Rape vs Adultery - ধর্ষন বনাম ব্যাভিচার
লিখেছেন লিখেছেন এনামুল ০৭ আগস্ট, ২০১৫, ১২:১৬:২১ দুপুর
ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী এবং আমাদের অনেক ফতোয়াবাজ প্রচার করে বেড়ায় যে, ইসলামে ধর্ষন প্রমানের জন্য ধর্ষিতাকে ৪ জন পুরুষ সাক্ষী হাজির করতে হবে !! আরেকটি প্রচারনা আছে যে ইসলামে ধর্ষিতাকেই শাস্তি দেয়া হয় !! জানার অভাবে আমরাও সেভাবেই মেনে নেই। কিন্তু আসলে কি তাই ?
ধর্ষণ বলতে বুঝায়, “বেআইনী ভাবে কারো মতের বিরুদ্ধে তার শরীরের যৌনঅঙ্গ সমুহের ব্যবহার”।ধর্ষণের সাথে জোরপুর্বক শাররীক সম্পর্ক যুক্ত, ধর্ষণ মানে প্রচণ্ড আবেগ কিংবা অন্তরঙ্গ শাররীক মিলন নয়। ধর্ষণ হচ্ছে একপ্রকার আগ্রাসন এবং সহিংস অপরাধ।
যিনা বা ব্যভিচার বলতে বুঝায় ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধন ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন তৃপ্তি লাভ করাকে। এখানে উভয়পক্ষের সম্মতি এবং আবেগ বিদ্যমান ।
যেভাবে ৪ জন পুরুষ সাক্ষীর কথা আসলো :
ষষ্ঠ হিজরীতে নবী (সা) মুরায়সী যুদ্ধে যাবার সময় স্ত্রী আয়েশা (রা)-কে সাথে নেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে সবাই বিশ্রাম নিচ্ছিল। এমন সময় আয়েশা (রা) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে একটু দুরে কোথাও গিয়ে তার গলার প্রিয় হারটি হারিয়ে ফেলেন। উল্লেখ আছে, তিনি আগেও একবার এই হারটি হারিয়েছিলেন এবং নবী তখন লোক দিয়ে তা খুজে বের করার ব্যবস্থা করেছিলেন। কাজেই এইবার হারটি হারিয়ে আয়েশা আর নবীকে বিরক্ত করতে চাইলেন না। তিনি নিজেই সময় নিয়ে তা খুজতে লাগলেন। কিন্তু অবশেষে যখন তিনি কাফেলার কাছে ফিরে এলেন, তখন দেখলেন তাকে রেখেই সবাই চলে গিয়েছে!
আয়েশা ভ্রমন করতেন চাদর ঘেরা একটি আসনে, যা উটের পিঠে উঠিয়ে বহন করা হতো। যেহেতু তিনি স্বল্পবয়স্কা এবং ক্ষীণকায় ছিলেন, চাদর ঘেরা আসনে তার অনুপস্থিতি সম্ভবত: বাহকেরা টেরই পাননি। যাই হোক, ভগ্ন মনে আয়েশা ঐখানেই বসে রইলেন, যদি টের পেয়ে নবী তাকে উদ্ধারে আসেন এই আশায়। একসময় ওখানেই তিনি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
এদিকে যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় সাফওয়ান নামক এক সাহাবীকে নবীর কাফেলার পেছনে পেছনে আসার দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। যদি যুদ্ধ ফেরত কাফেলা পথিমধ্যে কিছু ফেলে যায়, তা কুড়িয়ে আনার জন্য। এই সাফওয়ানই ফেরার পথে দেখতে পান আয়েশা একা পথের ধারে ঘুমিয়ে আছেন। তখন তিনি নিজের উটের পিঠে করে আয়েশাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
কিন্তু রাতের বেলা কাফেলা ছেড়ে আয়েশার বর্হিগমন এবং পরবর্তীতে সাফওয়ানের সাথে তার একা ফিরে আসা মদীনায় যথেষ্ট কানাঘুষার জন্ম দেয়। তারা আয়েশা (রা এর সতিত্ব নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। নবীর অনেক অনুসারীও এই গুজবে অংশ নেন। এটা নিয়ে নবী ও আয়েশা ব্যপক অস্বস্তি ও দূর্ভাবনায় পরে যান। ঠিক এমন সময় কোরআনের সূরা আন-নুর এর চতুর্থ আয়াত নাযিল হয়, যার অনুবাদ এরকম-
“এবং যারা সতী রমনীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না [তাদের অভিযোগকে সমর্থন করার জন্য], তাদের আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং এরপর থেকে কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। কারণ এরূপ ব্যক্তিরা দুষ্ট এবং সীমালংঘনকারী” (কোরআন ২৪:৪)
এরপর গুজব প্রচারকারীদের যথোপযুক্ত শাস্তি দেয়া হলো। শুধু তাই না, এই আয়াত অনুসারে এমন ব্যবস্থা করা হলো যেন প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য ব্যতীত নারীদের প্রতি কেউ আর অপবাদ দিতে না পারে।
অন্যত্র বলা হয়েছে
“আর তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন”। (সুরা নিসা, আয়াত ১৫)।
কুরআন- হাদীসের কোথাও একথা লেখা নেই যে ধর্ষিতাকে ৪ জন পুরুষ সাক্ষী জোগাড় করতে হবে ।
এবার দেখি রাসুল (স এর যুগে ধর্ষনের বিচার কিভাবে করা হয়েছিল। অর্থের অমিল এড়াতে ইংরেজীতেই দেয়া হল ।
narrated by Wa’il ibn Hujr:
When a woman went out in the time of the Prophet (PBUH) for prayer, a man attacked her and overpowered [raped] her. She shouted and he went off, and when a man came by, she said: ‘That [man] did such and such to me.’ And when a company of the Emigrants came by, she said: ‘That man did such and such to me.’ They went and seized the man whom they thought had had intercourse with her and brought him to her. She said: ‘Yes, this is he.’ Then they brought him to the Apostle of Allah (SWT).
When he [the Prophet (PBUH)] was about to pass sentence, the man who [actually] had assaulted her stood up and said: ‘Apostle of Allah, I am the man who did it to her.’ He [the Prophet (PBUH)] said to her: ‘Go away, for Allah (SWT) has forgiven you [for mistakenly identifying the wrong man].’ But he told the man some good words [Abu Dawud said: meaning the man who was accidentally seized], and of the man who had had intercourse with her, he said: ‘Stone him to death.’ He also said: ‘He has repented to such an extent that if the people of Medina had repented similarly, it would have been accepted from them.’ -4366, Sunan Abu-Dawud
এখানে দেখা যাচ্ছে, ধর্ষিত ব্যাক্তির একক অভিযোগ গ্রহন করা হয়েছে। এবং এর ভিত্তিতে শাস্তিও দেওয়া প্রায় হচ্ছিল। এমনকি যদি ভিক্টিম ভুলবসত অন্য কাউকে অপরাধী বলে অভিযুক্ত করে, তাহলেও ধর্ষিত ব্যাক্তি সম্পূর্ন মুক্ত।
হযরত ইউসুফ আলাইহিস সাল্লামের এর উপর যখন জুলেখা ধর্ষণের অভিযোগ তুলে তখন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সাল্লামের জামা পিছন দিক থেকে ছিড়া ছিল এই বিবেচনায় হযরত ইউসুফ আলাইহিস সাল্লাম কে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছিলো। এই ঘটনা কিন্তু কোরআনেই বর্ননা করা আছে। অর্থ্যাৎ কোরআন থেকেই বুঝা যাচ্ছে ধর্ষণ একটা প্রমাণযোগ্য কেস। আর ব্যভিচার হচ্ছে একটি সাক্ষীভিত্তিক কেস।
পরিশেষে আরো একটি হাদিস ।
নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন- আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত এদুটিকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না; – আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ।- মুয়াত্তা ইমাম মালিক: ৩৬৩
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলাম সঠিকভাবে জানার তৌফিক দান করুন। নিশ্চই তিনি সর্বজ্ঞ্যাতা, সর্বজ্ঞানী ।
সংকলিত
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ স্ত্রীর মতের বিপরীতে স্বামী যদি তার সাথে সেক্স করতে চায় তাহলে কি এই সংজ্ঞার আওতায় পড়বে ?
Allah’s Apostle (Pbuh) said, ” If a husband calls his wife to his bed (i.e. to have sexual relations) and she refuses and causes him to sleep in anger, the angels will curse her till morning.” (Sahih Al-Bukhari Vol. 4 Hadith No. 460 & Sahih Muslim Vol. 2 Hadith No. 3368)
Narrated Abu Huraira
The Messenger of Allah (swt) said: By him in whose hand is my life, when a man calls his wife to his bed, and she does not respond, the One Who is in the heaven is displeased with her untill he (her husband) is pleased with her. (Sahih Muslim Vol. 2 Hadith No. 3367
https://islamtheultimatejourney.wordpress.com/queries-on-islam-by-dr-zakir-naik/does-a-wife-have-the-right-to-refuse-sex-with-her-husband/
মন্তব্য করতে লগইন করুন