অমুসলমানদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক কি ?? ২৭/০৪/২০১৫
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে ইলিয়াস ২৯ এপ্রিল, ২০১৫, ১২:১৪:৫৪ রাত
সম্প্রতি সময়ে নেপালে ভুমিকম্প হওয়ায় যে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে তাদের প্রতি মুসলিমদের আচারন কি হবে তা নিয়ে বিতর্ক উঠছে । তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে হবে নাকি দুয়া করা যাবে তা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন করেছেন । ফলে তাদের জন্য দোয়া করতে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন । তাই কয়েকদিন যাবত ভাবছিলাম যে অমুসলিমদের সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক কি ? এই পৃথিবীতে কিভাবে তাদের সাথে মুসলিমরা বসবাস করবে ?
আমার ক্ষুদ্র ভাবনায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তার কিছু অংশ হল এমন .......
• পৃথিবীর সকল মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি । মহান আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষকে একই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। ফলে সৃষ্টিগত ভাবে সকল মানুষই এক ও অভিন্ন ।
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ [٥١:٥٦]
আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। আল-জারিয়াত-৫৫
• পৃথিবীর সকল মানুষকে তৈরী করা হয়েছে এক #আদম ও #হাওয়া থেকে । ফলে সকল মানুষের আদি উৎস এক ও অভিন্ন । এবং এই সুত্রে পৃথিবীর সকল মানুষ পরষ্পর ভাই ভাই । জন্মসুত্রে সকল মানুষ জাত, ধর্ম ও বর্ন নির্বিশেষে সকলে পরষ্পর ভাই ভাই ।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا [٤:١]
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। সুরা আন-নিসা - ০১
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ [٤٩:١٣]
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। সুরা আল হুজরাত-১৩
• আর প্রত্যেক শিশুই জন্মসুত্রে মুসলিম বা ফেতরাতের উপর জন্মগ্রহন করে । ফলে সে দিক দিয়েও অমুসলিম জন্ম সুত্রে মুসলিমের সমান ।
• আল্লাহ পৃথিবীর খেলাফতের দায়িত্ব কেবল মুসলমানদের কে দান করেন নাই , বরং এখানে অমুসলিমদেরও অধিকার ও দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হয়েছে । ফলে এই দায়িত্ব পালনেও উভয় একে অপরের সহকারী ।
• وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ [٢:٣٠]
আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। সুরা আল-বাকারা-৩০
এই আলোচনায় এটি প্রমানিত হয় যে, পৃথিবীর সকল মুসলিম ও অমুসলিম উভয় পরষ্পর ভাই –ভাই । অর্থাৎ তাদের মাঝে সম্পর্ক হবে ভাইয়ের সম্পর্ক । তবে এই ভাই অন্তরঙ্গ ভাই নয় বরং তা মানবিক বা সাধারন সম্পর্ক ।
কিন্তু তাহলে অমুসলিমদের সাথে মুসলিমদের পার্থক্য কোথায় ?? মুসলমানদের স্বাতন্ত্র কিভাবে রক্ষা হবে ? জাতি হিসেবে তারা কখনো এক নায় । তাদের কালচার, আচার আচারন ও চিন্ত-চেতনা কখনো এক ও অভিন্ন নয় । এই অভিন্নতা রক্ষা করার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার বার্তাবাহক সা: আমাদেরকে প্রাকটিক্যাল করে দেখিয়েছেন ।
পবিত্র কুরআন বারবার মুসলিমদের কে বলেছে, তোমরা কখনো মুসলিম ছাড়া অমুসলিমদেরকে #বন্ধু হিসেবে গ্রহন করো না । কুরআন #ওয়ালী” শব্দ ব্যাবহার করেছে । যার মৌলিক অর্থ হল বন্ধু, অভিভাবক বা প্রিয়তম । এই দিক থেকে মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের কোন বন্ধুত্ব হতে পারেনা । তারা পৃথিবীতে মানবিক কারনে ভাই হিসেবে বসবাস করবে কিন্তু কখনো বন্ধু হিসেবে বসবাস করতে পারেনা ।
যেমন আল্লাহ বলছেন
الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَيَبْتَغُونَ عِندَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا [٤:١٣٩]
যারা মুসলমানদের বর্জন করে কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নেয় এবং তাদেরই কাছে সম্মান প্রত্যাশা করে, অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য। আন-নিসা-১৩৯
لَّا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَن تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ ۗ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ [٣:٢٨]
মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। আলে-ইমরান-২৮
তাই অমুসলিমদের সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক অবশ্যই স্বাভাবিক ও সাধারন থাকতে হবে । তাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকতে হবে কিন্তু কখনো তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করা যাবে না ।
মহান আল্লাহ আমাদের ভুলের জন্য ক্ষমা করুন ।
বিষয়: রাজনীতি
১০৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন