আসল বিএনপি চাচা বললেন, যা ভেবেছিলাম, তাই হয়েছে। বললাম, কী ভেবেছিলেন, আর কী হয়েছে?

লিখেছেন লিখেছেন বিবেক নাই ০৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৫৮:৫৫ সকাল

Cheerপৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে গো-হারা হারিয়েছে। ভূমিধস বিজয় যাকে বলে। চাচা আরও বললেন, এই বিজয়ে আমি মোটেই বিস্মিত হইনি।

আমি অবশ্য বিস্মিত হয়েছি। Unlucky

কী কারণে?

এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করলো, আওয়ামী প্রার্থীদের সঙ্গে অত্যন্ত বিমাত্রেয়সুলভ আচরণ করলো, তারপরও আওয়ামী লীগ প্রার্থী ২৩৪ পৌরসভার মধ্যে ১৮৩ জন জয়যুক্ত হলো কী করে? এতে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না।

কথাটা কি সোজাভাবে বললে না বাঁকা ভাবে? চাচা প্রশ্ন করলেন।

যে যেভাবে যা বোঝে।

আমাদের আলোচনার মাঝখানে ম্যাজিক আলী এসে উপস্থিত। আমরা পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কথা বলছি দেখে তিনিও সোৎসাহে আলোচনায় যোগ দিলেন। বললেন, আরেকটু হলেই কাজ সারা হয়ে গিয়েছিল।

কেন? কী হয়েছে?

প্রায় ধরা পড়ে যাচ্ছিলাম। কী বলবো স্যার! নির্বাচন কমিশন চোখ বুঁজে থাকার অভ্যাসটা পালটে ফেলেছে।

সেটা তো ভালো কথা। আমি বললাম।

মোটেই ভালো কথা নয়। আমাদের স্পেশাল স্কোয়াডের ছেলেরা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে সিল মারছিল। রিটার্নিং অফিসারও চোখ বন্ধ করে ঘুমাচ্ছিলেন। আমাদের কাজের মাঝখানে কে যেন ইসির কাছে নালিশ করলো। অমনি ইসির টেলিফোন গেল রিটার্নিং অফিসারের কাছে। বেচারার ঘুমটি ভাঙ্গিয়ে দিলো। কী অন্যায় স্যার বলেন দেখি!

কিন্তু আপনাদের কাজের অসুবিধা হলো কী করে? আর ধরাই বা পড়তে যাচ্ছিলেন কী করে? আমার জিজ্ঞাসা।

রিটার্নিং অফিসার যখন বললেন, কে নালিশ করেছে আমি চোখ বুঁজে আছি? ধরে আনো কে সেই লোক! তখনই বুঝতে পারলাম আমাদের তখন সটকে পড়াই উচিত। কাজ অসমাপ্ত রেখে আমাদের স্পেশাল স্কোয়াডের ছেলেরা তখন হাত গুটিয়ে নিলো।

তারপর? চাচা জানতে চাইলেন।

এক সাংবাদিককে ধরে আনা হলো যে নির্বাচন কমিশনে নালিশ করেছিল। তাকে হম্বিতম্বি করে পুলিশে দেয়ার ব্যবস্থা হলো।

তার অন্যায়টা কী?

বহুমুখী অন্যায় স্যার। প্রথমত, সাংবাদিকের কাজ হচ্ছে সংবাদ সংগ্রহ করা। তার কাজ নির্বাচন কমিশনে টেলিফোন করা নয়।

কিন্তু তিনি যে নির্বাচন কমিশনে ফোন করেছেন, তা জানা গেল কী করে?

নির্বাচন কমিশনই রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়ে দিয়েছে। আমাদের স্কোয়াডের ছেলেরা তার মোবাইলসমেত রিটার্নিং অফিসারের কাছে হাজির করেছে। ম্যাজিক আলী বললেন, আমি অবশ্য সাংবাদিকদের কারো গায়ে হাত লাগাতে মানা করেছিলাম। কিন্তু তারপরেও-

তারপরেও কী? আমি জানতে চাইলাম।

কোথায়ও অন্যায় দেখলে আমার ছেলেরা তা সহ্য করতে পারে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই তো আমাদের রাজনীতির শিক্ষা। তবু আমার নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করে ঐ সাংবাদিকের দু’গালে মাত্র দুটো করে-

দুটো করে কী?

চড় বা থাপ্পড় বলতে পারেন।

কিন্তু আপনারা ধরা পড়তে গিয়ে বেঁচে গেছেন। একথা বললেন কেন? কার কাছে ধরা পড়ার কথা বলছেন? রিটার্নিং অফিসারের কাছে নাকি?

আপনি হাসালেন স্যার। রিটার্নিং অফিসার তো আমাদেরই লোক। আমাদের বড় ভাই বলতে পারেন। তিনি আমাদের ধরবেন কেন?

টিভির ক্যামেরাম্যানের কথা বলছি স্যার। ঐ ব্যাটা পরিত্যক্ত ব্যালট পেপারগুলোর ছবি তুলে নিয়েছে। ভাগ্যিস! তার আগেই আমরা, মানে আমাদের ছেলেরা সেখান থেকে সটকে পড়েছে।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, নির্বাচন কমিশন বা রিটার্নিং অফিসার এ ব্যাপারে কি বললেন?

যা বলার রিটার্নিং অফিসারই বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যেগুলো পরিত্যক্ত ব্যালট পেপার বলা হচ্ছে, সেগুলো আসলে পরিত্যক্ত নয়। ওগুলো সংরক্ষিত স্থানে ছিল। ক্যামেরাম্যান অবৈধভাবে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে ওগুলো সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ছবি তুলেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

চাচা বললেন, রিটার্নিং অফিসার ঠিকই বলেছেন। খবর নিয়ে দেখা যাবে ঐ ক্যামেরাম্যান আসলে বিএনপি।

কথাটা ঠিক নয়, খবর নিয়ে দেখেছি সে আগে জাতীয় পার্টি করতো।

তাহলে নিশ্চয়ই বিএনপির কাছ থেকে টাকা খেয়েছে।

তা হতে পারে। ম্যাজিক আলীর জবাব। একটু থেমে তিনি আবার বললেন, বিএনপি নির্বাচনে আসায় আওয়ামী লীগ থেকে তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলা হয়েছে এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি। এটাই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন।

আমি ম্যাজিক আলীর দিকে তাকিয়ে বললাম, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তাহলে ভুল করেনি। শুধু বৈধতা দেয়ার জন্য বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠিক হতো না।

তুমি সব সময় নেতিবাচক দৃষ্টিতে সবকিছু দেখ। চাচা রুষ্টভাবে জানালেন, বিএনপি নির্বাচনে বৈধতা দেয়ার কে? দেশের মানুষ ৫ই জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে। যেসব বিদেশি রাষ্ট্র ওই সময়ে আমাদের নির্বাচন নিয়ে গাইগুই করছিল, তারা এখন বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান দেখে গাইগরু হয়ে গেছে।

ঠিক বলেছেন স্যার! ম্যাজিক আলী সোৎসাহে বললেন, আমেরিকা তো এখন বাংলাদেশের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে রেখেছে।

আমাদের কথাবার্তার মাঝখানে চাচি চা-নাশতা নিয়ে এলেন। টেবিলে প্লেটগুলো সাজিয়ে রেখে চাচি বললেন, পৌর নির্বাচন তো শেষ। এখন আর কিসের আলোচনা চলছে।

পৌর নির্বাচন না হয় শেষ। জাতীয় নির্বাচন তো সামনে। ম্যাজিক আলী জানালেন।

সে তো অনেক দূরে।

দূর কোথায়? পৌর নির্বাচনের পরপরই তো জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ফেলা যায়। পৌর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের একটা রিহার্সেলও হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আমার একটা আইডিয়া আছে।

কী আইডিয়া? চাচির জিজ্ঞাসা।

আওয়ামী লীগ দাবি করেছে অতীতের যে কোনো পৌর নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এ জন্য জাতীয়ভাবে কাজী রকিবউদ্দিন স্যারকে জাতীয় পর্যায়ে একটা সংবর্ধনা দেয়া যেতে পারে।

এ ধরনের সংবর্ধনায় তিনি রাজি হবেন কিনা, আমাদের সন্দেহ আছে। আমি বললাম।

দেশ ও জাতির স্বার্থে তার রাজি হওয়া উচিত। ম্যাজিক আলী আরও জানালেন, গুণীজনকে সংবর্ধনা জানিয়ে দেশে আরও গুণীজন সৃষ্টি করতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।

কথাটা ঠিক। চাচা সায় দিলেন।

আমার আরেকটা প্রস্তাব আছে।

কী? চাচি জানতে চাইলেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচনটা যাতে বর্তমান সিইসির কার্যকালে হয়, তার ব্যবস্থা নেয়া।

সেটা কীভাবে সম্ভব? আমি জানতে চাইলাম।

দেশ ও জাতির স্বার্থে সবই হতে পারে স্যার। তাকে দ্বিতীয় দফা নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।

সেটা বোধহয় সংবিধানসম্মত হবে না। চাচা আমতা আমতা করলেন।

তারও ব্যবস্থা আছে। ম্যাজিক আলী হাসি হাসি মুখে জানালেন, বিগত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ যথাশিঘ্র আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেছিল। সেই প্রতিশ্রুতি এখন পালন করতে অসুবিধা কী?

চাচি ম্যাজিক আলীকে জিজ্ঞাসা করলেন, জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আপনার এতো আগ্রহ কেন? ঘটনা কী?

ঐ নির্বাচনে আমি এবার ক্যান্ডিডেট হতে চাই।

তাই নাকি? কোন দল থেকে?

জাতীয় পার্টি থেকে।

আওয়ামী লীগ থাকতে জাতীয় পার্টি কেন?

দুটো বিশেষ কারণে। প্রধান কারণ হচ্ছে জাতীয় পার্টি হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র রাজনৈতিক দল যার এমপি হলে পজিশনে থাকা যাবে, আবার অপজিশনেও থাকা যাবে।

আরেকটি কারণ কী?

জাতীয় পার্টি থেকে দাঁড়ালে মনোনয়নপত্র বাতিলের সম্ভাবনা নেই। এমন কি এরশাদ সাহেবের মতো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও প্রার্থীকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনা হবে।

চাচা বললেন, আপনার এহেন আশা পূরণ হবে না। আমার কাছে খবর আছে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির গাঁটছড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই আলগা হয়ে যাবে। দুই দলের আঁতাত আর থাকছে না।

কুচ পরোয়া নেই। ম্যাজিক আলী আবার হাসি হাসি মুখে জানালেন, আমি তাহলে বিএনপি থেকে দাঁড়াবো।

আপনি বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন? চাচি সবিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন।

অবশ্যই। ম্যাজিক আলী বললেন, আমি জিয়ার বিএনপি থেকে প্রার্থী হবো। খালেদার বিএনপি থেকে নয়।

কথাটার মানে ঠিক বুঝলাম না। চাচি জানতে চাইলেন।

জিয়ার বিএনপি হচ্ছে ‘আসল বিএনপি’। সরকারের মদত পেলে আমরা পুরানা পল্টনের অফিস দখল করে খালেদার বিএনপিকে হটিয়ে দেব। প্রথমবার আমরা সফল হতে পারিনি। বিগলিত হেসে ম্যাজিক আলী বললেন, সরকারের আরেকটু বাড়তি মদত পেলে খালেদা বেগম সাহেবাকে আরেকবার গুলশানে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা যাবে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

356273
০৬ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৫৯
356274
০৬ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১০:০৫
egypt12 লিখেছেন : বহুত ফায়দা হইল।
356303
০৬ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:২২

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File