আশুলিয়া ব্যাংক ডাকাতি জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত নাশকতা

লিখেছেন লিখেছেন মেজর রাহাত০০৭ ২৩ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:৩৮:৫৮ সকাল

ঢাকার পোশাক শিল্পপল্লী খ্যাত সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারস্থ বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখায় দিনেদুপুরে ফিল্মি কায়দায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে ধরা পড়া দুই ডাকাত বোরহান ও সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ ডাকাত বোরহান সম্পর্কে জানতে পেরেছে, সে নিজে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং তার পরিবারটিও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অপর ডাকাত সাইফুল সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছে পুলিশ কর্মকর্তারা। দুই ডাকাত ধরা পড়া ছাড়াও গণপিটুনিতে সুমন নামে অপর এক ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনার পর তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। ডাকাত দলটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড, বোমার ব্যবহার করেছিল, যা সাধারণত যুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে সামরিক বাহিনী। ডাকাতির এই ঘটনাকে বড় ধরনের নাশকতার উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ডাকাতদের হাতে হতাহত ও ডাকাতি এবং গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনায় আটক ডাকাত সাইফুল ইসলাম সুমনসহ ১২ ডাকাত ও অজ্ঞাতনানাম ৩শ’ জনকে আসামি করে দুইটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে সাভারের আশুলিয়া থানায়। ডাকাতির ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে আটক হওয়া বোরহান মিজান নামে এক ডাকাত জামায়াত-শিবির কর্মী বলে পরিচয় পেয়েছে পুুলিশ কর্মকর্তারা। ডাকাতদের গুলি, বোমা ও ছুরিকাঘাতে নিহতদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাকাতের হাতে গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত ১৬ জনের মধ্যে অনেকের অবস্থাই এখনও আশঙ্কাজনক। ডাকাতদের হাতে হতাহতের ঘটনায় হাসপাতালে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে আর্তনাদ আহাজারীতে হৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। পোশাক শিল্পপল্লী খ্যাত সাভারের আশুলিয়ায় ডাকাতির পুনরাবৃত্তি রোধকল্পে নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

যা বলেছেন ডিআইজি ॥ সাভারের আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ও আট খুনের ঘটনা নিছক ডাকাতির উদ্দেশ্যই নয়, নাশকতা ও জনমনে ভয় ভীতি সঞ্চারের জন্য ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনা দেশের অপরাধমাত্রায় নতুন সংযোজন ও ঘটনার সঙ্গে জঙ্গী ছাড়াও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বুধবার দুপুরে সাভার মডেল থানায় আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতি মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে আয়োজিত পুলিশের বিশেষ বিফ্রিংয়ে এ কথা বলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান।

ডিআইজি বলেন, ছিনতাই-লুটপাট-ডাকাতি অনেক হয় তবে এভাবে মানুষ হত্যা করার নজির নেই। টাকার লোভেই যে এ ঘটনা ঘটেছে তা মনে করছি না। কমার্স ব্যাংকে যে ঘটনা ঘটেছে তা মারাত্মক ধরনের অপরাধ এবং বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এভাবে ইতোপূর্বে ঘটেনি। ডাকাতির ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ডাকাতরা ইচ্ছে করলে ভল্ট খুলে কোটি কোটি টাকা নিতে পারত। কিন্তু সেদিকে যায়নি তারা। ডাকাতদের কথামতো আত্মরক্ষার্থে সবাই মেঝেতে শুয়েছে। তারপরও ডাকাতরা নির্বিচারে গুলি ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ব্যাংকের ম্যানেজারসহ অন্যদের হত্যা করেছে। ডাকাতির নামে আসলে তাদের মূল উদ্দেশ ছিল হত্যা করা, নাশকতা সৃষ্টি করা। তারা যে ধরনের অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে তা বাংলাদেশে আগে ব্যবহার হয়নি। র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তা মেজর খালিদের সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি আমাদের জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে বিস্ফোরক উপাদান এনে ইম্প্রোভাইজ ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে। যে বোমা তারা ছুড়েছে তা অত্যাধুনিক। এগুলো কিন্তু বাইরে থেকে কেনা সম্ভব নয়। সে দিকে এটি একটি নতুন ডাইমেনশন বলে জানান ডিআইজি নূরুজ্জামান।

লুট করা ৬ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৩ টাকার মধ্যে ৬ লাখ ৭ হাজার ২৫৫ টাকা উদ্ধার করার কথা জানিয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আরও বলেন, এখানে উল্লেখ করার বিষয়টি হলো স্থানীয় জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে এবং ডাকাতদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা ৩ জনকে ধরেছে। একজনকে গণপিটুনি দিয়ে মেরেছে। জনগণের এই প্রতিরোধ ভাল লক্ষণ। কারণ জনগণ এই ধরনের নাশকতা কখনও গ্রহণ করেনি এবং করবেও না বলে জানান তিনি।

ডিআইজি নুরুজ্জামান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছি। তার নাম বোরহান মৃধা। সে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বাসিন্দা। বোরহান শিবিরের কর্মী। তার গোটা পরিবারই শিবিরের সাথে সংযুক্ত। তদন্ত চলছে। ব্যবহৃত পাঞ্জাবিতে রক্ত লাগার পর সে বেশ পরিবর্তনের চেষ্টা করে। তার কাছ থেকে আমরা কিছু শিবিরের জিহাদী বই পেয়েছি। আটক অপরজনের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, যেহেতু সূত্র পাওয়া গেছে, সঠিক তদন্তের আর অসুবিধা হবে না। ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে এলে তারা কিন্তু মানুষ মারত না। যারা বাংলাদেশের পতাকা, মানচিত্র মানে না, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ কিংবা জিহাদ ঘোষণা করেছে, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া লুণ্ঠিত টাকা, বেশ কিছু জিহাদী বই ও ডাকাতির ঘটনার ব্যবহৃত একটি ছোরা প্রদর্শন করা হয়।

বুধবার সাভার থানায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম, সাভার মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, আশুলিয়া থানার সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, ওসি মোস্তফা কামাল, সাভার মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান।

বিষয়: বিবিধ

১০৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File