীর কর্মক্ষেত্র পৃথক হবে, পশ্চিমা সভ্যতার ন্যায় নারী-পুরুষ একত্রে অবস্থান করে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলবে এমন সুযোগ ইসলামে নেই। মুসলিম দুনিয়াকে গ্রাস ও ইসলামী সভ্যতাকে ধ্বংস করার জন্য বিশ্বায়ন ও নারী উন্নয়নের নামে যারা আর্তনাদ করছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রের ২১৭ বৎসরের ইতিহাসে একজনও কি নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে? কোন নারী সরকার প্রধান হয়নি। রাশিয়াতেও কোন নারী রাষ্ট্র প্রধান এ পর্যন্ত হয় নি, এমনকি চীনেও না। এ দিক দিয়ে বাংলাদেশ তাদের জন্য রোল মডেল।
=======
বিষয়: সাহিত্য
৩১৫৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইসলামী অনুশাসন মেনে চলাকে তারা হাজার বছর পিছিয়ে যাওয়া বলে মনে করে।
"ছাগল বান্ধব" শব্দটাও নতুন এবং অ-নে-ক সুন্দর।
আপনার শব্দ চয়ন চমৎকার!
মন্তব্য করতে লগইন করুন