ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আর সমসাময়িক কিছু ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন সজীব শাহরিয়ার ১৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:৫৮:০৮ দুপুর
প্রথমে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার রব না তুলে শাসক-শাসিতসহ গোটা সমাজকে ইসলামের সঠিক তাৎপর্যের দিকে ফিরিয়ে আনার আওয়াজ তুলতে হবে এবং এমন এক পদ্ধতির অনুকরণ করতে হবে যে পদ্ধতিতে সমস্ত মানুষকে পরিব্যপ্ত না করা গেলেও এমন কতক মানুষকে পরিব্যপ্ত করতে হবে যাদের প্রভাবে সমাজ প্রভাবিত হয় এবং যাদের কথায় মানুষ ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার প্রতি লালায়িত হয়।”
- সাইয়েদ কুতুব
(বই: ফাঁসির মঞ্চ থেকে বলছি, পৃষ্ঠাঃ ২২,
১৯৬৫ সালে মিশরের সামরিক কারাগারে বসে বইটি তিনি লেখেন। এটা তাঁর লেখা জীবনের সর্বশেষ বই)
বাংলাদেশে কি শাসক-শাসিতসহ গোটা সমাজকে ইসলামের সঠিক তাৎপর্যের দিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে? মিশরের সেই ইখওয়ানের সাথে বাংলাদেশের সমস্ত ইসলামী দলগুলোর পার্থ্ক্য
এই যে, ইখওয়ান কে মিশরের সর্বস্তরের জনগন ভালবাসত। তাদের নাম ও দলের বিরুদ্ধে যতটাই কালিমা লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে তা ব্যার্থ প্রতিপন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে এখন অব্দি ইখওয়ানের তুলনায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্টের ভালবাসার দল নেই। আমার মতে বাংলাদেশে সব চাইতে জনপ্রিয় জামাত হলো তাবলীগ জামাত । কিন্তু তাবলীগ জামাত পলিশিগত দিক থেকে রাস্ট্র কিংবা সমাজ ব্যাবস্তা উন্নয়ন বা ভাঙ্গা-গড়া অর্থাৎ সামাজিক সংস্খারের কোন পরিকল্পনা আছে বলে আমার মনে হয় না। ইসলামী শাশনতন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ আর ইসলামী এক্যজোটের যে যৎসামন্য জনশক্তি ও জনসর্মথন আছে তা দিয়ে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার দাবী তোলা যায় কি? মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ ষোট কোটি মানুষের দেশ এ যে বিপুল ইসলামী শক্তি বিদ্যমান একথা যেমন সত্যি তেমনি তাদের প্লাটফর্ম হওয়ার মত শক্ত ও মজবুত প্লাটফর্ম এখনও তৈরী করা সম্ভব হয়নি। মিশর কিংবা ফিলিস্তিনের মত বাংলদেশকে বিচার করা যদিও যায় না। ভৌগলিক ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ একটু ভিন্নতর অবস্থানে আছে বলে আমি মনে করি। শেষ দল হিসাবে যাদের নাম আসে তা হল জামাত ই ইসলামী। তাদের বিপুল জনপ্রিয়তা ও জনশক্তি থাকলেও বদনামের দিক থেকেও তারাই বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে উপরে। গত চুয়াল্লিশ বছরে জামাত অত্যন্ত কঠোর পরশ্রম করে তাদের দলকে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তর শক্তিতে পরিনত করেছে। কিন্ত যুদ্ধাপরাধের ইস্যুতে জনগনের একটা বিরাট অংশ তাদের ঘৃনাভরে দেখে। নিরপেক্ষভাবে বলতে গেলে, অধ্যাপক গোলাম আজমের নেতৃত্বে জামাতের সাংগঠিক ভিত্তি সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয়েছিল। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত জামাতের আকাশচুম্বি জনশক্তি বৃদ্ধি জামাতকে মাঠে শক্তিশালী করলেও কর্মীর মান ইসলামী আন্দোলনের আকাংখা বাস্তবায়নে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পেরেছে কি? মুহাম্মদ কামারুজ্জামান তার শেষ চিঠিতে ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্ববহ কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন কিন্তু আমার কাছে মনে হয় জামাতের হাইকমান্ড ত্রি অপশনের প্রথমটিই বেছে নিয়েছেন। যাকে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেছেন, “ আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় উপরোক্ত তিন অবস্থায় প্রথমটা হচ্ছে নেতৃত্ব আঁকড়ে থাকা, হতবুদ্ধিতা এবং হতাশাবাদিতা। একটি গতিশীল আন্দোলন এ ধরনের পশ্চাৎমুখী অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না।”
“গোটা সমাজকে ইসলামের সঠিক তাৎপর্যের দিকে ফিরিয়ে আনার আওয়াজ তুলতে হবে”
সাইয়েদ কুতুবের বক্তব্যের এই অংশটি এখন অত্যন্ত জরুরী বলে মনে হয়। পরোক্ষভাবে তাবলীগ জামাত এ কাজটি করে গেলেও নেতৃত্বে সংকট এবং সাংগঠনিক কাঠামোহীনতা, লং-টার্ম পলিশি না থাকায় তারা জাতিকে ইপ্সিত গৌন্তব্যে পৌছে দিতে পারবে কি?
বিষয়: বিবিধ
১১০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন