ধর্ম যার যার,উৎসব সবার’ইহা একটি ভ্রান্ত মতবাদ ..

লিখেছেন লিখেছেন বিবেক নাই ১৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:১১:০৪ সকাল

ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞরা ই বলে “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”

বর্তমানে বাজারে প্রতারণামূলক চালু বাক্য — ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। এই বাক্যটি সেক্যুলারিস্টদের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বিষয়ের চটকদার “মনগড়া কথা”। একটু গভীরে চিন্তা করলে বোঝা যাবে কথাটির মাহাত্ব। সত্যিই কি “ধর্ম যার যার উৎসব সবার”? আস্তিকমাত্রই একথার অসারতা টের পাবেন। কেননা প্রত্যেকটি ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে জড়িত আছে ধর্মবিশ্বাস। ধর্মবিশ্বাসের সূত্র ধরেই একেকটা ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়।

পহেলা বৈশাখ বাংঙ্গালী,মুসলিম,হিন্দুয়ানি,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান না কোন ধর্মীয় সংস্কীতিক অনুষ্টান আসুন দেখি পহেলা বৈশাখে আমরা কি ভাবে পালন করি।বৈশাখ মাসের নামকরন করা হয়েছে আকাশের তারকা বিশাখা নক্ষত্রর নামানুসারে।আর বিশাখা নক্ষত্র হচ্ছে মুশরিকদের দেবতা।তাই বৈশাখ মাসের প্রথম দিন হিন্দু,অগ্নিউপাসকসহ সকল মশরিকরাই পূজা দিয়ে থাকে।

৪৯ বছর আগ থেকে ১৯৬৭ সালে রমনায় পহেলা বৈশাখ পালন শুরু হয় , ৩২ বছর আগ থেকে, ১৯৮৪ সালে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পান্তা-ইলিশ খাওয়া শুরু,২৭ বছর আগ থেকে, ১৯৮৯ সালে হাজার বছরের ঐতিহ্য মঙ্গলশোভাযাত্রা শুরু হয়?পহেলা বৈশাখ একটি সার্বজনিন বাঙালী উৎসব।আচ্ছা ঐ দিন কি কি সার্বজনিন অনুষ্ঠান আছে?হিন্দুদের ঘটপূজা, গণেশ পূজা, সিদ্ধেশ্বরী পূজা, হিন্দুদের ঘোড়ামেলা, হিন্দুদের চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা, হিন্দুদের চড়ক বা নীল পূজা বা শিবের উপাসনা ও সংশ্লিষ্ট মেলা, গম্ভীরা পূজা, কুমীরের পূজা, অগ্নিনৃত্য, ত্রিপুরাদের বৈশুখ মারমাদের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব, চাকমাদের বিজু উৎসব (ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের পূজা উৎসবগুলোর সম্মিলিত নাম বৈসাবি), হিন্দু ও বৌদ্ধদের উল্কিপূজা, মজুসি তথা অগ্নি পূজকদের নওরোজ, হিন্দুদের বউমেলা,মঙ্গলযাত্রা এবং সূর্যপূজা।তাহলে “পহেলা বৈশাখ কি ভাবে বাংঙ্গালী সংস্কীতিক অনুষ্টান হলো।

পহেলা বৈশাখের অনুষ্টানাদি দিনের শুরুতে নতুন দিন তথা সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্যে, নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকে সংগীত ও বাদ্য। ইসলামে নারীকন্ঠে সংগীত নিঃসন্দেহে নিষিদ্ধ,সাধারণভাবে যে কোন বাদ্যযন্ত্রকেও ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া, যেমন বিশেষ কিছু উপলক্ষে দফ নামক বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অনুমতি হাদীসে এসেছে। তাই যে সকল স্থানে এসব হারাম সংগীত উপস্থাপিত হয়, সে সকল স্থানে যাওয়া, এগুলোতে অংশ নেয়া, এগুলোতে কোন ধরনের সহায়তা করা কিংবা তা দেখা বা শোনা সকল মুসলিমের জন্য হারাম। কিন্তু কোন মুসলিম যদি এতে উপস্থিত থাকার ফলে সেখানে সংঘটিত এইসকল পাপাচারকে বন্ধ করতে সমর্থ হয়, তবে তার জন্য সেটা অনুমোদনযোগ্য। তাছাড়া অনর্থক কথা ও গল্প-কাহিনী যা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তা নিঃসন্দেহে মুসলিমের জন্য বর্জনীয়। অনর্থক কথা, বানোয়াট গল্প-কাহিনী এবং গান-বাজনা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য শয়তানের পুরোনো কূটচালের একটি।

সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এজন্য যে, এতে নিম্নোলিখিত চারটি শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে:

১. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত

২. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান

৩. গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান

৪. সময় অপচয়কারী অনর্থক ও বাজে কথা এবং কাজ

“ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” মুসলিমরা যারা এই দাবির পক্ষে কন্ঠ মিলিয়ে বলে তারা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ। মনে রাখতে হবে ইসলাম কখনো নীতিগত ভাবেই এধরণের বিষয় স্বীকার করেনা। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা সূরা কাফিরূন এর শেষ আয়াতে ই স্পষ্ট করেছেন, যার যার দ্বীন তার এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাফেরদের উদ্দেশ্যে বলতে বলেছেন –“তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে। ” – সূরা কাফিরুন আয়াত ৬

ধর্ম যার যার উৎসব সবার – যদি সত্যি এমন হত তাহলে রাসুল (সাঃ) ইহুদি খ্রিষ্ঠানদের উৎসব বাতিল করে মুসলমানদের শুধু মাত্র দুই ঈদের সুসংবাদ দিলেন কেন? যদি জায়েজ হত উনি তখন সাহাবিদেরকে সেই সকল উৎসব উদযাপনে নিষেধ করতেন না! এখানেই রয়েছে ঈমানের পরীক্ষা! যার অনুষ্ঠান সে পালন করুক তাতে মুসলমানের কিছু আসে যায় না, যার প্রেক্ষিতে সুরা ক্বাফিরুন নাজিল হলো!

আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ভাবেই মুমিনকে সতর্ক করেছেন এই আয়াতে –

“মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।” – সূরা আল ইমরান আয়াত -২৮

‘ইসলাম কাউকে ঘৃণা করতে শেখায় না, সবাইকে ভালোবাসতে শেখায়, বিধর্মীরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালুন করুক। তাতে ইসলাম বাধা দেয়না কিন্তু কোন মুসলমান যদি তাদের সে অনুষ্ঠানে যায়, শুভেচ্ছা যানায় তাহলে সে মারাত্বক অপরাদ করলো।

ইমাম ইবনে কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) এর বক্তব্য শুনুন,

“কাফেরদের তাদের উৎসবে সম্ভাষণ জানানো আলিমদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ। এটা কাউকে মদ খাওয়া বা খুন করা বা ব্যভিচার করায় সাধুবাদ জানানোর মতো। যাদের নিজের দ্বীনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, তারাই কেবল এ ধরনের ভুল করতে পারে। যে অন্যকে আল্লাহ্‌র অবাধ্যতা, বিদ’আত, অথবা কুফরীতে জড়ানোর কারণে শুভেচ্ছা জানাবে সে আল্লাহ্‌র ক্রোধ ও শাস্তির সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করল”।হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।যেখানে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনই নিষিদ্ধ সেখানে অংশগ্রহণ কতটা ভয়াবহ হতে পারে?! ‘তাই “ধর্ম যার যার উৎসব সবার”’ কিংবা ‘সার্বজনীন …. উৎসব’ এরকম কুফরী বচনে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের ঈমানকে নিয়ে খেলা করা অবশ্যই মুসলীম হিসেবে বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হচ্ছে ওদের ধর্ম ওরা নির্ভিগ্নে বাধাহীনভাবে পালন করবে।

আজকাল হিন্দু ও নাস্তিকরা ইসলামবিরোধী যা কিছু করতে চায় সবকিছুই মুক্তিযুদ্ধের অজুহাত দিয়ে করতে চায়। বলে-

১) রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,

২) সুপ্রীম কোর্টে গ্রিক দেবীর মূর্তির মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

৩) মঙ্গলশোভাযাত্রার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

৪) সারা দেশব্যাপী পূজা পার্বন করার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

৫) পহেলা বৈশাখ পালনের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

৬) পাঠ্যপুস্তকে হিন্দুত্ববাদ প্রবেশের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

৭) ধর্মনিরপেক্ষা ও অসাম্প্রদায়িকতার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

বিষয়: বিবিধ

১২২১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382640
১৩ এপ্রিল ২০১৭ বিকাল ০৫:৩৯
হতভাগা লিখেছেন :
“ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”



তাহলে ...।

চাকরি যার যার বেতন সবার ?!

বিয়ে যার যার বউ সবার !?

এসব কমিউনিস্ট তথা নাস্তিকদের বুলি । শুনতে ভালই লাগে কিন্তু এটা কেবল মুসলমানদের প্রতিই বলা হয়।
১৭ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ১১:৩২
316221
বিবেক নাই লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
382643
১৩ এপ্রিল ২০১৭ রাত ০৮:০৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : উৎসব সবার হলে উনারা কুরবানিতে গরু খেতে আসবেন!!!
382722
১৭ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ১১:৩২
বিবেক নাই লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File