দুর্বিনীত তারুন্য ।

লিখেছেন লিখেছেন মু আমজাদ হোসেন ২৯ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:১৯:২৯ সকাল

আমাদের তরুনদের অধিকাংশই ক্রমশঃ উগ্র, দুর্বিনীত ও উচ্ছৃংখল হয়ে উঠছে । বিনয়, আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ক্রমশঃ দুর্লভ হয়ে উঠছে তাদের মাঝে ।

পিতা-মাতা, গুরুজন ও শিক্ষকদেরকে যথাযথ মর্যাদা দেয়া, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমীহ দেখানোর চিরায়ত সামাজিক মূল্যবোধটি হারিয়ে যাচ্ছে আশংকাজনকভাবে ।

একটা সময় ছিল যখন বয়োকনিষ্ঠরা বয়োজ্যাষ্ঠদের সামনে সানগ্লাস চোখে রাখাটাকেও বেয়াদবী মনে করতো । অস্বস্থিতে তারা চোখ থেকে তা অপসারন করে ফেলতো । সে সময় রাস্তায় অচেনা গুরুজনদের সামনেও সিগারেট খেতে ইতস্তত করতো সদ্য নিকোটিনের স্বাদ পাওয়া উঠতি বয়সের কোন তরুন । বয়স্করা এ ধরনের ছেলে ছোকরাদের ইঁচরে পাকা বা ‘জ্যাঠা’ বলে গালমন্দ করতো ।

কোন স্থানে উপবিস্ট গুরুজনদের জটলার সামনে দিয়ে যেতে হলে তরুন-তরুণীরা সবিনয়ে ঈষৎ সামনে ঝুঁকে পড়ে এক হাত সটান মাটি বরাবর নির্দেশ করে কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে চলে যেত ।

পাড়াগাঁয়ে রাস্তায় কোন শিক্ষক নজরে এলে সাইকেল আরোহী ছাত্ররা সাইকেল থেকে নেমে সাইকেলের পাশে কিছুদূর হেঁটে ভদ্র দুরত্বে গিয়ে সাইকেলে চড়তো ফের । কোন শিক্ষকের সামনে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়াটাকে চরম বেয়াদবী মনে করা হতো তখন ।

শহরাঞ্চলে বাসে বা ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাকা কোন বয়স্ক মানুষের পাশে সীট দখল করে বসে থাকাটা উঠতি বয়সের তরুনদের জন্য খুবই অস্বস্থিকর এক ব্যাপার ছিল । মুরুব্বী দেখলে সীট ছেড়ে দিয়ে তাদের প্রতি সবিনয় সৌজন্য দেখাতে হতো তাদেরকে । কেউ নিজের আরামটিকে পরিত্যাগ করতে না চাইলে ভেতরে ভেতরে এক ধরনের অপরাধবোধ নিয়ে সারাটা পথ পার হতো তার ।

এসব শুনলে অবিশ্বাসে অনেকেরই হয়তো চোখ কপালে উঠবে আজ । কিন্তু খুব বেশীদিন আগের কথা নয় এসব । সুজল-সুফল-শস্য-শ্যামলা নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষেরা চিরকালই ছিল কোমল, সহানুভূতিশীল, অতিথিপরায়ন এবং বিনয়ী । উগ্রতা এদেশের তারুন্যের বৈশিষ্ঠ্য কখনোই ছিল না ।

শুধুমাত্র পশ্চিমা সংস্কৃতির বিষময় প্রভাব আর আদর্শহীন ছাত্ররাজনীতিই এই সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য দায়ি ।

আধুনিক পশ্চিমা দুনিয়ায় ‘মুরুব্বী’ বলে কোন শব্দ নেই । বুড়ো হলে অবাঞ্ছিত মনে করে নিজেদের পিতামাতাকে যে দেশে বৃদ্ধাশ্রমে নির্বাসনে পাঠানো হয় সেই পশ্চিমা দুনিয়ায় আর যাই হোক গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা আশা করা যায় না ।

আর তরুন-তরুনীদের সত্যিকারের মানুষ বানানোর কারখানা যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেখানে বাসা বেধেছে আজ নোংরা ও আদর্শহীন ছাত্র রাজনীতি । ছাত্র রাজনীতি সাধারন কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে করে তুলছে উগ্র, বেপরোয়া, উচ্ছৃংখল । তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে বিনয়, শিষ্টাচার ও ভদ্রতা । দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনগুলোতে নিজেদেরই ছাত্রছাত্রীদের হাতে শিক্ষকদের শারীরিকভাবে নাজেহাল হওয়ার ঘটনা কাউকে আজ আর বিচলিত করে না ।

ছাত্রছাত্রীদের অন্যায় কাজে বাধা দেয়ায় শিক্ষককে নিজের প্রাণ দিয়ে তার মূল্য দেয়ার ঘটনাও আকছারই ঘটতে দেখে এ সমাজে ।

বিষয়: বিবিধ

৯৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File