নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর দিক নির্দেশনায় দাসপ্রথার বিলুপ্তি

লিখেছেন লিখেছেন REZAUL HAQUE ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৯:৪৩:২৯ সকাল




আধুনিক যুগে দাসত্ব?

এই একবিংশ শতাব্দীতেও এই সমস্যা ?

এটা কি বিশ্বাসযোগ্য ?

তাও আবার এই উত্তর আমেরিকাতেই ?

আসলে আজ থেকে দুশো বছর আগে আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ডেনমার্ক দাসপ্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবীদার হলেও এই উত্তর আমেরিকাতেই আজ থেকে দুশো বছর আগে যত দাস ছিল বর্তমান দাস সংখ্যা তার থেকে অনেক বেশি; পৃথিবীতে দাস সংখ্যা এবং অবৈধ মানব পাচার জ্যামিতিক হারে ইতিহাসের জন্মলগ্ন থেকে বেড়েই চলেছে।

আপনি যখন আমার এই লেখাটি পড়ছেন সেই সময়ে সারা পৃথিবীতে প্রায় তিন কোটি লোক অন্যের কেনা সম্পত্তি হিসাবে মানবেতর, ঘৃণ্যতম জীবন যাপন কোরছে ; তাদেরকে পশুর মতো বেচা কেনা করা হচ্ছে ; শিশু সৈনিক, ভাড়াটে শ্রমিক, শিশু উটচালক এবং যৌন দাসী হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

একজন মুসলমান যে নিজেকে নবী মুহাম্মদ (সঃ ) এর সত্যিকার অনুসারী বলে মনে করে তাকে অবশ্যই সমাজ থেকে সব রকমের দাসত্ব চিরতরে বিদায় করার কথা গুরুত্ব সহকারে অবশ্য করণীয় কাজ হিসেবে (obligatory duty) ভাবতে হবে এবং আল্লাহর তুষ্টিকে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য মনে করে আজ থেকেই কাজে নামতে হবে।

কিন্তু ধর্মই কি এই সমস্যার জন্য আংশিক দায়ী নয় ?

ধর্ম কি আসলে এই বহমান দাস প্রথার কোন পরিবর্তন আনতে পেরেছে? সুদূর আদিকাল থেকে দাস প্রথাকে জিইয়ে রাখার জন্য বরঞ্চ ধর্মকেই ব্যবহার করে আসা হয়েছে। সবার মনে তাই এক নীরব জিজ্ঞাসা ; প্রথম থেকেই ধর্মে কেন দাসত্ব প্রথাকে নিষিদ্ধ অথবা নিন্দা করা হয়নি।

এসব প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে একসময় এই দাসত্ব প্রথা চালু হওয়ার পিছনে এক বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। প্রাচীন কালে যুদ্ধে পরাজিত বন্দী সৈনিকদের (যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের পরে অতিরিক্ত সৈন্য) কাছে দুটো রাস্তাই খোলা ছিল - অনাহারে মৃত্যু অথবা শিরোচ্ছেদ; অথবা দাস হিসেবে বাজারে বিক্রি হয়ে যাওয়া। সুতরাং এই দুই ঘৃণ্য পরিণতির মধ্যে দাসত্বকেই পরাজিত সৈনিকেরা চরম আকাংক্ষিত হিসাবেই মেনে নিত। একারণেই ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্ম দাসপ্রথাকে কখনো সরাসরি নিন্দা অথবা নিষিদ্ধ করেনি; বরঞ্চ নিয়ন্ত্রিত করেছে এবং মানবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার কথা বলেছে।

প্রতিটি ধর্মেই দাসদের অবস্থার সময়োপযোগী ক্রমবর্ধমান উন্নতির কথা নবীদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান ও কাল ভেদে বলা হয়েছে যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হচ্ছে দাসমুক্তি। উদাহরণ স্বরূপ, ইহূদী ধর্মের সূচনাই হয়েছিল নবী মুসা (pbuh) কর্তৃক ফেরাউনের রাজত্বে দাসদের মুক্তি এবং সেই সাথে তাদেরকে স্বাধীন মানুষ এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য যুগোপযোগী প্রয়োজনীয় শিক্ষা দান কোরে যাতে তারা বুঝতে পারে আল্লাহর কাছে নারী ,পুরুষ ,দাস ,দাসী মর্যাদায় সবাই সমান ।

বহুশতাব্দী পরে রোমকরা যখন ইসরাইল দখল করে নেয় সেখানে তখন দাসদের অবস্থার চরম অবনতি ঘটে, কেননা ইহুদি ধর্মের শিক্ষা শাসকগোষ্ঠী গ্রহণ করেনি। তাই সেখানে যখন খ্রীষ্টধর্মের প্রবর্তন হয়, দাসপ্রথাকে নিন্দা করার পরিবর্তে ইহুদী ধর্মের বাণীই খ্রীষ্টধর্মে পুনরাবৃত্তি হয়, এবং খ্রীষ্টধর্মের প্রচারের কারণে সারা রোমান সম্রাজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

এটা ঐতিহাসিক সত্য যে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মানুষের সাম্যতার কথা বারবার বলা হয়ে থাকলেও মানুষ স্বভাবগতভাবেই স্বার্থপরতা এবং ভোগের প্রতি অতি লালসার কারণে এসব উপদেশবাণী চরমভাবে উপেক্ষা করে এসেছে। একজন ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি হিসেবে আপনার কি পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ ইসলাম তার সময়োপযোগী জবাব উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে।

দাসত্ব সম্পর্কে কুরআন কি বলে?

আসলে কুরআনে দাস হিসেবে কাউকে গ্রহণ করার ব্যাপারে কোনো উল্লেখ নেই। বরঞ্চ বিদ্যমান দাসদের মুক্ত করার কথা এবং আল্লাহর কাছে দাস ও মনিবের একই মর্য্যাদা, একথাই বিশেষভাবে বলা হয়েছে। মানুষ হিসেবে দাসদের সমঅধিকার , এবং মনিবের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি দাস মুক্ত করার মাঝে আছে পরকালে বিশেষ পুরস্কার ; কুরআন মানুষকে এই বিধানই দিয়েছে। জেরুজালেমে যাওয়ার পথে দাসের সাথে হজরত উমরের আচরণে কুরআনের এইসব নির্দেশেরই প্রতিফলন দেখা যায়।

দাসত্ব বিষয়ে নবী মুহাম্মদ (সঃ ) কি বলেছেন ?

তা হলো - দাস এবং স্বাধীন সবাই ভাই ভাই। এবং দাসীদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিধান হলো তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে হবে, সন্মান করতে হবে, শিক্ষিত করতে হবে ; এবং তাদেরকে নিজে অথবা অন্য কারো সাথে বিয়ের বন্দোবস্ত করতে হবে, এবং তা হোতে হবে অবশ্যই তার সম্মতিক্রমে ; অথবা তাদেরকে মুক্তি দিয়ে দিতে হবে

প্রাথমিক যুগের মুসলমানেরা দাসদের সাথে কিরকম ব্যবহার করেছেন?

নবী মুহাম্মদ (স) এর উদাহরণ অনুসরণ করে তাঁরা তাদেরকে সাহায্য করেছে, যত্ন করেছে, এবং স্বাধীন করে দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে তারা শিক্ষা নিয়েছে এবং তাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে ; তাদেরকে সমাজে পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। শুধুমাত্র নবী পরিবারের ঘনিষ্ট সদস্যরাই ৪০.০০০ দাসদাসী মুক্ত করেছিলেন।

দাসত্ব সম্পর্কে মুসলিম পন্ডিতগণ কি বলেন?

স্বাধীনতা হচ্ছে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। দাসত্ব হচ্ছে এক দুঃস্বপ্ন - অস্বাভাবিক এবং ঘৃণ্য উপায়ে চাপিয়ে দেয়া বোঝা। পণ্ডিতগণ এব্যাপারে সহমত যে দাসত্ব ক্রমান্বয়িক নির্মূল করার পাশাপাশি দাসত্বের উৎসের মূল কারণ, যা হচ্ছে সমাজে বৈষম্যমূলক আচরণ এবং অবিচার তা নির্মূল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

এখন জিজ্ঞাসা , শরিয়া দাসত্ব সম্পর্কে কি বলে ? উত্তরে বলতে হয়, আপনি কোন শারিয়ার কথা বলছেন ?

কেননা শরিয়া - অথবা যে পথে নবী মুহাম্মদ (স) এবং তার সঙ্গীরা চলেছেন তার গন্তব্য ছিল এক দাসত্ব মুক্ত পৃথিবী যা সমস্ত পন্ডিতরাই একবাক্যে স্বীকার করে। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের মুসলমানেরা যখন দেখলো যে নবীর দেখানো পথে চলার কারণে সমাজ থেকে দাস দাসীর সংখ্যা দারুন ভাবে কমে যাচ্ছে - এবং তাদের আরাম আয়েশে বিঘ্ন হচ্ছে , নবীর দেয়া বিধান বা শরিয়াকে তারা ফতোয়ার দ্বারা একটু পরিবর্তন করে দিলো যাতে করে তাদের কাছে দাস দাসীর সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমানে সবসময় বিদ্যমান থাকে।

ইসলামের তাত্ত্বিক অর্থ হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ; এবং যার কর্মভিত্তিক প্রয়োগ হচ্ছে সৃষ্টির সেবার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার তুষ্টি অর্জনের সাধনা। সেই প্রতিশ্রুতবদ্ধ (covenant bound ) বান্দাই যখন নিজের ব্যক্তিগত কামনা বাসনা এবং আত্মতুষ্টিকে অতিমাত্রায় প্রাধান্য দিতে শুরু করে শরিয়া তখন সমাজের দুর্বলদের শোষণের এক ঘৃণ্য দানবে পরিণত হয়।

তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, জীবন বিশ্বাস এবং কর্মধারার এই মহাযাত্রায় আপনি ভুল পথে যতই এগিয়ে যাননা কেন যে কোনো মুহূর্তে বিপরীত দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আপনি আবার সঠিক পথে ফিরে আসতে পারেন।

আসলে কুরআনের বাণী, নবীর এবং তার ঘনিষ্ট সাহাবীদের কর্মজীবনের উদাহরণ অত্যন্ত পরিষ্কার। যারা মুহাম্মদ (সঃ) কে সত্যিকার ভাবে ভালোবাসে এবং তার দিক নির্দেশনা অনুযায়ী পথ চলাকে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য বলে মনে করে,সমাজ থেকে এই নারকীয় শোষণ এবং যন্ত্রনা দূর করার ব্যাপারে তারা আসলেই অনেক দেরি করে ফেলেছে ; সমাজ থেকে দাসত্ব অনেক আগেই দূর হওয়া উচিৎ ছিল।

*****

(The Huffinton Post এ Dr. David Liepert এর লেখা Ending Slavery The Sharia Way প্রবন্ধ অবলম্বনে রচিত। আগ্রহী পাঠকেরা মূল লেখাটি google করে পড়ে নিতে পারেন )

রেজাউল হক

টরন্টো ,কানাডা

বিষয়: বিবিধ

৪৭২৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381902
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সকাল ১০:১২
হতভাগা লিখেছেন : পোস্টের তালে চামে একটা আধা পর্ণো সাইট এর লিংক দিয়ে দিলেন । ভালই ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File