জোসেফের দানশীলতা

লিখেছেন লিখেছেন REZAUL HAQUE ০৫ নভেম্বর, ২০১৬, ০৭:৫১:০০ সন্ধ্যা

সে অনেকদিনের পুরোনো কথা। ভারতীয় খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী জোসেফকে আমার প্রায়ই মনে পড়ে।

জোসেফ ছিল আমার পুরোনো অফিসে Maintenance Engineer - অতি আন্তরিক, পরিশ্রমী, বিশস্ত, এবং technically sound; তাকে কোনো কাজের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা যেত। এসব কারণে সে ছিল অফিসে আমার প্রিয় সহকর্মীদের একজন । ব্যতিক্রম ধর্মী চরিত্রের প্রতি আমি সবসময়ই আগ্রহী, তাই তার কর্মকান্ড আমি আগ্রহের সাথে লক্ষ্য করতাম। শুনেছি কাজের ফাকে, অবসরে সে শুধু প্রার্থনা এবং বাইবেল নিয়েই সময় কাটায়।

মাঝে মধ্যে আমি ও জোসেফ একসাথে কাজে যেতাম। বিশেষ করে যখন দূরবর্তী কোনো শহরে high voltage cable fault হতো। কখনো কখনো দিন রাত বাইরে থাকতে হতো। কাজ উপলক্ষ্যে দীর্ঘ সময় বাইরে থাকার জন্য কখনো কখনো আমাদের আলাপচারিতার গন্ডী formal থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে যেত।

এমনই একদিন আমরা দুজনে সহকর্মীদের সাথে নিয়ে দূরের এক উপশহরে কাজে গিয়েছিলাম । কথাচ্ছলে,যদিও ব্যাপারটা নিতান্ত ব্যক্তিগত তাও তাকে জিজ্ঞেস কোরলাম, জোসেফ, দানশীলতা সম্পর্কে তোমার কি ধারণা এবং এ ব্যাপারে তুমি কি actively কিছু করে থাকো ?

- জী স্যার , আমি প্রতিমাসে Tithe দিয়ে থাকি।

Tithe সম্পর্কে আমি বাইবেল এ কিছুটা পড়াশুনা করেছিলাম । বাইবেল বলে:

“Set aside a Tithe – a tenth of all that your field produces each year” (Deuteronomy 14:22),

“তোমাদের জমিতে য়ে ফসল হয়, প্রতি বছর তার দশ ভাগের এক ভাগ আলাদা করে রাখবে।"(Deuteronomy 14:22)

যদিও বাইবেল এ লেখা আছে কিন্তু বাইবেল অনুসারীরা যে এটা পালন করে তা আমার ধারণায় ছিলনা। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম , জোসেফ, তুমি কি একটু বুঝিয়ে বলবে ?

সে জবাবে বললো , ' আমার বেতন প্রতিমাসে ১৩০০০ দিরহাম এবং তা থেকে Tithe - দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ১৩০০ দিরহাম প্রতি মাসে আমি আমার গরীব ও অভাবগ্রস্থ আত্মীয় স্বজনদের এবং অন্যান্য গরীবদেরকে দিয়ে থাকি।

কুরআন বলে :

- “...…… Eat of their fruit when they are ripen, but pay the due there of ON THE DAY ITS HARVEST… And do not waste: verily, He does not love the wasteful.” (Al Quran Surah An ‘am - 6:141).

“…….এগুলোর ফল খাও, যখন ফলন্ত হয় এবং হক দান কর কর্তনের সময়ে এবং অপব্যয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।“

জোসেফ তার মাসিক বেতনকে তার ক্ষেতের ফসল বলেই মনে করে, আর তাই বেতন পাওয়ার দিনেই গরীব, দুঃস্থদের যেটা প্রাপ্য সেটা সে দিয়ে দেয়।

কুরআন আরো বলে:

“………আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু তিনি এরূপ করেননি - তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তাদ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। অতএব, সৎকাজে তোমরা প্রতিযোগিতা কর …….“ (কুরআন #৫:৪৮)

জোসেফ এর কথা শুনে আমি অবাক হলাম আর ভাবলাম, জোসেফ এর সাথে সৎকাজের প্রতিযোগিতায় আমার অবস্থান কত দূরে ।

*

সব একেশ্বরবাদী ধর্মেই দানশীলতা একটি অবশ্যকরণীয় কর্তব্য। যারা এ কর্তব্য পালনে অবহেলা করে তাদের কঠোর পরিণতির কথা প্রতিটি ধর্মগ্রন্থেই বলা হয়েছে ।

কুরআন বলে :

And know that whatever thing you gain, A FIFTH OF IT is for Allah and for the Apostle and for the near of kin and the orphans and the needy and the wayfarer, if you believe in Allah and in that which We revealed to Our servant…” (Anfal - 8:41-Translation: Shakir).

দারিদ্র , অভাব অনটন এবং দুঃখ কষ্টে ভরা এ পৃথিবীতে ব্যক্তিগত দানশীলতা প্রয়োজনের মহাসমুদ্রে নিছক বিন্দুর মতোই ক্ষুদ্র। যে কোনো বড়ো কাজ সমষ্টিগত প্রচেস্টার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব । বিশ্বের সাত বিলিয়ন মানুষের মধ্যে এক বিলিয়নের বেশি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে ; তিন বিলিয়ন মানুষ দিনে $ 2.50 এর কম আয় দিয়ে জীবনযাপন করে।

ইসলাম তাই ব্যক্তিগত দানশীলতাকে যথেষ্ট মনে করেনা। যারা অন্যকে দানশীলতায় উদবুদ্ধ করেনা ইসলাম তাদেরকে একেবারেই ধার্মিক বলে বিবেচনা করেনা ।

কুরআন বলে :

Have you seen him who calls the religion a lie? That is the one who treats the orphan with harshness. AND DOESN’T URGE OTHERS to feed the poor” (Al Quran; Al-Maun-107:1-3).

" তুমি কি দেখিয়াছ তাহাকে, যে দীন কে অস্বীকার করে? সেতো সেই যে ইয়াতীমকে রুঢ়ভাবে তাড়াইয়া দেয় , এবং যে অভাবগ্রস্থকে খাদ্য দানে উৎসাহ দেয়না " ( কুরআন # ১০৭:১-৩)

এবংবাইবেল বলে:

“The religion acceptable to God - that looks after orphan and widow in their distress...... “ (James 1:27)

" ঈশ্বরের কাছে শুধুমাত্র সেই ধৰ্মই গ্রহণযোগ্য যে অনাথ ও বিধবাদের দুঃখ কষ্টে দেখাশোনা করে।..............."(James 1:27)

“Though I speak with the tongues of men and of angels, and HAVE NOT CHARITY, I am become as sounding brass or a tinkling cymbal” (1 Corinthians 13:1- KJV)

“And though I have the gift of prophecy, and understand all mysteries, and all knowledge; and though I have all faith, so that I could remove mountains, AND HAVE NOT CHARITY, I am nothing” (1Corinthians13:2)

বাইবেল মতে যারা 'দশমাংশ' (Tithe) প্রদান করেনা তারা ক্ষমার অযোগ্য এবং এটা ঈশ্বরকে ডাকাতি করারই শামিল বলে মনে করা হয়.

বাইবেল বলে:

“Will a man rob God? Yet ye have robbed me. But ye say, wherein have we robbed thee? In Tithes and offerings…” (Malachi 3:8-10).

“কোন লোক কি ঈশ্বরের কাছ থেকে চুরি করতে পারে? কিন্তু তোমরা আমার কাছ থেকে চুরি করেছো । তোমরা বল, “আমরা তোমার কাছ থেকে কি চুরি করেছি?’ তোমাদের জিনিষগুলোর থেকে এক দশমাংশ আমাকে দেওয়া উচিত্ ছিল। তোমাদের উচিত্ ছিল আমাকে বিশেষ উপহার দেওয়া। কিন্তু তোমরা আমাকে সেইগুলি দাওনি।"(Malachi 3:8-10).

ইহুদীধর্মে বাধ্যতামূলক দানকে বলে Tzedakah যা ইসলাম ধর্মের যাকাত এর সমার্থক এবং পরিমান হচ্ছে Tithe অথবা যে কোনো আয়ের ১০% । Tzedakah, Zakat এবং Sadakah এ সবের মূলে হলো ইব্রাহিম (আ) এর শরীয়া। কোনো কোনো ইহুদী ধর্মযাজকদের মতে Tzadakah হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ Commandment.

যদিও Tzedakah ইংরেজিতে Charity এর সমতুল্য শব্দ কিন্তু হিব্রুতে এর অর্থ হচ্ছে ন্যায়পরায়ণতা এবং সৎকর্মশীলতা - গরীবদের ন্যায্য আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতা। ইহুদি ঋষিদের মতে, যারা Tzedakah প্রদান করেনা তারা বহু ঈশ্বরবাদীদের সমতূল্য ।

রেজাউল হক

টরন্টো,কানাডা

mrhaque২০০০@hotmail.com

বিষয়: বিবিধ

৩৪২৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379490
০৫ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:৪১
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : ভালো লাগলো /
379495
০৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১২:১৪
REZAUL HAQUE লিখেছেন : ধন্যবাদ
379500
০৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৩:৫৭
স্বপন২ লিখেছেন : “সমস্ত শস্যের দশমাংস প্রভুর অধিকারে থাকে। এর অর্থ হলো, জমি থেকে কেটে আনা শস্য এবং গাছ থেকে আনা ফল ফলাদি, এসবের দশমাংশ প্রভুর অধিকারভুক্ত" (Leviticus
27:30). evangelical, catholic and JW Christians এ কাজ গুলো করে। অর্থডক্স ইহুদীরাও Tzadakah দেয়।
ধন্যবাদ তুলনামূলক আলোচনার জন্য।
379501
০৬ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:১৯
REZAUL HAQUE লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনার তথ্যপূর্ণ মতামতের জন্য।
আসলে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সহঅবস্থান পীড়ার কারণ না হয়ে বরঞ্চ শক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে যদি না আমরা যার যার ধর্মের কেন্দ্রীয় বিশ্বাস ( core belief ) এর দিকে নজর দেই । আর সব ধর্মেরই কেন্দ্রীয় বিশ্বাস হচ্ছে মানবতার সেবা।
মানবতার সেবায় প্রতিযোগিতা আমাদেরকে ভেদাভেদ ভুলিয়ে কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে, একে অপরের সহমর্মী হতে পারে।
379503
০৬ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৮:৩৬
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : ভালো লাগলো | অনেক ধন্যবাদ |
379505
০৬ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৮:৫৩
REZAUL HAQUE লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File